ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

শিল্প-সাহিত্য

প্রতিদিনের ধারাবাহিক

টানেল | এর্নেস্তো সাবাতো (৫৬) || অনুবাদ: আলীম আজিজ

অনুবাদ উপন্যাস/শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৩৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১০, ২০১৪
টানেল | এর্নেস্তো সাবাতো (৫৬) || অনুবাদ: আলীম আজিজ অলঙ্করণ: মাহবুবুল হক

___________________________________

এর্নেস্তো সাবাতো (২৪ জুন ১৯১১-৩০ এপ্রিল ২০১১) আর্জেন্টাইন লেখক এবং চিত্রকর। লেখালেখির জন্য পেয়েছেন লিজিওন অফ অনার, মিগুয়েল দে সেরভেন্তেস পুরস্কার।

এছাড়াও তিনি ছিলেন লাতিন আমেরিকান সাহিত্য জগতের বেশ প্রভাবশালী লেখক। তাঁর মৃত্যুর পর স্পেনের এল পায়েস—তাঁকে উল্লেখ করেন ‘আর্জেন্টিনাইন সাহিত্যের শেষ ধ্রুপদী লেখক’ বলে।
‘এল তুনেল’ (১৯৪৮), ‘সবরে হেরোস ইয়া টুম্বাস’ (১৯৬১), ‘অ্যাবানদন এল এক্সতারমিনাদোর’ (১৯৭৪) তাঁর জগদ্বিখ্যাত তিন উপন্যাস।
_________________________________

৫৫তম কিস্তির লিংক

ওই অশেষ সময়ের সমুদ্র আর টানেলের পর, মারিয়া আর হান্তেরকে দেখলাম বাড়ির সামনের ধাপ ভেঙে নেমে আসছে। ওদের পরস্পরকে বাহুলগ্ন দেখে, আমার বুকের ভেতরটা কঠিন আর বরফের মতো শীতল হয়ে গেলো।

ধীরে পায়ে ধাপ ধরে নেমে আসছে ওরা, স্পষ্টত কোনো তাড়াহুড়ো নাই। ‘কেনই বা তাড়াহুড়ো করবে?’ আমি তেতো মুখে ভাবলাম। এবং জানি, এরপরও মারিয়া জানে ওকে এখনও আমার কি ভীষণ দরকার, এই বিকেলে ওর জন্যই অপেক্ষায় ছিলাম আমি, ওই নিস্ফল অপেক্ষার প্রতিটি মুহূর্ত আমার কেটেছে কি যে অসম্ভব যন্ত্রণায়। এবং এরপরও মারিয়া এটাও জানে ওই একই সময়ে সে নিশ্চিন্তে উপভোগ করছে প্রতিটি মুহূর্ত, আর আমি আমার নিজের তৈরি নরকে দগ্ধে দগ্ধে মরছি নানা বিশ্লেষণ আর কল্পনায়। ওই রকম নিদয়া, শীতল, অকথ্য একটা জন্তু কিভাবে অমন নরমসরম একটা মেয়ের অন্তর থেকে হামাগুড়ি দিয়ে বেরিয়ে আসতে পারে! তখুনি মারিয়া মুখ তুলে ঝড়ো আকাশের দিকে তাকালো, তারপর ওই (কিম্ভূতটার!) বাহু আঁকড়ে ধরে হাঁটা শুরু করলো, ধীর পায়ে, পরস্পরের হাতে হাত, পার্কের চারপাশে ঘুরলো ওরা, ফুলের সুধা নিলো, তারপর হান্তেরকে পাশে নিয়ে বসলো ঘাসের ওপর, আর আমি জানি, ঠিক ওই মুহূর্তে ও এটাও জানে যে আমি, ওর জন্য নিষ্ফল এক প্রতীক্ষায় সময় গুনছি, তারপর আমি ওর বাসায় ফোন করে জানছি যে ও এসতানসায়ায় ফিরে গেছে, তারপর আমি একা পুড়ে মরছি আমার অলোহীন মরুভূমিতে, আর নাড়িভুড়ি গজিয়ে উঠছে সর্বগ্রাসী সব কীট।

এখন ওই দানবটার সঙ্গে কথা বলছে মারিয়া। ওই ব্যাধিগ্রস্ত ভাড়টাকে কি এমন বলতে পারে ও? কোন ভাষায় সেটা বলছে ও?

নাকি আমিই ভাড়? ওরা ঠিক এই মুহূর্তে আমাকে নিয়েই কি হাসাহাসি করছে না? আমিই কি নিবোর্ধটা নই, আমিই কি টানেলের আর ওই গোপন বার্তার কৌতুককর গর্দভটা নই?
দীর্ঘ সময় ওরা মাঠের চারপাশে পায়চারি করলো। ঝড় প্রায় আমাদের ওপর চলে এসেছে, কৃষ্ণবরণ, বিদ্যুৎ চমক আর বজ্রপাত তা ফালা ফালা করে ফেললো। দক্ষিণের বিস্তৃর্ণ তৃণপ্রান্তর থেকে ধেয়ে এলা প্রবল বাতাস, তারপরই বৃষ্টির প্রথম ফোটা ঝরা শুরু হলো। বৃষ্টির হাত থেকে বাঁচার প্রয়াসে ওরা দৌড়ে বাড়ির ভেতরে ঢুকে গেলো। যন্ত্রণায় বুকের ভেতরটা তখন আমার দপ দপ করছে। গাছপালার আড়ালে আমার লুকানোর জায়গায় বসে, আমার এই উপলব্ধি হলো যে আজ আমি অন্তত ওই ঘৃণ্য গুপ্ত আবিষ্কারের সাক্ষী হলাম যা আগে প্রায়শই কল্পনা করে এসেছি।
তৃতীয় তলায় বাতি দেখার জন্য চোখ রাখলাম, এখন পর্যন্ত ওই তলার পুরোটাই অন্ধকার। দ্রুতই আমি ওদের দেখলাম মাঝের শোবারঘরের কাছে, ওটা হান্তেরের রুম। এ পর্যন্ত সব কিছুই স্বাভাবিক ছিলো: সিঁড়ির ঠিক কাছেই হান্তেরের রুম কাজেই ওর ঘরের বাতিই প্রথম জ্বলবে। এখন আমার অন্য ঘরের বাতিও জ্বলে ওঠতে দেখা উচিত। সিঁড়ির কাছ থেকে মারিয়ার ঘরে পৌঁছানো মুহূর্তের ব্যাপার আমি প্রবল হৃৎস্পন্দনের সঙ্গে সময় গুনছি।
কিন্তু কোনো আলো জ্বললো না।

ওহ্, খোদা! আমার সীমাহীন একাকিত্বের বর্ণনা দেওয়ার মতো শক্তি আর অবশিষ্ট নেই! মনে হলো যেন আমার জনমনিষ্যিশূন্য এই দ্বীপ থেকে উদ্ধার পাওয়ার শেষ জাহাজটাও, আমার সাহয্যের ডাকে সাড়া না দিয়ে আমাকে ফেলে রেখেই চলে যাচ্ছে দূরে। আমার শরীর ধীরে ধীরে নির্জীব হয়ে এলো, যেন আমি এক বৃদ্ধে পরিণত হয়েছি।

(চলবে)


বাংলাদেশ সময়: ১৪৩৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১০, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।