ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

শিল্প-সাহিত্য

আফগানিস্তানের ছোটগল্প

স্পটলাইটের নিচে থমকে থাকা খরগোশের মতো

মূল: নুশীন আরবাবজাদাহ্, অনুবাদ: ফজল হাসান | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ৫, ২০১২
স্পটলাইটের নিচে থমকে থাকা খরগোশের মতো

তুমি জিজ্ঞেস করলে, ‘ঘটনা কি আমেরিকায় ঘটেছে ?’
তোমার কাছে আমি মিথ্যে বলেছি, ‘না, ঘটনা ওখানে ঘটেনি । ’
তুমি বললে, ‘আমেরিকা সম্পর্কে আমি জানি।

ওখানে মেয়েরা উড়নচণ্ডী হয়। আফগান মেয়েরা ওখানে গিয়ে খারাপ হয়ে যায়। ’
আমি বললাম, ‘কেমন করে ?’
তুমি বললে, ‘ওরা নাচের পর্টিতে যায়। ছেলেদের সঙ্গে মেলামেশা করে, এমনকি নোংরামীও করে। ’ বলেই সঙ্গে সঙ্গে তুমি বললে, ‘তওবা’ এবং গায়ের লাল শালটা টেনে ঢেকে দিলে তোমার শরীর ।
তোমার আচরণ দেখে আমি কিছু বললাম না ।
তুমি বললে, ‘আমি জানি, এ সব আমেরিকাতে ঘটে । ’
এবারও আমি কিছু বললাম না।
তুমি বললে, ‘মনে আছে, যখন ছোট ছিলাম, তখন কার্পেটের উপর আমরা খেলতাম । ’
আমি বললাম, ‘হ্যাঁ, মনে আছে। ’
বলেই প্যাকেট থেকে একটা সিগারেট বের করে দু’ঠোঁটের ফাঁকে চেপে অগ্নি সংযোগ করি।
‘সব সময় তুমি আমেরিকার পক্ষপাত করতে, আর আমি ছিলাম সোভিয়েত ইউনিয়নের পক্ষে। আমরা একে অন্যকে বোমা মারতাম,’ হাসতে হাসতে তুমি বললে। হাতের ইশারায় বাতাসে একটা অদৃশ্য যুদ্ধবিমান উড়িয়ে মুখে দীর্ঘ সময়ের জন্য উশ্ শব্দ করে বললে, ‘ঠিক এ রকম । ’ তারপর বোমা ফাটার মত বিকট আওয়াজ করলে ‘বুম’ ।
‘এবং সেটা আফগানিস্তানে,’ আমি বললাম।
তুমি জিজ্ঞেস করলে, ‘তাহলে তুমি কি আমেরিকাতেই সিগারেট ধরেছো ?’
আমি কিছু বললাম না।
‘ও দেশের মেয়েদের সম্পর্কে বলো’— প্রসঙ্গ পাল্টিয়ে তুমি বললে।
আমি বললাম, ‘আমেরিকার প্রাকৃতিক ভূ-দৃশ্যের কথা বলবো। ইউটাহ্ সম্পর্কে বলবো, যেখানে অবাধ্য লোকেরা পাথর হয়ে গিয়েছে। ’
তুমি ভুরু কুঁচকে বললে, ‘ওটা বিরক্তিকর। ’
আমি বললাম, ‘তাহলে ভল্লুক সম্পর্কে বলবো। ওদেশে ভল্লুকদের নিয়ে অনেক জায়গার নাম আছে, যেমন ধরো ‘স্মোকি বেয়্যার’ । ’

