ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

শিল্প-সাহিত্য

বইমেলার সেমিনারে বক্তারা

রবীন্দ্রনাথের মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল লালনের অবস্থান

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩৪৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০১১

ঢাকা: ‘বাউলদের একটি সহজিয়া দর্শন থাকলেও রবীন্দ্রনাথ বাউলগানকে চিরকালই আধুনিক মনে করতেন। রবীন্দ্রনাথের সাহিত্যকর্মে বাউলসংগীতের বিশ্লেষণ প্রকারান্তরে শেকড় অনুসন্ধানের স্বরূপ।



রোববার, অমর একুশে বইমেলার ত্রয়োদশ দিনে মূলমঞ্চে আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তৃতায় এ কথা বলেন কথাসাহিত্যিক আবুবকর সিদ্দিক।

তিনি বলেন, ‘রবীন্দ্রনাথের জীবনাচরণে বাউল সম্প্রদায়ের প্রথা-আচার ইত্যাদির মিল লণীয়। তাই বাউল গানের মধ্যে রবীন্দ্রনাথের শিল্পঋণ রয়েছে। ’

সভায় ‘রবীন্দ্রনাথ ও বাউলসংস্কৃতি’ শীর্ষক মূল প্রবন্ধে কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক আবুল আহসান চৌধুরী বলেন, ‘বাউলের কোনো শাস্ত্র নেই, বাঁধাধরা প্রাতিষ্ঠানিক কোনও ধর্মেও তারা বিশ্বাস করেন না। গুরুর বাণী আর সাধকের গানই বাউলের তত্ত্বধারণা আর উপলব্ধির উৎস। ’

তিনি বলেন, ‘মহাজন-বাক্য সুরের আশ্রয়ে গান হয়ে বাউলকে দিশা দেয়, গোপন আঁধার পথের সুলুক-সন্ধান মেলায়, আলোকিত করে দেয় তার মনের পৃথিবী। যখন জীবন ও জগতের রহস্য ক্রমে উন্মোচিত হয় তখন সে দেহের ভাষা পড়তে পারে। বাউলের গান একদিকে দেহজরিপের গান, স্বরূপ-অন্বেষার গান, গভীর নির্জন পথে মনের মানুষকে খুঁজে ফেরার গান, অপরদিকে এই গান নিম্নবর্গের মানুষের দ্রোহ-প্রতিবাদ-শ্রেণিচেতনার আর শুভ্র-সুন্দর জীবনস্বপ্নের গান। বাউল তাই একই সঙ্গে মরমি ও দ্রোহী। ’

প্রাবন্ধিক আরও বলেন, ‘লালন সাঁই বাউলগানের প্রধান পদকর্তা এবং সেইসঙ্গে বাউলসাধনার শ্রেষ্ঠ ভাষ্যকার। রবীন্দ্রনাথের মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে তার অবস্থান। লালনচর্চায় রবীন্দ্রনাথের ভূমিকার কথা অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে স্বীকার করতে হয়। মনে গভীর ছাপ ফেলা এ মরমি-সাধকের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের সরাসরি দেখা-সাাৎ হয়েছে কিনা বা আলাপ-পরিচয় ছিল কিনা সে বিষয়ে স্পষ্ট করে জানা যায় না। ’

আলোচনাকালে ফোকলোরবিদ শাহিদা খাতুন বলেন, ‘বাউলসম্রাট লালন সাঁই বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবনে নানাভাবে প্রভাব বিস্তার করেন, যা রবীন্দ্রনাথের সাহিত্যকর্মে স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয়েছে। রবীন্দ্রনাথ তার প্রথম জীবনেই উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন বাউলগান আমাদের লোকসংস্কৃতির একটি উল্লেখযোগ্য অংশ। বাউলদর্শনের প্রতি অনুরাগ থেকেই তিনি বাউল আঙ্গিকে অনেক কথা এবং সুর রচনা করেছিলেন। একটি অসাম্প্রদায়িক চেতনার বীজ তিনি বাউলদর্শনে খুঁজে পেয়েছিলেন। ’

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফোকলোর বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আবুল হাসান চৌধুরী বলেন, ‘বাউলসংগীতের মূল ব্যঞ্জনা বাউলের দেহতাত্ত্বিক ক্রিয়া, ব্যক্তিমনের অচিন মানুষকে ধরার সাধনা। বাউলসংগীতে রবীন্দ্রনাথ তার বিশ্বমানবের সন্ধান করেছেন। এ সংগীত তাকে একটি ভিন্ন দর্শনে আবিষ্ট করেছে, যার প্রভাব তার কবিতা, গান ও অন্যান্য রচনায়ও পড়েছে। ‘

শাহ্জালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফোকলোর বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শরদিন্দু ভট্টাচার্য বলেন, ‘সুফিবাদ ও নব্য বৈষম্যবাদের সমন্বয়ে বাউল মতবাদের সৃষ্টি। বাউলদের একটি আলাদা দর্শন আছে। বাউলসংগীতের সুরে আকৃষ্ট হয়ে রবীন্দ্রনাথ বাউলদর্শন লাভ করেছিলেন। তার বাউলদর্শন লাভ নব্য ব্রহ্মবাদের জন্ম দিয়েছে। এটাই রবীন্দ্রদর্শন। মানুষকে অন্ধকার থেকে আলোকিত সমাজে নিয়ে আসার দর্শন। রবীন্দ্রসংগীতও মূলত লোকসংগীত, বাউলসংগীত ইত্যাদির মিশ্রিত রূপ। বাউলসংগীতে প্রভাবিত হলেও রবীন্দ্রনাথ তার সংগীতের সুর ও বাণীতে স্বকীয়তা বজায় রাখেন। ’

বাংলাদেশ সময়: ২৩২৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।