ঢাকা, শনিবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

শিল্প-সাহিত্য

প্রতিদিনের ধারাবাহিক

টানেল | এর্নেস্তো সাবাতো (৪০) || অনুবাদ: আলীম আজিজ

অনুবাদ উপন্যাস/শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৩৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৬, ২০১৪
টানেল | এর্নেস্তো সাবাতো (৪০) ||  অনুবাদ: আলীম আজিজ অলঙ্করণ: মাহবুবুল হক

এর্নেস্তো সাবাতো (২৪ জুন ১৯১১-৩০ এপ্রিল ২০১১) আর্জেন্টাইন লেখক এবং চিত্রকর। লেখালেখির জন্য পেয়েছেন লিজিওন অফ অনার, মিগুয়েল দে সেরভেন্তেস পুরস্কার।

এছাড়াও তিনি ছিলেন লাতিন আমেরিকান সাহিত্য জগতের বেশ প্রভাবশালী লেখক। তাঁর মৃত্যুর পর স্পেনের এল পায়েস—তাঁকে উল্লেখ করেন ‘আর্জেন্টিনাইন সাহিত্যের শেষ ধ্রুপদী লেখক’ বলে।
‘এল তুনেল’ (১৯৪৮), ‘সবরে হেরোস ইয়া টুম্বাস’ (১৯৬১), ‘অ্যাবানদন এল এক্সতারমিনাদোর’ (১৯৭৪) তাঁর জগদ্বিখ্যাত তিন উপন্যাস।

৩৯তম কিস্তির লিংক

আমাকে সম্ভাষণ জানাতে গিয়ে আবেগ নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখল মারিয়া, যেন তার দুঃসর্ম্পকীয় ভাইবোনের সামনে সে প্রমাণ করতে চায় যে, আমি তার নিছক বন্ধু ছাড়া আর কিছুই না। অস্বস্তির সঙ্গে এসব ক্ষেত্রে, সব সময় হাত ধরে আসে ভয়। ফলে তখন তোমার আচরণ বোকার মতো হতে বাধ্য, কিছুদিন আগে ঘটা এমন একটা ঘটনার কথা আমার মনে পড়ছে। আমার বিষন্নতা রোগের কোনো এক পর্যায়ে মারিয়াকে আমি বলেছিলাম, একদিন গোধূলীলগ্নে পাহাড়ের ওপরে বসে নিচের স্যান জেমিনিয়ানোর টাওয়ার দেখব আমরা। খুবই আবেগপূর্ণ জবাব দিয়েছিল মারিয়ার, ‘কি যে দারুণ হবে, হুয়ান পাবলো!’ কিন্তু আমি যখন ওই রাতেই আমার সঙ্গে ওকে পালানোর প্রস্তাব করলাম, ও ভয় পেয়ে গেল; মুখচোখ শক্ত হয়ে গেল ওর, ম্লান মুখে বলল: ‘আমাদের এ ধরনের চিন্তা করার কোনো অধিকার নেই। পৃথিবীটা খুবই জটিল। ’ এ কথা দিয়ে ও কি বোঝাতে চাইল আমি জানতে চাইলাম। ও আরও মলিন মুখে এই প্রশ্নের জবাব দিল: ‘সুখের উল্টোপিঠেই থাকে দুঃখ। ’ এরপর ওর কাছে কোনো রকম বিদায় না নিয়ে, মাঝপথে আচমকা ওকে রেখেই বেরিয়ে আসি আমি। ও কখনই পুরোপুরি আমার না, এই বোধটা ওইদিনই সবচেয়ে সুতীব্র হয়ে আমার বুকের মধ্যে বাজে, আর এটাও বুঝি ওই ক্ষণিকের ঠুনকো মিলনপর্ব, বিষাদ আর অলীক সব স্বপ্নের স্মৃতি অথবা নির্দিষ্ট কোনো সঙ্গীত-মূর্ছনার সামান্য ছিটেফোটার মধ্যেই আমাকে সন্তুষ্টচিত্তে নিজেকে সমর্পিত করে রাখতে হবে।

আর এখন আমি দেখছি, আমার দিকে এগিয়ে আসছে ও, অতি সতর্ক ওর প্রতিটি অঙ্গসঞ্চালন, অতি হিসেবি উচ্চারণ প্রত্যেকটি শব্দের, সতর্ক মুখের অভিব্যক্তি। ওই মহিলার সঙ্গে যেভাবে ও হাসল!
আমার কাছে জানতে চাইল, আমি স্কেচগুলো সঙ্গে এনেছি কিনা?
‘কিসের স্কেচ!’ আমার এ উত্তরে ওর গোপন অভিসন্ধি, যে অভিসন্ধিতে আমরা দুজনই লাভবান হবো, ভেস্তে যেতে পারে জেনেও, বিস্মিত রাগি গলায় জবাব দিলাম আমি।

‘আমাকে কিছু স্কেচ দেখাবে বলেছিলে না,’ শান্ত, অবিচল মুখে বলল ও। ‘বন্দরের স্কেচ। ’
স্থির, ঘৃণার চোখে ওর দিকে তাকালাম আমি, কিন্তু ও একদম প্রশান্তমুখে আমার চোখে চোখ রাখল, মুহূর্তেরও ভগ্নাংশের জন্য, ওর দৃষ্টি কোমল হয়ে এল আর ও যেন বলতে চাইল ‘আমাকে একটু করুণা করো। ’

মুহূর্তের ওর ওই মিনতি, ওই দীনতা আমার সব প্রতিরোধ ভেঙে গুড়িয়ে দিল। একেবারে জল হয়ে গিয়ে আমি উত্তর দিলাম:
‘হ্যাঁ আমি ওগুলো সঙ্গে করে এনেছি তো। আমার ঘরে আছে। ’
‘আমি ওগুলো দেখার জন্য অধীর হয়ে আছি,’ একই রকম ঠাণ্ডা গলায় বলল ও।
‘তাহলে এখুনি দেখবে চলো না?’ আমি জিজ্ঞেস করি ওকে, ওর ফাঁদে ধরা দেই।
মিমি আমাদের সঙ্গে যোগ দিতে পারে মনে হতেই শরীর ঠাণ্ডা হয়ে আসে আমার। কিন্তু মারিয়া, আমার চেয়ে অনেক ভালোভাবে চেনে ওকে, সঙ্গে সঙ্গে ওকে কোনো কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই বলে উঠল:
‘আমরা এক্ষুণি আসছি। ’

বলেই আমার হাত খাঁমচে ধরল ও, তারপর বাড়ির দিকে টেনে নিয়ে চলল আমাকে। এক মুহূর্তের জন্য পিছন ফিরে তাকালাম আমি। আমার মনে হল মিমি আর হান্তের বুঝদারের মতো পরস্পর দৃষ্টি বিনিময় করল যেন।

(চলবে)



বাংলাদেশ সময়: ১৪৩৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৬, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।