ঢাকা, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

শিল্প-সাহিত্য

কর্ম | জুলিয়ান সিদ্দিকী

গল্প / শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬১৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৭, ২০১৪
কর্ম | জুলিয়ান সিদ্দিকী

দিনটা কেটেছে কেবল শূন্যতাকে তাড়া করে। তাই বেলা ডুবার অব্যবহিত পরেই মাগরিবের আযান ধ্বনিত হলে উঠে পড়ে হবিউল্লা।

এক পায়ে দাঁড়িয়ে ভারসাম্য বজায় রেখে নিচু হয়ে চটের বস্তাটা তুলে বাতাসে ঝাপটা মেরে ধুলা ঝাড়ে। যেন তার আশপাশে ব্যস্ত পথচলা মানুষ কিংবা সমাজ ব্যবস্থার মুখেই সবগুলো ধুলা মাখিয়ে দেয়। সে সঙ্গে বিড়বিড় করে নিজের অদৃষ্টকেও গালমন্দ করে। গালমন্দ করে এমন একটা নীতি নৈতিকতাহীন দেশে জন্ম গ্রহণ করাটাকেও।
বছর কয়েক আগে এক মিটিঙের খিচুড়ি খেতে গিয়ে নেতাদের মুখে শুনেছিলো, স্বাধীনতা পাবার অল্প কয়েক বছরের ভেতরই উন্নতি করতে আরম্ভ করেছিলো মালয়েশিয়া। অথচ তেতাল্লিশ বছরে বাংলাদেশের অসংখ্য মাটি বা শনের ঘর টিনের নয়তো ইটের বাড়িতে পরিবর্তিত হয়েছে। অনেক তালপাতার সেপাই পেট মোটা হয়েছে। আলিশান ঘর-বাড়ি, বড় বড় অফিস, মার্কেট, হাসপাতাল আর সেতু হলেও দেশটার কোনো উন্নতি হলো না। ধনী আরো ধনী হয়ে গেলো। গরিব হয়ে গেলো আরো গরিব। মাঝখানের একটা দলও মিশে গেছে ধনীদের কাতারে। তাদের আরেকটা অংশ নেমে এসেছে দরিদ্রের কাতারে।
মানুষের পকেটে অনেক টাকা, প্রচুর বিলাসিতা করলেও কোনো এক অজানা কারণে বাইরের দেশগুলোর কাছে দরিদ্রই থেকে গেছে সে রহস্য হয়তো কোনো দিনও পরিষ্কার হবে না হবিউল্লার কাছে। চারদিকে যেন একটি অদৃশ্য অন্ধকার জেঁকে বসে আছে আর তার ভেতর দিয়ে অন্ধ মানুষগুলো পার করে দিচ্ছে যার যার।
ভাবতে ভাবতে একটি সূক্ষ্ম হাসি ফুটেই মিলিয়ে যায় হবিউল্লার মুখে। বগলের নিচে ক্র্যাচ ঠেকিয়ে চটের বস্তাটা ভাঁজ করে কাঁধে ঝোলানো ব্যাগে ঢুকিয়ে নেয় সে। সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি প্রাপ্ত আয় গুনে পুরো এক শ’ টাকার হিসেব মেলাতে না পেরে নিজের অজ্ঞাতেই যেন মুখ থেকে ছিটকে বেরিয়ে আসে, ফকিন্নির দল!
