ঢাকা, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

শিল্প-সাহিত্য

মুক্তিযুদ্ধের বইয়ের প্রতি আগ্রহ বেড়েছে নতুন প্রজন্মের

রহমান মাসুদ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০০৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০১১
মুক্তিযুদ্ধের বইয়ের প্রতি আগ্রহ বেড়েছে নতুন প্রজন্মের

ঢাকা: বাংলা একাডেমী আয়োজিত অমর একুশে বইমেলায় মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীনতা আন্দেলনের ওপর প্রকাশিত বইগুলো টানছে নতুন প্রজন্মের পাঠক ও দর্শনার্থীদের।

উত্তরা থেকে মেলায় আসা স্কলিস্টিকা স্কুলের স্ট্যার্ন্ডাড সেভেনের ছাত্রী ঐশি বলছিলেন- ‘আমি প্রথমে কিনতে চাই আমাদের স্বাধীনতাযুদ্ধের ওপর প্রকাশিত কিছু বই।



এর কি বিশেষ কোনো কারণ আছে?  জবাবে ঐশি বলেন,  ‘আমি ইংরেজি মাধ্যমে পড়ি। আমাদের দেশ বিদেশের অনেক ঘটনা, ইতিহাস. ঐতিহ্য সম্পর্কে পড়ানো হয়। কিন্তু আমাদের এ লেভেলে দেশের মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীনতা যুদ্ধ সম্পর্কে তেমন বিস্তারিত কিছু পড়ানো হয় না। আবার পরিবার থেকেও আমরা স্পষ্ট কিছু জানতে পারি না। অথচ আমাদের এ বয়সটাই হয়তো দেশ সম্পর্কে জানার উপযুক্ত সময়। ’

কিন্তু চাইলেই কি জানা যায় দেশের প্রকৃত ইতিহাস? এর জবাবে একজন খ্যাতনামা প্রকাশক নাম না করার শর্তে বাংলানিউজকে জানান, ‘দেশের ইতিহাস নিয়ে কেবল নতুন প্রজন্ম, পাঠক বা প্রকাশকই নয়। বিভ্রান্তিতে পড়েন খোদ মুক্তিযোদ্ধারাও। ’

তিনি আরো বলেন, ‘এমন ঘটনা ও ঘটেছে দুই সরকারের সময় একজন ইতিহাসবিদ একই ঘটনার দুই রকম ব্যাখ্যা দিয়ে দুই ধরনের পান্ডুলিপি তৈরি করেছেন এবং রাজনৈতিক চাপে সে বই একই প্রকাশককে প্রকাশ করতে হয়েছে। ’

তবে তা যাই হোক তরুণ প্রজন্মের প্রতিনিধিরা কিন্তু ঠিকই খুঁজে নেয় তার প্রকৃত ইতিহাস। কিন্তু তা কিভাবে? জবাবে নটরডেম কলেজের দ্বাদশ শ্রেনীর ছাত্র মোনেম মুনতাসির বলেন, ‘দেখুন এখন সময় পাল্টেছে। আমরা কেবলমাত্র মলাট বন্দী ইতিহাস বা পরিচিত কয়েকটি মুখের বক্তব্যকে আর বিশ্বাস করছি না। দেশের প্রকৃত ইতিহাস জানতে বা বিভ্রান্তি কাটাতে আশ্রয় নিচ্ছি ইন্টারনেটের। ’

‘তথ্যবাতায়নের মাধ্যমে সঠিক ইতিহাস খুঁজে নেওয়ার সুযোগতো আছেই। সারা পৃথিবীর বিখ্যাত সব সংবাদ পত্র, সাংবাদিক, ইতিহাস বক্তা, কূটনৈতিক ও মানবাধিকার কর্মীরা তাদের মতো করেই লিখে গেছেন তাদের ভাষ্য’- বলছিলেন মোনেম মুনতাসির।

তরুণ প্রজন্মের এই মনোভাবকে কিভাবে দেখছেন মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্ম? জবাবে বাংলানিউজকে জানান  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সোনিয়া নিশাত আমিন-‘ তরুণ প্রজন্মের ইতিহাসের প্রতি এ আগ্রহ অবশ্যই ইতিবাচক একটা দিক। তবে এতে ইতিহাসবিদদের ও দায়িত্ব বেড়ে গেলো আসল ইতিহাস তুলে ধরার। ’

তিনি বলেন, ‘ব্যক্তিগত ভাবে আমি বাংলাদেশের ইতিহাসের বর্তমান অবস্থায় হতাশ। যদি কোনো দল বা ব্যক্তি যদি ইতিহাস মুছে দেয়, তা জাতির জন্য দু:খ জনক। কিন্তু গত নির্বাচনে নতুন প্রজন্ম ডানপন্থি বা স্বাধীনতা বিরোধীদের না বলে দিয়ে ইতিহাস রচনা করেছে। ’

অধ্যাপক সোনিয়া নিশাত আমিন জানান, নতুন প্রজন্ম যদি আসল ইতিহাস জানতে না পারে তবে তাদের কনফিউজড হওয়াটাই স্বাভাবিক। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘আমাদের ইতিহাসের এতো পালা বদল, উত্থান-পতন তা বিভ্রান্ত হওয়াটাই স্বাভাবিক। ’

তিনি আরও বলেন, ‘আসল ইতিহাস জানারও উপায় আছে। নতুন প্রজন্ম যদি ইতিহাস খুঁজতে গিয়ে মৌলিক কয়েকটি জায়গা বা সংবিধানের ভিত্তির দিকে তাকায় এবং কোনো ব্যক্তির ইতিহাসে মন না দিয়ে দেশের সাধারণ মানুষের ইতিহাস দেখে তাহলেই তারা আসল ইতিহাস খুঁজে পাবে’।

অধ্যাপক সোনিয়া আরও বলেন, ‘সাধারণত ৫০ বছর পরই কোনো ঘটনার আসল ইতিহাস লেখা হয়। কারণ হিসেবে তিনি জানান- ‘এ সময় সকল আবেগ ভুলে গিয়ে নিরপেক্ষ ইতিহাস লেখা হয়। ’

বাংলাদেশ সময়:  ২০০২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।