ঢাকা: জনপ্রিয় লেখক হুমায়ূন আহমেদ বইমেলায় আসা মানেই- তার পেছনে দীর্ঘ মিছিল, যে স্টলে বসবেন সে স্টলের সামনে অনেকদূর পর্যন্ত উপচেপড়া ভিড়, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অতিরিক্ত সতর্কতা, আনন্দের পাশাপাশি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যক্তিদের দৌঁড়ঝাপ। এবারের বইমেলার প্রথম ২৭ দিন তা হয়নি।
সোমবার বইমেলার শেষ দিনের শেষ বেলায় সন্ধ্যা ছয়টায় হঠাৎই হাজির হলেন জনপ্রিয় এ লেখক। তার আগমনে প্রবেশ পথ থেকেই শুরু হয়ে গেল ভক্ত-অনুরাগীদের বিশাল নীরব মিছিল। উচ্ছ্বসিত আনন্দের এ মিছিল ছুটল তার পেছন পেছন। গিয়ে ঠেকলো অন্যপ্রকাশের স্টলের সামনে, তাদের প্রিয় লেখক বসেছেন যে স্টলে। সঙ্গে তার স্ত্রী অভিনেত্রী মেহের আফরোজ শাওন ও পুত্র নিষাদ হুমায়ূন আহমেদ।
স্টলের এক কোণে বসে একে একে অটোগ্রাফ দিয়ে যাচ্ছেন তার লেখার ভক্তদের কেনা বইগুলোতে। আর পেছনে বসে বসে তা দেখছেন শাওন ও নিষাদ। স্টলের ভেতরে সাংবাদিকদেরও দীর্ঘ সারি। একদিকে অটোগ্রাফশিকারীদের বায়না মেটাচ্ছেন আর অন্যদিকে কথা বলছেন সাংবাদিকদের সঙ্গে।
বললেন, ‘আমি ভিড় খুব ভয় পাই। ভক্তদের কথা আর প্রকাশকের পীড়াপীড়িতে না এসে পারলাম না। ভেবেছিলাম, আজ বুঝি কম লোক আসবে। কিন্তু এসে দেখলাম প্রচ- ভিড়। আগে জানলে আসতাম না। ’
ফাঁকে বলে নিলেন, ‘একুশে বইমেলা আরও বড় পরিসরে হওয়া উচিত। ’
আর ভক্তদের উদ্দেশে তার পরামর্শ ছিল- লেখকের যশ-খ্যাতি দেখে নয়, বই কেনার আগে একটু হলেও ভূমিকা পড়ে নিতে হবে। ’
তবে শাওনের কণ্ঠে ছিল আক্ষেপের সুর। বললেন, ‘আগে মেলায় এসে ইচ্ছামতো ঘুরে বেড়াতাম। আড্ডা দিতাম। এখন আর পারি না। যেখানে যাই সেখানেই মানুষ ঘিরে ধরে। এখন মেলায় এলে হুমায়ূন আহমেদের পাশে বসে থাকতে হয়। অবাক চোখে তার অবিরাম অটোগ্রাফ দেওয়ার দৃশ্য দেখেই সময় কাটাতে হয়। ’
সাংবাদিকদের জিজ্ঞাসার জবাবে মায়ের পেছনে বসে বার্গার ও স্যান্ডউইচ খেতে খেতে নিষাদ লাজুক কণ্ঠের জবাব ছিল ‘ভালো আছি’।
তবে সাংবাদিকরা স্টলের ভেতরে বেশিক্ষণ থাকতে পারেননি। পেছনে পড়ে যাওয়া অস্থির ভক্তদের বিরক্তি দেখে দ্রুত কেটে পড়া ছাড়া উপায় পাননি তারা।
এদিকে, একই সময় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতও এসেছিলেন অন্যপ্রকাশের স্টলে। তিনি কিছুক্ষণ বসেন এবং হুমায়ূন আহমেদের অটোগ্রাফ দেওয়া উপভোগ করেন।
উল্লেখ্য, এবারের মেলায় হুমায়ূন আহমেদের ১৩টি বই এসেছে। এর মধ্যে অন্যপ্রকাশ থেকে বের হয়েছে আটটি বই। এগুলো হলো- ‘ম্যাজিক মুনশি’, ‘হিমুর আছে জল’, ‘রাবনের দেশে আমি এবং আমরা’ ‘বাদশাহ নামদার’, ‘আমি’, ‘ফাউন্টেন পেন’ ও ‘সেই সময়’। এয়াড়া কাকলী থেকে ‘একটি সাইকেল ও কয়েকটি ডাহুক পাখি’, জ্ঞানকোষ থেকে ‘হিমু এবং একটি রাশিয়ান পরী’, অনন্যা থেকে ‘পুফি’ এবং অবসর থেকে প্রকাশিত হয়েছে ‘রচনাসমগ্র ১২’।
বাংলাদেশ সময়: ২২১৫, ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০১১