একদলা থুতু বেশ শব্দ করেই ফেলে সে। তখনই তার মনে হয় যে, লোকজনের আয় বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে তাদের মনগুলোও যেন ছোট হয়ে যাচ্ছে দিনদিন। দান খয়রাতের ব্যাপারগুলো এভাবেই একদিন উঠে যাবে মানুষের মন থেকে। তার ওপর শুনতে পাচ্ছে শহরের কোনো কোনো এলাকায় ভিক্ষুক দেখা গেলেই সরকারের লোক ধরে নিয়ে শহরের বাইরে রেখে আসবে বা জেলে ঢুকিয়ে দেবে। যেখান থেকে ফিরে আসা অসম্ভব হয়ে যাবে। হবিউল্লার একবার ইচ্ছে হয়েছিলো সরকারকে গিয়ে জিজ্ঞেস করে যে, ভোটের সময় তো ভালোই খাতির যত্ন করা হয় তাদের, তাহলে খাওয়া-পরার কোনো ব্যবস্থা করতে পারে না কেন? যার দেশে মানুষ খেতে পায় না, চিকিৎসা পায় না সেই দেশের সরকার আর তার দলের লোকজনের উচিত সরকারি টাকায় ফুটানি না করা। লাজ-লজ্জার বালাই খানিকটা হলেও তাদের চোখে থাকা দরকার। অথচ বড় মুখ করে বলে জনগণের জন্যই সরকার। সরকারি কোনো মন্ত্রী বা পাতি মন্ত্রী রাস্তা দিয়ে গেলেও পুলিশ দিয়ে লোক চলাচল বন্ধ করে দেয়। যেন তাদের বাবার বাড়ির উঠান, যখন খুশি তখনই বেড়া দিয়ে রাখবে।
প্রতিদিন প্রায় একই ধরনের ভাবনায় ডুবে থেকে বলতে গেলে ঘোরের ভেতরই সে রাস্তায় খটখট শব্দে ক্র্যাচ ফেলে এগিয়ে যায় বস্তির দিকে। আশপাশে তেমন একটা দৃষ্টি দেবার কথা মনে হয় না। রাস্তা পার হয়ে ওভার ব্রিজের নিচে আসতেই তার বুক দুরুদুরু করে ওঠে। কয়েক মাস আগে ওভার ব্রিজ খসে পড়ে বেশ কয়েকজন মারা গিয়েছিলো। কিন্তু যারা সেই ব্রিজ বানিয়েছিলো তাদের কারোরই কিছু হয়নি যতটা ক্ষতি হয়েছিলো মৃত আর আহত মানুষগুলোর পরিবারের। ওপরের দিকে মুখ তুলে কিছু একটা দেখতে চেষ্টা করে সে। হয়তো বা দৃষ্টির মানদণ্ডে পরখ করে নিতে চায় ওভার ব্রিজের দৃঢ়তা।
যেদিন আয় ভালো হয় সেদিন রিকশা করেই ঘরে ফিরে যায় সে। আজ এক শ’ টাকাও মেলাতে পারেনি বলে হেঁটে হেঁটেই তাকে ঘরে ফিরতে হচ্ছে। গলির মোড়ে আসতেই তার হঠাৎ চোখ পড়ে রিকশার সিটে বসে চানাচুর খাচ্ছে তারেক। তার সঙ্গে চোখাচোখি হতেই তারেক বলে উঠলো, আয়, চানাচুর খা!
হবিউল্লা মাথা নেড়ে অসম্মতি জানালেও তারেকের রিকশার নিচের অংশে তাকিয়ে থাকে অবাক দৃষ্টিতে। এক সময় সেও রিকশা চালাতো। কিন্তু দুর্ঘটনায় একটি পা হারানোর ফলে এখন ভিক্ষা করাটাই তার বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন হয়ে উঠেছে।
হবিউল্লার দৃষ্টি লক্ষ করে তারেক বলে ওঠে, কী দেখছো? এইডা অটো রিশকা। মটরে চলে। পেট্টুল চাপনের কষ্ট নাই।
তারেকের কথা শুনে মুখ না তুললেও হবিউল্লার চোখ দুটো কেমন চকচক করে।
তারেক রিকশা থেকে নেমে বললো, চানাচুর না খাইলে আয়, একটা চা খাই। খাবি তো?
