ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

শিল্প-সাহিত্য

বইমেলার সেমিনারে বক্তারা

‘মানুষে মানুষে সদ্ভাব ও সম্প্রীতিই রবীন্দ্রদর্শনের মূলকথা’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪১৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০১১
‘মানুষে মানুষে সদ্ভাব ও সম্প্রীতিই রবীন্দ্রদর্শনের মূলকথা’

ঢাকা: রবীন্দ্রনাথ আমৃত্যু মানবতাবাদী দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে মানবাধিকারকে জড়িয়ে নিয়েছিলেন। এজন্য তার সমকালীন বিশ্বের অনেক প্রথিতযশা লেখক-বুদ্ধিজীবীর চেতনার সঙ্গে রবীন্দ্রমনীষার ঐক্য ও সংহতি পরিদৃষ্ট হয়।

বিশেষ করে জার্মান বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন (১৮৭৯-১৯৫৫) ও ফরাসি লেখক রোমা রোলাঁর (১৮৬৬-১৯৪৪) সঙ্গে রবীন্দ্র-মানবতাবাদ ও মানবাধিকার ভাবনার সাজুয্য লণীয়।

শুক্রবার, অমর একুশে বইমেলার ২৫ দিনে মূলমঞ্চে ‘মানবতাবাদ, মানবাধিকার : রবীন্দ্রনাথ আইনস্টাইন ও রোমা রোলাঁ এবং একাল’ শীর্ষক মূল প্রবন্ধে কথাগুলো বলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক অনীক মাহমুদ।

তিনি আরও বলেন, ‘যুগে যুগে মানবতাবাদের ধারণা ও প্রেরণা প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের নানা মনীষীর চেতনায় নানামাত্রায় উপস্থাপিত। পাশ্চাত্যের প্রোটাগোরাস, সক্রেটিস থেকে শুরু করে রুশো-ভলটেয়ার-সার্ত্রে, মার্কস-এঙ্গেলস, প্রাচ্যের কনাদ-কপিল-চার্বাক-গৌতমবুদ্ধ-রামমোহন-বিদ্যাসাগর-লালন-গান্ধী-রবীন্দ্রনাথসহ অসংখ্য মনীষার প্রলেপন ঘটেছে মানবতাবাদের সুদীর্ঘ অভিযাত্রায়। এরমধ্যে রবীন্দ্রনাথের মানবপ্রত্যয় ও মানবতাবাদ জিজ্ঞাসায় এবং কর্মলোকের প্রেরণায় উদ্দীপ্ত। তিনি শত-সহস্র কবিতা-গানে যে ভগবতনির্ভরতা ছড়িয়ে দিয়েছেন সে ভগবান তার জীবনদেবতা।

আলোচনা অনুষ্ঠানের ‘উপনিবেশবাদ, উত্তর-উপনিবেশবাদ ও রবীন্দ্রনাথ’ শীর্ষক অপর মূল প্রবন্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক মাসুদুজ্জামান বলেন, ‘পাশ্চাত্যের আধিপত্যবাদী ঔপনিবেশিক ভাবনা, অর্থাৎ প্রাচ্যবাদের বিরুদ্ধে যেমন নিজের বা ভারতীয় মতাদর্শকে প্রতিষ্ঠা দিয়েছেন, তেমনি গড়ে তুলেছেন মতাদর্শিক-বৌদ্ধিক প্রতিরোধ; আর এভাবেই তাকে উপনিবেশবিরোধী উত্তর-আধুনিক ভাবুক হিসেবে উপস্থিত হতে দেখি।

তিনি বলেন, ‘রবীন্দ্রনাথ শুধু তার কালে নয়, ভাবনা ও বোধের দিক থেকে ছিলেন বিস্ময়কর এক কালোত্তীর্ণ প্রতিভা। এ কারণেই তাঁর চিন্তনপ্রক্রিয়ায় উপনিবেশবাদ ও উত্তর-উপনিবেশবাদ ও উত্তর-উপনিবেশবাদী সর্বাধুনিক ভাবনা বা সমালোচনা-তত্ত্বের বীজ ল করা যায়।

প্রাবন্ধিক বলেন, ঔপনিবেশিক শাসন-শোষণের বিরুদ্ধে আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন তিনি; এই সংগ্রাম ছিল বৌদ্ধিক-নৈতিক-রাচনিক। তিনি সন্ত্রাসবাদীদের বিপ্লবী কর্মকাণ্ডকে অনুমোদন দেননি, অস্বীকার করেছেন একক হিন্দু রাষ্ট্রের ধারণা, অস্বীকার করেছেন জাতীয়তাবাদকে, সারাজীবন ধরে বিরোধিতা করে গেছেন সাম্রাজ্যবাদের, গড়ে তুলতে চেয়েছেন সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধ সাংস্কৃতিক-বৌদ্ধিক ডিসকোর্স আর বহুত্ববাদী সমাজ। শুধু উপনিবেশ-বিরোধিতার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনি রবীন্দ্রভাবনা এভাবেই হয়ে উঠেছেন ভবিষ্যৎ ভারতদ্রষ্টা, উপমহাদেশের দ্রষ্টা।

সভাপতির বক্তৃতায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘রবীন্দ্রদর্শনের মূলকথা হচ্ছে মানুষের প্রতি মানুষের সদ্ভাব ও সম্প্রীতি। আমরা রবীন্দ্রনাথের দর্শন অবলম্বন করে মানবতাবাদে উপনীত হতে পারি। ’

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল বলেন, ‘রবীন্দ্রনাথ মানবতাবাদ-উপনিবেশবাদ-ফ্যাসিবাদ প্রভৃতি ধারণার মধ্যদিয়ে মানবকল্যাণে উপনীত হওয়ার প্রয়াস চালান। রবীন্দ্রনাথ মানুষকে সামাজিক মানুষ হওয়ার কথা বলেছেন যা মূলত সামগ্রিকতারই পরিচয় বহন করে। ’

বিকেলে গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে আয়োজিত অনুষ্ঠানে উপস্থাপন করেন এবং প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন । আলোচনা করেন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল, শিাসচিব কামাল চৌধুরী এবং ড. আবদুল ওয়াহাব। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ।

শিাসচিব কামাল চৌধুরী বলেন, ‘রবীন্দ্রনাথ আমাদের চৈতন্যপ্রবাহে অন্যতম শ্রেষ্ঠ মশাল। মানুষের প্রধান অবলম্বন মানুষ। মানুষের বাইরে কোনো সাহিত্য হয় না আর মানুষকে নিয়ে রচিত সাহিত্যই মানবসাহিত্য। রবীন্দ্রনাথের সাহিত্যে মানবীয় দৃষ্টিভঙ্গি কোনো বিশেষ অঞ্চলের মানুষকে নিয়ে নয়, সামগ্রিক। ’

বাংলা একাডেমীর পরিচালক ড. আবদুল ওয়াহাব বলেন, ‘মানুষের ভালোত্বের অনুসন্ধান হচ্ছে রবীন্দ্রনাথের আজন্ম সাধনা। রবীন্দ্রনাথ পূর্ববাংলায় অবস্থানকালে বাংলার জারি-সারি প্রভৃতি গান তাঁকে আকৃষ্ট করে। মানুষের ভালোবাসার প্রগাঢ় বিশ্বাসই রবীন্দ্রনাথের সাহিত্যকর্মে সদা ক্রিয়াশীল ছিল। ’

এদিকে বিকেলে সাহিত্য পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠান থাকায় শনিবারের আলোচনা অনুষ্ঠান সকাল ১১টায় শুরু হবে। এতে ‘চীনে রবীন্দ্রসাহিত্য’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন ইয়াং ওয়েইমিং (স্বর্ণা)। আবদুল খালেকের সভাপতিত্বে এতে আলোচনায় অংশ নেবেন তুং ইয়োছেন, ওয়েলিমিং, জাংশিং, বেগম জাহানারা, ফিরোজ মাহমুদ ও ম. মনিরউজ্জামান।

বাংলাদেশ সময়: ২৩৫৫ ঘণ্টা ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।