ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

শিল্প-সাহিত্য

বীট জেনারেশনের গ্রিনিচ ভিলেজ | সাদিয়া মাহ্জাবীন ইমাম

ভ্রমণ/শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩০৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৭, ২০১৪
বীট জেনারেশনের গ্রিনিচ ভিলেজ | সাদিয়া মাহ্জাবীন ইমাম

প্রথমে যেতেই চাইনি পরে ফিরে গিয়েছি বারবার। মুক্তিযুদ্ধের সময় ‘সেপ্টেম্বর অন যশোর রোড’ লিখে নিজেই সুর দিয়ে গান গেয়েছিলেন মার্কিন কবি এ্যালেন গীনসবার্গ।

শরণার্থীদের সাহায্যের জন্য গাওয়া হয়েছিল “লক্ষ শিশু চেয়ে আছে আকাশের দিকে, পেট ফুলে ঢোল, বড় বড় গোল চোখ, যশোর রোডের উপর লম্বা বাঁশের কুড়ে”। আমাদের দেশের যুদ্ধগ্রস্ত মানুষের জন্য এমন করে দ্বিতীয় কোনো বিদেশী সাহিত্যিক আর এগিয়ে আসেননি। সেই গীনসবার্গের শহর দেখতে যাওয়ার ইচ্ছে না হয়ে উপায় নেই তবে এ্যালেন তো আর বেঁচে নেই। তাই সেদিন আকর্ষণটা বেশি ছিল ম্যানহাটানের মমা, গুগেনহায়েমের মতো মিউজিয়ামগুলোর দিকে। এই ভিলেজ ছিলো তালিকার শেষ দিকে। স্থানীয়রা একে শুধু ভিলেজ নামেই ডাকে। কিন্তু আমার বোদ্ধা বন্ধু কাজল এবার নিউইয়র্কে এসেছেই ম্যানহাটানের গ্রিনিচ ভিলেজ দেখবে বলে। অবশ্য তার আগ্রহ কবি গীনসবার্গ নয় আরেক ইংরেজ কবি এডগার এ্যালেন পোর বাড়ি। এ্যালেন পো এখানে বসে ‘রেইভন’ লিখেছেন। কাজলকে সঙ্গ দিতেই সেদিন ওয়েস্ট ফোর্থ স্টেশনে নেমেছিলাম, মন ছিলো মিউজিয়ামে। কিন্তু এই স্টেশনে নেমে যা দেখলাম তা দু’মাস ধরে দেখা নিউইয়র্কের সাথে মেলেনা। প্রথম দৃশ্যটা মফস্বলীয় কেতার অন্তত ম্যানহাটানে মানানসই তো নয়ই।

বাইসাইকেল চালাচ্ছে ছেলে-মেয়েরা, বাস্কেট বল খেলছে, আর সেসব দৃশ্য উপভোগ করতে পোষা কুকুর-বিড়াল নিয়ে যারা বসে গল্প করছে তাদের বয়স ষাটোর্ধ্ব। গাছের গায়ে তর তর করে উঠে যাচ্ছে কাঠবিড়ালী। এখানে সেখানে পুরনো বই বিক্রি হচ্ছে ডেকে ডেকে। সব মিলে প্রথমেই মনে হয়েছে এখানকার মানুষেরা কসমোপলিটন নিউইয়র্কের ভেতর তাড়িয়ে তাড়িয়ে জীবন উপভোগ করতে অন্য একটা শহর বানিয়েছে। অথচ নিউইয়র্কের বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্যাম্পাস গ্রিনিচ ভিলেজে। কুইন্স-ফ্লাশিং থেকে ম্যানহাটান সিটি তারপর আবার গ্রিনিচ ভিলেজ পর্যন্ত যেতে যেতে আমরা তখন ক্ষুধার্ত। স্টেশনে নেমে সুমনের সেই ‘পেটে চাই খাবার নয়ত দিন চলেনা’ গানের মতো অবস্থা। এক রেস্তোরায় মেন্যু—প্রাইস দেখে ঢুকে গেলাম। স্যামন ফিস উইথ স্পিনাচ রাইস সাথে বার্ড উইজার। প্রায় একশ ডলারের বিলটা কাজল মিটিয়ে দেয়ার পর থেকে তাকে বেশ ভালো লাগতে শুরু করেছে। আহা সব বন্ধুরাই যদি এমন হতো তাহলে কাজ-কর্ম বাদ দিয়ে কবিতাই লিখতাম। বোহেমিয়ান হয়ে যাওয়ার একটা ঝুঁকিও নিয়ে ফেলতাম। অন্তত ‘হরে রামা হরে কৃষ্ণা’ ছবিটা দেখে কিন্তু অমন ইচ্ছে অনেক আগেই হয়েছিল।

এখানকার বাতাসে সত্যি কিছু আছে নয়তো এ হাওয়া গায়ে লাগার সাথে সাথে সেই কৈশোরের ভুলে যাওয়া স্বপ্ন এতো বছর পর ফিরে আসে! দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর পর এই ভিলেজ হয়ে উঠেছিল বোহেমিয়ানদের স্বর্গরাজ্য। গিনসবার্গ, কর্সো, ফালেৎগেত্তিরা তখন খালি পায়ে হাঁটতো, চুল-দাড়ি কামাতো না; মানুষের কাছ থেকে চেয়ে নিয়ে কাপড়-জামা পড়তো। আর তাদের কবিতা, গানে উঠে আসতো প্রথা ভাঙবার সুর। বিট জেনারেশনের প্রভাব তখন ছড়িয়ে পড়েছিল পাশ্চাত্য থেকে প্রাচ্যে। ষাটের দশকে ব্রিটেনে এ্যাংরি জেনারেশন, ভারতে হাঙরি আন্দোলন, ঢাকায় স্বাক্ষর, কণ্ঠস্বর গোষ্ঠী তৈরি হবার পেছনে ভাবা হয় বিট জেনারেশনই মূল কারণ। সেই বিট জেনারেশনের সব কবি-শিল্পীরা একরকম বিতাড়িত হয়ে আখড়া বানিয়েছিল এখানে। তাঁরা সাহিত্যের সব স্বীকৃত মানদণ্ড প্রত্যাহার করে নতুন শৈলীর প্রবর্তন করে।

বস্তুবাদ প্রত্যাখ্যান করে তাদের আগ্রহ হয়েছিল মানুষের অবস্থানের স্পষ্ট চিত্র তৈরিতে। ঝুঁকেছিল বিকল্প যৌনতার দিকে। তবে এসব গল্প মাত্র কয়েক যুগ আগের কিন্তু এই শহরের ভেতরকার গ্রামটার গল্প অনেক পুরনো। ১৬ শতকেরও আগে এখানে থাকতো নেটিভ আমেরিকানরা। পাশে বয়ে যাওয়া হাডসন নদীকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছিল তাদের জীবিকা। তখন গ্রামের উত্তর দিকটাতে তামাক চাষ হতো। ১৬৩০ সালে প্রথম ডাচরা এসে বসবাস শুরু করে তারপর আফ্রিকান মুক্ত দাসদের জন্য থাকার ব্যবস্থা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের কমন কাউন্সিলে প্রথম শহরটি ‘গ্রিনিচ ভিলেজ’ নামে অর্ন্তভুক্ত হয় ১৭১৩ সালে। এর পর বিশ শতকে একের পর এক ইতিহাসের জন্ম হয়েছে। ভিয়েতনাম যুদ্ধের বিরুদ্ধে মার্কিনীদের সবচেয়ে বড় প্রতিবাদ, গে রাইটস মুভমেন্ট, বোহেমিয়ানদের ছন্নছাড়া জীবন-যাপন সবকিছুই এই ভিলেজে।

ওয়াশিংটন রেস্তোরায় আহার পর্ব শেষ আমি আর কাজল কাগজ কলম নিয়ে নেটে ঢুকে ভিলেজের দর্শনীয় স্থান লিস্ট করলাম। এ্যালেন পো, গিনসবার্গ, ববডিলান সবারই স্মৃতি রয়েছে এখানে। এতো কিছু এতো অল্প সময়ে কিভাবে দেখব। সবই আবার দেখতে হবে পায়ে হেঁটে। বব ডিলানের ‘হাউ মেনি রোডস মাস্ট এ ম্যান ওয়াক ডাউন বিফোর ইউ কল হিম এ ম্যান’ গানটা কবীর সুমন বাংলা করেছিলেন, কতটা পথ  পেরুলে তাকে পথিক বলা যায়। আমাদেরও প্রশ্ন সেটা কতটা পথ হাঁটলে এখানে কিছুটা দেখা যাবে!  আমরা এখন হতভাগা পরিব্রাজক যাদের হাতে সময় অল্প কিন্তু দেখতে হবে অনেক কিছু। প্রথমে এ্যালেন পোর বাড়ি না গিনসবার্গের এ্যাপার্টমেন্ট খুঁজবো এ নিয়ে সামান্য একটু মনোমালিন্যও হয়ে গেল আমাদের। অগত্যা তালিকার তৃতীয়টি দেখব বলে সিদ্ধান্ত হলো। ইলেভেন স্ট্রিটে ‘স্ট্রান্ড’ হচ্ছে সবচেয়ে পুরনো বইয়ের দোকান। সেখানে যেতে হলে স্টেশনটার পাশ দিয়েই হাঁটতে হবে। এখানকার স্টেশনে নেমেই মনে হয়েছিল শহরের নামের সাথে ‘গ্রাম’ শব্দটা থাকলেও ডাকা উচিত ‘স্মৃতির যাদুঘর’।