চায়ে আপত্তি নেই হবিউল্লার। এমনিতেও ঘরে গেলে তার মেয়ে নয়ন চা বানিয়ে আনবে। সঙ্গে হালকা নাস্তা হিসেবে বাসী বন বা পাউরুটি নয়তো শুকনো কোনো বিস্কুট দেবে।
/images_1মাস চারেক হতে চললো নয়ন বেকারিতে কাজ পেয়েছে। কাজ শেষে কোনো কোনো দিন এক আধখানা পাউরুটি নয়তো এক দুটো বন নিয়ে আসে। কোনো কোনো দিন বিস্কুটও নিয়ে আসে। প্রথমে সে ভয় পেয়েছিলো কোনো সমস্যা হয় ভেবে। নয়নই জানিয়েছে যে,  মালিক থেকে শুরু করে সবাই জানে। বাসি রুটি বন বা ভাঙাচোরা বিস্কুটগুলো যাদের যখন কাজ থাকে ভাগ করে নিয়ে যায়। পিতা কন্যার আয় মিলিয়ে এখন তাদের উপোস করতে হয় না। বরং মাঝে মধ্যে মাছ অথবা মুরগি দিয়েও ভাত খেতে পারছে।
চা খেতে খেতে হবিউল্লার ব্যক্তিগত খোঁজ খবর নেয় তারেক। নিজের সন্তানহীনতার আক্ষেপও প্রকাশ করে এক ফাঁকে। বউ তাকে আরেকটি বিয়ে করতে বলছে। কিন্তু তার সাহস বা ভরসা কোনোটাই হয় না। সতিনের ঝগড়া বা সংসারে খাওয়ার মানুষ বাড়লে সেই তুলনায় আয় তেমন একটা বাড়বে না। আর আয় বাড়াতে গেলে শরীরের ওপর চাপ পড়বে। বাড়তি পরিশ্রমের প্রভাব পড়বে দাম্পত্য জীবনেও। তাছাড়া নতুন বউয়েরও যদি কোনো সন্তান না হয়, তাহলে বাড়তি খরচ সে কতোদিন টানতে পারবে?
আলাপের ফাঁকে তারেক এক সময় হবিউল্লাকে বলে, কয়দিন আর একলা ঘুমাইবি? এইবার দেইখ্যা হুইন্যা কোনো একজনরে ঘরে নিয়া আয়!
বিস্কুট চিবিয়ে এক চুমুক চা গিলে হবিউল্লা বলে, কেমুন বেডি আনতে কস, ফকিন্নি, কামের বুয়া নাকি গার্মেন্সের?
কথা শুনে তারেক হাহা করে হেসে উঠে বলে, তর রস তাইলে শুকায় নাই?
তারেকের হাসির শব্দে আশপাশের কেউ কেউ মাথা ঘুরিয়ে হয়তো তাদের দেখে নেয় একবার। আর তাই ব্যাপারটা দেখেই হয়তো হবিউল্লা গলার স্বর আরো খানিকটা উঁচু করে বলে, তুই কি মনে করছিলি এক ঠ্যাঙ খোয়ানের লগে লগে শুকাইয়া চিটা ধান হইয়া যামু?
তারেক হঠাৎ গম্ভীর হয়ে বলে, হোন, ইয়ার্কি না! এইবার একটা বিয়া কর। হাতে ভালা মাইয়া আছে।
-নাহ, আর বিয়া শাদি না। ভিক্ষার কপাল যদ্দিন আছে তদ্দিন আর এই নাম লমু না।
-তাইলে ভিক্ষা ছাড়স না ক্যান?
-ভিক্ষা ছাড়লে কী কইরা খামু?
-রিশকা চালাবি। অটো রিশকা। পেট্টুল চাপনের কষ্ট নাই বইল্যা দুই ঠ্যাঙেরও কাম নাই।
তারেকের কথা শুনে বুকের ভেতরটা আচমকা ধক করে উঠলেও কথাগুলো যেন পুরোপুরি বুঝতে পারে না সে। কিন্তু বিশ্লেষণের জন্য ফের অনুরোধও করে না।
তাদের চা খাওয়া হয়ে গেলে তারেক বললো, ঘরে যা অখন। গাও গোসল দিয়া আরাম কর। রাইত দশটার সময় রিশকা জমা দিয়া দিমু। তহন তুই ঘরে আইস।
রাতের বেলা ঘর থেকে বের হতে ইচ্ছে হয় না হবিউল্লার। তাই সে বলে, আইচ্ছা, শইল ভালা লাগলে আইতে চেষ্টা নিমু।
-চেষ্টা ফেষ্টা না!
তারেক যেন ধমকে ওঠে। ফের বলে, মায় আইছে। তরে দেহা করতে কইছে।
কথাটা শুনেই মনটা যেন হঠাৎ ভালো হয়ে যায় তার। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই বলে ওঠে, আইচ্ছা আমু!
