ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

শিল্প-সাহিত্য

হুমায়ূন আহমেদের একটি গল্প ‘পাপ | মোহাম্মদ আজম

হুমায়ূন জন্ম-জয়ন্তি/শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩০৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৫, ২০১৪
হুমায়ূন আহমেদের একটি গল্প ‘পাপ | মোহাম্মদ আজম

২য় পর্ব

যুদ্ধের সময় আর দশজন সাধারণ মানুষের যে সমস্যা হয়, এই লোকও সেসব সমস্যার মধ্য দিয়ে দিনাতিপাত করছিলো। তার স্ত্রীর অসুস্থতা তার জন্য বাড়তি সংকট তৈরি করেছিলো।

তাও নিশ্চয়ই একসময় শেষ হতো। অন্য সবার ক্ষেত্রে যেমন হয়েছে। কিন্তু শত্রুপক্ষের এক জওয়ানকে বাঁচানোর জন্য বউয়ের কাছে ওয়াদা করার পর যে মুসিবতে সে পড়ে তার কোনো তুলনা হয় না। এ এক চরম মানবিক সংকট; ‘অস্তিত্ববাদী সংকট’। তার জীবের জীবন আর আত্মিক জীবন— দুই-ই চূড়ান্ত পরীক্ষার মধ্যে পড়ে যায়। তার দুই পথ— শত্রু জওয়ানকে সে মিলিটারি ক্যাম্পে পৌঁছে দেবে, অথবা তুলে দেবে মুক্তিবাহিনীর হাতে। নিজের সম্ভাব্য সিদ্ধান্তের জন্য সে দুই দিকের যুক্তিগুলো আওড়ে নেয়। ছেলেটিকে বাঁচানোর ব্যাপারে সে স্ত্রীকে কথা দিয়েছে। আল্লার পাক কালাম ছুঁয়ে প্রতিজ্ঞা করেছে। তাছাড়া ছেলেটাকে দেখে তার মায়াও হয়েছে। বাচ্চা ছেলে। এখনো জীবনই শুরু করে নাই। দেশে গিয়ে বিয়ে-থা করবে। ইত্যাদি। অন্যদিকে, একে মিলিটারি ক্যাম্পে পৌঁছে দিলে সে কথা জানাজানি হয়ে যাবে। নৌকার মাঝিই বলে দেবে। লোকে অবশ্যই জানবে। তখন রাজাকার হিসাবে তার বিচার হবে। দেশের মানুষ তাকে ঘৃণা করবে। এরপর তার আর সিদ্ধান্ত নিতে দেরি হয় না: ‘পাকিস্তানী মিলিটারী শুধু যে আমাদের পরম শত্রু তা না, এরা সাক্ষাৎ শয়তান। এদের কোনো ক্ষমা নাই’।

লক্ষণীয়, এই সিদ্ধান্তে সে পৌঁছেছে তার নিজের পরিণতির কথা ভেবে। খুবই সঙ্গত সিদ্ধান্ত। কিন্তু ব্যক্তিগত। অন্যরকম কারণেও সে এই সিদ্ধান্ত নিতে পারতো। পাকবাহিনী যুদ্ধনীতি মেনে এদেশে যুদ্ধ করে নাই। সে নিজেই তার সাক্ষী। চর হাজরায় ইয়াকুব আলী মাতবর মিলিটারিদের আপ্যায়নের কালে এলাকার বিশিষ্টজনদেরও দাওয়াত করেছিলো। সেই দাওয়াতে আমাদের গল্পকথকও শরিক ছিলো। খাওয়ার পর মেয়েদের উঠিয়ে নিয়ে যাওয়ার যে ‘গল্পের মতো’ঘটনাটি ঘটেছিলো, সে তার প্রত্যক্ষদর্শী। এর বা অন্য অনেক ঘটনার বরাতে সে সিদ্ধান্ত নিতে পারতো। তা সে করেনি। বরং তার চিন্তায় অন্যরকমের যুক্তিই বড় হয়ে উঠেছিলো: ‘এরা হুকুমের চাকর। উপরওয়ালার হুকুমে চলতে হয়’। লেখক ব্যাপারটিকে ব্যক্তিগত পর্যায়ে রাখতে চেয়েছিলেন। সামষ্টিক বিচারে যা পুণ্য বলে গণ্য হতে পারতো, ব্যক্তির জন্য তাই হয়ে দাঁড়ায় পাপবোধের অমোচনীয় উৎস। সে নিশ্চিত যে তার পাপ হয়েছে। কিন্তু পাপের ধরন সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না। অপেক্ষা করছে রোজ কেয়ামতের জন্য।

তাহলে গল্পটা সে যাকে বলছে, কিংবা যে বা যারা গল্পটা শুনছে, তাদের কাছে কি সে ফয়সালা চায়? না, চায় না। কেন? এ প্রশ্নের উত্তরের জন্য আমাদের ঢুকতে হবে গল্পের গভীর-কাঠামোয়। আরেকবার নিতে হবে তার পরিচয়। সে যাকে বা যাদের গল্পটা বলছে, তাদের পরিচয়। মুক্তিযুদ্ধের যে বয়ান তার জবানিতে পাওয়া গেলো, তার বৈশিষ্ট্য বিচড়ে দেখাও জরুরি। তার সিদ্ধান্ত আসলে এসবের ভিত্তিতেই গৃহীত হয়েছে।

আমাদের গল্পকথক তার গ্রামের আবহের মধ্যে সম্মানিত মানুষ। এই সম্মানের এক কারণ তার পেশা। অন্য কারণ নিশ্চয়ই তার জীবনবোধ ও উপলব্ধির গভীরতা। গ্রাম্য শালিশে ওই অল্পবয়সী তরুণের ‘বক্তব্য গুরুত্বের সঙ্গে নেয়া’র কারণ সম্ভবত এটাই। যে গল্প সে আমাদের শুনিয়েছে, তাতে তার কাণ্ডজ্ঞান আর বিবেচনাবোধের যথেষ্ট পরিচয় আছে। তা সত্ত্বেও বাংলার প্রান্তীয় গ্রামবাসী মানুষদের সাথে তার কোনোভাবেই অনাত্মীয়তা তৈরি হয়নি। ভাবে-স্বভাবে সে বাংলার গ্রামসমাজেরই প্রতিনিধি, যাদের সাথে শিক্ষিত নাগরিক সমাজের ফারাক অনেক। এই ফারাকের কথায় পরে অাসবো। আপাতত সে যে তার বুদ্ধিবৃত্তিক উচ্চতাসমেত নিখুঁতভাবে গ্রামসমাজের প্রতিনিধি, গল্প থেকে দুটি উদাহরণ দিয়ে সে কথা বলা যাক।

স্ত্রীর সাথে তার খুব ভাব। তাদের সুখের সংসার। পুরা গল্পের আবহে এই দম্পতির পারস্পরিক সম্পর্কের মাধুর্য খুব গভীরভাবে মিশে আছে। কিন্তু কোথাও ‘ভালোবাসা’বা ‘প্রেম’শব্দ ব্যবহৃত হয় নাই। বলা হয়েছে, ‘আমরা সুখেই ছিলাম’। এর পরই ফুলির কর্মতৎপরতার ছবি: ‘ফুলির গাছগাছালির খুব শখ। সে গাছপালা দিয়ে বাড়ি ভরে ফেলল’। দাম্পত্যপ্রেমের এ ধরনের উপস্থাপনকে খুব গুরুত্ব না দিয়ে দেখলেও চলতো। বলা যেতো, তারা সাংসারিক জীবনযাপনই করে। বিয়ের আগের বা পরের যে ধরনের সম্পর্কের জন্য ‘প্রেম-ভালোবাসা’শব্দগুলো ব্যবহার করার রেওয়াজ, তাদের জীবনে ঠিক সে রকম ব্যাপার নাই। এ রকম বলা যেতো, যদি এ গল্পের অন্যত্র আরেকটি উল্লেখে বিকল্প শব্দ ব্যবহার করে লেখক আমাদের মনোযোগী হতে বাধ্য না করতেন। বালাকোটের লেফটেন্যান্ট দিলদার প্রসঙ্গে ফুলি বলছে: ‘রেশমী নামের ওদের গাঁয়ের একটি মেয়ের সঙ্গে ওর খুব ভাব’। ‘ভাব’শব্দটি লক্ষ করার মতো। গ্রামীণ মধ্যবিত্তের জন্য স্বাভাবিক শব্দ নির্বাচন করেই লেখক নর-নারীর সম্পর্কের পরিচিত ধরনটি বর্ণনা করলেন। গল্পকথক এই আবহেরই মানুষ।

দ্বিতীয় উদাহরণটি নেয়া যাক যুদ্ধকালীন পরিস্থিতি থেকে। মিলিটারির সৃষ্টি ছাড়া কাজকামে গ্রামের মানুষ অস্থির হয়ে পড়লো। প্রতিশেধক হিসাবে তারা কী করল?—‘গজবের হাত থেকে বাঁচার জন্যে মসজিদে কোরআন খতম দেয়া হলো। গ্রাম বন্ধ করা হলো। এক লাখ চব্বিশ হাজার বার সুরা এখলাস পাঠ করা হলো’। যে বাস্তবতা আর মনস্তত্ত্ব থেকে বিপদের এরকম দাওয়াই দেয়া হয়, আমাদের গল্পকথক সে সামাজিক-মনস্তাত্ত্বিক বাস্তবতারই অংশ। বিপদের বর্ণনায় সে অনায়াসেই উচ্চারণ করে ‘সোবহানাল্লাহ’। ‘মাগরেবের নামাজ পড়ে বারান্দায় বসে’ থাকে। সবচেয়ে বড় কথা, তার পাপবোধ তথা নৈতিকতার উৎসও প্রধানত ধর্ম। চূড়ান্ত ফয়সালার জন্য সে পরকালেরই অপেক্ষা করে।

উপরে গল্পকথকের জাতবিচারের জন্য দুটি উদাহরণ দিলাম। দুটিই আসলে ভাষাভঙ্গির মামলা। বাংলাদেশের গ্রাম ও শহরের উচ্চমধ্যবিত্ত থেকে নিম্নমধ্যবিত্ত পর্যন্ত জনগোষ্ঠীর ভাষাকে কথাসাহিত্যের উপযোগী ‘স্বাভাবিক’ভাষা হিসাবে ব্যবহারের ক্ষেত্রে হুমায়ূন আহমেদের সিদ্ধি অতুলনীয়। এ শুধু কথ্যভাষার ব্যবহার নয়। মোটেই আঞ্চলিক ভাষা-ব্যবহারের বিশিষ্টতা নয়। এ হলো ব্যক্তির জীবন-ইতিহাসকে তার উচ্চারণের মধ্যে সম্ভবপর করে তোলা। হুমায়ূনের ভাষার সারল্য আর আকর্ষণ সম্পর্কে বিস্তর বলা হয়েছে। চরিত্রানুগ বাগভঙ্গি অনুকরণের এই ‘স্বাভাবিকতা’ই যে তার প্রধান কারণ, সে কথাটি বিশেষ বলা হয় নাই। এ লেখায় সে প্রসঙ্গে বাকবিস্তারের সুযোগ আমরা নেবো না। শুধু এ কথা বলাই যথেষ্ট হবে যে, এ গল্পের বয়ানের সমস্ত অনুমান, যুক্তি, লঘু-গুরু-ভেদ, চেতনা ও সুর অভ্রান্তভাবে এই গল্পের কথককে গ্রামীণ শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর মানুষ হিসাবে চিহ্নিত করে, যার সঙ্গে বাংলার বৃহৎ জনগোষ্ঠীর কোনো বিচ্ছেদ ঘটেনি।
সে নিজেও তা জানে। জানে, যে বা যারা তার এ গল্প শুনবে বা পড়বে, তাদের সঙ্গে তার মৌলিক তফাত আছে। এতে সে বিন্দুমাত্রও হীনমন্যতায় ভোগে না। বরং ফারাকের কথাটা তুলে নিজেকে আলাদা করে নেয়। তার নিজের বর্ণনা খানিকটা পড়ে নেয়া যাক: ‘দুই বছর খুব সুখে কাটলো। তারপরই সংগ্রাম শুরু হলো। আপনারা বলেন স্বাধীনতা যুদ্ধ। গ্রামের লোকের কাছে সংগ্রাম’। তার নিজের বয়ানে সে মুক্তিযুদ্ধকে ‘সংগ্রাম’ বলেছে, যা, তার ভাষায়, গ্রামের লোক বলে। আর যারা ‘স্বাধীনতা যুদ্ধ’ বলে—তার শ্রোতা-পাঠকেরা—তারা সম্ভবত শহরের শিক্ষিত মানুষ। এরা ‘জ্ঞানী’ এবং ‘হাজার গুণে বেশি জানেন’। কিন্তু জানায় গলদ আছে। যুদ্ধের সংক্ষিপ্ত বয়ানে সে অন্তত দুবার গলদ সংশোধন করে দেয়। একবার ধারণাগত ত্রুটি, আরেকবার প্রচারমাধ্যম থেকে পাওয়া তথ্যের গোলমাল। দুটিই ‘জ্ঞানী’ মানুষদের জানার পদ্ধতি ও ধরনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।

