ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

শিল্প-সাহিত্য

প্রতিদিনের ধারাবাহিক

টানেল | এর্নেস্তো সাবাতো (৩৮) || অনুবাদ: আলীম আজিজ

অনুবাদ উপন্যাস/শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ১২, ২০১৪
টানেল | এর্নেস্তো সাবাতো (৩৮) ||  অনুবাদ: আলীম আজিজ অলঙ্করণ: মাহবুবুল হক

___________________________________

এর্নেস্তো সাবাতো (২৪ জুন ১৯১১-৩০ এপ্রিল ২০১১) আর্জেন্টাইন লেখক এবং চিত্রকর। লেখালেখির জন্য পেয়েছেন লিজিওন অফ অনার, মিগুয়েল দে সেরভেন্তেস পুরস্কার।

এছাড়াও তিনি ছিলেন লাতিন আমেরিকান সাহিত্য জগতের বেশ প্রভাবশালী লেখক। তাঁর মৃত্যুর পর স্পেনের এল পায়েস—তাঁকে উল্লেখ করেন ‘আর্জেন্টিনাইন সাহিত্যের শেষ ধ্রুপদী লেখক’ বলে।
‘এল তুনেল’ (১৯৪৮), ‘সবরে হেরোস ইয়া টুম্বাস’ (১৯৬১), ‘অ্যাবানদন এল এক্সতারমিনাদোর’ (১৯৭৪) তাঁর জগদ্বিখ্যাত তিন উপন্যাস।
___________________________________


৩৭তম কিস্তির লিংক

‘আমার রুচিতে এটা বেশি নতুন,’ মন্তব্য করলো মিমি। ‘তো এটা শেষ হবে কিভাবে? তুমি বলছিলে না চতুর্থ আরেকটা খুন হবে?’
‘এটা তো পরিষ্কার,’ টেনে টেনে বললো হান্তের। ‘লোকটা আত্মহত্যা করছে। সন্দেহ থেকে যাচ্ছে শুধু আত্মহত্যা সে করছে সেটা কি গভীর কোনো অনুশোচনা থেকে, নাকি খুনি “আমি” গোয়েন্দা “আমি”কে খুন করছে, সাধারণ কোনো খুনের মতো। প্লটটা তোমার পছন্দ হয়েছে?’
‘যথেষ্ট চমক আছে। কিন্তু এভাবে মুখে বলা এক আর উপন্যাস লিখে দেখানো আরেক। ’
‘তা সত্যি,’ শান্তভাবে বললো হান্তের।
এরপর মহিলা মার দেল প্লাতায় কোনো এক হস্তরেখাবিদ, আর কজন নারী জ্যোতিষের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছে সেই বকবকানি শুরু করে দিলো। ঠাট্টাছলে কি একটা মন্তব্য করলো হান্তের, সঙ্গে সঙ্গে ক্রুদ্ধ প্রতিক্রিয়া জানালো মিমি:
‘এটা একটা গুরুতর ব্যাপার তোমাকে বুঝতে হবে,’ বললো সে, ‘ওর স্বামী একজন প্রকৌশলী, অধ্যাপক।
এরপর টেলিপ্যাথি নিয়ে তর্ক শুরু হলো ওদের। এদিকে আমি ভেতরে ভেতরে ক্রমশ মরিয়া হয়ে উঠছি কারণ এখনও মারিয়ার দেখা পেলাম না। আবার যখন ওদের কথার দিকে কান গেলো তখন ওরা খামার-শ্রম নিয়ে আলোচনা করছে।
‘সমস্যা হলো,’ প্রার্থনার মতো, সিগারেট হোল্ডারটা ঘোরাতে ঘোরাতে বললো মিমি, যেন ওটা পুলিশের কোনো ব্যাটন। ‘কেউ এখন আর কাজ করতে চায় না। ’
ওদের এই আলোচনার শেষ দিকে এসে হঠাৎ একটা ঝিলিকের মতো মনে হলো আমার ব্যাখ্যাতীত সব বিষাদ দূর হয়ে গেছে: এই মিমি একেবারে শেষ মুহূর্তে এসে হাজির হয়েছে, আর মারিয়া নিচে নামেনি কারণ তার পক্ষে মিমি আর তার চাচাত ভাইয়ের এসব একগুয়েমিতে ভরা মামুলি আলাপে অংশ নেওয়া সম্ভব না (ওর নিজের চরম পরিশ্রান্ত অবস্থায় এ ধরনের আলাচনা নিশ্চয়ই শুনেছে ও)। অতীত পর্যালোচনায়, আমি বুঝলাম আমার ওই সহজাত অনুমান একেবারে অযৌক্তিক না কারণ এসতানসায়ায় গাড়িতে করে আসার সময় সোফারের কথায় কোনো একটা প্রচ্ছন্ন নির্দেশনা ছিলো: যা ওই সময়ে আমি ধরতে পারিনি, আমার ঠিক মাথার ওপর দিয়ে চলে গেছে, এরকম একটা মন্তব্য: সিনর হান্তেরের কাজিন মার দেল প্লাতা থেকে চা খেতে আসছে। হ্যাঁ, এতে সব কিছু পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে: মারিয়া, ওই মহিলার অপ্রত্যাশিত আগমনে হতাশ হয়েছে, যে কারণে অসুস্থতার ছল করে ঘরবন্দি করে রেখেছে নিজেকে। পরিষ্কার সে মিমির মতো একজনের মুখোমুখি হতে চাইছে না। আমি টের পেলাম আমার ওই আকস্মিক উপলব্ধির পর পরই, আমার সব দুঃখবোধ উবে গেছে, কারণটাও আমি সঙ্গে সঙ্গে ধরতে পারলাম: এই বাড়িতে পা দিয়ে হান্তের আর মিমির ছ্যাবলামো আর ভণ্ডামী দেখে, আমি সচেতনভাবেই খুশি হয়ে উঠেছি। কারণ এতে এটাই পরিষ্কার হয়ে গেছে যে হান্তেরের দিক থেকে কোনোরকম প্রতিদ্বন্দ্বিতার আশংকা নেই। অবচেতনে, যাহোক, এটা ভেবে খানিকটা দুঃখিত হয়েছিলাম (ওটা, অনুভূতি) যে মারিয়া ওই বৃত্তেরই একজন কাজেই কোনো না কোনোভাবে ও ওদের মতোই হবে।      

(চলবে)



বাংলাদেশ সময়: ১৬৪০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১২, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।