ঢাকা: মহান ভাষা আন্দোলনের মাস ফেব্রুয়ারি। এ মাসে রাজধানীতে একুশে বইমেলা, ২১ ফেব্রুয়ারির প্রথম প্রহরে শহীদ মিনারে পুস্পস্তবক অর্পণ, মাধ্যমিক পরীক্ষার মত গুরুত্বপূর্ণ কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি শুরু হতে যাচ্ছে বিশ্বকাপ ক্রিকেট-২০১১।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক সূত্রে জানা গেছে এ সময় পুরো রাজধানীকে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলতে জোরদার ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) জনসংযোগ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, শুধুমাত্র বইমেলা প্রাঙ্গণেই নিরাপত্তার দায়িত্বে প্রতিদিন ছয়শ’ পুলিশ সদস্য কাজ করবেন।
বইমেলার প্রবেশপথ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দোয়েল চত্বর এবং টিএসসি মোড় ছাড়াও বাংলা একাডেমির মূল প্রবেশপথে কড়া পুলিশি নজরদারির ব্যবস্থা করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই দোয়েল চত্বর থেকে টিএসসি সড়কদ্বীপ মোড় পর্যন্ত সোহরাওয়ার্দী উদ্যান থেকে বইমেলায় প্রবেশের ফটকগুলো সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া একুশে ফেব্রুয়ারির প্রথম প্রহর থেকে সারাদিন শহীদ মিনারসহ এর আশপাশের এলাকায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রায় আট হাজার সদস্য মোতায়েন করা হবে।
সোমবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আন্ত:মন্ত্রণালয় এক বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বৈঠকে আরও সিদ্ধান্ত হয়, শহীদ মিনারে যাতায়াতের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্দিষ্ট সড়ক ছাড়াও বিভিন্ন সড়কে প্রায় ২৪টি সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হবে। শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে আসা জনসাধারণকে মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে তল্লাশির ব্যবস্থা ছাড়াও থাকবে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ডগ স্কোয়াড।
বৈঠকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ফেব্রুয়ারিতে রাজধানীসহ দেশজুড়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা পূর্বের তুলনায় আরো বেশি জোরদার করা হবে। এই শক্তিশালী নিরাপত্তা ব্যবস্থা বিশ্বকাপ খেলা শেষ হওয়া পর্যন্ত থাকবে বলে জানান তিনি।
পুলিশ সদর দপ্তরের একটি সূত্র জানায়, বিশ্বকাপ ক্রিকেট নির্বিঘেœ সম্পন্ন করতে বাংলাদেশে আগত বিভিন্ন দেশের খেলোয়াড়, কোচ, অন্যান্য কর্মকর্তা ও দর্শনার্থীদের পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
শিগগিরই বিশ্বকাপ ক্রিকেট সংক্রান্ত জাতীয় কমিটির কাছে উদ্বোধনী দিন রাজধানী ঢাকায় সাধারণ ছুটি ঘোষণার প্রস্তাব জানানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৬ মার্চ পর্যন্ত নিরাপত্তার বিষয়ে কড়া সতর্কতা নেওয়া হবে।
সূত্র আরও জানায়, উদ্বোধনী দিন ছাড়াও পরবর্তী আরও দু’টি শনিবার রাজধানীর সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের সুপারিশ করবে কমিটি। পাশাপাশি আগত খেলোয়াড়, বিদেশি দর্শনার্থীদের যাতায়াত ও থাকার জায়গার পার্শ্ববর্তী এলাকায় হকার, অস্থায়ী দোকানপাট তুলে দেওয়া সহ এসব এলাকার ভিক্ষুক ও ভাসমান লোকদের উচ্ছেদ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ সময়ের জন্য তাদের পুনর্বাসনে সাময়িকভাবে ভবঘুরে কেন্দ্রে পাঠানো হবে।
পাঁচস্তরে নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যে রয়েছে বিদেশি খেলোয়াড় ও কর্মকর্তাদের নিরাপত্তার জন্য শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে তাদের থাকার জায়গা, খেলার মাঠ, যাতায়াত, কেনাকাটার মার্কেট।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের পাঁচ হাজার সদস্য ছাড়াও এ সময় গোয়েন্দা পুলিশ, র্যাব, আর্মড পুলিশ ও সশস্ত্র বাহিনীর বিশেষ টিম কাজ করবে। পাশাপাশি প্রস্তুত রাখা হবে র্যাবের বোমা নিষ্ক্রিয় ও ডগ স্কোয়াড টিম।
এছাড়া জরুরি প্রয়োজনে হেলিকপ্টারও প্রস্তুত রাখা হবে। রাজধানী ছাড়া একই ব্যবস্থা নেওয়া হবে বন্দরনগরী চট্টগ্রাম ও নারায়ণগঞ্জেও।
সূত্র আরও জানায়, আগত খেলোয়াড় ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের চিকিৎসায় সরকারি হাসপাতালগুলো ছাড়াও সশস্ত্র বাহিনী পরিচালিত সিএমএইচ হাসপাতালে চিকিৎসা সেবার ব্যবস্থা রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এছাড়া খেলার চলাকালিন সময়ে সংশ্লিষ্ট মাঠের ওপর দিয়ে সকল ধরণের বিমান চলাচল বন্ধ রাখা হবে।
সার্বণিক প্রস্তুত থাকবে ফায়ার সার্ভিসের একাধিক ইউনিট। গোটা ট্রাফিক ব্যবস্থা ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ হিসেবে এবং বিদেশিদের চলাচলের সুবিধার্থে বেশ কিছু রাস্তা একমুখী করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) হাসান মাহমুদ খন্দকার ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসে গৃহীত নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পর্কে বাংলানিউজকে জানান, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে রাজধানীর নিরাপত্তার জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
এ লক্ষ্যে প্রায় ৮৫ কোটি টাকা ব্যয়ে আধুনিক নিরাপত্তা সরঞ্জাম কেনা হয়েছে। এরই মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য সংশ্লিষ্ট বাহিনীগুলো বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে মহড়া শুরু করেছে বলেও জানান তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১, ২০১১