ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

শিল্প-সাহিত্য

তবুও জমল বইমেলার প্রথম শিশুপ্রহর

সালাম ফারুক, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯২৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০১১
তবুও জমল বইমেলার প্রথম শিশুপ্রহর

ঢাকা: বাংলা একাডেমী-ঘোষিত তিন দিনের শিশুপ্রহরের প্রথম দিন মঙ্গলবার কচি কাঁচাদের পদচারণায় ভালোই জমে উঠেছিল বইমেলা প্রাঙ্গণ।

সুদূর চট্টগ্রাম থেকে এসেছিল পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রী তাহিয়া আর কিন্ডার গার্টেনের ছাত্র আহনাফ।

উদ্দেশ্য বই কেনা। দেখেশুনে তাই সন্তানদের জন্য প্রথম শিশুপ্রহরটিই বেছে নেন বাবা ইঞ্জিনিয়ার জসিম উদ্দিন।

কী কী বই কিনলে? প্রশ্ন শেষ করতে না করতেই এক নিঃশ্বাসে তাহিয়ার জবাব, ‘সাযযাদ কাদিরের চারটি বই, মুহম্মদ জাফর ইকবালের একটি আর তাহসিন মননের ধাঁধার বই’।

জবাব দেওয়ার লোভ সামলাতে পারল না আহনাফও। পাশ থেকে বলে উঠলো, ‘পাঁচটি আমি ড্রইংয়ের বই কিনেছি। ’

অবসর প্রকাশনা সংস্থার স্টলের সামনে দাঁড়িয়ে বই দেখছে রায়হান ও আজরীন। মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলে প্রথম জন তৃতীয় ও তার ছোট বোন আজরীন পড়ে প্রথম শ্রেণীতে।

ওরা কিনেছে টম অ্যান্ড জেরি, ইংরেজি বর্ণমালার বই, সিংহ ও ইঁদুরের গল্প, রাজুর আদর্শলিপি ও লোভী জমিদার।

মা একই স্কুলের শিক্ষিকা শাহনাজ হক বললেন, ‘এসএসসি পরীক্ষার জন্য ওদের স্কুল ছুটি। আর এমন দিনেই পড়েছে বইমেলার প্রথম শিশুপ্রহর। এ সুযোগে নিয়ে এলাম। ’

বাবার হাত ধরে আসা ভিকারুন্নিসা স্কুলের পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রী পুষ্পিতা আর তার তিন বছরের ছোট বোন চন্দ্রিকা কিনেছে টাইম মেশিন ও হাকলবেরি ফিনের দুঃসাহসিক অভিযান, জাঙ্গল বুক এবং সত্যজিৎ রায়ের লেখা ফেলুদার সেরা অভিযানসহ বেশ ক’টি বই।

শহীদ রমিজউদ্দিন স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্রী তাহসিন আক্তার মণি খুঁজছে তার প্রিয় বই। ‘কী ধরনের বই পছন্দ?- জবাব এলো, ‘কার্টুন, কমিকস আর পশু-পাখি নিয়ে মজার মজার গল্প। ’

এবারের বইমেলায় প্রথমবারের মতো শিশুদের জন্য চার ঘণ্টা করে বরাদ্দ করা হয়েছে তিনটি দিন। মঙ্গলবার ছিল প্রথম দিন। প্রথম শিশুপ্রহর তেমন জমেনি বললেই চলে। আর তাই অনেক প্রকাশককেও কর্তৃপক্ষের ওপর ক্ষোভ ঝাড়তে দেখা যায়।

তারা বলেন, ভালোভাবে প্রচার না করায় এমনটি হয়েছে। যথাযথ প্রচার হলে আমাদের এভাবে স্টল খুলে অযথা বসে থাকতে হতো না।

এটা ঠিক যে, শিশুপ্রহরে শিশু-কিশোর বা অন্য পাঠকদেরও আনাগোনা ছিল খুব কম।

এরপরও একেবারেই যে নিরর্থক ছিল এ আয়োজন তা-ও নয়। যারা এসেছে তারা তো অন্তত শান্তিতে দেখেশুনে নিজেদের ইচ্ছেমতো বই কিনতে পেরেছে। অন্তত চার/পাঁচটি বা তারও বেশি বই হাতে দেখা গেছে প্রায় সব শিশুকেই।

এ প্রসঙ্গে বাংলা একাডেমীর সমন্বয় ও জনসংযোগ বিভাগের উপ-পরিচালক মুর্শিদুদ্দিন আহমেদ (মুর্শিদ আনোয়ার) বাংলানিউজকে বললেন, ‘এবার তিন দিন রাখা হয়েছে শিশুপ্রহর। আরও তো দু’দিন রয়েছে। তাই হয়তো প্রথম দিন শিশু-সমাগম কিছুটা কম হয়েছে। ’

তিনি বলেন, ‘অন্য সময়গুলোতে ভিড়ের কারণে পাঁচ থেকে ১০/১২ বছরের শিশুরা মেলায় আসতে পারে না। কেউ কেউ এলেও মনের মতো করে বই কিনতে পারে না। শিশুপ্রহরের মাধ্যমে তাই তাদের বই কেনার সুযোগ করে দেওয়া। ’

উল্লেখ্য, মঙ্গলবার ছাড়াও কাল বুধবার ও এর পরের বুধবারও শিশুপ্রহর ঘোষণা করেছে বাংলা একাডেমী।

এ দিনগুলোতেও সকাল ১১টা থেকে অন্যান্য সাধারণ দিনের সময়সূচির আগ পর্যন্ত শিশুরা তাদের অভিভাবকদের নিয়ে বই কিনতে পারবে।

এদিকে, শিশুপ্রহর চলাকালে বইমেলার নিরাপত্তায় ছিল একেবারেই ঢিলেঢালা ভাব । প্রবেশ পথে আর্চওয়ে ছিল না। দেখা যায়নি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদেরও।

তবে বেলা তিনটার পর থেকে মেলা জমতে শুরু করে। যথেষ্ট ভালো সমাগম ছিল একেবারে শেষ পর্যন্ত। তবে বিক্রি খুব একটা বাড়েনি বলে জানান প্রকাশকরা।

মেলায় এসেছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক নজরুল ইসলাম, কলামিস্ট বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর, ড. মুনতাসীর মামুন, আবুল মনসুর, কবি আসাদ চৌধুরী, কবি বেলাল চৌধুরী, নাট্যজন ম. হামিদ, সংগীতশিল্পী খোশনূর আলমগীর ও আঁখি আলমগীর প্রমুখ ।

সংগীত প্রতিযোগিতার বাছাই পর্বের ফল প্রকাশ
বইমেলা উপলক্ষে আয়োজিত শিশুদের সংগীত প্রতিযোগিতার বাছাই পর্বের ফলাফল ঘোষণা করা হয়েছে মঙ্গলবার। আগামী ১৮ ফেব্রুয়ারি সকাল নয়টায় মেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে চূড়ান্ত পর্ব।

ক-শাখায় চূড়ান্ত পর্বের জন্য মনোনীত প্রতিযোগীরা হলো- সামিহা জেবিন স্বপ্নীল, আনিলা নেহরীন বিনয়ী, কৌস্তভ মল্লিক, ফারিয়া হোসেন, মীর মোবাশ্বিরা, মায়িশা মায়মুনা, জয় হালদার, আনিকা নাওয়ার, আফ্রেদী আলম (রুদ্র), মেহেরুননেসা বৈশাখী, মেহরীন আহমদ হৃদিকা ও মো. সাব্বির হোসেন

আর খ-শাখায় মৌমিতা হক সেঁজুতি, গায়ত্রী বর্মণ, যারিন তাসনিম বাফা, দেবযানী রায়, শ্রাবন্তী সাহা, ঐশ্বর্য বসাক, সানজিদা রহমান মীম, ইবনাত জাহিন ঐশী, নাহিয়ান বুশরা, ফারদীন হোসেন, আদিবা ফারহীন মৃন্ময়ী ও মো. আসবাউল হুদা শিহাব।

প্রাথমিক বাছাইপর্বে বিচারকের দায়িত্ব পালন করেন বুলবুল মহলানবীশ, মহিউজ্জামান ময়না এবং মহাদেব ঘোষ।

উল্লেখ্য, গত ১১ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার সকাল নয়টায় বইমলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত শিশু-কিশোর সংগীত প্রতিযোগিতার প্রাথমিক বাছাইপর্বে ক-শাখায় নির্ধারিত দেশাত্মবোধক সংগীতে অংশ নেয় ১৪১ জন আর খ-শাখায় নির্ধারিত রবীন্দ্রসংগীত বিষয়ে অংশ নেয় ৯৫ জন প্রতিযোগী।

বাংলাদেশ সময়: ১৯০৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।