ঘরে ফিরতে ফিরতে হবিউল্লা ভাবে যে, সে তো বলতে গেলে বাতিল একজন মানুষ। তারপরও কেউ তার দিকে স্নেহের হাত বাড়িয়ে রেখেছে এটাই যেন তাকে নতুন করে জাগিয়ে তোলে।
ঘরে ফিরতেই নয়নের জেরার মুখে পড়ে সে। বাবা, আযান হইসে হেই কোন সুম, আর তুমি অহন আইলা? তোমারে না আগেই কইয়া দিলাম আইজগা থাইক্যা আমার রাইতে ডিউটি!
কাঁধ থেকে ঝোলাটা নামিয়ে বেড়ার গায়ে ঝুলিয়ে দিতে দিতে হবিউল্লা বলে, তারেকের লগে কথা কইয়া দেরি হইয়া গেলো।
তারপর ক্র্যাচে ভর দিয়ে লুঙ্গি গামছা টেনে নিয়ে বাইরে বেরিয়ে যায় সে। দরজার কাছে রাখা বালতির পানিতে হাত মুখ ধুয়ে নিয়ে গোসলটাও সেরে নেয়। ততক্ষণে ঝোলা থেকে খুচরা টাকা বের করে গুনে হতাশ কণ্ঠে নয়ন বললো, বাবা, মানষ্যে কি আগের চাইয়া আরো ফকিরা হইয়া গেছে?
হবিউল্লা ভেজা লুঙ্গি পাল্টে নিয়ে গামছায় শরীর আর মাথা মুছতে মুছতে হেসে বলে, ফকির মাইনসের কি ট্যাকা-পয়সায় হয়? তারপর ঘরে ঢুকে বেড়ার গায়ে ভেজা লুঙ্গী-গামছা মেলে দিতে দিতে বলে, আমি ঠিক করছি আর ভিক্ষা করমু না।
-তাইলে কী করবা?
-কোনো একটা কর্ম কইরা খামু। দরকারে রিশকা চালামু!
-হ বাবা। অহন অটো রিশকা আছে। পাও দিয়া চালাইতে হয় না। ব্যাটারি আর মটরে চলে।
-হ মা। আমিও দেখছি, কিন্তু বুঝি নাই। বুঝলে আরো আগেই ভিক্ষা ছাড়তাম। আইজগা আমার মতন দুই ল্যাংড়ারে দেখলাম। আরো অনেক বুড়া মানষ্যেরেও এই রিশকা বাইতে দেখছি। পেট্টুল চাপনের কষ্ট নাই, তাইলে ভিক্ষা কইরা আর খামু ক্যান?
-হ বাবা। ভিক্ষাডা ছাড়ান দিয়া দিও!
কথা বলতে বলতে নয়ন ওপাশে আবছা অন্ধকারে কিছু একটা করে। তারপর চা আর কেকের মতো দেখতে নতুন এক পদের খাবার নিয়ে আসে। বলে, তুমি খাও, আমি ভাত চড়াই।
-আইচ্ছা। তুই বার হইলে আমিও বার হমু। তারেকের মা খালায় খবর দিছে।
-নানি আইছে কবে?
বলার সময় কেমন ঝলমল করে ওঠে নয়ন।
-কাইল পশশু হইব অনুমান করি।
-তাইলে ভাতটা তুমি দেখব? আমি নানিরে দেইখ্যাই আইয়া পড়মু।
-রাইতে যাইস না। চিপাচুপা পথ ভালা না। দিনের বেলা যাইস আস্তে ধীরে।
তারেক খেতে খেতে মনেমনে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে যে, আর ভিক্ষা করবে না সে। তারেককে ধরে যে করে হোক একটা অটো রিকশা ভাড়া নেবে। দিনের জমা পরিশোধ করে যা টিকবে তাও ভিক্ষা করে পাওয়া টাকার দ্বিগুণ। সে টাকা খরচ করতে মন ছোট হবে না।
নয়নকে বেকারির গেট পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে হবিউল্লা তারেকের ঘরে গিয়ে দেখে তখনও তারেক ফিরে আসেনি। তবে তারেকের বউ আনু তাকে দেখে কেমন অনুযোগের সুরে বললো, খবর না দিলে মানুষটারে আর দেহা যায় না।
ঘরে ঢুকতে ঢুকতে হবিউল্লাহ বলে, ঘনঘন দেখতে চাইলে একটা ঠেলা গাড়ি লও। আমারে দেখতে গাড়ি ঠেলবা আর আমি ভিক্ষা করমু।
-ইশ, হাউশ কি ব্যাডার! একজন জুটাইলেইত্ত পারে!
হবিউল্লা সে প্রসঙ্গে না গিয়ে বললো, খালায় আইছে হুনলাম।
-হ। বইয়েন। আমি ডাইক্যা আনি।
আনু বের হয়ে গেলে প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই তারেকের মা ঘরে ঢোকে। তাকে দেখতে পেয়ে এগিয়ে এসে তিনি হাত ধরে বললেন, বাজান কেমুন আছস তুই? তর সব খবর হুনলাম তারেকের কাছে। আয় বয়! বলে, তিনি একটি কাঠের বাক্স এগিয়ে দেন।
পাশে ক্র্যাচটা খাড়া করে ধরে বাক্সটার ওপর বসে তারেক বলে, খালায় কেমুন আছেন? কতদিন বাদে আপনেরে দেখলাম। আমার ঘর-বাড়ি দেখছিলেন? হুনছি খইয়া খইয়া পড়তাছে। কেউ কেউ বেড়া দরজা ভাইঙ্গা নিয়া চুলায় দিতাছে।
-মানুষ না থাকলে তো ছাড়া বাড়ি এমনই।
কথায় কথায় অনেক সংবাদই আদান প্রদান হয় দুজনের ভেতর। এক সময় তিনি আনুর বোন সখিনার কথা বলেন। আরো জানান, মাইয়া গার্মেন্সে ভালা বেতন পায়। ভিক্ষা না করলেও তর চলবো।
সঙ্গে সঙ্গেই প্রতিবাদের মতো বলে ওঠে হবিউল্লা, না না খালা। অখন বিয়ার নাম মুখেও আইনেন না।
আসলে সখিনা সম্পর্কে তার ধারণা ভালো নয়। অনেকের সঙ্গেই তার ভালো রকম মাখামাখি আছে। কিছুদিন আগে রিকশায় কমিশনার লিটনের ছোটভাই আমিরের সঙ্গেও খুব আপত্তিকর অবস্থায় দেখা গেছে। তাছাড়া একবার হোটেল থেকে ধরে থানায় নিয়ে গিয়েছিলো মাস ছয়েক আগে। তাই সখিনার প্রতি কোনো আগ্রহ নেই তার। পচা মাছ আরো দামি মশলা দিয়ে রান্না করলেও তার দুর্গন্ধ থেকে যায়। অন্যরা টের না পেলেও যে খায় সে ঠিকই বোঝে। তাই সে সরাসরি আপত্তি না জানিয়ে আবার বললো, আগে ভিক্ষা ছাইড়া লই।
-ভিক্ষা ছাড়লে কী কইরা খাবি?
-ঠিক করছি রিশকা চালামু।
অবাক কণ্ঠে তিনি বলেন, তর ঠ্যাঙ নাই একটা, তো রিশকা চালাবি কেমনে?
-আছে ব্যবস্থা।
হবিউল্লার মুখে হাসি ফুটে ওঠে। বলে, অটো রিশকা। পেট্টুল চাপনের ঝামেলা নাই। কতো বুড়া বুড়া মানুষরে দেখছি চালাইতে। নাইলে যাগো ভিক্ষা করন ছাড়া পথ আছিলো না। আমার মতন ল্যাংড়ারাও চালায় এই রিশকা। বলতে বলতে হবিউল্লার দুচোখে যেন স্বপ্ন ভর করে। দূরাগত কণ্ঠে বলতে থাকে, পরথম পরথম কামাই কম হইলেও ভিক্ষার কামাইর থাইক্যা ডবল। কিছু দিন ট্যাকা জমাইয়া গ্যারামে যামুগা। ঘর দুয়ার ঠিক করাইয়া দেশেই এই রিশকা বামু। মাইয়াডারে ইশকুলে দিমু। আল্লায় চাইলে আস্তে ধীরে আরো কিছু করন যাইবো।
তারেকের মা মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে স্বপ্নগ্রস্ত হবিউল্লার কথাগুলো শুনতে থাকেন আর মনে মনে কামনা করেন, তার স্বপ্নগুলো যেন সত্যি সত্যিই ফলবতী হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৫৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৭, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad