ঢাকা: আর কয়েক ঘণ্টা পেরোলেই মহান একুশে ফেব্রুয়ারি। আমাদের অহঙ্কারের দিন।
একুশের চেতনা হৃদয়ে ধারণ করেই আয়োজন করা হয় অমর একুশে গ্রন্থমেলা। এ কারণেই হয়তো একুশে ফেব্রুয়ারির আগের দিন মেলা জুড়ে বিরাজ করছিল একুশের আমেজ।
শনিবার বিশ্বকাপ ক্রিকেটে বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচের কারণে মেলায় লোক সমাগম তুলনামূলকভাবে কম থাকলেও রোববার মেলা ছিল কানায় কানায় পূর্ণ। যারা একুশের দিন ভিড় ঠেলে মেলায় আসার ঝক্কি-ঝামেলা পোহাতে রাজি নন তারা আজ মেলায় এসেছেন। তবে একুশের আনন্দ থেকে একেবারে বঞ্চিত হননি রোববারে মেলায় আসা বই পাগল দর্শক ও দর্শনার্থীরা।
ফরিদপুর সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শ্রী চৈতন্যচন্দ্র দাস বাংলানিউজকে বলেন, ‘একুশের দিন মেলায় ঢোকা খুবই কষ্টসাধ্য। তাই আজকে মেলায় এলাম। তবে মেলার বাতাসে একুশের সুবাস ভালোই মিলছে। ’
ঢাকা রামপুরা থেকে আসা সানজিদা আক্তার বাংলানিউজকে বলেন, ‘মেলার ভিড় দেখে মনে হচ্ছে আজ-ই একুশে ফেব্রুয়ারি। ’
এদিকে, মেলায় আগত ক্রেতা-দর্শনার্থীর পোশাক থেকে শুরু করে বই কেনার তালিকা, শরীরে আঁকানো আল্পনা, মেলা মাঠের সাজসজ্জা সবখানেই ছিল একুশের ছাপ। রোববার একুশ ও ভাষা আন্দোলন বিষয়ক বই বেশ বিক্রি হয়েছে বলে জানালেন প্রকাশকেরা।
এছাড়া রোববার মেলায় আসা তরুণ-তরুণীদের গায়ে বিভিন্ন বুটিক হাউসের ‘অ আ ক খ’সহ ভাষা আন্দোলনের স্মারক চিহ্ন সংবলিত পোশাকের প্রাধান্য দেখা গেছে। এদের কারও কারও কপালে আঁকা ছিল দেশের মানচিত্র। আবার কেউবা নিজের গালকেই ক্যানভাস করে এঁেেকছেন জাতীয় পতাকা আর শহীদ মিনারের প্রতিকৃতি। আবার কারো টি-শার্টে ওপর ছিল ভাষা শহীদ সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার, শফিউরের প্রতিকৃতি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নূরে আলম বাংলানিউজকে বলেন, ‘ভাষার প্রতি মমতাবোধ থেকেই বারবার মেলায় ছুটে আসি। মেলায় আসলেই মনে হয় ভাষা শহীদদের খুব কাছাকাছি আছি। ’
মেলায় উপেক্ষিত ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো’ ভাষা আন্দোলনের শহীদদের স্মরণে শুরু হয় ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’। আর তাই গ্রন্থমেলায় ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি’ গানটিও ছিলো অপরিহার্য অংশ। প্রতি বছরই মেলার আনুষ্ঠানিক শুরুর পর থেকেই তথ্য কেন্দ্র থেকে বাজানো হয় গানটি। গানটির সঙ্গে ভাষা শহীদদের আত্মদানের স্মৃতিবিজড়িত।
মূল মঞ্চের আয়োজন
রোববার বিকেলে মেলার মূল মঞ্চে ‘উপন্যাসে আধুনিকতা ও রবীন্দ্রনাথ’ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন খলিকুজ্জামান ইলিয়াস।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাবিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ আকরম হোসেনের সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশ নেন বিশিষ্ট মনোবিজ্ঞানী ও কথাসাহিত্যিক আনোয়ারা সৈয়দ হক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও বিশিষ্ট গবেষক ভীষ্মদেব চৌধুরী ও মাসুদ মাহমুদ।
সন্ধ্যায় মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এতে আবৃত্তি পরিবেশন করেন এস এম মহিদুল ইসলাম ও ইকবাল খোরশেদ। সঙ্গীত পরিবেশন করেন পান্না বিশ্বাস, খুরশিদ আলম, মাহমুদ সেলিম, রফিকুল আলম প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ২০৫৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০১১