ঢাকা, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

শিল্প-সাহিত্য

প্রশ্নের শক্তি : আরজ আলী মাতুব্বর [পর্ব-২]

আনু মুহাম্মদ, অধ্যাপক, জাবি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ২, ২০১২
প্রশ্নের শক্তি : আরজ আলী মাতুব্বর [পর্ব-২]

প্রশ্নের শক্তি : আরজ আলী মাতুব্বর [পর্ব-১]

সম্পত্তির উপর ব্যক্তিগত মালিকানা থাকলে উত্তরাধিকার প্রশ্নটিও গুরুত্বের সঙ্গে আসে। বর্তমান সকল প্রধান ধর্মেই যেহেতু সম্পত্তির উপর ব্যক্তিগত মালিকানা গ্রহণ করা হয়েছে এবং তাকে স্থায়ী হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে সেহেতু সব ধমের্ই উত্তরাধিকার বিষয়েও নিয়মবিধি আছে।

ইসলাম ধর্মে এ সংক্রান্ত যে বিধি সে সম্পর্কে বিশেষ মনোযোগ দিয়ে তিনি বলেন, “মৃত ব্যক্তির ত্যাজ্য সম্পত্তি তাহার ওয়ারিশগণের মধ্যে বণ্টনব্যবস্থাকে বলা হয় ‘ফরায়েজ নীতি’। ইহা পবিত্র কোরানের বিধান। মুসলিম জগতে এই বিধানটি যেরূপ দৃঢ়ভাবে প্রতিপালিত হইতেছে, সেরূপ অন্য কোনটি নহে। এমনকি পবিত্র নামাজের বিধানও নহে। ইহার কারণ বোধহয় এই যে, ফরায়েজ বিধানের সঙ্গে জাগতিক স্বার্থ জড়িত আছে। ” তিনি হিসাব করে দেখিয়েছেন বিধান অনুযায়ী সবাইকে সম্পত্তি বণ্টন করলে মোট সম্পত্তি দিয়ে কুলায় না। দরকার হয় ষোল আনার স্থলে আঠারো আনা। এই সমস্যার সমাধান করেন হজরত আলী। তিনি যে নিয়মের দ্বারা উহার সমাধান করিয়াছিলেন, তাহার নাম ‘আউল’।   মানুষের কেন এই সংশোধনের দরকার হল? তিনি প্রশ্ন করেন, ‘পবিত্র কোরানের উক্ত বিধানটি ত্রুটিপূর্ণ কেন?’


নারীর অবস্থান, নারীর অধিকার, বিবাহ, বিবাহবিচ্ছেদ, সন্তানের ‘বৈধতা’-‘অবৈধতা’, সন্তানের উপর অধিকার সম্পর্কে সকল ধর্মেই কড়া বিধিবিধান আছে। ইসলাম ধর্মে কোরান এবং হাদিস থেকে এসব বিধিবিধান গ্রহণ ও প্রয়োগ করা হয়। আরজ আলী মাতুব্বর এক্ষেত্রে বিশেষভাবে আলোচনা করেছেন ‘হিল্লা বিয়ে’ নিয়ে। এই বিয়ের প্রথা, অন্যান্য আরও অনেক আইনের মতো, কত নারীর জীবনকে বিষময় ও বিপর্যস্ত করেছে, কত নারীকে ভয়াবহ অপমানের মধ্যে ছুঁড়ে ফেলেছে তার পরিসংখ্যান বের করা অসম্ভব। এটি এখনও চলছে। স্বামী ভুলে স্ত্রীকে তালাক দিয়ে আবার যদি তাঁকে গ্রহণ করতে চায় তবে তার একমাত্র বিধিসম্মত ব্যবস্থা হল স্ত্রীকে অন্য একজনের সঙ্গে বিয়ে দিতে হবে যার সঙ্গে কোন ভালবাসা তৈরি হবে না কিন্ত নিশ্চিত করতে হবে যে তাদের মধ্যে যৌন সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছে। আরজ আলী মাতুব্বর বলেন, “অথচ পুনরায় গ্রহণযোগ্যা নির্দোষ স্ত্রীকে পুনঃগ্রহণে ‘হিল্লা’ প্রথার নিয়মে স্বামীর পাপের প্রায়শ্চিত্ত করিতে হয় সেই নির্দোষ স্ত্রীকেই। অপরাধী স্বামীর অর্থদ-, বেত্রাঘাত ইত্যাদি না-ই হউক, অন্তত তওবা পড়ারও বিধান নাই, আছে নিষ্পাপিনী স্ত্রীর ইজ্জতহানির ব্যবস্থা। একের পাপে অন্যকে প্রায়শ্চিত্ত করিতে হয় কেন?”  তিনি পুরো ব্যবস্থা ব্যাখ্যা করে আরও প্রশ্ন করেন যে, “এইরূপ মিলন ব্যাভিচারের নামান্তর নয় কি?”  অথচ ‘ব্যাভিচারের’ অপরাধে কত নারী পুরুষকে ভালবাসার সম্পর্ক স্থাপনের জন্য ধর্মের বিধান অনুযায়ী নিষ্ঠুর যন্ত্রণার সম্মুখীন হতে হয়েছে এমনকি প্রাণ বিসর্জন দিতে হয়েছে তার ইয়ত্তা নেই।    

