ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

শিল্প-সাহিত্য

জেমস মেরিল এর কবিতা | অনুবাদ: মঈনুস সুলতান

অনুবাদ কবিতা/শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪২০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৮, ২০১৪
জেমস মেরিল এর কবিতা |  অনুবাদ: মঈনুস সুলতান

[আমেরিকার কবি জেমস মেরিল (১৯২৬-১৯৯৫) এর জন্ম নিউইয়র্কে। তাঁর পরিবারে অর্থবিত্ত ছিলো প্রচুর।

শৈশব কেটেছে নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের সাউথহ্যাম্পটনে। বেড়ে ওঠেন ‘দি অরচার্ড’ নামে খ্যাত তিরিশ একরের খামার বাড়িতে।

তারুণ্যে পড়াশুনা করেন ম্যাসাচুসেটস্ এর নামজাদা আমহার্স্ট কলেজে। একাডেমিকভাবে গবেষণা করেন মার্শাল প্রস্ত এর উপর। পেশাগত জীবনে অল্পদিনের জন্য সৈনিক ছিলেন, শিক্ষকতাও করেছেন বছর কয়েক। ভ্রমণ ছিলো তাঁর প্রিয় অবকাশ। বলা হয়ে থাকে, কম্পোজার হিসাবে মোৎসার্ট ধ্রুপদী সঙ্গীতে যে ধরনের সৃজনশীলতার পরিচয় দিয়েছেন, সেরকম জেমস মেরিল-ও কবি হিসাবে শব্দ চয়ন, বাক্যবন্ধ ও ছন্দ-মাত্রায় স্বাক্ষর রেখেছেন তাঁর অনুপম নির্মাণ শৈলীর। তাঁর বিখ্যাত বইগুলোর অন্যতম হচ্ছে ‘দ্য চেঞ্জিং লাইট এ্যট সেন্ডঅভার’, ‘অ্যা ডিফরেন্ট পার্সোন: আ মেমোয়ার’ ইত্যাদি। ১৯৭৭ সালে তিনি পুলিৎজার পুরস্কার পান। ]


দগ্ধ হচ্ছে চার্লস্

আরেকটি সন্ধ্যা কাটলো আমাদের
আলোচ্য বিষয় মানুষের চেহারা,
আলাপে বারবার ফিরে আসে মানুষের অবয়ব
কথা বলে বলে বাকচাতুরীর নানা ছলে
আমরা খানিক দিশেহারা।
সুদর্শন যারা
ব্যতিক্রমী যাদের দেহসৌষ্ঠব
হলোই-বা তাদের চরিত্রের খানিকটা কপট কুয়াশায় ভরপুর,
জীবনের জোয়ারে হাল ধরবে তারা নাবিকের দক্ষতায়
জলসায় ছড়াবে সুর মূর্ছনা, বাজাবে নিপুণ পায়ে নুপূর।

কিন্তু মৃদুস্বরে স্বগোতোক্তি করে আমাদেরই একজন
প্রয়োজন আধ্যাত্মিক মূল্যবোধের বিকাশ,
বুদ্ধিবৃত্তির জমিনে না করলে সারে-জলে চাষ
আদতে মানুষ হবে ঘোলাপানিতে কাদামাখা
                                          হলেও বা সুদর্শন।

আর আজকের আসরে আমাদের সুহৃদ চার্লস
দরিদ্র সে দেহের সম্পদে,
অনেকদিন হলো ভুগছে যন্ত্রণায়
অগ্রগতি রুদ্ধ হচ্ছে তার প্রতিপদে।

রান্নাবান্না খাবারের জোগাড়যন্ত্র সে-ই করেছে আজ
আলমিরা থেকে বের করে পানপাত্র
কাচের গায়ে তাদের রঙতুলির কারুকাজ,
সকলের হাতে সে ধরিয়ে দেয় পানীয়
সোনালিতে ছলকাচ্ছে মধুর বরণ
                                    আসরের আরেক তরুণ, বলে সে—
প্যারিসে কিন্তু এরকম না, পানাপানে সেখানে ভিন্ন আচরণ;
ঠুকে সে মেজবানের পাত্রে ম্যাচের শলাকা
শান্ত সুন্দর নীল শিখা ছুঁয়ে যায় তরলের উপরিতল
পানীয়তে নিখুঁতভাবে আগুন হয় আঁকা।

                                              মৌণ হই আমরা
অতঃপর স্তব্ধ হয় আমাদের কথাবার্তা কোলাহল,
নীরবতায় ভরে ওঠে ধমনী-রক্ত চলাচলের শিরা উপশিরা,
ফেটে যায় পানপাত্র, চুঁইয়ে পড়ে সোনাঝরা মদিরা।

আর তখনই হাঁকিয়ে স্ফটিকের ঘোড়াজোড়া ফিটন
সমৃদ্ধ আত্মার শুভ্র লেবাসে নেমে আসে চার্লস্
পরিবেশে বাজে যেন কল্যাণ ঠাটে ইমন।

আতঙ্কের দস্তানা পরা তার ঝলমলে হাত
কেটে যায় আমাদের মুহূর্ত পল অনুপল
কামরায় থমকে দাঁড়ায় আলোকের সম্পাত।

হাত নাড়ে সে- উজ্জ্বলতা ছড়ায় তার মুখে
বলে,‘যায় আসে না তেমন কিছু’ নেই তো বাঁধা সমুখে;
তাকায় সে আরশিতে—অসচেতন দৃষ্টিতে হতবিহ্বল,
বদলায়নি তো তেমন, আছে আগের মতো অবিকল
তাবৎ কিছু অসূয়া প্রবল।

পানপাত্রে আবার মদিরা ঢালে চার্লস্
আমাদের আলাপের হরেক ছলে,
সমাধান হয়নি কিছু
নিমজ্জিত হয় সে আবার নিখাদ অতলে।


পাগল করা দৃশ্যপট

গেলো রাতে আমি যে স্বপ্ন দেখি
তার নাম ‘লন্ড্রী’ দেয়া যেতে পারে
জড়িয়ে আছে তোয়ালে বিছানার চাদর
         ময়লায় ফেনা তোলা সাবান ক্ষারে।
আমরা কিন্তু এসব কাপড়চোপড়
           ব্যবহার করতে যাচ্ছি যৌথভাবে,
বাচ্চার বিবে শুকিয়ে আছে দুধ,
          চাদরে রক্তের ছিটা,
          কুঁচকানো তাবৎ কিছু,
এলোমেলো করেছে কে যেন দৃষ্টির অভাবে।

মস্ত এক লন্ড্রী বাস্কেট বেলকনি থেকে ফেলেছে ছুড়ে
শ্বেতপাথরের ওয়াশবোর্ডে
          ঝলকাচ্ছে জোৎস্নায় তা আঁধার ফুঁড়ে।

কেবলমাত্র আমাদের হয়েছে দেখা,
বাইরের অন্ধকার থেকে পর্যবেক্ষণ করছি আমি
                    একদম একা।
পরে আছি আনকোরা পোশাক
বোনা তা মনোজ্ঞ সুতায়
তাতে পড়ে না কোনো দাগ
কুঁচকায়ও না কোনো ছুতায়
নেই ময়লা হওয়ারও ভয়
এমনই টেকসই ব্যবহারে ছিঁড়েটিড়েও যায় না
                হয় না কোনো ক্ষয়।

আর বসে আছি অপেরা হাউসে, চলছে থিয়েটার
সাজানো তা সারি সারি চোখে— থরে বিথরে
            অজস্র চোখের দৃষ্টি অপার।
তবে আমার চোখ দুটিতে লেগেছে
         বেলেনডোনা পাতার বিষাক্ত ছোঁয়া
ফুলেছে পল্লব
         বড় হয়েছে চোখের পুতলি
           দৃশ্যপট হয়েছে আঁধারে ধোয়া।

আর যখনই তাকাই আমার অভ্যন্তরে
দেখি— জমাট বেঁধেছে মেঘ স্তরে স্তরে,
নিশ্চল হয়ে আছে ঝড় তুফান
                 নানা ধরনের আকার
                 বিজরীর আলোকিত বাণ,
উড়ছে ঝড়ো হাওয়ায় কাক
          উন্মাদ অশ্বের ছড়াচ্ছে কেশর
                  হ্রেসা, হাঁকড়াক।

আংগুলগুলো ছুঁয়ে যাচ্ছে বাঁশরীর নয়টি ঘাট
অবচেতনে তীব্র আতঙ্ক,
আমার এতো নার্ভাস লাগছে কেন
ভুলে যাচ্ছি জীবনের সমস্ত মানষাঙ্ক।
আমি তো তোমাকে ভালোবাসি
হাসির উচ্চরোলে গোছে যাচ্ছে হেরফের—আমাদের ভেদাভেদ,
ধোয়া পাকলা হবো আমরা এবার—হবো শুভ্র সফেদ।
বলিরেখা আমাদের ভালো একসাথে আঁকবে বয়সের ছাপ
উইসটেরিয়া পুষ্পের তীব্র মূর্ছনায় পুড়বে মনস্তাপ,
উন্মাদ দৃশ্যপটে সিঁড়ি ভেঙে পড়ে যাচ্ছি খাদে
একহারা গাছটি যেন বিষ্ফোরিত হচ্ছে তীব্র বিষাদে।

বাংলাদেশ সময়: ১৪২০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৮, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।