ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

শিল্প-সাহিত্য

সরসিজ আলীম-এর কবিতা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩০৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৬, ২০১১
সরসিজ আলীম-এর কবিতা

ঘোড়দৌড়

ঘোড়দৌড় একা একাই দৌড়ে যাচ্ছে
মোড়ের উপর দাঁড়িয়ে আমাদের হাসি পাচ্ছে
হাত বাড়িয়ে মেয়েটি ডাকে
মেয়েটি দাঁড়িয়ে আছে সুন্দরীদের ঝাঁকে
ঘোড়দৌড় কি শুনতে পেলো ডাক
পাশের মেয়েরা হতবাক আমরা তো হতবাক
০১.১১.২০১০, ঢাকা

রিকশাঅলার ভাষ্য

হাঁটা পথে সরাসরি হাঁটার উপর পথে বসেছিলো সন্ধ্যা
নদীর বাঁকার উপর কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়িয়েছিলো সন্ধ্যা
উড়তে উড়তে প্রজাপতির ডানার উপর দুলিতেছিলো সন্ধ্যা

একঝাঁক সন্ধ্যা গায়ে ঘাম-কাদামাটি আমরা ফিরিতাম
মাঠে আমরা বন্ধু ছিলাম, ঢেলা ওঠা ক্ষেতে শালিক ছিলাম
ধানের ভরা ক্ষেতের ভেতর ফড়িংয়ের পিছে ফিঙে ছিলাম

আমাদের কেউ ছিলো তবে বটবৃক্ষের তল, বাঁশেদের বন
নদীর পারে দাঁড়ানো বকুলের তলা, পার হওয়া যখন তখন
দেখে থাকবে মালা বৌদিকে পায়ের তলে পাতারা দুজন

এই পাড়াতে মন খারাপের মন মালার ঠোঁটে ঠোঁট রাখে
দুঃখেরা নিত্য পাড়া বেড়াতে এসে মালার বুকে মাথা রাখে
কষ্টেরা শান বাঁধানো ঘাটে বসে আর মালার বুকে বুক রাখে

কেউ কেউ রাতেরা সিঁড়ির তলে হাঁটু মুড়ে ব’সে থাকে হায়
আর কেউ কেউ মন খারাপেরা লাজ শরমের মাথামুণ্ডু খায়
আর দুঃখ কষ্টেরা সাপের লেজে পা দিয়ে উপরে উঠে যায়

সাপেদের লেজ, তোমরা আমাদের দুঃখ-কষ্টের মূল কারণ
তোমাদের অনুগ্রহে ভেস্ত নসিব হয়- লোভ করেছি সংবরণ
তোমরা আমাদের কৃতদাস করেছো- প্রকাশ্য বলতে বারণ
১৭.১১.২০১০, ঢাকা

শাদাপাতা

শাদাপাতা উহাদের মা,
তাহার আঁচলখানি দুলিতেছে পুঁইমাচার তলে।

উহাদের আঁচলখানি পড়িয়া আছে পথের ধুলায়,
তাহার আঁচলের তলে দুইটি সন্তান;
একজন কবি অথবা খুনি
একজন বাউল অথবা মুক্তবাজারের লুটেরা
একজন বিপ্লবী অথবা আস্তাকুঁড়।



একজন বিপ্লবী সূর্যোদয়ের তলে দাঁড়িয়ে
লিখিতেছে সূর্য।
২৬.১১.২০১০, ঢাকা

যাওয়া

আমাদের পায়ে চলা পথের সামনে সবুজ ক্ষেতে
হাঁটু অব্দি নেমে গেছে আকাশ,
পিছনে ফেলে যাচ্ছি থোকা থোকা ছায়ার ভেতর
একঝাঁক পেঁচার লাফালাফি,
আর তখন পুকুরপাড়ের উপর বেপরোয়া দাঁড়িয়ে
মাথা দোলাচ্ছিলো কলাপাতারা,
ঝাঁকে ঝাঁকে শালিকের পায়ে পায়ে রোদ
লাফিয়ে লাফিয়ে যাচ্ছিলো ঘাসের উপর।

আমাদের চোখের ভেতর ব’সে কেউ একজন
আকাশটাকে উঠিয়ে নিচ্ছিলো মাথার উপর,
কেউ একজন আকাশটাকে সরিয়ে নিচ্ছে
চোখের সরাসরি সামনে থেকে।

আবার যখন চোখের পেছনের দিকে হেঁটে যাচ্ছি
নাকের ডগায় আকাশ এগিয়ে আসছে,
তেঁতুলগাছটির তলায় বাঁধা গাভীটি ডেকে উঠলো,
পাশের বাড়ির ছাদে কাপড় উঠিয়ে নিতে আসা হাত
আর প্রতিদিনকার সন্ধ্যাবাতির ভাতিরাঙা মুখ
চিৎকার করে বলছে : ‘পিঠের ঠিক পেছনটাতে দেয়াল’,
আর ততক্ষণে আমাদের পিঠের উপর
চ’ড়ে বসেছে দেয়ালটি!

দেয়ালটি পিঠে ক’রে হাঁটছি আবার সবুজ ক্ষেতের পার,
আমাদের মাথার উপর অপার আকাশ।
আমাদের চোখের উপর হাতের-নাগাল ডলফিনের পিঠে
চ’ড়ে পিছলে পড়ছে জলের গভীরে।
২৭.১১.২০১০, ঢাকা

বাংলাদেশ সময় ২৩০০, জানুয়ারি ১৬, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।