প্রথমবার চরহাজরার ঘটনায়। মিলিটারি গ্রামে এলে মাতবর ইয়াকুব আলী মিলিটারিদের খুব সমাদর করে নিজের বাড়িতে নিয়ে যায়। এ পর্যন্ত বলার পর তার মনে হয়, একটা ব্যাখ্যা দরকার। যারা গল্পটি শুনছে, তারা নিজেদের ধারণা মোতাবেক ইয়াকুব আলীকে বিচার করছে বা করবে। সে বলে, ‘ভাই সাহেব, আপনি এর অন্য অর্থ করবেন না। তখন তাদের সমাদর করে নেয়া ছাড়া কোনো উপায় ছিলো না। সবাইর হাত-পা ছিলো বাঁধা’। সে এ কথা জোর দিয়ে বলতে পারছে নিজের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে। প্রত্যক্ষদর্শী হিসাবে সে জানে, ইয়াকুব আলী মিলিটারিদের সমাদর করেছে; আর মিলিটারিরা তার দুই মেয়ে ও এক ছেলের বউকে তুলে নিয়ে গায়েব করে দিয়েছে চিরদিনের জন্য। এই যে ‘সমাদর’আর ‘তুলে নেয়া’ ‘এ দুটো একসাথে যায় না। কিন্তু ‘গল্পের মতো’ ওই সময়ে এরকম হয়েছে। ফলে ‘মিলিটারিকে সমাদর করা’থেকে যারা সিদ্ধান্ত নেবে, তাদের সিদ্ধান্ত ‘বাস্তবসম্মত’হবে না। এ সতর্কবাণী উচ্চারণ প্রমাণ করে—গল্পকথকের ধারণা—তার শ্রোতা-পাঠকেরা হরহামেশাই এমনটা করে থাকে।

পরের ঘটনাটি মিলিটারির লঞ্চডুবির। গল্প থেকে সরাসরি উদ্ধৃত করি: ‘লঞ্চ ডুবার ঘটনা ঘটলো সেপ্টেম্বর মাসের ছাব্বিশ তারিখ। স্বাধীন বাংলা বেতার থেকে এই সংবাদ প্রচার করা হয়েছিলো। ভাই সাহেব হয়তো শুনেছেন। বলা হয়েছিলো শতাধিক মিলিটারীর প্রাণ সংহার হয়েছে। এটা অবশ্য ঠিক না। মিলিটারী অল্পই ছিলো। বেশির ভাগই ছিলো রাজাকার। রাজাকারগুলা সাঁতরে পাড়ে উঠেছে, গ্রামের লোকরাই তাদের পিটিয়ে মেরে ফেলেছে’। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের প্রচারণা যুদ্ধকৌশলের দিক থেকে হয়তো ঠিকই আছে। কিন্তু একজন প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনায় তার মস্ত বড় ফাঁক ও ফাঁকি ধরা পড়ে। ফাঁক এই যে, মারা-পড়া লোকদের মধ্যে মিলিটারির সংখ্যা ছিলো অল্প। আর ফাঁকিটা আরো মারাত্মক— বহু লোক মারা পড়েছে তাদের হাতে, যারা যুদ্ধে ছিলো না। নিজের চোখে দেখা সেই অভিজ্ঞতা থেকে গল্পকথকের সিদ্ধান্ত: ‘যুদ্ধ খুব খারাপ জিনিস...। যুদ্ধ অতি সাধারণ মানুষকেও হিংস্র করে ফেলে’।

উপরের বয়ান ‘স্বাধীনতা যুদ্ধে’র মহাবয়ান বা ম্যাটান্যারেটিভকে চাপে ফেলে দেয়। ‘জ্ঞান’ বা ‘তথ্য’থেকে পয়দা হয় যে প্রভাবশালী ডিসকোর্স, তাকে প্রশ্ন করে, আরো অন্তরঙ্গ হতে বলে, পরিসর আরো বাড়ানোর তাগিদ দেয়। এতে আরেকটা কাজ হয়। ‘স্বাধীনতা যুদ্ধ’থেকে ‘যুদ্ধ’ আলাদা হয়ে যায়; সামষ্টিক বয়ান থেকে ব্যক্তিগত বয়ান পৃথক মহিমা পায়। এ বিবৃতিতে কথকের স্বর একবিন্দুও টলেনি, সিদ্ধান্তের বলিষ্ঠতায় টান পড়েনি। গভীর সত্যের মতো করে সে কথা বলে। তাকে বলতে হয়। কারণ, মুক্তিযুদ্ধের মহাবয়ানে অভ্যস্ত শ্রোতা-পাঠকেরা তার সমস্যাটাই ধরতে পারবে না, যদি ‘যুদ্ধ’ পাঠের এই পদ্ধতিগত প্রশ্নে সতর্ক না থাকে। সে যখন পাঠক-শ্রোতাকে বলে, ‘আপনি জ্ঞানী মানুষ’—তখন একদিক থেকে হয়তো আন্তরিকভাবেই বলে, কিন্তু তার নিজের অভিজ্ঞতা ও সংকটের দিক থেকে কথাটা ঠাট্টার মতোই শোনায়। সে নিশ্চিত, নগরবাসী শিক্ষিত মানুষদের ‘জ্ঞান’তার কোনো কাজেই লাগবে না। তাই তাদের কাছে সে কোনো ফয়সালা চায় না। শুধু সিদ্ধান্তটা জানায়: ‘যুদ্ধে শুধু পাপের চাষ হয়। আমার মতো সাধারণ একটা মানুষ কতগুলো পাপ করলো চিন্তা করে দেখেন’। সেই পাপের স্বরূপ বোঝার জন্য সে যখন অপেক্ষা করতে চায় রোজ হাশর পর্যন্ত, তখন আর বুঝতে বাকি থাকে না, কোনো ফায়সালা সে অসম্ভব মনে করে।
সাদা-কালো বা শয়তান-ফেরেশতার বাইনারিতে পাঠ করার প্রচলিত রেওয়াজের বাইরে হুমায়ূনের মুক্তিযুদ্ধচর্চায় বরাবরই পাওয়া গেছে বহুস্তর জটিল বয়ান। ছোট্ট এই গল্প তারই এক আশ্চর্য সফল নমুনা। কোনো প্রকার তত্ত্বায়ন বা আরোপণ ছাড়াই গল্পটি আমাদের সামনে হাজির করে এক অনিঃশেষ মানবিক সংকট; আর এভাবে চিনিয়ে দেয় খোদ মানুষকেই—অতি কাছের কিন্তু সুদূর যে মানুষের খোঁজে তাঁর ইহজনমের সাধনা।

১ম পর্ব

লেখক: গবেষক ও সাহিত্য সমালোচক, শিক্ষক, বাংলা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

বাংলাদেশ সময়: ১৩১০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৫, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।