তুমি বললে, ‘ভল্লুকরা বিরক্তিকর। ও দেশের মেয়েদের সম্পর্কে বলো। ওরা কি সুন্দরী?’
এবারও আমি কিছু বললাম না।
তুমি বললে, ‘মনে আছে, ওরা কাবুলের আমেরিকার দূতাবাসের বাইরে প্রতিবাদ সভা করতে রীতিমত আমাদের বাধ্য করেছিল?’
আমি বললাম, ‘এবং শুরুতে সেখানে কোন বিদ্যুৎ ছিল না। মাইক্রোফোন কাজ করেনি। তখন দূতাবাসের ভেতর থেকে এক লোক একটা জেনারেটর নিয়ে এসেছিল। ’
বলেই আমি আঙুলের ফাঁকে জ্বলন্ত সিগারেটের দিকে তাকালাম।
তুমি বললে, ‘সেই লোকটা জেনারেটর চালু করে মাইক্রোফোনের সুইচ অন করে দিয়েছিল। ’
আমি বললাম, ‘এবং আমরা চিৎকার করে বলেছিলাম, আমেরিকা দীর্ঘজীবি হোক। ’
আমার কথা শুনে তুমি হাসলে।
আমি বললাম, ‘সেদিন আমি ভীষণ ভয় পেয়েছিলাম। ’
তুমি বললে, ‘সত্যি? আমি খেয়াল করিনি। ’
তোমার হেঁয়ালী মুখ উপেক্ষা করে আমি আরেকটা সিগারেটে অগ্নি সংযোগ করি।
তুমি বললে, ‘সেই সব দিনগুলো মধুর ছিল। ’
আমি বললাম, ‘আমরা তখন ছোট ছিলাম। ’
তুমি বললে, ‘আমরা চিৎকার করে বলেছিলাম, আমেরিকা দীর্ঘজীবি হোক। ’
আমি বললাম, ‘আসলে ওরা খারাপ মানুষ নয়। ’
ওদের সম্পর্কে ইতিবাচক মন্তব্য শুনে তুমি সরাসরি আমার মুখের দিকে তাকালে।
‘ওরা মন্দ লোক নয়,’ পুনরাবৃত্তি করে আমি বললাম।
তুমি বললে, ‘আমি জানি, তুমি কেন এ কথা বলছো। ’
আমি কোন কথা বললাম না।
তুমি প্রসঙ্গ পাল্টানোর জন্য বললে, ‘আমেরিকার মেয়েদের সম্পর্কে বলো। ’
আমি জানতে চাইলাম, ‘কোনটার কথা বলবো?’
তুমি বললে, ‘যাদের তুমি চেনো। ’
আমি বললাম, ‘ওরা তো মেয়ে। ’
তুমি বললে, ‘তুমি কিন্তু আমার প্রশ্নের জবাব দাওনি। ’
চোখেমুখে না বোঝার ভাব করে আমি বললাম, ‘আমি বুঝতে পারছি না, তুমি কি জানতে চাচ্ছো। ’
তুমি নিশ্চিত হয়ে বললে, ‘তুমি ঠিকই বুঝতে পেরেছো আমি কি জানতে চাচ্ছি। ’
আমি বললাম, ‘তোমার কি মনে আছে, সেদিন আমেরিকার দূতাবাসের বাইরে কি ঘটেছিল?’
তুমি বললে, ‘ওরা আমাদের জোর করে   স্লোগান দিতে বাধ্য করেছিল, আমেরিকা নিপাত যাক। ’
আমি বললাম, ‘এবং আমরা সোচ্চার কন্ঠে বলেছিলাম, আমেরিকা নিপাত যাক। ’
তুমি বললে, ‘ওটা আজ অতীত, আর এখন হলো বর্তমান। ’
আমি বললাম, ‘কিন্তু ওরা একই মানুষ। একই আমেরিকাবাসী। ’
তুমি বললে, ‘তখন ওরা বন্ধু ছিল, এখন আর নেই। ’
আমি জানতে চাইলাম, ‘তাহলে এখন ওরা কারা?’
তুমি বললে, ‘ওরা এখন আমাদের শত্রু। ’
আমি বললাম, ‘আমি জানি, কেন তুমি এ কথা বলছো, কিন্তু তোমার ধারণা ভুল। ’
তুমি বললে, ‘তুমি তোমার বিচার-বুদ্ধি হারিয়ে ফেলেছো। আমি জানি, কেন?’
আমি কিছু বললাম না।
আমার মৌনতা দেখে তুমি অভিমানে মুখ গোমড়া করলে।
আমি বললাম, ‘ও রকম করো না। ’
তুমি প্রশ্ন করলে, ‘কি রকম?’
আমি বললাম, ‘তুমি জানো, কোন রকম। ’
বলেই আমি আমার দু’আঙুলের ফাঁকে জ্বলন্ত সিগারেটের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালাম ।
তুমি বললে, ‘তুমি যদি জানোই, তাহলে বলছো না কেন?’
আমি বললাম, ‘কোন বিষয়ে বলবো?’

আমার প্রশ্নের জবাব না দিয়ে তুমি পাল্টা প্রশ্ন করলে, ‘ঘটনা কি আমেরিকাতেই ঘটেছিল?’
আমি কিছু বললাম না।
তুমি জোর দিয়ে বললে, ‘জানি, এটা আমেরিকাতেই ঘটেছিল। ’ তারপর একটু থেমে জিজ্ঞেস করলে, ‘মেয়েটি কে?’
আমি বললাম, ‘তুমি কি সত্যি জানতে চাচ্ছো?’
আমার প্রশ্ন শুনে তুমি কয়েক পলক ভাবনার অথই পানিতে সাঁতার কাটলে। আমি এই ফাঁকে আরেকটা সিগারেটে অগ্নি সংযোগ করে বার কয়েক সুখ টান দিই এবং তুমি তোমার জন্য চায়ের কাপে আরেকবার চা ঢাললে। তারপর চায়ে আলতো ঠোঁটে চুমুক দিয়ে বললে, ‘তোমার কি মনে আছে, আমাদের শিক্ষক কিভাবে ‘Peace Corps’কে ভুল উচ্চারণ করতেন ?’
আমি বললাম, ‘তিনি উচ্চারণ করতেন, Piss Corps.’
একই সঙ্গে দু’জনে হেসে উঠলাম।
তুমি বললে, ‘তিনি প্রায়ই বলতেন আমেরিকানরা বাথরুমে ঢুকে ‘pee perfume’ করে। ’
আবারো একই সঙ্গে দু’জনে হেসে উঠলাম।
তুমি বললে, ‘ছোটবেলার সেই সব দিনগুলো কতই না মধুর ছিল। ’
আমি বললাম, ‘আমরা তখন খুব ছোট ছিলাম, কিন্তু সবকিছু বুঝতে পারতাম। ’
তুমি বললে, ‘আমি বুঝতাম না। ’
আমি বললাম, ‘কারণ তুমি একজন মহিলা। ’
তুমি বললে, ‘আমাকে খোঁচা দেবে না, নইলে তোমাকে চড় মারবো। ’
আমি বললাম, ‘দেখ, আমেরিকা নাহলে তুমি এমন সাহসী হতে পারতে না। ’
সঙ্গে সঙ্গে তুমি প্রশ্ন করলে, ‘কি বললে?’
আমি বললাম, ‘ওরা নারীদের স্বাধীকার আদায়ের জন্য উৎসাহ দেয়। কি, দেয় না? ওরা মহিলাদের চাকুরিতে দরখাস্ত করার জন্য উৎসাহ দেয়। কি, দেয় না?’
তুমি বললে, ‘আমি কাজ করি, কিন্তু ওদের জন্য করি না। ’
আমি বললাম, ‘কিন্তু ওদের ছাড়া তো এদেশে তালিবানদের রাজত্ব চলতো এবং তুমি কিছুতেই বাইরে কাজ করতে পারতে না। ’

http://www.banglanews24.com/images/PhotoGallery/2012April/usa20120405183823.jpgতুমি বললে, ‘আমি তালিবানদের ঘৃণা করি। ’
আমি বললাম, ‘এদেশে আমেরিকার সৈন্যরা না থাকলে ওরা আবার দেশটাকে দখল করে নেবে। ’
কন্ঠস্বরে আত্মবিশ্বাসের সামাণ্য প্রলেপ মেখে তুমি বললে, ‘না, ওরা আর ফিরে আসবে না। এলে আমরা ওদের রুখবো। ’
আমি বললাম, ‘ওরা ফিরে এলে আমি ওদের রুখবো না। আমার ভয় করে। ’
তুমি বললে, ‘আমি জানি, কেন? তুমি আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছো। ’
আমি বললাম, ‘আমি ঘরের ভেতর থাকবো এবং তোমাদের যুদ্ধ করার সুযোগ করে দেবো। তবে ওরা তোমার সঙ্গে যুদ্ধ করবে না। কেননা, তুমি একজন নারী। ’
তুমি বললে, ‘তখন তো ওরা মহিলাদের মেরেছে। ’
আমি বললাম, ‘হ্যাঁ। ’
বলেই আমি পুনরায় আরেকটা সিগারেটে অগ্নি সংযোগ করি।
তুমি বললে, ‘তোমাকে পেলে ওরা মারবে। বলবে, তুমি একজন গুপ্তচর। ’
আমি বললাম, ‘হয়তো বা। ’
তুমি বললে, ‘এটা বিরক্তিকর । আমেরিকা সম্পর্কে আরো বলো। ’
আমি বললাম, ‘কল্পনা করো, সাদা একটা খরগোশ স্পটলাইটের নিচে ধরা পড়েছে। ’
তুমি বললে, ‘হ্যাঁ। ’
আমি বললাম, ‘যখন তুমি আমেরিকায় যাবে, ঠিক এরকম মনে হবে। ’
তুমি বললে, ‘কি বোঝাতে চাচ্ছো?’
আমি বললাম, ‘স্পটলাইটের নিচে ধরা পড়া খোরগোশের মতো তুমি অবাক বিস্ময়ে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকবে। ’
সঙ্গে সঙ্গে তুমি মাথা নেড়ে বললে, ‘তওবা। ’
আমি বললাম, ‘বিশ্বাস করো, যখন তুমি আমেরিকায় যাবে, তখন তোমার অবস্থা এরকমই হবে। ’
তুমি জোর দিয়ে বললে, ‘না, হবে না। ’
আমি বললাম, ‘তুমি কেমন করে জানলে?’
তুমি বললে, ‘কারণ আমি একজন নারী এবং আমি আমার আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছি। ’
আমি কিছু বললাম না।
‘Piss Corps,’ একটুবাদে চারপাশের নীরবতাকে ভেঙে আমি বললাম।
‘Piss Corps,’ তুমি আমার কথার সঙ্গে তাল রেখে বললে এবং হাসতে শুরু করলে। হাসতে হাসতে আরো বললে, ‘এবং ওরা বাথরুমে গিয়ে ‘pee perfume’ করে । ’
‘এবং ওদেশের মেয়েদের শরীরে একটাও পশম নেই,’ আমি বললাম।
‘এবং রাস্তাঘাট ফাঁকা। কেননা সবাই তখন কাজে,’ তুমি বললে।
‘শুধুমাত্র সকালবেলা ছাড়া। তখন নিউ ইয়র্কের সড়কে দলে দলে নারী এবং পুরুষরা পায়ে হেঁটে কাজে যায়,’ আমি বললাম। একটু থেমে আরো বললাম, ‘দালানের অনেক উচুঁ থেকে ওরা নিচের একটা পিপঁড়াও খুঁজে নিতে পারে। ’
‘কিন্তু ওরা তালিবানদের খুঁজে পায় না,’ মন্তব্যের সুরে তুমি বললে।
‘এটা ভিন্ন বিষয়,’ আমি বললাম।
‘কতটুকু ভিন্ন?’ সরাসরি তুমি জানতে চাইলে।
‘তালিবানরা অন্য আর দশজনের মতোই,’ আমি বললাম।
‘এটা বিরক্তিকর,’ ভুরু কুঁচকে তুমি বিরাগ প্রকাশ করলে। তারপর বললে, ‘আমেরিকার মেয়েদের সম্পর্কে বলো। ওরা দেখতে কেমন?’
‘আমাদের চেয়ে ওরা আলাদা,’ আমি বললাম।
‘ওরা কিভাবে আলাদা?’ তুমি জিজ্ঞেস করলে।
‘জানতাম, তুমি এ প্রশ্নটাই করবে,’ আমি বললাম।
‘তুমি আমার প্রশ্নটা এড়িয়ে যাচ্ছো,’ তুমি বললে।
‘ওরা আলাদা,’ পুনরায় আমি বললাম।
‘কিন্তু কিভাবে আলাদা?’ তুমি আবারো জিজ্ঞেস করলে।
‘জানি না,’ আমি বললাম।

