বাংলা একাডেমী মাইকেল মধুসূদন দত্তের ১৮৭তম জন্মবার্ষিকী উপলে ২৫ জানুয়ারি মঙ্গলবার বিকেলে একাডেমীর সেমিনার কে আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে ‘মাইকেল মধুসূদন দত্ত ও রেনেসাঁসের সাহিত্য’ বিষয়ে বক্তৃতা করেন অধ্যাপক গোলাম মুরশিদ।
বঙ্গীয় রেনেসাঁসের পটভূমি হিসেবে ঔপনিবেশিকতার উপজাতস্বরূপ শিক্ষা, উদারনৈতিকতা ও যুক্তিবাদ, বাংলা ভাষা, সাহিত্য, সঙ্গীত, স্থাপত্য ও ব্যবসা-বাণিজ্যে সৃজনশীলতার স্ফূরণের কথা তুলে ধরে অধ্যাপক গোলাম মুরশিদ বলেন, হ্যালহেড থেকে উইলিয়াম কেরী, রামমোহন রায়, দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর, অয়কুমার দত্ত, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, ডিরোজিও- এই ধারায় মধুসূদন দত্তের সূচনা।
প্রথম অবস্থায় মধুসূদনের সাহিত্যে রোমান্টিক ধারা পরিলতি হলেও খ্রিস্টধর্মের প্রভাবে পরবর্তীকালে তাঁর সাহিত্যে ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য, ইহলৌকিকতা, প্রাচীন সাহিত্যের নতুন ব্যাখ্যা, মানবমুখিনতা প্রভৃতির পরিচয় ফুটে ওঠে। তারই ধারাবাহিকতায় তিনি বিখ্যাত মেঘনাদবধ কাব্য রচনা করেন। তাঁর নাটক, কাহিনীকাব্য, মহাকাব্য সবকিছুই নতুন বাংলার। এসবের মধ্যে রেনেসাঁসের পরিচয় সুস্পষ্ট।
তিনি বলেন, মধুসূদনের হাত ধরেই আমরা আধুনিকতায় প্রবেশ করে এগিয়ে চলেছি। আমাদের সাহিত্যের মানচিত্রে মাইকেল আবার নতুন করে ফিরে এসেছেন বলে আমার বিশ্বাস।
প্রাবন্ধিক অধ্যাপক শান্তনু কায়সার বলেন, জীবন-মৃত্যুর মহাকাব্য ‘মেঘনাদবধ’ রচনার ক্ষেত্রে মাইকেল মধুসূদন দত্ত মনপ্রাণ ঢেলে দিয়ে তাঁর বৈশিষ্ট্যের বিরুদ্ধে গিয়ে এই কাব্য রচনায় দীর্ঘ ও নিরবচ্ছিন্ন মনোযোগই শুধু দেননি, এর মধ্যদিয়ে তিনি তাঁর শিল্পচর্চা ও ভাবনার অন্যতম শ্রেষ্ঠ প্রকাশ ঘটিয়েছেন। যে অমিত্রার ছন্দ নিয়ে তিনি নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন এবং চেয়েছেন ভাবালু ও আবেগী অবস্থান থেকে এই ছন্দের মধ্যদিয়ে বাঙালি তার সহজ-স্বাভাবিক-সংহত জীবন ও শিল্পচর্চায় ঋদ্ধ হোক, তারও একটি পরিণতির প্রকাশ এই মহাকাব্য।
সভাপতির ভাষণে বাংলা একাডেমীর মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান বলেন, আজকের অনুষ্ঠানের প্রবন্ধকার শান্তনু কায়সার ও বক্তা অধ্যাপক গোলাম মুরশিদ বঙ্গীয় রেনেসাঁসের বিকাশের আলোচনায় ইতালীয় রেনেসাঁ থেকে মধুসূদন পর্যন্ত সুনিপুণভাবে তুলে ধরেছেন। মাইকেলকে কেন্দ্র করে আজ আমাদের কয়েকশ’ বছরের ইতিহাস উপস্থাপিত হলো। এর ফলে আমরা মাইকেলকে নতুনভাবে বিশ্লেষণের প্রয়াস পাব।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে শুভাশিস সিনহার নির্দেশনায় মাইকেল মধুসূদন দত্ত রচিত বীরাঙ্গনা কাব্য অনুসরণে নাট্যকাব্য কহে বীরাঙ্গনা পরিবেশন করে মণিপুরী থিয়েটার।
বাংলাদেশ সময় ২২১৫, জানুয়ারি ২৫, ২০১১