ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

শিল্প-সাহিত্য

প্রতিদিনের ধারাবাহিক

টানেল | এর্নেস্তো সাবাতো (৪৯) || অনুবাদ: আলীম আজিজ

অনুবাদ উপন্যাস/শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৪৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩০, ২০১৪
টানেল | এর্নেস্তো সাবাতো (৪৯) || অনুবাদ: আলীম আজিজ অলঙ্করণ: মাহবুবুল হক

___________________________________

এর্নেস্তো সাবাতো (২৪ জুন ১৯১১-৩০ এপ্রিল ২০১১) আর্জেন্টাইন লেখক এবং চিত্রকর। লেখালেখির জন্য পেয়েছেন লিজিওন অফ অনার, মিগুয়েল দে সেরভেন্তেস পুরস্কার।

এছাড়াও তিনি ছিলেন লাতিন আমেরিকান সাহিত্য জগতের বেশ প্রভাবশালী লেখক। তাঁর মৃত্যুর পর স্পেনের এল পায়েস—তাঁকে উল্লেখ করেন ‘আর্জেন্টিনাইন সাহিত্যের শেষ ধ্রুপদী লেখক’ বলে।
‘এল তুনেল’ (১৯৪৮), ‘সবরে হেরোস ইয়া টুম্বাস’ (১৯৬১), ‘অ্যাবানদন এল এক্সতারমিনাদোর’ (১৯৭৪) তাঁর জগদ্বিখ্যাত তিন উপন্যাস।
_________________________________

৪৮তম কিস্তির লিংক


আমার নির্দিষ্ট কোনো প্রশ্নেরই জবাব দিলো না ও। কিন্তু শেষপর্যন্ত আমার নিজেকে হত্যা করার হুমকিতে কাজ হলো, পরদিনই বুয়েন্স আয়ার্সের ফিরে আসার প্রতিশ্রুতি দিলো ও, যদিও ‘কেন’ আসছে তার কোনো সদুত্তর জানা নেই তার।

‘এতে যা হবে,’ খুব ক্ষ্ণীণ গলায় যোগ করলো ও,‘আবারও আমরা নিষ্ঠুরভাবে পরস্পরকে রক্তাক্ত করবো। ’
‘তুমি না এলে, আমি আত্মহত্যা করবো,’ আমি শেষবারের মতো কথাটা পুনরাবৃত্তি করলাম। ‘না আসার সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে এটা একবার ভেবো। ’

আমি আর কিছু না বলে শব্দ করে রিসিভার নামিয়ে রাখলাম, এবং ওই মুহূর্ত পর্যন্ত ও নিজে এসে যদি সব ঝামেলা মিটিয়ে ফেলার কোনো উদ্যোগ না নেয় তাহলে আত্মহত্যা করার ব্যাপারে সত্যিকার অর্থেই আমি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলাম। অদ্ভুতভাবে এই সিদ্ধান্তে আমি এক ধরনের তৃপ্তি অনুভব করছিলাম। ‘ও বুঝবে এবার,’ আমি ভাবলাম, যেন এটা আমার কোনো প্রতিশোধ।

