ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

শিল্প-সাহিত্য

আফগানিস্তানের কবিতা | অনুবাদ: মঈনুস সুলতান

অনুবাদ কবিতা / শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫০৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩, ২০১৪
আফগানিস্তানের কবিতা | অনুবাদ: মঈনুস সুলতান পেইন্টিং: জার্‌রার খান

আফগানিস্তানে কবিতা রচিত হয়ে থাকে প্রধানত পুশতু ও ফার্সি বা স্থানীয় ভাবে পরিচিত দারী ভাষায়। এখানে তিনটি ফার্সি বা দারী কবিতার ভাবানুবাদ উপস্থাপন করা হচ্ছে।



দারী কবিতায় আধুনিকতার সূত্রপাত হয় মূলত ষাটের দশকের প্রথম দিকে পাশের দেশ ইরানে ফার্সি কবিতার বিবর্তনের প্রভাবে। ইরানে ‘ফ্রি স্টাইল পোয়েট্রি’ বা মুক্তক ঘরানার কবিতার প্রচলনের সাথে মহিলা কবিদের নাম ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এক্ষেত্রে মুক্তক ঘরানাকে ধ্রুপদী কাব্য প্রকরণের দৃঢ় রীতিকলা ভেঙ্গে ভিন্ন একটি ভাবনা-প্রধান কাব্যশৈলী নির্মানের উদ্যোগ হিসাবে বিবেচনা করা হয়। ইরানের যশস্বী মহিলা কবি নিমা ইউশিজ-কে (১৮৯৭-১৯৫৬) মুক্তক কাব্যশৈলীর পায়োনিয়ার বিবেচনা করা হয়ে থাকে। তাঁর নাম থেকে মুক্তক কাব্যশৈলী ‘নিমায়ী’ কবিতা হিসাবে ইরান ও আফগানিস্তানে পরিচিত হয়ে ওঠে।

আফগানিস্তানেও ‘নিমায়ী’ কাব্যশৈলী বলতে ধ্রুপদী কাব্যকলার বন্ধনমুক্ত হাল জামানার আধুনিক ভাবনা বিষয়ক কবিতাকে বোঝানো হয়ে থকে। আফগানিস্তানে ‘নিমায়ী’-রীতি বিকশিত হতে থাকে ষাটের দশক থেকে। এবং সে আমলের কবিদের ‘নিমায়ী’ ধরার ‘ফার্স্ট ওয়েভ’ বা ‘প্রথম তরঙ্গ’ বলা হয়। সত্তর দশকের দারী ভাষার কবিরা ‘নিমায়ী’ ধারার ‘সেকেন্ড ওয়েভ’ বা ‘দ্বিতীয় তরঙ্গে’র কবি হিসাবে পরিচিত। নব্বই দশক থেকে আজ আব্দি কবিদের অনেকেই ‘নিমায়ী’ ধারার ‘থার্ড ওয়েভ’ বা ‘তৃতীয় তরঙ্গে’র ধারক হিসাবে নিজেদের পরিচয় দিতে ভালোবাসেন। এখানে অনূদিত কবিত্রয়কে যথাক্রমে ষাট, সত্তর ও আশির দশক থেকে নির্বাচন করা হয়েছে।

___________________________________

অগ্নিরোগ | ওয়াসেফ বাখতারী
___________________________________                       

আনারের রক্তাক্ত দানার মতো
লোহিত হরফ দিয়ে লেখা
আমার ভাগ্যের হালখাতা
তার ছিদ্রময় প্রতিটি পাতা,
জলন্ত অঙ্গার হয়ে যেন
                    পুড়ছে আমার হৃদয়
যারা স্পর্শ  করে এ বিধিলিপি অগ্নিময়—
এবং দিতে চায় সজল ত্রাণ
পুড়ে ভষ্ম হয় তাদের প্রাণ;
এ দুর্যোগ—
লোহিত এ অগ্নিরোগ
কুরে কুরে খায় আমাদের
সমুদয় আনন্দ উপভোগ।

*** ওয়াসেফ বাখতারী: যশস্বী কবি বাখতারী’র জন্ম ১৯৪২ সালে, শৈশবে বেড়ে ওঠেন প্রান্তিক শহর মাঝার শরীফে। উচ্চমাধ্যমিক স্তর থেকে পড়াশোনা মূলত কাবুলে। যুক্তরাষ্ট্রের কলোম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স ডিগ্রি লাভ করেন। ছিলেন কাবুল বিশ্ববিদ্যালয়ে সাহিত্যের অধ্যাপক। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে অনুবাদকেরও কাজ করেন কয়েক বছর। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবাসী। পঞ্চাশের দশকে লেখালেখির সূত্রপাত হলেও পাদপ্রদীপের আলোয় আসেন ছ’য়ের দশকে। তিনি ‘নিমায়ী’ কাব্যধারার প্রথম তরঙ্গের পথিকৃত কবিদের অন্যতম।

___________________________________

এক হাজার এবং দ্বিতীয় রাত | আব্দুল সামী হামিদ
___________________________________

ঠিক জানি না সহন ক্ষমতা কতটুকু আমার উদ্‌ভ্রান্ত হৃদয়ের
ধংসস্তূপের লোহিত পুষ্পটি বাঁচবে কি না সন্দেহ আছে ঢের,
বসন্তের স্বর্গীয় দূত যে কৃষ্ণ খেচর—বাঁধবে কি সে নীড়
নেই তো কবোষ্ণ দেয়ালগিরি কোনো— বইবে না সিগ্ধ সমীর।

আছে হয়তো দেয়ালে গর্তের নোনাধরা সংকীর্ণ বিস্তার
তাতে জায়গা হবে কি নীড়ের শুকনো পাতা খড়কুটার?
ফোঁটায় ফোঁটায় তপ্ত মোমের মতো গলে নিয়তি আমার
শিখাপ্রিয় সুদর্শন মথ কি জেনে যাবে বিষয়টা এবার?

হাজার রজনী অতিক্রম করে আসবে যখন দোসরা রাত
মহিমান্বিত হবে কি কিংবদন্তীর শাহেরজাদের বরাত?

*** আব্দুল সামী হামিদ: চিকিৎসা বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করলেও কবি সামী হামিদ পেশায় মূলত সাংবাদিক। তবে রাজনৈতিক কার্টুন আঁকিয়ে হিসাবেও তিনি যশস্বী। ‘এসোসিয়েশন ফর দি ডিফেন্স অব আফগান রাইটারস রাইটস’-এর তিনি যুগ্ম-প্রতিষ্ঠাতা। এক সময় সম্পাদনা করতেন আন্ডারগ্রাউন্ড সংবাদপত্র ‘সালাম’। ২০০৩ সালে ‘কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্ট’ বা ‘সিপিজে’ তাঁকে ‘ইন্টারন্যাশনাল প্রেস ফ্রিডম’  নামক পুরস্কারে সম্মানিত করে। একই সালে তিনি আততায়ীর ছুরিকাঘাতে মারাত্মকভাবে জখম হলে জনসমক্ষে আসা ত্যাগ করেন। লেখালেখির সূত্রপাত ষাটের দশকের শেষ দিকে হলেও জনপ্রিয় হন সত্তর দশকে। তাঁর বইপত্র প্রকাশিত হতে থাকে আশির দশক থেকে। তিনি ‘নিমায়ী’ কাব্যধারার দ্বিতীয় তরঙ্গের কবি হিসাবে বিবেচিত।

___________________________________

হৃদয়ের বেদনার বিষয় | মোহাম্মদ করিম নাজিহি জিলওয়া
___________________________________

সে ছাড়া কেউ তো জানে না আমার হৃদয়ের দগদগে জখম
বাড়িওয়ালা ছাড়া আর কে-ইবা খবর রাখে
ঘরের নকশা খুঁটিনাটি—গালিচা..আসবাবপত্র কত রকম
দেখেছে কারা তার নির্মমতার নজির
যা ডেকে আনে ধংস বিষাদ অবশেষে সমূহ বিনাশ
জলন্ত চুলা ছাড়া অন্য কেউ কি বুঝতে পারে
আগুন ছড়াতে পারে কতোটা সন্ত্রাস?

যখন লিপ্ত হতে চাই তার সাথে ঝগড়া বিবাদ দ্বন্দ্বে
ভালোবাসার চোরাস্রোতে নিমজ্জিত হই—
মুগ্ধ হই আমি কুঁকড়ানো অলকের মৃদু ছন্দে

সরল পাখি জানবে কিভাবে
কতোটা তফাত বার্ডফিডার আর ফাঁদে
জড়াই কিভাবে দেহজ প্রলোভনে—কিসের টানে
উঠে যাই যশের অভ্রভেদী ছাদে

বিজ্ঞজনের প্রাজ্ঞমনে আমার কামনা কুহেলী
আদতে বাকচাতুরী শিশুতোষ ছল
প্রতিফলিত হয় তার নেশাতুর চোখে
দুই ভুবনের কোলাহল।

যদিবা কখনো বন্ধ হয় স্বর্গের দুয়ার
কী হবে জুলুমের যজ্ঞে পুড়িয়ে তাজা তনুমন
স্বর্গ মোসাফির এক জেনো
তোমার ভেতরেও আছে নিজস্ব ভুবন।

*** মোহাম্মদ করিম নাজিহি জিলওয়া: হাল জামানার জনপ্রিয় কবি জিলওয়া’র জীবনের অনেকগুলো বছর কেটেছে  পাকিস্তান ও ইরানের শরণার্থী শিবিরে। আশির দশকে তাঁর লেখালেখির সূত্রপাত হয় পাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রদেশে হাতে লেখা পত্রিকা ও ম্যাগাজিনে। নব্বই দশক থেকে তাঁর রচনা প্রকাশিত হতে থাকে কাবুলের পত্র-পত্রিকায়। বর্তমানে কবি কাবুল শহরে বাস করেন। তাঁকে ‘নিমায়ী’ কাব্যধারার তৃতীয় তরঙ্গের কবি বিবেচনা করা হয়ে থাকে।



বাংলাদেশ সময়: ১৫০৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।