ঢাকা, শুক্রবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

শিল্প-সাহিত্য

মুক্তিপথের অভিযাত্রী আমীনূর রশীদ চৌধূরী

আশিস বিশ্বাস | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৩২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০১১
মুক্তিপথের অভিযাত্রী আমীনূর রশীদ চৌধূরী

‘আমীনূর রশীদ চৌধূরী ছিলেন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী। রাজনীতি থেকে সাহিত্য সর্বক্ষেত্রেই ছিল তাঁর অবাধ বিচরণ।

ব্রিটিশ আমলে উপনিবেশিক দুঃশাসনের বিরুদ্ধে ছিলেন সোচ্চার। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামেও তিনি ছিলেন আপোসহীন। ’

লেখক অপূর্ব শর্মা এ ভাবেই শুরু করেছেন এ জীবনীগ্রন্থের প্রাসঙ্গিক কথা।

গ্রন্থটির নাম রাখা হয়েছে মুক্তিপথের অভিযাত্রী আমীনূর রশীদ চৌধূরী। গ্রন্থকার অপূর্ব শর্মার কথার সত্যতা মিলল বইটির প্রাসঙ্গিক কথার মধ্যেই। আমীনূর রশীদ চৌধূরী ‘রাজনীতির সুবাদেই সংস্পর্শে আসেন মহাত্মা গান্ধী, নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু, জওহরলাল নেহেরু, আবুল কালাম আজাদসহ উপমহাদেশের প্রখ্যাত ব্যক্তিদের। তাঁদের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল তাঁর। আজাদ হিন্দ ফৌজের সদস্য হিসেবেও কাজ করেছেন তিনি।

১৯৪৭ সালে দেশবিভাগের পর নতুন করে সংগ্রাম শুরু করতে হয় তাঁকে। বাঙালি সংস্কৃতি লালন করার অভিপ্রায়ে তিনি পাক জান্তার বিরুদ্ধে ‘‘সংস্কৃতি রক্ষার যুদ্ধ” চালিয়ে যেতে থাকেন। পাক সরকারের রক্তচুও তাঁকে দমিয়ে রাখতে পারেনি। ’

লেখকের এই কয়েকটি লাইনের মধ্যেই সংগ্রামী আমিনূর রশীদ চৌধূরীর পরিচয় ফুটে উঠেছে। ইতিহাসবিমুখ জাতি বলে আমাদের দুর্নাম আছে। অবশ্য এর কারণও আছে। সেটি হচ্ছে, ’৪৭-এর দেশভাগের আগে যারা স্বদেশি আন্দোলনে সম্পৃক্ত ছিলেন, তাদের জীবনকাহিনী আমরা খুব কমই জানি। কারণ, তাদের জীবন ও সংগ্রামের কাহিনী নিয়ে আমাদের দেশে খুব কম গ্রন্থই প্রকাশিত হয়েছে। এর জন্য অগ্রজদের দায়ী করে থাকেন উত্তরসূরিরা। সেদিক থেকে অপূর্ব শর্মা ইতিহাসের দায় রক্ষা করেছেন।

লেখক অপূর্ব শর্মা দীর্ঘদিন ধরে সাংবাদিকতার পেশায় যুক্ত। তিনি এখন একটি অনলাইন বার্তা সংস্থার সিলেট ব্যুরোর দায়িত্বে আছেন। এছাড়া সিলেটের দৈনিক যুগভেরী পত্রিকায় অনেক দিন ধরে সাংবাদিকতা করছেন। সে সুবাদে আমীনূর রশীদ চৌধূরী সম্পর্কে জানার সুযোগ পেয়েছেন। আমীনূর রশীদ একসময় যুগভেরীর মালিক ও সম্পাদক ছিলেন।

আমীনূর রশীদ চৌধূরী ১৯১৫ সালের ১৭ নভেম্বর কোলকাতার ৩৮ নম্বর জাননগর রোডে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা আব্দুর রশীদ চৌধূরীর নিবাস ছিল তৎকালীন সিলেট জেলার সুনামগঞ্জ মহকুমার পাগলা পরগনার দুর্গাপাশা গ্রামে। তাদের পূর্বপুরুষ ফুল খান পাঠান মুল্লুক থেকে এখানে এসে বসতি স্থাপন করেন।

গ্রন্থকার অপূর্ব শর্মা আমীনূর রশীদ চৌধূরীর জীবন-ইতিহাস লিখেছেন কাব্যিকভাবে। গদ্য লেখারও একটা ছন্দ থাকে। সে ছন্দের পতন কোথাও ঘটেনি গ্রন্থটি পড়তে গিয়ে। পড়তে গিয়ে কোথাও আটকে যেতে হয় না, বুঝতেও অসুবিধা হয় না। পাঠকের সুবিধার্থে গ্রন্থকার উপশিরোনাম দিয়ে ধারাবাহিকভাবে লিখেছেন গ্রন্থটি। ফলে, সবার শ্রেণী পাঠকই মনোযোগ দিয়ে পড়ার সুযোগ পাবেন। যেমন গ্রন্থকার লিখেছেন ‘বহুমুখী প্রতিভার অšে¦ষণ’, ‘জন্ম, শৈশব ও শিক্ষাজীবন’, ‘রাজনৈতিক চেতনার স্ফুরণ’, ‘বিপ্লবী দলের অস্ত্রভাণ্ডারের রক্ষক’, ‘দাঙ্গা এবং আমীনূর রশীদের ওপর হামলা’, ‘চারবার জেলে, একবার দণ্ডিত’ ইত্যাদি। এইভাবে লেখক উপশিরোনাম দিয়ে ৪৪টি পর্বে সাজিয়েছেন আমীনূর রশীদ চেীধূরীর জীবন-কাহিনী।

বইটি এবারের বইমেলায় প্রকাশ করেছে ‘সাহিত্য প্রকাশ’। প্রচ্ছদ এঁকেছেন অশোক কর্মকার।

বাংলাদেশ সময় ২১২১, ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।