ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

শিল্প-সাহিত্য

প্রতিদিনের ধারাবাহিক

টানেল | এর্নেস্তো সাবাতো (৫০) || অনুবাদ: আলীম আজিজ

অনুবাদ উপন্যাস/শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯১৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১, ২০১৪
টানেল | এর্নেস্তো সাবাতো (৫০) || অনুবাদ: আলীম আজিজ অলঙ্করণ: মাহবুবুল হক

___________________________________

এর্নেস্তো সাবাতো (২৪ জুন ১৯১১-৩০ এপ্রিল ২০১১) আর্জেন্টাইন লেখক এবং চিত্রকর। লেখালেখির জন্য পেয়েছেন লিজিওন অফ অনার, মিগুয়েল দে সেরভেন্তেস পুরস্কার।

এছাড়াও তিনি ছিলেন লাতিন আমেরিকান সাহিত্য জগতের বেশ প্রভাবশালী লেখক। তাঁর মৃত্যুর পর স্পেনের এল পায়েস—তাঁকে উল্লেখ করেন ‘আর্জেন্টিনাইন সাহিত্যের শেষ ধ্রুপদী লেখক’ বলে।
‘এল তুনেল’ (১৯৪৮), ‘সবরে হেরোস ইয়া টুম্বাস’ (১৯৬১), ‘অ্যাবানদন এল এক্সতারমিনাদোর’ (১৯৭৪) তাঁর জগদ্বিখ্যাত তিন উপন্যাস।
_________________________________

৪৯তম কিস্তির লিংক


লম্বা একটা সময় নিঃসাড় হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলাম আমি আমার স্টুডিওর মাঝখানে, কি করব জানি না, নিজের বোধশক্তি কিংবা চিন্তা কোনোটাকেই কোনো রকম নির্দেশ দিতে পারছি না। শেষ পর্যন্ত একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে সক্ষম হলাম। বাথরুমে ঢুকলাম, ঠাণ্ডা পানি দিয়ে চৌবাচ্চা পূর্ণ করলাম, কাপড় খুলে নেমে পড়লাম। আমি চিন্তা করার শক্তি ফিরে পেতে চাই, মাথা পরিষ্কার না হওয়া পর্যন্ত তাই চৌবাচ্চাতেই বসে থাকব ঠিক করলাম। আস্তে আস্তে আমার মাথা কাজ করতে শুরু করল। আমার এখন পরিপূর্ণভাবে চিন্তা করা প্রয়োজন, কারণ আমার অর্ন্তজ্ঞান বলছে আমি চূড়ান্ত মুহূর্তে পৌঁছে গেছি। সংকটময় মুহূর্ত কোনটা? নিজেকে করা এই প্রশ্নের জবাবে অনেকগুলো শব্দ আমার মাথায় এল। শব্দগুলো হল: রুমানিয়ান, মারিয়া, বেশ্যা, আমোদ, ভণ্ড। এখন আমার যুক্তি হল ওই শব্দগুলোকে অবশ্যই প্রয়োজনীয় তথ্যসম্বলিত হতে হবে, গভীর সত্য থাকতে হবে এর মধ্যে, যা দিয়ে আমি শুরু করব। আমি শব্দগুলো বারবার সঠিক ক্রমনুসারে সাজানোর চেষ্টা করে গেলাম, যতক্ষণ পর্যন্ত না এটা একটা অদ্ভূত কিন্তু অকাট্য ন্যায়সম্মত বাক্যরূপ না নিল, যেমন: মারিয়া আর ওই বেশ্যা মেয়েটার অভিব্যক্তি এক রকম; বেশ্যা মেয়েটা আনন্দ পাওয়ার ভান করে; মারিয়া, সেও আনন্দ ভান করে: কাজেই মারিয়া একজন বেশ্যা।
‘বেশ্যা! বেশ্যা! বেশ্যা মাগী!’ আমি চিৎকার করে উঠি, লাফ দিয়ে দাঁড়িয়ে যাই চৌবাচ্চা থেকে।
আমার মাথা এখন আমার সেরা দিনগুলোর মতো জবরদস্ত শক্তিতে কাজ করছে: আমি স্বচ্ছ স্ফটিকের মতো স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি আমাকে এই অবস্থার অবশ্যই ইতি টানতে হবে, আর কোনো ভাবেই আবারও মারিয়ার আহত কণ্ঠস্বরে কিংবা ওর ছলনায় আমার পথভ্রষ্ট হওয়া চলবে না। আমাকে পুরোপুরি এখন যুক্তির ওপর ভর করে চলতে হবে, আমাকে খতিয়ে দেখতে হবে মারিয়ার প্রত্যেকটা কথার চূড়ান্ত উপসংহার, ওর ভঙ্গি, ওর সন্দেহজনক শব্দচয়ন, আর ওর দ্ব্যর্থবোধক নিরবতা।

এখন এটা অনেকটা যেন এক জায়গায় কেন্দ্রিভূত হয়ে থাকা তীব্র চোখ ধাধানো আলোর নিচে দিয়ে ঝিম ধরানো সব দুঃস্বপ্নের মিছিল করে আসার মতো, শরীর থেকে আমার সব কাপড়চোপড় খুলে ফেলার মতো সব সংশয়েরাও যেন আমার সামনে দিয়ে এক এক করে পার হয়ে যাচ্ছে: প্রথম টেলিফোন আলাপ, সঙ্গে দীর্ঘ অনুশীলনে রপ্ত কণ্ঠস্বরের পরিবর্তন থেকে মারিয়ার বিস্ময়কর সহজাত কপটতার ফাঁস হয়ে যাওয়া, কথার হেয়ালিতে প্রকাশ হয়ে পড়া তার চারপাশে ঘিরে থাকা সব কালো ছায়ার; আর ওর ভয়, ওর কারণে বুঝি আমি আঘাত পাই— এ কথার একটাই অর্থ হতে পারে, ‘আমার মিথ্যা তোমার ক্ষতি করবে, ক্ষতিগ্রস্ত হবে তুমি আমার পরস্পরবিরোধিতায়, আমার গোপন কর্মকাণ্ডে, আমার ছদ্ম আবেগ আর আমার প্রবল অনুরাগের ছলনায়,’ যেহেতু সত্যিকারভাবে ভালোবেসে সে কখনই আমাকে কোনো আঘাত দেয়নি; এই খেলার সবচেয়ে বেদনাদায়ক দৃশ্য হল; শুরুর দিকে ওর আমার চুমুগুলো এড়ানোর যে প্রাণান্ত চেষ্টা, আর শারিরীকভাবে আমার সঙ্গে ও একমাত্র মিলিত হয়েছে তখনই যখন তীব্রভাবে ওর অনীহার কথা স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছে, কিংবা কিছু কিছু ক্ষেত্রে, ওর মধ্যে যখন মাতৃসুলভ কিংবা ভগ্নিসুলভ স্নেহ কাজ করেছে।

(চলবে)

বাংলাদেশ সময়: ১৯১০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০১, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।