ঢাকা, বুধবার, ৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ শাওয়াল ১৪৪৫

শিল্প-সাহিত্য

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে

বাংলা একাডেমীর আলোচনা

ফিচার ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৪৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৪, ২০১০
বাংলা একাডেমীর আলোচনা

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে ১৪ ডিসেম্বর বিকেলে বাংলা একাডেমীর নজরুল মঞ্চে আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে ‘শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস : একটি রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক বিশ্লেষণ’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অধ্যাপক শহিদুল ইসলাম।



আলোচনা করেন সেন্টার ফর হায়ার স্টাডিজ অ্যান্ড রিসার্চের সভাপতি অধ্যাপক শফিউদ্দিন আহমদ, প্রাবন্ধিক-সাংবাদিক মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর এবং শহীদ-বুদ্ধিজীবীপত শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী। স্বাগত ভাষণ দেন বাংলা একাডেমীর মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় অধ্যাপক কবীর চৌধুরী।

স্বাগত ভাষণে বাংলা একাডেমীর মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান বলেন, পাকিস্তান বাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র মুক্তিসংগ্রামের মাধ্যমে বাঙালি জাতি যখন বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে, এদেশের বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায় জাতি ও রাষ্ট্র গঠনে তৎপর, ঠিক তখনই তাদেরকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়।

শহিদুল ইসলাম তার প্রবন্ধে বলেন, বাংলা ভাষা ও সাহিত্য মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের পূর্বমুহূর্ত পর্যন্ত বাঙালির রাজনৈতিক আন্দোলনে পথপ্রদর্শকের ভূমিকা পালন করেছে। এ প্রসঙ্গে ১৯৬১ সালের রবীন্দ্রশতবার্ষিকী কিংবা ১৯৬৭ সালে পূর্ব-পাকিস্তান বেতার-টেলিভিশনে রবীন্দ্রঙ্গীত নিষিদ্ধ করার কথা স্মরণ করা যেতে পারে। এটা প্রমাণ করা মোটেই অসম্ভব নয় যে, বাংলা ভাষা ও সাহিত্য সবসময়ই পাকিস্তানি ভাবাদর্শের বিরুদ্ধে সবচেয়ে শক্তিশালী এক হাতিয়ার ছিল। এটি চরমভাবে মূর্ত হয়ে ওঠে ১৯৬৬ সালে যখন বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর ছয় দফা ঘোষণা করেন। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা করেও পাকিস্তানের শাসকশ্রেণী তার গতি স্তব্ধ করতে পারেনি। তাই পাকিস্তান সরকার এবং এ দেশের পাকিস্তানি আদর্শের ধারক-বাহকদের এত ক্ষোভ বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের ওপর। বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির পথ ধরে যে বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনা গড়ে ওঠে তা স্বাধীনতার পরও আক্রমণের শিকার হয় গুপ্ত পাকিস্তানপন্থিদের বন্দুকের নলের।

প্রগতিশীলদের ওপর প্রতিক্রিয়াশীলদের ক্রোধ প্রসঙ্গে স্বামী আলীম চৌধুরীর নৃশংস হত্যাকা-ের বর্ণনা দিয়ে শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী বলেন, প্রতিক্রিয়াশীল চক্রের পূর্বেকার চক্রান্ত আজও বিদ্যমান। পূর্বের মতো আজও তারা প্রগতিশীলদের হত্যার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। যুদ্ধাপরাধীদের সুষ্ঠু বিচার আজও সম্পন্ন হয়নি। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এবং তার দোসররা বুদ্ধিজীবীদের যে তালিকা তৈরি করে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে, তা আরও দীর্ঘায়িত হতে পারে এবং ভয়াবহ নৃশংসতার দিকে এগুতে পারে যদি না বর্তমান মহাজোট সরকার যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পন্ন করে। আমরা বিশ্বাস করি, বর্তমান সরকার তাদের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পন্ন করবে।

মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর বলেন, বিজয়ের ঊষালগ্নে হানাদার বাহিনী ও তাদের সহযোগীদের যৌথ উদ্যোগে বাংলার শ্রেষ্ঠ সন্তানদের নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়। যুদ্ধপরবর্তী ‘দৈনিক বাংলা’ পত্রিকায় প্রকাশিত রাও ফরমান আলীর ডায়েরি থেকে পাকিস্তান সামরিক জান্তার বুদ্ধিজীবী হত্যাকা-ের সম্যক প্রমাণ পাওয়া যায়।

অধ্যাপক শফিউদ্দিন আহমদ বলেন, মুক্তিযুদ্ধের বহুমাত্রিক লেখনীতে বাংলার মেহনতি মানুষ তথা কৃষক-শ্রমিক-মজুরদের অংশগ্রহণ আজও স্বীকৃত হয়নি। এ বিষয়ে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের বর্তমান সরকারের যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। না হলে স্বাধীনতার প্রকৃত ইতিহাস কখনোই রচিত হবে না। তিনি বলেন, তরুণ প্রজন্মের কাছে মহান মুক্তিযুদ্ধ তথা দেশের ইতিহাসকে সুষ্ঠুভাবে তুলে ধরা জরুরি। কারণ তরুণ প্রজন্মই আগামী দিনে এ দেশ পরিচালনা করবে।

সভাপতির ভাষণে জাতীয় অধ্যাপক কবীর চৌধুরী বলেন, জাতীয়ভাবে উদযাপিত দিবসগুলোর মধ্যে কিছু দিবস চরম বেদনা ও গভীর দুঃখের সঙ্গে আমরা পালন করি, যার মধ্যে অন্যতম হলো শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। তিনি বলেন, বুদ্ধিজীবী হত্যাকা-ের পেছনে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর উদ্দেশ্য ছিল এ দেশের মূল্যবোধ গঠনকারী বুদ্ধিজীবীদের সমূলে হত্যা করা। এটা সত্য যে, ১৯৭১ সালে প্রয়াত বুদ্ধিজীবীরা বেঁচে থাকলে বাংলাদেশের শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি অঙ্গন আরও গতিময় হয়ে উঠত। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে মুক্তবুদ্ধির চর্চা নিশ্চিত করতে হলে অবিলম্বে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করা প্রয়োজন।

সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশন করেন কণ্ঠশিল্পী তিমির নন্দী, কল্যাণী ঘোষ, রূপা ফরহাদ, মাহমুদুজ্জামান বাবু প্রমুখ।

বাংলাদেশ স্থানীয় সময় ২০২৫, ডিসেম্বর ১৪, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।