ঢাকা, শনিবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

শিল্প-সাহিত্য

অবশেষে তিন সারিতে...

সালাম ফারুক, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২৩৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১১, ২০১১
অবশেষে তিন সারিতে...

ঢাকা: বাংলা একাডেমী আয়োজিত অমর একুশে বইমেলার একাদশ দিন ছিল শুক্রবার। একে তো সাপ্তাহিক ছুটির দিন, তার ওপর আগামী বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হচ্ছে বিশ্বকাপ ক্রিকেটের ডামাঢোল।

আর তাই এদিন সমাগমটাও ছিল অন্যান্য দিনের তুলনায় বেশি। নতুন বইয়ের সংখ্যাও ছাড়িয়ে গেছে এ বছরের সবদিনকে। এমনকি ২০১০-এরও।

দুপুরের পর থেকেই মেলায় ক্রেতা-সমাগম বাড়তে থাকে। উভয় প্রবেশ পথে আগতদের জন্য তিনটি সারি করতে হয় কর্তৃপক্ষকে। প্রায় প্রতিটি সারিই একদিকে টিএসসি চত্বর আর অন্যদিকে দোয়েল চত্বর পেরিয়ে গিয়েছিল। সকালে অতোটা ভিড় না থাকলেও নেহায়েৎ কম ছিল না।

মেলায় আগত বিভিন্নজনের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেল, সামনে বিশ্বকাপ ক্রিকেটের জোয়ার শুরু হলে অনেকেই আসতে পারবেন না। তাই যা বই কেনার আগেভাগেই কিনে নিচ্ছেন তারা। কেউ কেউ আরও দু’এক দিন আসবেন বলেও জানান।

তবে তাদের সঙ্গে কথা বলে এও জানা গেল, নিজের সুবিধামতো আসতে চাইলে কিছুটা বিপত্তিও আছে। আর সবাইও যে এমন সুযোগ খুঁজে তা বোঝা যায় চলে আসার পর। শুক্রবার প্রায় সব স্টলের সামনেই প্রচ- ভিড় থাকায় একেকটি বই কিনতে  ক্রেতাদের দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে অনেকক্ষণ। কাউকে কাউকে বই না কিনেই ফিরে যেতে দেখা গেছে।

এদিকে, প্রবেশ পথের আগে হকার, পাটের বস্তা বিছিয়ে প্রায় এক চতুর্থাংশ জায়গা দখল করে বই বিক্রেতা, ভ্রাম্যমাণ বই বিক্রেতাসহ সাহায্যপ্রার্থীদের উৎপাত থেকে মেলায় আগতদের রক্ষা করতে এখনও কোনও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি কর্তৃপক্ষকে। মাঝেমধ্যে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দু’একজন সদস্য লাঠিপেটা করে কিশোর হকারদের বের করে দিলেও বাকিরা স্বাচ্ছন্দ্যেই তাদের বাণিজ্য চালিয়ে আসছে। এতে মেলার নিরাপত্তাও হুমকির মুখে পড়তে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেন অনেকে।

শিশু প্রহর তিনদিন
এবার একুশে বইমেলায় শিশুদের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে তিনটি দিন। এর আগে সাধারণত একদিন রাখা হতো। আগামী ১৫, ১৬ ও ২৩ ফেব্রুয়ারি সকাল ১১টা থেকে তিনটা পর্যন্ত মেলা প্রাঙ্গণ শুধু শিশুদের জন্যই উন্মুক্ত থাকবে বলে জানান সমন্বয় ও জনসংযোগ বিভাগের উপপরিচালক মুর্শিদুদ্দিন আহমেদ (মুর্শিদ আনোয়ার)।

শিশুদের প্রতিযোগিতা
বইমেলায় শুক্রবার দিনের প্রথমভাগে বইমেলায় বসেছিল ক্ষুদে শিল্পীদের কণ্ঠে রবীন্দ্র সংগীতর মেলা। মূলমঞ্চে সকাল নয়টা থেকে শুরু হয়ে বিকাল পর্যন্ত চলে শিশু-কিশোরদের রবীন্দ্র সংগীত প্রতিযোগিতার বাছাই পর্ব। একে ‘ক’ গ্রুপে ১৪১ জন ও ‘খ’ গ্রুপে অংশ নেয় ৯৫ জন। ‘ক’ শাখায় অনূর্ধ্ব ১০ ও ‘খ’ শাখায় অনূর্ধ্ব ১৫ বছরের শিল্পীরা অংশ নেয়। আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি সকাল ১০টায় ফলাফল ঘোষণা, ১৮ ফেব্রুয়ারি চূড়ান্ত পর্ব এবং ২৫ ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হবে। তবে প্রাথমিক পর্বে অংশগ্রহণকারীদেরও স্মারক হিসেবে বাংলা একাডেমীর গ্রন্থ উপহার দেওয়া হয়।

