ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

শিল্প-সাহিত্য

বইমেলার আলোচনায় বক্তারা

‘রবীন্দ্রনাথের বহু গল্পে বিজ্ঞান ভাবনার উজ্জ্বল উপস্থিতি রয়েছে’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩৫৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২২, ২০১১

ঢাকা: ‘যে কোনো বড়ো মাপের স্রষ্টাকে সমাজের প্রতিচ্ছবি রচনা করতে হয়। নানা চরিত্র ও তাদের আচার আচরণকে সার্থকভাবে ফুটিয়ে তুলতে হয়।

ফলে মনোবিদ্যার পাঠ কম-বেশি তাকে নিতেই হয়। রবীন্দ্র উপন্যাসে নায়ক-নায়িকাদের মনোজগত হতে পারে যে কোনো মনঃসমীক্ষাবিদের লোভনীয় উপাদান। ’

মঙ্গলবার বিকালে বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত ‘রবীন্দ্রনাথের বিজ্ঞানচিন্তা’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধে কথাগুলো বলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক শ্যামল চক্রবর্তী।

প্রবন্ধে তিনি বলেন, ‘রবীন্দ্রনাথের বহু গল্পে বিজ্ঞান ভাবনার উজ্জ্বল উপস্থিতি রয়েছে। শেষ জীবনে তিনি বিজ্ঞানকে তার ভাবনার অন্যতম প্রধান উপজীব্য বিষয় করে তুলেছিলেন। ছিয়াত্তর বছর বয়সে তিনি ‘বিশ্বপরিচয়’-এর পাণ্ডুলিপি তৈরি করেন। তিনি ‘সমগ্র’ দিয়ে বিজ্ঞানকে অনুভব করার কথা বলতেন। ’

সভাপতির বক্তৃতায় তাত্ত্বিক পরমাণুবিজ্ঞানী অধ্যাপক আমিন হাসান কাজী বলেন, ‘বঙ্কিমচন্দ্রের প্রবন্ধের মাধ্যমে বাংলা সাহিত্যে বিজ্ঞানের যে সূচনা ঘটে রবীন্দ্রনাথ ছিলেন সেই রেনেসাঁসের চরম ফল। মানুষের জন্যই বিজ্ঞান। আর রবীন্দ্রনাথ ছিলেন সেই বিজ্ঞানের সাধক, যিনি জীবনের শুরুতেই বিজ্ঞানে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। রবীন্দ্রনাথ বিশ্বাস করতেন পৃথিবীর সব মানুষ একই সূত্রে গাঁথা। ’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যা বিভাগের মুহম্মদ ইব্রাহীম বলেন, ‘জীবনকে যিনি বুঝতে ও উপভোগ করতে চান তার দরকার বিজ্ঞানচর্চা। রবীন্দ্রনাথ ছিলেন একজন প্রায়োগিক বিজ্ঞানী। তিনি পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও যুক্তি-তর্কের মাধ্যমে ভালো কিছু করার চেষ্টা করতেন। তিনি মহাবিশ্ব, গ্যালাক্সি, সীমা-পরিসীমা সর্বোপরি বৃহতের সন্ধান করতেন। বিভিন্ন গ্রহের মধ্যে জীবের সন্ধান অনুধাবন করেন তিনি, যা নিঃসন্দেহে বিজ্ঞানমনস্কতার পরিচায়ক। ’

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের অধ্যাপক রবীন্দ্রনাথ শীল বলেন, ‘রবীন্দ্রনাথ তার কাব্যে-গল্পে-সাহিত্যে এই নভোমণ্ডলসহ বিজ্ঞানের জটিল বিষয়গুলোকে অত্যন্ত সহজ ও প্রাঞ্জল ভাষায় উপস্থাপন করেছেন। ’

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক ফারসীম মান্নান মোহাম্মদী বলেন, ‘রবীন্দ্রনাথের কবিতা-গান-প্রবন্ধ-ছোটগল্প সবকিছুতেই বিজ্ঞান-ভাবনার বিষয়টি ফুটে ওঠে। রবীন্দ্রনাথ সার্থক কলাবিদ্যার মানুষ হলেও বিজ্ঞানের প্রতি তার ঝোঁক ছিল বিস্ময়কর। ’

আলোচনায় সোনালী ব্যাংক লিমিটেডের পরিচালক সুভাষ সিংহ রায় বলেন, ‘কৃষিক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহারে রবীন্দ্রনাথ ছিলেন দিকপাল। জ্যোতির্বিজ্ঞান ও প্রাণিবিজ্ঞান বিষয়েও তার বিশেষ ঝোঁক ছিল। তার বিচিত্র বিজ্ঞান-ভাবনার পরিসর ও বিস্তৃতি যে কত গভীর তা বিভিন্ন রচনায় স্পষ্ট। তাই আমরা যারা জীবনকে সমৃদ্ধ করতে চাই তাদের উচিত রবীন্দ্রনাথ অধ্যয়ন করা। ’

সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে মো. মনিরুজ্জামানের পরিচালনায় দলীয় আবৃত্তি পরিবেশন করে আবৃত্তি সংগঠন ‘রৌদ্র করোটি’। আবদুল মতিন ভূঁইয়ার পরিচালনায় গীতিআলেখ্য পরিবেশন করে ‘কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসর’ এবং সংগীত পরিবেশন করেন কণ্ঠশিল্পী এ টি এম জাহাঙ্গীর, রত্না সরকার, নার্গিস রহমান, হিমাদ্রি শেখর তালুকদার, কাঞ্চন মোস্তফা, ঝুমা খন্দকার, মীরা মন্ডল প্রমুখ।

বুধবার মেলার ২৩তম দিনের আলোচনার বিষয় নির্ধারণ করা হয়েছে ‘বৌদ্ধকাহিনী ও রবীন্দ্রনাথ’। বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমানের সভাপতিত্বে এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন জুলফিকার মতিন। আর আলোচনায় অংশ নেবেন বিপ্রদাশ বড়ুয়া, বিপ্লব বালা ও তপন বাগচী।

বাংলাদেশ সময়: ২৩৪৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২২, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।