ঢাকা, শনিবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

শিল্প-সাহিত্য

তিনটি কবিতা | অপূর্ব সাহা

কবিতা/শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ১২, ২০১৪
তিনটি কবিতা | অপূর্ব সাহা

কুয়াশাতন্ত্র

যেখানে সূচ আর সুতো, কালি ও কলম আর রং ও তুলির কারুকেলিতে ঝঙ্কৃত ছিল নকশি সময়, সেখানে তীক্ষ্ণ এক মৌনতা জারি করে সামরিকজান্তার মত কায়েম করা হল কুয়াশাতন্ত্র। ...থামো, দাঁড়াও, উঁচিয়ে ধরা ধনুকের টান টান ছিলা থেকে পৃথক করে আনো টঙ্কার আর ছুঁড়ে দাও পার্শ্ববর্তী অতলান্ত খাদে, যেখানে মৃত্যুর হিম থেকে হিস হিস করে ফনা তোলে অস্পষ্ট এক সর্পিল সুন্দরতা।


এখানে মেঘেরা কৌণিক। বিজলি-রেখা বরাবর কলম চালালে ঝরঝর করে ঝরে পড়ে নির্লিপ্ত অক্ষরধারা; তীর্যক কল্পপ্রপাত।

ধূমমগ্ন দৃষ্টি-সরণি থেকে ক্ষীণ হতে হতে মুছে যায় অরণ্যরেখা। বাস্তুচ্যুত পাখিদের বুকের ওম থেকে উড়ে আসে অস্ফূট রূপকের দল। রূপে অরূপে রচিত হয় দুর্বোধ্য পৃথিবী এক; প্যারাবলিক কক্ষে তার রাত জাগে আদিমতম চাঁদ।

...কে তুমি জোছনাকুড়ানি, মৃত্যুরেখা থেকে উল্টোপথে হেঁটে যাও সুদূর বিষুব অবধি? নিজের অজান্তে আঁচলের খুট থেকে খামারে খামারে ফেলে রেখে যাও ধূসর মগ্নতা আর ভ্রান্তির বীজ। জেনে রাখো, কুয়াশাতন্ত্রে ফসলের অপর নাম বিভ্রম।

ছবির হাট

মুঠিতে চাঁদ ধরে যায়। এমনকি সূর্যও। মুঠি আলগা করলেই ঝুপ করে মাটিতে পড়ে যায় আজন্মলালিত মুদ্রাদোষ।

দোষ তো কিছু ছিলোই। আর দোষ ছিলো বলেই প্রতিটি ঘুম ছিলো অসমাপ্ত, ছোটগল্পের মতো। গল্পগুলো সকাম, উন্মুখ লিবিডোর পাশে রাতজাগা ধূ-ধূ বালিয়াড়ি। ধুলোয় ঢেকে যাওয়া তৃষ্ণার্ত ত্বকে আঙ্গুলের শৈলীতে আঁকা হওয়া ঋতুচিত্র—ওহ তাই নিয়ে কী এক পরিব্যাপ্ত ছবির হাট!

এবার হাটের গল্প। লিবিডো জাগানিয়া ক্ষীণাঙ্গী ক্রেতা অথবা আত্মার সখিগণ আসেন। কী ধারালো আঁধার! দিগন্তপ্লাবী হাসির ঢেউ কি মুঠিতে ধরা যায়? তবু চেষ্টা। অবশেষে ছলকে ওঠা চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে দেখাঃ কোনো ছবিতে ছিটকে গিয়ে সেঁটে আছে নিজের চোখ, কোনোটাতে চুইংগামের মতো লেগে আছে ওষ্ঠাধার, কোনো ছবির গায়ে গেঁথে গেছে কণ্ঠার হাড়...।

হৃদঅলিন্দ...সুষুম্নাকাণ্ড...প্যানক্রিয়াস...ক্রমশ প্রকাশিত হয় ছবির সাপেক্ষে।
এমনই ফ্যাটাল ছিল যুদ্ধটা!

তবে এভাবেই অঙ্গহানির সমানুপাতে ছবির বিমূর্ততা বাড়ে, বাড়ে বাজার দর। আর এভাবেই পরিস্ফুটিত হয় নিজস্ব ছেনালিপনা।

হঠাৎ সন্ধ্যা

হঠাৎ একটা সন্ধ্যে। অরণ্য-আঁচলের তলে—জমে থাকা ওমে—হামাগুড়ি দেওয়া গিরিগিটির মতো চলমান কয়েকটা ছায়া। অরণ্য কি অলিক? বৃক্ষের অন্তর্গত ক্লোরোফিলের সূক্ষ্ম মিহি এক অনুভব ছাড়া কোনো শরীরী সংবেদ নেই হাওয়ায়।

মহাকাব্যের মতো তোমার উপস্থিতি ফেনায়িত হলে ছায়ারা অরণ্যকুহক ছেড়ে বের হয়ে আসে। তুমি নদীমন্থনের আগ্রহ দেখালে ছায়ারা কেঁপে কেঁপে ঢেউ হয়ে, অতঃপর স্বয়ম্ভূ নদী হয়ে যায়। তটীনি মাঝে তুমি মূলত মানবী থাকো না আর। সন্ধ্যার এক আবছায়া অনুসঙ্গের মতো ঢেউলীন বেদনায় ডুব-সাঁতার খেলা এক জলপিপি হয়ে যাও। জলপিপি বেশ লাগে, দুর্বোধ্য কবিতার মতো।

সন্ধ্যা আরো গাঢ়ো হলে তুমি আরো দূরবর্তী নদীখাতে চলে যাও; দু’পাশে আবছা ঋজু পাহাড়, মাঝখানে দুর্দান্ত এক সফেন কলতান; প্রত্ন-হাওয়া এসে তোমার ডানায় জলকবিতা লিখে দিলে আমি তুমুল বিরহবোধে নুয়ে পড়ি। তুমি দূরবর্তী ছায়া-নদীর বুকে ডানা ঝাপাটাও, আমি নিজস্ব অগ্নির কাছে নতজানু হয়ে অক্ষরবৃত্তে আপন বিরহগাঁথা অঞ্জলি দেই কোনো কোনো ঘননীল সন্ধ্যায়।



বাংলাদেশ সময়: ১৭২৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ১২, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।