নিউইয়র্কে গ্র্যাফিটি আর্ট আর সংস্কারহীন পুরনো বাড়ি দেখতে হলেও আসতে হবে গ্রিনিচ ভিলেজে। রঙ চটে যাওয়া লাল রঙা বাড়িগুলোর সাথে যা জমে আছে তা বহু বছরের নানা মানুষের মূল্যবান সময়। এখানে মার্ক টোয়েন, এডগার এ্যালেন পো, সালভাদর দালি, জ্যাকসন পোলক, ওয়াল্ট হুইটম্যান এর মতো মানুষরা থেকেছেন। ভারত উপমহাদেশের বিখ্যাত এক লেখকের স্মৃতিও আছে। ‘ছবির দেশে কবিতার দেশে’ বইটি পড়া থাকলে জানবেন, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়কে এখানে একটা বইয়ের দোকানে খুঁজতে বলেছিলেন ‘হাউল’র লেখক এ্যালেন গিনসবার্গ। সুনীল এ্যালেনের বাড়িতে ঢুকেই শুনেছিলেন কেউ একজন গাইছে ‘ফান্দেতে পড়িয়া বগা কান্দেরে’। সেই সময় এখানে বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের ফোক গানও গাইতো ছন্নছাড়া ভবঘুরে শিল্পীরা।

সুনীল রান্না করতে করতে কবিতা আউড়েছেন। এ্যালেনের সাথে উইলিয়াম ব্লেকের কবিতা সুর দিয়ে গান বানিয়েছেন। যুদ্ধ বিরোধী কবির গায়ে সামরিক পোশাক পড়া দেখে অবাক হয়ে জেনেছেন, যুদ্ধ ফেরত এক সৈনিকের কাছ থেকে বিনামূল্যে পাওয়া বলেই গায়ে চাপিয়েছেন। এর অনেক বছর পর আমাদের আরেক প্রিয় কবি নির্মলেন্দু গুনও এসে দাঁড়িয়েছিলেন গিনসবার্গের বাড়ির দেয়াল ঘেঁষে। বিকেলের পড়ন্ত রোদে এক বাংলাদেশী কবির ছবি তুলেছিলেন আমেরিকান কবি। আর তাকে উপহার দেয়া বইতে নির্মলেন্দু গুন ‘যশোর রোড অন সেপ্টেম্বর’ এর জন্য বাংলাদেশীদের হয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। সেই বাড়ি না দেখে কি ফেরা যায়! আমরা গিনসবার্গের ৫৭ নম্বর বাড়িটি খুঁজতে বইয়ের দোকানে ঢুকেছি। সেখানেই পেয়ে গেলাম বব ডিলানের উপর এক সংগ্রহশালা। সামনে বব ডিলানের উপর লেখা বইয়ের কর্নার। সেখানে রয়েছে এ্যালেনের হাতে লেখা একটা চিঠি, ফ্রেমে ঝুলছে। অবাক হয়ে গেলাম একটা বইয়ের নাম দেখে। নিউইয়র্কের এই ছোট্ট বইয়ের দোকানের স্তুপকৃত বইয়ের ভেতর উঁকি দিচ্ছে এ্যা পাসেজ টু ইন্ডিয়া। ইচ্ছে করছিলো দোকানিকে ডেকে বলি, এটা আমার অঞ্চলের ইতিহাস। বব ডিলানের উপর এদের কালেকশন দেখার মতো। ডিলানের সেই হাউ মেনি রোডস গানটির এ্যালবামের কাভার ফটো তোলা হয়েছিল এই ব্লিকার স্ট্রিটে এক কনকনে শীতের ভোরে। এখন দুপুর বেলা সেই বরফ পরা ঠাণ্ডা নেই তবে দুপাশের বাড়ির ভেতর দিয়ে গলির মতো পথটাতে শরীর জমানো বাতাস। রাস্তায় মানুষের চেয়ে গাছ বেশি। সেইসব গাছের গা বেয়ে দুপুর গড়িয়ে নামছে। সেই দুপুর গায়ে মেখে রাস্তার এখানে সেখানে কেউ গিটারে সুর তুলছে, কেউ সামনের গাছটা রঙ তুলিতে ধরতে চাইছে।

