ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়: ‘আচ্ছা আপা, বলেন তো- আকাশ কার? পানি কার? শুধু জমির কথাই আল্লাহ পুরুষদের নামে লিইখ্যা দিল!’
হতভাগা এক নারীর চির আক্ষেপের উক্তি যেন এটি। সমাজ বাস্তবতায় ভূমির মালিকানার ক্ষেত্রে এদেশের নারীরা যে কতটা বঞ্চিত, এ উক্তিটি যেন তারই বহিঃপ্রকাশ।
উক্তিটি আলোকচিত্রী কাকলী প্রধানের একটি আলোকচিত্রের ক্যাপশন।
বুধবার (১২ নভেম্বর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কলাভবন সংলগ্ন বটতলায় শুরু হয়েছে তার একক আলোকচিত্র প্রদর্শনী। এখানে স্থান পেয়েছে ৪৫টি আলোকচিত্র।
ভূমিকেন্দ্রিক নারী নির্যাতন ও সহিংসতার ওপর ‘না’ শীর্ষক তিন দিনব্যাপী এ প্রদর্শনী চলবে আগামী শুক্রবার (১৪ নভেম্বর) পর্যন্ত।
এ আয়োজনে সহযোগিতা করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের পত্রিকা ‘মাধ্যম’ এবং অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (এএলআরডি)।
কাকলী প্রধানের মতে, ‘নারীরা ভূমিতে তাদের ন্যায্য হিস্যা পাবে, এর পক্ষে কাউকে ‘হ্যা’ বলতে শুনিনি। বরং দশদিক থেকে উচ্চারিত হয়েছে হুংকার, ‘না’। তাই এ প্রদর্শনীর নামকরণ করা হয়েছে ‘না’।
প্রচলিত পারিবারিক আইন ও নানা সামাজিক বিধান ভূমি ও সম্পত্তির অধিকার প্রশ্নে নারীর বিরুদ্ধে চরম বৈষম্যপূর্ণ। সেই বৈষম্য ও বঞ্চনার শিকার সমাজের সকল স্তরের নারী। নগরে-গ্রামে এই চিত্রের ভিন্নতা নেই। আর নারী নির্যাতন ও নারীর প্রতি সহিংসতার অন্যতম কারণ হচ্ছে তাদের সম্পত্তি ও ভূমির অধিকার থেকে বঞ্চিত করা।
নারীর অভিন্ন সেই অভিজ্ঞতার গল্প ক্যামেরার চোখে তুলে ধরেছেন কাকলী প্রধান।
কাকলী তার প্রদর্শনীর বর্ণনায় লিখেছেন, আট বছর আমি আমাদের সমাজের নানা স্তরের নির্যাতিত, সুবিধা বঞ্চিত, ভূমি বঞ্চিত নারীদের গল্প ফ্রেমে তুলে আনার চেষ্টা করেছি। দেশের উত্তর-দক্ষিণ, পুর্ব-পশ্চিম কোনো অঞ্চলই আমার কাজের ক্ষেত্রে বাদ যায়নি।
তিনি আরও লিখেছেন, যেসব জায়গা ঘুরে এবং যাদের গল্প ফ্রেমে ধরেছি তার খুব অল্প কিছুই এ প্রদর্শনীতে ঠাঁই পেয়েছে। এত অসংখ্য নারীর বঞ্চনার চিত্র একবারে দেখানো সম্ভব নয়।
তবে প্রদর্শনীতে ৪৫টি ছবির প্রতিটির ক্যপশনই যেন ভূমি বঞ্চিত নারীর এক অমোঘ জীবন কাহিনী।
এরমধ্যে কয়েকটি ক্যাপশন তিনি দিয়েছেন, ‘জান দিলাইমু, জমিন দিতাম নাই’, ‘আপা মোক, কেউ খাতা থেকি বাদ দিয়া দেখিকছিন, বাঁশঝাড়ে ভূত হয়া ঘাড় মটকি দিম’, ‘কোন দিন বিয়ে করবো না, তবুও…’ ইত্যাদি।
শহরে এত আর্ট গ্যালারি থাকতে ঢাবি ক্যাম্পাসের উন্মক্ত চত্ত্বরে এ আয়োজন কেন? জানতে চাইলে আলোকচিত্রী বলেন, আমাদের দেশের প্রতিটি মানুষই মনে করে, দেশের সবচেয়ে মুক্তবুদ্ধি ও মুক্তচিন্তার অধিকারী মানুষগুলোর বিচরণস্থল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। এখানে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষের সম্মিলন ঘটে। আমার এ প্রদর্শনী থেকে তাদের মধ্য থেকে কয়েকজনও যদি নারীর অধিকার সম্পর্কে সচেতন হয় সেটাই আমার পাওয়া।
বিকেলে এ প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন- ঢাবির কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান, সাংবাদিক দিল মনোয়ারা মনু, ভাস্কর ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী প্রমুখ।
সভাপতিত্ব করেন এএলআরডি‘র চেয়ারপারসন ও মানবাধিকারকর্মী খুশি কবির।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ১২, ২০১৪