ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

শিল্প-সাহিত্য

সোমবার পর্দা নামছে বইমেলার

হুমায়ুন আজাদের ওপর হামলাকারীদের বিচার দাবি

সালাম ফারুক, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৪৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০১১
হুমায়ুন আজাদের ওপর হামলাকারীদের বিচার দাবি

ঢাকা: আর মাত্র একদিন। সোমবার, ২৮ ফেব্রুয়ারি।

রাত আটটার পরপরই পর্দা নেমে যাবে বায়ান্নার ভাষা আন্দোলনে শহীদদের স্মরণে আয়োজিত অমর একুশে বইমেলার। ভেঙে যাবে লেখক-প্রকাশক-পাঠক-সমালোচকদের এ বৃহৎ মিলনমেলা। এই ভাঙনে করুণ সুর বেজে উঠেছে এরই মধ্যে। কারণ আবার এ মিলনের জন্য অপেক্ষা করতে হবে আরও এক বছর।

প্রচুর কেনাবেচা আর নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচনের মধ্য দিয়ে তাই ব্যস্ততায়ই কাটলো মেলার ২৭তম দিনটি। পাশাপাশি বহুমাত্রিক লেখক হুমায়ুন আজাদের উপর হামলাকারীদের শাস্তি দাবি আর ধূমপানবিরোধী প্রচারণা যোগ করেছে নতুন মাত্রা।

পুরো মাসে বইয়ের তালিকা সংগ্রহ করে সেগুলো থেকে বাছাই করে নিজের পছন্দের বই কিনতে এসেছেন বেশিরভাগই। হুইল চেয়ারে চড়ে আসা ক্রেতার দেখাও মিলেছে রোববার। মাঝ বয়সী আর তরুণদের পাশাপাশি শিশু-কিশোরদের ভিড়ও ছিল লক্ষণীয়।

হুমায়ুন আজাদের ওপর হামলাকারীদের বিচার দাবি

বহুমাত্রিক লেখক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হুমায়ুন আজাদের ওপর হামলার পুঙ্খানুপঙ্খ তদন্ত ও অবিলম্বে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন লেখক, পাঠক ও প্রকাশকরা।

রোববার, অমর একুশে বইমেলার ২৭তম দিনে তার ওপর হামলার সপ্তমবার্ষিকী স্মরণে আয়োজিত সমাবেশে তারা এ দাবি জানান। বিকেলে তথ্যকেন্দ্রের সামনে এ প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করে লেখক-পাঠক-প্রকাশক ফোরাম।

বক্তারা বলেন, ‘দীর্ঘ সাত বছর পেরিয়ে গেলেও প্রকৃত হামলাকারী ও পরিকল্পনাকারীদের আটকের ব্যাপারে সরকার কোনও পদক্ষেপ নেয়নি। অথচ ঘটনার সঙ্গে জড়িতরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। পরিকল্পনাকারীদের একজন যুদ্ধাপরাধ মামলায় আটক থাকলেও হুমায়ুন আজাদের উপর হামলার অপরাধে আটক করা হয়নি। ’

বক্তারা মামলার তদন্তভার সিআইডির হাতে তুলে দিয়ে অবিলম্বে হামলাকারীদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।

সমাবেশে অংশ নিয়ে বাংলা একাডেমীর মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান বলেন, ‘হুমায়ুন আজাদ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে লিখেছিলেন বলে দেশটির এ দেশীয় দোসররা তার উপর হামলা চালিয়েছে। আমি অবিলম্বে এর পুঙ্খানুপঙ্খ তদন্ত ও জড়িতদের শাস্তি দাবি করছি।

আগামী প্রকাশনীর প্রকাশক ওসমান গণির সঞ্চালনায় এতে অন্যদের মধ্যে বক্তৃতা করেন অধ্যাপক আবদুল মান্নান চৌধুরী, জাতীয় কবিতা পরিষদের সভাপতি কবি হাবিবুল্লাহ সিরাজী, কবি মোহন রায়হান, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সহ-সভাপতি গোলাম কুদ্দুস, মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী আয়াত উল্লাহ পাটোয়ারী প্রমুখ। অন্যদের মধ্যে সংগীতশিল্পী ফকির আলমগীরও উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, ২০০৪ সালে একুশে বইমেলার অদূরে একদল জঙ্গিবাদী পথভ্রষ্টের হামলায় গুরুতর আহত হয়েছিলেন তিনি। পরে দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার পর জার্মানির মিউনিখে একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১১ আগস্ট মৃত্যুবরণ করেন।

ধূমপানবিরোধী প্রচারণা
হুমায়ুন আজাদের উপর হামলার প্রতিবাদে আয়োজিত সমাবেশ শেষ হতে না হতেই সময়, অনন্যা ও আগামী প্রকাশনীর সামনে শুরু হয় ধূমপানবিরোধী প্রচারণা। বাংলাদেশের জার্সি পরা জনা পঁচিশেক শিশু-কিশোর এতে অংশ নেয়। ওয়ার্ক ফর বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট ও মাদকবিরোধী সংগঠন প্রত্যাশা আয়োজিত এ প্রচারণায় পাবলিক প্লেস ও পরিবহনে ধূমপান না করার আহ্বান জানানো হয়।

নতুন বই ও মোড়ক উন্মোচন
এদিকে, মেলার মাত্র একদিন বাকি থাকতে রোববারও ৮৮টি নতুন বই এসেছে। তবে নতুন এ তালিকায় ভালো লেখকের লেখা তেমন নেই বললেই চলে। এছাড়া পুরনো বইয়ের নতুন সংস্করণও রয়েছে বেশ ক’টি। বাংলা একাডেমী প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, এ নিয়ে এবারের মেলায় আসা নতুন বইয়ের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৯২৪টি।

শেষ বেলায়ও অব্যাহত রয়েছে মোড়ক উন্মোচনের জন্য নির্ধারিত নজরুল মঞ্চের ব্যস্ততা। রোববার ৩৯টি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেছেন বিশিষ্টজনেরা।

সোমবার তথ্য-প্রযুক্তিবিষয়ক সেমিনার
একুশে বইমেলার শেষ দিন ২৮ ফেব্রুয়ারি বেলা সাড়ে ১১টায় তথ্য-প্রযুক্তিবিষয়ক একটি সেমিনারের আয়োজন করেছে বাংলা একাডেমী। একাডেমীর সেমিনার কক্ষে অনুষ্ঠিত এ সেমিনারের বিষয় নির্ধারণ করা হয়েছে বাংলা ভাষায় ই-বুক প্রকাশনা। এতে দেশের বিভিন্ন পর্যায়ের তথ্য-প্রযুক্তিসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা অংশ নেবেন।

সমাপানী অনুষ্ঠান
বিকাল চারটায় মেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে অমর একুশে বইমেলার সমাপনী অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে গ্রন্থমেলায় সেরা গ্রন্থ প্রকাশককে ‘চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি পুরস্কার’ এবং সর্বাধিক মানসম্মত গ্রন্থ প্রকাশের জন্য প্রকাশককে ‘শহীদ মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার’ দেওয়া হবে।

এতে তথ্য ও সংস্কৃতিমন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ প্রধান অতিথি ও সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট প্রমোদ মানকিন বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। বাংলা একাডেমীর সভাপতি অধ্যাপক কবীর চৌধুরীর সভাপতিত্বে এতে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখবেন মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান, ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ মাহবুবুর রহমান ও স্টেপ মিডিয়ার পরিচালক মোস্তফা জাহিদ খান। এছাড়া মেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব বাংলা একাডেমীর পরিচালক শাহিদা খাতুন তার প্রতিবেদন উপস্থাপন করবেন।

বাংলাদেশ সময়: ২০৩১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad