ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

শিল্প-সাহিত্য

নোবেলজয়ী লেখকের উপন্যাস

নিখোঁজ মানুষ | পাত্রিক মোদিয়ানো (২) || অনুবাদ : মাসুদুজ্জামান

অনুবাদ উপন্যাস / শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৩৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ২২, ২০১৪
নিখোঁজ মানুষ | পাত্রিক মোদিয়ানো (২) || অনুবাদ : মাসুদুজ্জামান অলঙ্করণ: মাহবুবুল হক

___________________________________

 ‘নিখোঁজ মানুষ’ [মিসিং পারসন, ১৯৭৮] এ বছর সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার জিতে নেওয়া পাত্রিক মোদিয়ানোর ষষ্ঠ উপন্যাস। যুদ্ধ মানুষকে কতটা নিঃসঙ্গ, অনিকেত, আত্মপরিচয়হীন, অমানবিক অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিতে পারে, এটি হয়ে উঠেছে তারই চমকপ্রদ আলেখ্য।

‘রু দে বুতিক অবসক্যুর’ শিরোনামে ফরাসি ভাষায় লেখা উপন্যাসটির নামের আক্ষরিক অনুবাদ করলে দাঁড়ায় ‘অন্ধকার বিপনীর সড়ক’। ড্যানিয়েল ভিসবোর্ট ১৯৮০ সালে এটি ইংরেজিতে অনুবাদ করেন। এর প্রধান চরিত্র ডিটেকটিভ গাই রোলান্দ। রহস্যময় একটা দুর্ঘটনার পর স্মৃতিভ্রষ্ট গাই তার আত্মপরিচয়ের অনুসন্ধানে নামে। ধীরে ধীরে তার সামনে উন্মোচিত হতে থাকে হারিয়ে যাওয়া দিনগুলো। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মানরা প্যারি কব্জা করে নিলে বন্ধুদের কাছ থেকে সে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে এবং নিখোঁজ হয়। বন্ধুরাও নানা দিকে ছিটকে পড়ে। সমগ্র উপন্যাসটি সেদিক থেকে বিবেচনা করলে আসলে নিখোঁজ মানুষের গল্প। ১৯৭৮ সালে উপন্যাসটি অর্জন করে প্রি গোঁকুর্ত পুরস্কার। পাঠকদের উপন্যাসটি পাঠের আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। এখানে উল্লেখ্য যে, এর আগে মদিয়ানোর কোনো লেখা বাংলায় অনূদিত হয়নি। ফরাসি উচ্চারণ এবং কিছু বাক্যাংশের অর্থ উদ্ধারে সাহায্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের ফরাসি ভাষার অধ্যাপক শিশির ভট্টাচার্য্য। - অনুবাদক
___________________________________

১ম কিস্তির লিংক

২.
“হ্যালো, পল সোনাশিৎজে বলছেন?”
“বলছি। ”
“আমি গাই রোলান্দ... আপনি জানেন, সেই...”
“হ্যাঁ, অবশ্যই! আপনাকে জানি! আমরা কি দেখা করতে পারি?”
“যদি আপনি চান...”
“কেমন হয়... আজ সন্ধ্যায়, এই ন’টার দিকে, রু আনাতোল দ্য লা ফর্জে আসি? … কী, ঠিক আছে?”
“হ্যাঁ, আসেন। ”
“আমি আপনাকে ওখানে আশা করবো। যথাসময়ে দেখা হবে!”
সঙ্গে সঙ্গে তিনি ফোনটা রেখে দিলেন আর আমার শরীর দিয়ে ঘাম বয়ে গেল। নিজেকে স্থির রাখার জন্য আমি একগ্লাস কনিয়াক খেয়েছি। কেন যে টেলিফোন করার মতো একটা নিরীহ কাজের সময় আমাকে এত উদ্বেগে ভুগতে হয়?

রু আনাতোল দ্য লা ফর্জের বারে কোনো খদ্দের নেই। তিনি কাউন্টারের পেছনে দাঁড়িয়ে আছেন, পরনে বাইরে যাওয়ার পোশাক।
তিনি বললেন, “আপনার ভাগ্য ভালো। ” “বুধবার সন্ধ্যায় আমার অফ থাকে। ”
তিনি আমার দিকে এগিয়ে এলেন আর হাত রাখলেন আমার কাঁধে।
“আপনার সম্পর্কে আমি অনেক চিন্তা করেছি। ”
“ধন্যবাদ। ”
“আসলে জানেন, এটা আমার মনে ছিল। …”
আমি তাকে বলতে চাইলাম উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। কিন্তু আমার মুখে কথা জোগালো না।
“আমি এই সিদ্ধান্তে এসেছি যে আপনি হয়তো কারো না কারো বন্ধু হবেন। একসময় তার সঙ্গে আমার অনেকবার দেখা হয়েছে... কিন্তু কে সে?”
তিনি মাথা নাড়লেন।
জিজ্ঞেজ করলেন, “আপনি আমাকে কোনো ক্লু দিতে পারেন না?”
“না। ”
“কেন নয়?”
“আমার মনে নেই। ”
তিনি ভাবলেন আমি বোধ হয় কৌতুক করছি, আর ব্যাপারটা যেন ধাঁধার খেলা। তিনি বললেন:
“ঠিক আছে। আমি নিজেই সব ম্যানেজ করবো। কিন্তু আমি স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবো তো?”
“আপনার ইচ্ছামতো কাজ করবেন। ”
“তাহলে আজ সন্ধ্যায়, আসেন, আপনাকে আমার এক বন্ধুর ডিনারে নিয়ে যাই। ”
বেরুনোর আগে তিনি ইলেকট্রিক মিটারের হাতলটা শক্ত হাতে নিচে টেনে নামালেন। কাঠের ভারী দরোজাটা বন্ধ করে দিলেন, কয়কবার চাবিটা তালার মধ্যে মোচড় দিয়ে ঘোরালেন।

রাস্তার উল্টো দিকে তিনি গাড়িটা পার্ক করে রেখেছেন। গাড়িটা কালো রঙের আর নতুন। সৌজন্যবশত তিনিই গাড়ির দরোজাটা খুললেন।
“আমার এই বন্ধুটা ভিলা দাভরে এবং স্যাঁক্লুতে চমৎকার দুটি রেস্তোরাঁ চালান। ”
“তাই কি?”
“হ্যাঁ। ”
রু আনাতোল দ্য লা ফর্জ থেকে আমরা দ্য লা গ্রঁদ আর্মে এভিন্যুতে চলে এলাম, আর আমি তো গাড়ি থেকে প্রায় লাফ দিয়ে নামি এরকম অবস্থা। ভিলা দাভরে খুব যে দূরে, এমনটা ভাবা সম্ভব হলো না। তবু আমি পেছনে ফিরে গেলাম।

পর্ত দ্য ক্লুতে পৌঁছানো অব্দি একটা ভয় আমার ওপর চেপে বসলো। ওই ভয়টাকে সামাল দিতেই গলদঘর্ম অবস্থা আমার। সোনাশিৎজেকে আমি প্রায় চিনিই না। আমাকে তিনি কোনো ফাঁদে ফেলছেন নাতো? তবে ধীরে ধীরে যতই তার কথা শুনছি ততই আমি শান্ত হয়ে আসছি। পেশাগত জীবনের নানা ধাপ সম্পর্কে তিনি আমাকে জানালেন। প্রথমে তিনি রাশান নাইট ক্লাবগুলোতে কাজ করতেন। এরপর শঁ-লিজের ল্যাঙ্গার রেস্তোরাঁতে কাজ নেন। পরে কাজ নিয়েছেন রু কম্বোর ওতেল কাস্তিঈতে। রু আনাতোল দ্য লা ফর্জের পানশালায় কাজ করার আগ পর্যন্ত অন্যান্য প্রতিষ্ঠানেও কাজ করেছেন তিনি। যতবার সমস্যায় পড়েছেন ততবার প্রিয় বন্ধু জঁ অর্তরের কাছে ছুটে এসেছেন। এবারও আমরা তার সেই বন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছি। এই হলো বন্ধুত্বের মেলবন্ধন, যা তারা কুড়ি বছর ধরে লালন করে আসছেন। অর্তরেরও মনে আছে সব। আমি যে “গোলকধাঁধায়” আটকে আছি, মনে হয় দুজনে মিলে তার জট খুলতে পারবেন।

খুব সতর্কতার সঙ্গে সোয়ানিৎজে গাড়ি চালাচ্ছেন, আর এইজন্যে গন্তব্যে পৌঁছাতে আমাদের প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা লেগে গেল।

বাড়িটা বাংলো ধরনের। এর বাঁ দিকটা ঝাঁকড়াসদৃশ উইলো গাছের দ্বারা ঢাকা। বাঁ দিকে আমি দেখছি ঝোঁপজঙ্গল। রেস্তোরাঁর ভেতরটা সুপরিসর জায়গা দিয়ে তৈরি। পেছনটায়, যেখানে জ্বলছে একটা উজ্জ্বল আলো, সেখান থেকে একজন লোক লম্বা লম্বা পা ফেলে এগিয়ে এলেন। তার হাতটা বাড়িয়ে দিলেন আমার দিকে।
“আপনার সঙ্গে মিলিত হতে পেরে আমি আনন্দিত। আমি জঁ অর্তের। ”
এরপর অর্তের দিকে ঘুরে গিয়ে বললেন :
“হ্যালো, পল। ”

তিনি আমাদের পেছনের ঘরটাতে নিয়ে গেলেন। একটা টেবিল, তিনজনের বসার ব্যবস্থা আছে। টেবিলের মাঝে ফুল রাখা।
একটা জানালার দিকে তাকিয়ে বললেন:
“ওই যে বাংলোটা দেখছেন, আমি তাদের কাছ থেকে একটা কাজের অর্ডার পেয়েছি। একটা বিয়ে। ”
“আপনি কি এর আগে কখনও এখানে এসেছেন?” সোনাশিৎজে আমাকে জিজ্ঞেস করলেন।
“না। ”
“জঁ, ওকে আশপাশের দৃশ্যটা দেখান, তারপর কথা বলা যাবে। ”

(চলবে)

৩য় কিস্তির লিংক



বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ২২, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।