এদিকে, শনিবার সকাল নয়টায় শুরু হবে শিশু-কিশোরদের সাধারণ জ্ঞান ও উপস্থিত বক্তৃতা প্রতিযোগিতার বাছাই পর্ব

হুমায়ূন আহমেদের ‘বাদশাহ নামদার’
বাদশাহ হুমায়ূনের বৈচিত্র্যময় জীবনের ওপর ভিত্তি করে রচিত হুমায়ূন আহমেদের গবেষণাধর্মী এক উপন্যাস ‘বাদশাহ নামদার’। বইটিতে সম্রাট হুমায়ূনের আমলের ভাষারীতি ব্যবহার করা হয়েছে। বইটির আকৃতিও করা হয়েছে ব্যতিক্রম। সঙ্গে একটি করে ব্যাগও দিচ্ছে প্রকাশক প্রতিষ্ঠান অন্যপ্রকাশ।

অন্যপ্রকাশে ক্রেডিট কার্ড
প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান অন্যপ্রকাশ একুশে বইমেলায় প্রথমবারের মতো ক্রেডিট কার্ডের প্রচলন করেছে। শুক্রবারই প্রথম এটির ব্যবহার শুরু হয় বলে জানান প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাজহারুল ইসলাম। তিনি আরও জানান, এখানে ভিসা কার্ড ও মাস্টার কার্ড ব্যবহার করে যে কেউ কেনাকাটা করতে পারছেন। প্রথম দিন অনেকেই কার্ড ব্যবহার করে বই কিনেছেন বলেও জানান তিনি।

সর্বাধিক বই
শুক্রবার অমর একুশে বইমেলায় মোট ২৩৯টি নতুন বই এসেছে, যা এ বছরের যে কোনও দিনের চেয়ে বেশি। এর আগে সর্বাধিক ১৪২টি বই এসেছিল গত ৪ ফেব্রুয়ারি। এছাড়া শুক্রবার ২০১০ সালের রেকর্ডও পিছে পড়েছে। ওই বছর ৫ ফেব্রুয়ারি আসে সর্বাধিক বই। সংখ্যায় ২৩৫।

মোড়ক উন্মোচন
মোড়ক উন্মোচনেও শুক্রবার এ বছরের আগের সব দিনকে পেছনে ফেলেছে। এদিন নজরুল মঞ্চে মোট ২২টি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। মোড়ক উন্মোচনে এসেছিলেন কবি আসাদ চৌধুরী, কালের কণ্ঠ সম্পাদক আবেদ খান, ড. আবদুল ওয়াহাব, কবি ও সাংবাদিক কে জি মোস্তফা, কবি জাফর আহমেদ চৌধুরী প্রমুখ। এর আগে গত বৃহস্পতিবার ১৬টি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন হয়েছিল।

দেখা দিক আরবার জন্মের প্রথম শুভক্ষণ
বিকেলে বইমেলার মূলমঞ্চে আয়োজিত আলোচনা অনুষ্ঠানে ‘দেখা দিক আরবার জন্মের প্রথম শুভণ’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক বেগম আকতার কামাল। আলোচনায় অংশ নেন কবি নাসির আহমেদ, সাংবাদিক ও গবেষক ড. অনু হোসেন এবং প্রাবন্ধিক, গবেষক ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রভাষক তারেক রেজা। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কবি আসাদ চৌধুরী।

সন্ধ্যায় আবৃত্তি, নাচ আর গান
প্রতিদিনের মতো শুক্রবার সন্ধ্যায়ও বইমেলার মূলমঞ্চ মেতেছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে। এদিন আবৃত্তি পরিবেশন করে সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘শেখ রাসেল জাতীয় শিশু-কিশোর পরিষদ’, আতিকুর রহমান উজ্জলের পরিচালনায় নৃত্য পরিবেশন করে ‘ভোরের পাখি’ এবং সংগীত পরিবেশন করে আদিবাসী সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘আদিকণ্ঠ’।

বাংলাদেশ সময়: ২২৩১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১১, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।