অসহণীয় একটা দিন।
রাগে ফুসতে ফুসতে আমি স্টুডিও ছেড়ে বেরিয়ে এলাম। যদিও আমি জানি কালই মারিয়ার সঙ্গে আমার দেখা হচ্ছে, তারপরও বিষণ্নতা আর দমবন্ধ করা এক ঘৃণায় টগবগ করছে আমার ভেতরটা। আমার ধারণা এটা আমার নিজের কারণেই, কারণ হৃদয়ের গভীরে আমি জানি আমার নিষ্ঠুর ওই অপমানের কোনো ভিত্তি নেই। তারপর মারিয়া অত্মপক্ষ সমর্থনের কোনোরকম চেষ্টা না করা আমাকে আরও বেশি ক্ষিপ্ত করেছে আর, ও আমার রাগ প্রশমিত না করে, ওর নরম ধৈর্যশীল, আহত কণ্ঠস্বর আমার মাথায় আরও বেশি করে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে।
নিজেকে খুবই তুচ্ছ মনে হলো। ওই দিন সন্ধ্যায় আমি আকণ্ঠ মদ পান করলাম, লেনার্দো আলেম বারে মারামারিতেও জড়ালাম। অতি বিকৃত রুচির এক মহিলাকে বগলদাবা করে বেরুনোর সময় ওর উদ্দেশে অশ্লীল ইয়ার্কি ছুঁড়ে মারায় এক নাবিককে সরাসরি লড়াইয়ে প্রস্তাব দিয়ে বসলাম। তারপর আর কোনো কিছু মনে নেই, লড়াইয়ের শুরুটা মনে আছে, হৈ হৈ করে লোকজন সরে গিয়ে আমাদের জায়গা করে দিলো। তারপর, মনে পড়ছে মেয়েটাকে নিয়ে বাইরে বেরিয়ে এসেছি। ঠাণ্ডা বাতাসে বেশ ভালো বোধ করলাম। ভোরের দিকে ওকে আমার স্টুডিওতে নিয়ে এলাম। মেয়েটা দরজা দিয়ে ঘরে ঢুকেই ইজেলের একটা ছবি দেখে হাসতে শুরু করে দিলো। (এটা আমি আগে বলেছি কিনা জানি না যে ওই জানালার দৃশ্যের ছবিটা আঁকার পর থেকেই, আমার ছবির বিরাট বদল ঘটে গেছে: আমার আগের আঁকার ধরনের মানুষ, বস্তু মহাজাগতিক এক পরিবর্তন অতিক্রম করে এসেছে। এ ব্যাপারে পরে আরও বিশদ বলবো কিন্তু এখন আমি চূড়ান্ত ওই দিনগুলোয় কি ঘটেছে সে কথাই শুধু বলতে চাই। ) মেয়েটা, হাসতে হাসতে, একবার ছবিটিকে দেখে আরেকবার আমাকে, যেন কোনো একটা ব্যাখ্যা ও শুনতে চায়। তুমি বুঝতেই পারছো, ওই ছেনাল মাগিটার আমার চিত্রকর্ম নিয়ে কি ভাবলো তাতে আমার কিছুই এসে যায় না। আমি ওকে বললাম অযথা সময় নষ্ট করো না।
আমরা বিছনায় গেছি তখনই ভয়ঙ্কর একটা ব্যাপার আবিষ্কার করলাম: রুমানিয়ানের অভিব্যক্তির মতো অবিকল অভিব্যক্তি কোনো এক সময়ে আমি মারিয়ার মধ্যে দেখেছি।
‘খানকি!’ চিৎকার করে উঠলাম আমি, ঝটকা মেরে সরে গেলাম রুমানিয়ানের কাছ থেকে। ‘আল্লা, ঠিক, ও তো একটা খানকি!’
রুমানিয়ান বিষধর সাপের মতো ঝটিতে উঠে বসেই আমার বাহুতে, রক্ত বেরিয়ে আসার মতো প্রচণ্ড এক কামড় বসিয়ে দিলো। ও মনে করেছে আমি ওকে বলেছি। তীব্র বিরাগের কাছে পর্যুদস্তু আর গোটা মানবজাতির ওপর ঘেন্নায়, আমি লাথি মেরে ওকে আমার স্টুডিও থেকে বের করে দিয়ে বললাম, আমার চোখের সামনে থেকে দূর না হলে ওকে আমি কুকুরের মতো গুলি করে মারবো। অপমানে চিৎকার করতে করতে বেরিয়ে গেলো ও, তারপরও ওর উদ্দেশে টাকাটা ছুঁড়ে মারলাম আমি।

(চলবে)

বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩০, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।