ব্লি¬কার স্ট্রিট থেকে ডানে ঘুরতেই ‘ক্যাফে ওয়া’। এখানে রয়েছে রাজ্যের যতো মিনি থিয়েটার আর কফি পার্লার। কালো সাইনবোর্ড টাঙ্গানো ক্যাফেটা ইচ্ছে করেই বাইরের দিকে সংস্কারহীন। ক্যাফে ওয়া হলো এ অঞ্চলের কফি হাউজ। ষাটের দশকে ভবঘুরেরা যেখানে কফি খেয়ে টেবিল চাপরে আড্ডা দিতো। তারস্বরে গলা ছেড়ে গান গাইতে গাইতে টেবিলের উপর উঠে দাঁড়িয়ে সরকারকে তীব্র ভাষায় গালমন্দ করতো। বব ডিলানও এখানে এসেই প্রথম নজড় কাড়েন। ১৯৬১ সালের জানুয়ারিতে নিউইয়র্কে এসে সাবওয়ে স্টেশন থেকে বেরিয়ে তুষারপাতের ভেতর পড়েছিলেন ডিলান। কোনোমতে দৌড়ে আশ্রয় নিলেন এই ক্যাফে ওয়াতে। তখন ভিলেজ ছিলো বোহেমিয়ানদের স্বর্গরাজ্য।

এখন তাদের আঁকা ছবি, কবিতা, বই গান নিয়ে দোকান জমেছে। বেশিরভাগ বাড়ির বাইরে লোহার কালো পেচাঁনো সিঁড়ি ঘুড়ে উঠেছে ছাদে। এ্যালেন গিনসবার্গের মতো কবিদের মাঝ রাতে এমন সিড়ি বেয়ে ছাদে যেতে ইচ্ছে করাই স্বাভাবিক। তাই ভিলেজেই বিভিন্ন সময় তিনটি বাড়িতে থেকেছেন এ্যালেন। রীতিমতো গবেষণার পর তার বাড়ি খুঁজে বের করা হলো, যেখানে বিট জেনারেশনের শিল্পী-কবিরা দিন রাত মেতে থাকতো নতুন সৃষ্টির উন্মাদনায়। আমরা নিচে দাঁড়িয়েই কল্পনা করলাম, সুনীল আর এ্যালেন গলা ছেড়ে গান গাইছেন উপরতলায়। আফশোস যে এখন উপরে উঠবার অনুমতি নেই।

আশাহত মনে সেই বাড়ির সামনে থেকে ফিরে এসে ‘ল্যা পাস্তা বিস্ত্র’ নামে এক ইতালিয়ান রেস্তোরায় বসলাম। এটি বেশ কিছু আর্ট শপের গা ঘেঁষে। একটি দোকানের সামনে বব ডিলানের মূর্তি, লেখা আছে, ছবি তুললে ৫ ডলার। ছায়া আর নীরবতার এই পথটা পার হয়ে এবার গন্তব্য ইলেভেন স্ট্রিটে ‘স্ট্র্যান্ড’ বুক স্টোর। বাড়িগুলোর পাশ কাটিয়ে সোজা এগিয়ে গেলে চার রাস্তার মোড়ে ‘স্ট্রান্ড’। নিচে ২ ডলারে বিক্রি হচ্ছে পুরনো বই। উপরে বিভিন্ন সারিতে নানা বিষয়ের বইয়ের সাম্রাজ্য। কাজল এক কপি ‘হাউল’ কিনলো ৮ ডলারে। হাইল হাতে রাস্তায় বেরিয়ে এবার গন্তব্য এডগার এলেন পোর বাড়ি আর আর এক পাখি প্রেমিককে দেখা। ততক্ষণে গ্রিনিচ ভিলেজের চেহারা বদলেছে। রাস্তার হলদে আলো অন্ধকার তাড়াচ্ছে। সন্ধ্যের মুখে এডগার এ্যালেন পোর বাড়ি খুঁজে বের করলাম নিউ ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের ল’ ডিপার্টমেন্টের ভেতর। এখানে কবি তার স্ত্রীসহ থাকতেন। তার এ্যাপার্টমেন্টটি ভেঙ্গে এই বিল্ডিংয়ে যাদুঘর তৈরির সময় নাকি প্রতিবাদ আন্দোলন হয়েছিল। ছোট্ট একটা মিউজিয়াম কবির। তার বাড়ির ইট আর কিছু বই রাখা আছে। সাথে আছে কবির ব্যবহৃত কিছু জিনিসপত্র বেশিরভাগই চা ও তরল পানীয় পানের পাত্র।

বাংলাদেশ থেকে বেড়াতে এসে এডগার এ্যালেন পোর বাড়ি খুঁজছি যেনে কেয়ার টেকার খুব অবাক হয়েছেন। ততোক্ষণে এই ভিলেজের ভেতরই প্রায় চার থেকে পাঁচ মাইল হেঁটে ফেলেছি। এবার শেষ দর্শন ওয়াশিংটন স্কয়ার পার্ক। ষাটের দশকে প্রতি রোববার এই পার্ক হয়ে যেতো মিনি মিউজিক ওয়ার্ল্ড। দুনিয়ার তাবৎ ভবঘুরে যন্ত্রশিল্পী আর কবিতা প্রেমিরা জড়ো হতো পার্কে। বঙ্গো ড্রাম, কঙ্গা ড্রাম, স্যাক্সো ফোন, মাউথ অর্গান, যার যা আছে সব নিয়ে হাজিড় হতো পার্কের গাছতলায়। এখানে রয়েছে সেই পাখি প্রেমিক যার গায়ে সারা দিন পাখি বসে। পার্কে ঢুকেই প্রথম দেখা হলো সেই অদ্ভুত মানুষটির সাথে। মুখের দিকে তাকালেই মনে হয় পাখি ছাড়া জাগতিক সব কিছুতেই অনাগ্রহ। ক্রমাগত ক্লিক করে কিছু ছবি নিলাম কিন্তু সে ভ্রুক্ষেপহীন। পাখিরা ফিরে গেলে সেও যেন আধারের ভেতর কোথায় হেঁটে হেঁটে মিলিয়ে গেলো। পার্কের একপাশে গ্যারি বোল্ডির মূর্তি।

ধারেকাছেই রয়েছে সেই তিনশ বছরের পুরনো গাছটা। কিন্তু তাকে খুঁজে বের করা এখন অসম্ভব। ডিলান, গিন্সবার্গ, এ্যালেন পো অথবা গে রাইট, বিট জেনারেশনের সংস্কৃতি আন্দোলন নিয়ে অনেক কথা ছিলো আমাদের কিন্তু ওয়াশিংটন স্কয়ার পার্কের বেঞ্চিতে তখন সারাদিনের শব্দহীন মোহগ্রস্থতা আচ্ছন্ন করে রেখেছে দুই বাংলাদেশি পর্যটককে। এই শহরের মতো এতো সবুজ আর মানুষের প্রাণের অতটা রঙ কসমোপলিটন নিউইয়র্কের আর কোথাও যে নেই। সারাদিন শেষে আমরা পরিশ্রান্ত। প্রথম দিনের গ্রিনিচ ভিলেজ ট্যুরের সমাপ্তি হলো পাশের ম্যাক ডগাল স্ট্রিটে এক ক্যাফেতে বসে। এর বা পাশে গিন্সসবার্গের বাড়ি. ডান দিকে এ্যালেন পো আর সামনেই পড়বে বব ডিলানের সেই বইয়ের দোকান যার পাশ দিয়ে চলে গিয়েছে হাউ মেনি রোডস মাস্ট এ ম্যান গানের রেকর্ডিংয়ের ব্লিকার স্ট্রিট। দু’দিন পর আবার ফিরে আসার পরিকল্পনা করে সেদিনের মতো অন্ধকারের ভেতর আমরাও ফিরে এলাম সারাদিনের প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য সমস্ত স্মৃতি নিয়ে।    

বাংলাদেশ সময়: ১৩০৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৭, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।