‘হ্যাঁ, অবশ্যই তুমি জানো,’ আস্থার সঙ্গে জোর গলায় বলেই তুমি চাপা অভিমানে মুখটা গম্ভীর করে ফেললে।
তোমার অভিমানী মুখটা দেখে আমি বললাম, ‘ওরা সবাই এক ধরনের না। অনেকেই বেশ দয়ালু এবং ভালো। তবে অনেকে আবার তেমন নয়। ’
তুমি জিজ্ঞেস করলে, ‘দয়ালু, কেমন ধরনের দয়ালু?’
আমি বললাম, ‘এই আর কি!’
তুমি বললে, ‘ওরা কি সুন্দরী?’
আমি পাল্টা জানতে চাইলাম, ‘কোন মেয়ের কথা বলছো?’
তুমি বললে, ‘কোন মেয়ে বলতে তুমি কি বোঝাতে চাচ্ছো?’
আমি বললাম, ‘আমেরিকায় অভিবাসী আফগান মেয়ে, নাকি খোদ আমেরিকার মেয়ে?’
তুমি বললে, ‘দু’টোই। ’
আমি বললাম, ‘ওহ, তাই!’
তুমি ফের জিজ্ঞেস করলে, ‘তাই মানে কি?’
আমি বললাম, ‘ওরা সবাই দেখতে বেশ সুন্দরী। ’
তুমি কিছু না বলে চুপ করে থাকলে।
আমি বললাম, ‘এই, কি হলো?’
আমার প্রশ্নের কোন উত্তর না দিয়ে তুমি নিশ্চুপ থাকলে।
তোমার মৌনতা দেখে আমি বললাম, ‘দেখো, সে জন্যই আমি তোমার কথার কোন জবাব দিতে চাইনি। ’
আমার কথা শুনে তুমি হাসলে।
আমি বললাম, ‘জানতাম, তোমার প্রশ্নের জবাব দিলে এ ধরনের কিছু একটা ঘটবে। ’
বলেই আমি আবারো আরেকটা সিগারেটে অগ্নি সংযোগ করি। তুমি তোমার জন্য আরেক কাপ চা ঢাললে। তারপর সরাসরি আমার চোখের দিকে তাকালে। আমরা এক সঙ্গে হেসে উঠলাম। একসময় হাসি থেমে গেলে তুমি জিজ্ঞেস করলে, ‘মেয়েটি কে?’
আমি বললাম, ‘আরেক সময় বলবো। ’


[লেখক পরিচিতি : নুশীন আরবাবজাদাহ একজন লেখিকা, সাংবাদিক, সমালোচক এবং অনুবাদক। তাঁর শৈশবের খানিকটা সময় কেটেছে আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে। সোভিয়েত ইউনিয়নের আফগানিস্তান দখলের পর পরিবারের সঙ্গে তিনি জার্মানি চলে যান। হামবুর্গ বিশ্ববিদ্যালয় এবং ইংল্যান্ডের ক্যাম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইউরোপের ভাষা এবং মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ে গ্রাজুয়েশন করেন। বর্তমানে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া লস অ্যাঞ্জেলেসের ‘সেন্টার ফর ইন্ডিয়া অ্যান্ড সাউথ এশিয়া’ বিভাগে ভিজিটিং ফেলো হিসেবে কাজ করছেন।

ক্যালিফোর্নিয়া যাবার আগে তিনি লন্ডনের বৃটিশ কাউন্সিলে কাজ করেছেন। ২০০৫ সালে বিবিসি-তে যোগদান করেন। সেখানে তিনি সমকালীন আফগানিস্তানের সংবাদ মাধ্যম, রাজনীতি এবং সামাজিক ব্যবস্থার উপর বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। লন্ডন থেকে ২০০৭ সালে তাঁর প্রথম বই ‘ফ্রম আউটসাইড ইন
রিফিউজিস্ অ্যান্ড বৃটিশ সোসাইটি’ প্রকাশিত হয়। ইরানের কারাভোগী প্রখ্যাত সাংবাদিক হুসাম আসাদির আত্মজীবনী অনুবাদ করে তিনি সাহিত্যিক হিসেবে  আত্মপ্রকাশ করেন। এছাড়া ইরানের স্বনামধন্য লেখক সাদেক হেদায়েতের ছোটগল্প সংকলন সম্পাদনা করেন। তিনি লন্ডনের গার্ডিয়ান পত্রিকার অনলাইনে সমকালীন আফগানিস্তানের উপর নিয়মিত লেখেন।


‘স্পটলাইটের নিচে থমকে থাকা খরগোশের মতো’ গল্পটিতে মতানৈক্যের পরেও লেখিকা একজন আমেরিকাপ্রবাসী আফগান এবং অন্যজন আফগানিস্তানের আফগানির কথোপকথনের মাধ্যমে আফগানিস্তানের রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিবেশ এবং আমেরিকায় আফগানঅভিবাসী নারীদের জীবনযাত্রার বৈষম্য তুলনা করেছেন। গল্পটি জোহরা সায়িদ এবং সাহার মুরাদি সম্পাদিত ‘ওয়ান স্টোরি, থার্টি স্টোরিজ : অ্যান এনথোলজি অব কনটেমপোরারি আফগান-আমেরিকান লিটারেচার’ গ্রন্থে প্রকশিত হয়েছে। ]  

বাংলাদেশ সময় ১৭২০, এপ্রিল ৫, ২০১২
সম্পাদনা : ফেরদৌস মাহমুদ, শিল্প-সাহিত্য সম্পাদক

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad