ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

শিল্প-সাহিত্য

‘বই কিনি আর না কিনি এদিন তো মাস্ট আসতেই হবে’

সালাম ফারুক, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১২১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২১, ২০১১
‘বই কিনি আর না কিনি এদিন তো মাস্ট আসতেই হবে’

ঢাকা: একে তো একুশে ফেব্রুয়ারি, মহান ভাষা আন্দোলনে শহীদদের স্মরণের দিন, তার ওপর এই দিনটি ঘিরেই মাসব্যাপী অমর একুশে বইমেলা। বাংলা একাডেমী আয়োজিত এ বইমেলায় তাই এ দিনটিই সবচেয়ে জমজমাট হবে- এটাই স্বাভাবিক।

হয়েছেও তা।

একুশের চেতনায় সোমবার ছিল বইমেলার সর্বাধিক জনসমাগমের দিন। ২৮ দিনের এই একটি দিনই সকাল আটটা থেকে খোলা থাকে মেলাপ্রাঙ্গণ। সকাল থেকেই তাই আসা শুরু হয় পাঠক-ক্রেতা-দর্শকের। দুপুর না হতেই জনসমাগম রূপ নেয় ‘ভিড়’-এ। বিকালে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টির ফোটাও দমাতে পারেনি এ আগমন। আর সন্ধ্যায় মেলাপ্রাঙ্গণ পরিণত হয় বিশাল জনসমুদ্রে। শাহবাগ-দোয়েল চত্বর সড়ক আর মেলার ভেতরের মূল অংশের কোথাও ছিল না তিল ধারণের ঠাঁই।

সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় প্রচণ্ড ভিড়ের মাঝেই চারুকলা ইনস্টিটিউটের সামনে কথা হয় মেলায় ঢুকতে যাওয়া মাজেদুল ইসলামের সঙ্গে। স্ত্রী আর দুই সন্তান নিয়ে এসেছেন তিনি। বললেন, ‘মেলা তো আজ সকাল থেকেই ছিল। তাই ভাবলাম এ সময় ভিড় কিছু কম হবে। কিন্তু যা দেখছি তাতে ভেতরে যেতে অনেক কঠিন হবে মনে হচ্ছে। ’

বিকালে মেলা প্রাঙ্গণে দাঁড়িয়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী নওরীন চৌধুরী ও জান্নাতুল আফরিন বাংলানিউজকে বললেন, ‘এ দিনটি আমাদের বাংলা ভাষার বিজয়ের দিন, আমাদের চেতনার দিন। আর এর কারণেই বাংলা একাডেমী এ বইমেলার আয়োজন করেছে। তাই অন্যান্য দিন এলেও বই কিনি আর না কিনি এদিন তো মাস্ট আসতেই হবে। ’

এমন বক্তব্য আরও অনেকের। তাদের মতে, একুশের চেতনাকে সমুন্ন রাখতে এ বইমেলা। আর এই একুশের দিনেই বইমেলায় না এলে হয় না-কি?

সোমবারের বইমেলায় একটি বড় অংশের আসা ছিল বেড়ানোর মানসে। তাদের বেশিরভাগই শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এসে ঢুঁ মেরেছেন বইমেলায়। প্রকৃত ক্রেতার সংখ্যা ছিল খুবই কম। বিভিন্ন স্টলে গিয়ে বই বাছাই, উল্টে-পাল্টে দেখাতেই বেশি ব্যস্ত ছিলেন তারা।  তাই শান্তি আর স্বস্তিতে বই কিনতে পেরেছেন এমন ক্রেতার সংখ্যা খুবই কম।

আগামী প্রকাশনীর প্রকাশক ওসমান গনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘যেদিন ভিড় খুব বেশি থাকে সেদিন বেচাকেনা কম হয়। আজকের মেলা তো লোকে লোকারণ্য।  তাই স্বাভাবিকভাবেই ক্রেতার সংখ্যা অনেক কম। ’

‘বেশিরভাগ লোকজন দেখতে আসছে’ মন্তব্য করে তিনি আরও বলেন, ‘এর একটি উপকারিতাও আছে। মানুষ দেখতে দেখতে উজ্জীবিত হয়, যার প্রভাব পড়ে পরে। এক সময় মানুষ মাসুদ রানার গোয়েন্দাকাহিনী আর রোমেনা আফাজের দস্যু বনহুর ইত্যাদি পড়তো। সেখান থেকে হুমায়ূন আহমেদের বই। এভাবে এভাবে উজ্জীবিত হতে হতে মানুষ এখন সিরিয়াস বই বেশি পড়ছে। ’

তার কথার সমর্থন পাওয়া গেল অনন্যার প্রকাশক মনিরুল হকের কণ্ঠেও। তিনি বললেন, ‘একুশে ফেব্রুয়ারি হওয়ায় আজ বইমেলায় অনেক পাঠকের সমাগম হয়েছে। কিন্তু বিক্রি হয়েছে কম। ভিড়ের কারণে অনেকেই সেভাবে কেনাকাটা করতে পারেননি। তারা বই দেখেছেন, বাছাই করেছেন। আশা করছি আগামীকাল থেকে কেনা শুরু করবেন। ’

অন্যপ্রকাশের প্রকাশক মাজহারুল ইসলাম বললেন, ‌‘একুশে ফেব্রুয়ারিতে শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে বইমেলায় ঘুরতে আসাটা আমাদের সংস্কৃতির একটি অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাদের অনেকেই হয়তো আগে বই কিনে নিয়েছেন। আবার কেউ হয়তো পরে কিনবেন। ’

তার মতে, এ দিনে মেলায় আসা সব লোক একটি করেও বই কিনলে সব স্টল মিলিয়ে সে পরিমাণ বই সরবরাহ করতে পারবে না। তবে সকাল থেকে খোলা থাকায় অন্যান্য দিনের তুলনায় বিক্রির পরিমাণ কিছুটা বেশি বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

উৎস প্রকাশনের প্রকাশক মোস্তফা সেলিমও বললেন, ‘শহীদ মিনার পাশে থাকায় একুশে ফেব্রুয়ারিতে বইমেলায় ভিড়ের পরিমাণটা অনেক বেশি থাকে। তবে যেমন ভিড়, তেমন বিক্রি হয় না। বেশিরভাগ লোকই ঘুরতে আসে। ’

এদিকে, সকাল থেকেই ভিড় সামলাতে হিমশিম খেতে হয়েছে মেলার নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের। ঝগড়া-বিবাদসহ অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাও ঘটতে দেখা যায় কিছু। অপরিহার্য অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থার কারণে প্রবেশ পথের দীর্ঘ সারিতেও ছিল তাই কিছুটা মন্থর গতি।

বাংলাদেশ সময়: ২১১৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২১, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।