ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

শিল্প-সাহিত্য

প্রতিদিনের ধারাবাহিক

টানেল | এর্নেস্তো সাবাতো (৩৪) || অনুবাদ: আলীম আজিজ

অনুবাদ উপন্যাস / শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩১২ ঘণ্টা, নভেম্বর ৮, ২০১৪
টানেল | এর্নেস্তো সাবাতো (৩৪) || অনুবাদ: আলীম আজিজ অলঙ্করণ: মাহবুবুল আলম

___________________________________

এর্নেস্তো সাবাতো (২৪ জুন ১৯১১-৩০ এপ্রিল ২০১১) আর্জেন্টাইন লেখক এবং চিত্রকর। লেখালেখির জন্য পেয়েছেন লিজিওন অফ অনার, মিগুয়েল দে সেরভেন্তেস পুরস্কার।

এছাড়াও তিনি ছিলেন লাতিন আমেরিকান সাহিত্য জগতের বেশ প্রভাবশালী লেখক। তাঁর মৃত্যুর পর স্পেনের এল পায়েস—তাঁকে উল্লেখ করেন ‘আর্জেন্টিনাইন সাহিত্যের শেষ ধ্রুপদী লেখক’ বলে।
‘এল তুনেল’ (১৯৪৮), ‘সবরে হেরোস ইয়া টুম্বাস’ (১৯৬১), ‘অ্যাবানদন এল এক্সতারমিনাদোর’ (১৯৭৪) তাঁর জগদ্বিখ্যাত তিন উপন্যাস।
___________________________________

৩৩তম কিস্তির লিংক

(৩৪তম কিস্তি)
যা বলেছিলাম, জেগে উঠে দেখি আমি ঘরের মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছি, ঘামে ভিজে একেবারে নেয়ে উঠেছি।

ঘড়ির দিকে তাকালাম: দশটা বাজে। দৌড়ে গেলাম টেলিফোনের কাছে। ওপ্রান্ত থেকে জানাল মারিয়া এসতানসায়ায় গেছে। খবরটা শুনে একদম হতবুদ্ধি হয়ে গেলাম। অনেকক্ষণ, হয়তো বেশ কয়েক ঘণ্টাই হবে বিছানায় নিশ্চল হয়ে শুয়ে রইলাম। শেষে উঠে মারিয়াকে চিঠি লেখার সিদ্ধান্ত নিলাম।

চিঠির সব কথা সঠিকভাবে এখন আর মনে নেই, তবে দীর্ঘ চিঠি, সারাংশ বললে ওর কাছে ক্ষমা ভিক্ষা করেছি, মাপ করে দিতে বলেছি; বলেছি আমি জঞ্জাল ছাড়া আর কিছু না, আমি ওর ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য না, নিঃসন্দেহে আমি দোষী—আর এটা মোটেও অন্যায্য কিছু হবে না—যদি একদম নিঃসঙ্গতায় আমার মৃত্যুও হয়।

যন্ত্রণাকর একেকটা দিন পার হচ্ছে, কিন্তু ওদিক থেকে কোনো সাড়াশব্দ নেই। আরেকটা চিঠি পাঠালাম ওকে, তারপর আরেকটা, তারপর আরেকটা—চতুর্থ চিঠি, প্রত্যেকটি চিঠির ভাষ্য একই, বাড়তি সংযুক্তি বলতে আমার ক্রমবর্ধমান হতাশা। সব শেষে ওই রাতে, আমাদের শেষ দেখার দিন কী ঘটেছে আমি সবকিছু ওকে খুলে বলার সিদ্ধান্ত নিলাম। কোনো কিছুই বাদ দিলাম না, না দুষ্কর্মের কোনো খুটিনাটি। আমি কিভাবে প্রায় আত্মহননের কাছাকাছি চলে গিয়েছিলাম তাও সবিস্তারে জানালাম। একে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করায় লজ্জিত হলাম ঠিক, কিন্তু বিরত হলাম না। আর আমি যখন আমার অসংযমের কথা বলছি, কালে পোসাদায় মারিয়ার বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আত্মধ্বংসের বর্ণনা দিচ্ছি, তখন আমাকে এটাও স্বীকার করতেই হবে যে, সেদিন নিজের জন্যও আমার দুঃখ হয়েছে, এমন কি করুণায় আর্দ্র হয়ে ক’ফোটা চোখের জলও ফেলেছি আমি। এখন এই আশাতেই বুক বেঁধে আছি যে, মারিয়া যখন এই চিঠি পড়বে সামান্য হলেও হয়তো আমার দুঃখবোধ ওকে ছুঁয়ে যাবে, শুধু এই আশাতেই, মনটা খানিকটা খুশি হয়ে উঠল। চিঠিটা পোস্ট করলাম—রেজিস্টার মেইলে—তারপর থেকেই আমি পুরোই আশাবাদী হয়ে উঠলাম।

প্রত্যুত্তরে, মারিয়ার কাছ থেকে একখানা নমনীয় চিঠিই পেলাম। পড়ে আমার মনে হল এখনও হয়তো আমাদের ভালোবাসার সেই শুরুর দিককার কিছু স্মরণীয় মুহূর্ত পুনর্যাপন করা সম্ভব, সেই জাদুস্পর্শী প্রথম দিককার স্বর্গীয় আবহ হয়তো এতে আর ফিরে পাওয়া যাবে না, কিন্তু, অন্তত সৌরভের মতো হলেও কিছু নির্যাস তো থাকবেই—এই রকমের একটা সাদৃশ্য উল্লেখ করা যেতে পারে, একবার যে রাজা হয় সে সব সময়ই রাজা, হতে পারে তার অবাধ্য বিশ্বাসঘাতক প্রজা তাকে সাময়িকভাবে পরিত্যাগ করে চলে গেল, গালাগাল করল, তারপরও সে রাজাই থাকে।

মারিয়া আমাকে এসতানসিয়ায় আসতে বলেছে। উন্মাদের মতো, একটা সুটকেস আর এক বাক্স রঙ গুছিয়ে নিয়েই আমি ছুটলাম কনসটিটিওসিয়ন স্টেশনের উদ্দেশ্যে।

(চলবে)

৩৫তম কিস্তির লিংক



বাংলাদেশ সময়: ১৩১৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ৮, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।