ঢাকা, শনিবার, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১, ২৭ জুলাই ২০২৪, ২০ মহররম ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

প্রতিদিনের ধারাবাহিক

টানেল | এর্নেস্তো সাবাতো (৩০) || অনুবাদ: আলীম আজিজ

অনুবাদ উপন্যাস / শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪১৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ১, ২০১৪
টানেল | এর্নেস্তো সাবাতো (৩০) || অনুবাদ: আলীম আজিজ অলঙ্করণ: মাহবুবুল হক

___________________________________

এর্নেস্তো সাবাতো (২৪ জুন ১৯১১-৩০ এপ্রিল ২০১১) আর্জেন্টাইন লেখক এবং চিত্রকর। লেখালেখির জন্য পেয়েছেন লিজিওন অফ অনার, মিগুয়েল দে সেরভেন্তেস পুরস্কার।

এছাড়াও তিনি ছিলেন লাতিন আমেরিকান সাহিত্য জগতের বেশ প্রভাবশালী লেখক। তাঁর মৃত্যুর পর স্পেনের এল পায়েস—তাঁকে উল্লেখ করেন ‘আর্জেন্টিনাইন সাহিত্যের শেষ ধ্রুপদী লেখক’ বলে।
‘এল তুনেল’ (১৯৪৮), ‘সবরে হেরোস ইয়া টুম্বাস’ (১৯৬১), ‘অ্যাবানদন এল এক্সতারমিনাদোর’ (১৯৭৪) তাঁর জগদ্বিখ্যাত তিন উপন্যাস।
___________________________________

২৯তম কিস্তির লিংক

‘তারমানে তুমি ওর সঙ্গে শোও। ’
এটা বলার সময় ওর চোখের দিকে আমার সতর্ক দৃষ্টি। কারণ আমার গোপন পরিকল্পনা হল: এই সুযোগে কিছু বিষয় আমি খোলাসা করে নেব। আলেন্দের প্রতি ওর সত্যিকারের শারীরিক কোনো আকর্ষণ আছে এটা আমি বিশ্বাস করি না (তবে মারিয়ার যা ধাত, তাতে ওর দ্বারা এরকম পুরোই সম্ভব), কিন্তু ‘ওকে ভাইয়ের মতো ভালোবাসি’ এই বিষয়ে জোর করে হলেও আমি ওর পরিষ্কার ব্যাখ্যা শুনতে চাই। তবে আমি ঠিক যে রকম ধারণা করেছিলাম, মারিয়া জবাব দিতে যথেষ্ট সময় নিল, ধীরে, চরম সতর্কতায় প্রত্যেকটা শব্দ বাছাই করল ও, তারপর বলল:
‘ওর সঙ্গে শুয়েছি বলেছিই, কিন্তু ওকে আমি প্রেমিকের মতো ভালোবাসি না। ’
‘আহ!’ আমি বিজয়ীর মতো বলে উঠলাম। ‘তাহলে ওকে ভালো না বেসেই ওর সঙ্গে শুয়েছো, ভালোবাসার ভান করেছো!’
ম্লান হয়ে গেল মারিয়া। নিঃশব্দে, ওর গাল বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে নামতে শুরু করল। ওর চোখ ঘোলা, কাচের মতো।
‘আমি এটা বলিনি,’ ধীরে, ক্ষীণ গলায় বলল ও।
‘এতে এটা পরিষ্কার হয়ে যায় না,’ নির্দয়ভাবে শুরু করলাম আমি, ‘যে তুমি যদি ওকে বুঝিয়ে দিতে ওর প্রতি তোমার কোনো অনুভূতি নেই, কোনো রকম টান অনুভব করো না তুমি, যদি বুঝিয়ে দিতে যে ওর সঙ্গে দৈহিকভাবে মিলিত হওয়ার ত্যাগটুকু তুমি স্বীকার করেছো, শুধুমাত্র ওর ভালোবাসার প্রতিদান দেওয়ার জন্য, এবং এর সঙ্গে ওর মহাত্মার জন্য তোমার যত শ্রদ্ধা, এরকম আরও যা যা আছে সব যদি বুঝতে দিতে—তাহলে আলেন্দে কোনো দিনই তোমার সঙ্গে বিছানায় যেত না। অন্য কথায়: তোমার কাছে ওর আসা অব্যাহত থাকায় এটাই প্রমাণ হয় যে তুমি ওকে সফলভাবে ধোঁকা দিতে সক্ষম হচ্ছো, এবং এই ধোঁকা শুধু তোমার ভালোবাসাকে দিচ্ছো না, তোমার নিজের অনুভূতিকেও দিচ্ছো। তুমি নিখুঁতভাবে সুখের নকল করতে পারো!’

মেঝের দিকে তাকিয়ে, নিঃশব্দে কাদছে মারিয়া।
যখন মুখ খুলল ও, বলল, ‘তুমি এতো নিষ্ঠুর। ’
‘এসব কথা বাদ রাখি এখন; আমি প্রকৃত ঘটনা নিয়ে কথা বলতে চাই। ঘটনা হল বছরের পর বছর তুমি তোমার স্বামীকে ভাওতা দিতে সক্ষম হয়েছো, তোমার ভালোবাসাই শুধু মিথ্যে না, মিথ্যে তোমার অনুভূতিও। এর ফল একজন নবিসের কাছেও পরিষ্কার: আমি কী করে জানব যে তুমি আমাকেও ধোঁকা দিচ্ছো না? এখন তুমি নিশ্চয়ই বুঝতে পারছো তোমার আবেগ নিয়ে কেন প্রায়ই প্রশ্ন করতাম। আমি কখনই ভুলিনি ডেসডিমোনার বাবা ওথেলোকে সাবধান করেছিলো: যে নারী তার বাবাকে ধোঁকা দিতে পারে সে অন্য পুরুষকেও ধোঁকা দিতে পারে। এবং কোনো কিছুই আমার মন থেকে এই চিন্তা দূর করতে পারছে না: অনেক বছর ধরেই তুমি আলেন্দের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছো। ’

এবং এখানেই আমি ক্ষান্ত দিলাম না, আমার নিষ্ঠুরতাকে আরও চরম মাত্রায় নিয়ে যেতে বাধ্য হলাম আমি, এর সঙ্গে, অশোভন আর কুৎসিত জেনেও আরও যোগ করলাম:
‘একজন কানা লোককে ঠকাচ্ছ। ’

২০
আমার মুখ থেকে ওই কথাগুলো বেরুনোর আগেই, আমার মধ্যে খানিকটা যেন অনুশোচনার মতো হল। যে ব্যক্তি ওই কথাগুলো বলে বিকৃত আনন্দ পেতে চেয়েছে, তার ঠিক পেছনেই দাঁড়িয়ে আছে খাঁটি আর ততোধিক নরম মনের একজন মানুষ যে ওই নিষ্ঠুর বাক্য যথাস্থানে দাগ কাটার পরমুহূর্তেই ঘটনার কর্তৃত্ব নিজের হাতে নেওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়েছে—এ সেই ব্যক্তি, একভাবে, এমন কি প্রায় নিঃশব্দেই, ওই নির্বোধ, অর্থহীন কথাগুলো উচ্চারিত হওয়ার আগেই মারিয়ার পক্ষ সে নিয়েছে (সেটা, তার কাছে সত্য হল, এসব বলে কি সিদ্ধি লাভ করা যাবে?)।

এমন কি আমার মুখ থেকে ওই শব্দগুলো উচ্চারিত হওয়ার সময়েও, ওই নিরুদ্ধ লোকটা প্রবল বিস্ময় নিয়ে কথাগুলো শুনছিল, সব কিছুর পরেও কেউ যে এ ধরনের কথা বলতে পারে সেটা সে কোনোভাবেই বিশ্বাস করতে পারছিল না। এবং প্রত্যেকটি শব্দের উচ্চারিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ও আমার চেতনা, আমার ইচ্ছাশক্তির দখল নিয়ে নিচ্ছিল, এবং আমার বাক্য শেষ করা থেকে আরেকটু হলেই সে আমাকে প্রায় নিবৃত্ত করে ফেলেছিল। ঠিক তখুনি (কারণ তার হস্তক্ষেপ সত্ত্বেও, শব্দগুলো মুখ নিঃসৃত হল ঠিক), তবে তার পূর্ণ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা হয়ে গেছে, তার দাবি হল, আমি যেন ক্ষমা ভিক্ষা করি, এবং মারিয়ার সামনে নতজানু হয়ে আমার বোকামি ও নিষ্ঠুরতা স্বীকার করে নেই। আর কতবার আমার এই খণ্ডিত চেতনার কারণে এ রকম জঘন্য ঘটনা ঘটবে?

(চলবে)

৩১তম কিস্তির লিংক



বাংলাদেশ সময়: ১৪১৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ১, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।