ভাগ্য গড়বার জন্য, ঈশ্বরের কৃপা লাভের জন্য নানাবিধ আয়োজন ও ব্যবস্থা আছে বিভিন্ন ধর্মে। ইসলাম ধর্মে শবেবরাত বা হিন্দুধর্মে লক্ষীপূজা এরকম দুটি পদ্ধতি যা দিয়ে বৈষয়িক জীবন উন্নতি অনুমোদন করেন ঈশ্বর-- এরকম বিশ্বাসই প্রবলভাবে কাজ করে। কিন্তু আরজ আলী মাতুব্বর চারপাশের, বিশ্বের নানা দেশের উদাহরণ দিয়ে দেখান যে, সম্পদ বা স্বাচ্ছন্দ্যের পরিবর্তনের সঙ্গে এগুলোর কোন সম্পর্ক দেখা যায় না।   বরঞ্চ যারা বিপুল সম্পদের মালিক, বৈষয়িকভাবে সফল যাদের বরাত ‘ভাল’ তাদের বেশিরভাগ এসবের ধারে কাছেও নেই। তাঁদের বরঞ্চ বরাত ভাল হবার পর ধর্মের সঙ্গে যোগাযোগ করতে দেখা যায় ভিন্ন কারণে।                      

হিন্দুধর্মে পশুবলি বা ইসলামে কোরবানী প্রথা সৃষ্টিকর্তার প্রতি আনুগত্য প্রকাশ ও তাঁকে খুশি করবার একটি পদ্ধতি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বাংলাদেশে কোরবানীর ব্যাপারে উৎসাহ দিনে দিনে বাড়ছে। এইজন্য যে আয়োজন, উল্লাস এবং প্রতিযোগিতা দেখা যায় সেসব আলোচনা করে আরজ আলী বলেছেন এতে পশুর হয় ‘আত্মত্যাগ’ এবং কোরবানী দাতার হয় ‘সামান্য স্বার্থত্যাগ’। মাংস ভোগের মহোৎসব দেখে তিনি প্রশ্ন করেন যে, এই সামান্য স্বার্থত্যাগের বিনিময়ে যদি দাতার স্বর্গলাভ হইতে পারে, তবে কোরবানীর পশুর স্বর্গলাভ হইবে কিনা?  

কেন তাঁকে দাঁড়াতে হয় লোভ আর ভয়ের উপর?  
ধর্মের বিভিন্ন বক্তব্য, নিয়মনীতি সর্বোপরি প্রধান ধর্মগুলোর ধর্মগ্রন্থসমূহকে খুবই গুরুত্বের সঙ্গে বিশ্লেষণের মধ্যে আনা দরকার। আরজ আলী মাতুব্বর বলেন যে, “ধর্মগ্রন্থের বাণীসমূহ লৌকিক বা অলৌকিক যা-ই হোক, তাতে মানব জীবনের অত্যাবশ্যকীয় বহু মূল্যবান তথ্যও আছে। তাই যাবতীয় ধর্মগ্রন্থই আমাদের পরম শ্রদ্ধার্হ ও সমান আদরণীয়। ”  

http://www.banglanews24.com/images/PhotoGallery/2012April/aroj-ali-matubbar20120402164340.jpg

আরজ আলী নিজে জন্মের পর থেকেই ইসলামের আবহেই বড় হয়েছেন। এই ধর্ম তাঁর অনেক নিকটবর্তী যার একদিকে শাস্ত্রীয় বক্তব্য অন্যদিকে তার বাস্তব প্রয়োগের রূপও তিনি দেখেছেন। কোরান সম্পর্কে তিনি বলেন, “পবিত্র কোরান মুসলমানদের ধর্মগ্রন্থ এবং ইহা ঐশ্বরিক গ্রন্থ বলিয়া পরিচিত। যেসব গ্রন্থকে ঐশ্বরিক বলিয়া দাবি করা হয়, পবিত্র কোরান তন্মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ। বরং অতুলনীয়। ”       

ধর্ম আর মানুষ কে কাকে তৈরি করে, কে কাকে পালন করে? এর জবাবই ঠিক করে দেয় একজনের মতাদর্শিক অবস্থান। আরজ আলী এ প্রশ্নের উত্তরে বলেন, “ধর্ম মানুষকে পালন করে না, বরং মানুষ ধর্মকে পালন করে এবং প্রতিপালনও। ” আরজ আলী বলেন, “সাধারণত আমরা যাহাকে ‘ধর্ম’ বলি তাহা হইল মানুষের কল্পিত ধর্ম। ” ধর্ম প্রবর্তকদের তিনি অভিহিত করেছেন মহাজ্ঞানী হিসেবে যারা ‘যুগে যুগে’ ‘স্রষ্টার’ প্রতি মানুষের কর্তব্য এবং ‘মানুষের সমাজ ও কর্মজীবনের গতিপথও’ দেখিয়েছেন। তাঁর মতে, এর ফলেই সৃষ্টি হয়েছে অনেক ধর্ম ও তা নিয়ে বিভেদ। অনেক রক্তক্ষয়ী সংঘাতও সৃষ্টি হয়েছে এটি থেকে।    

কিন্তু ‘সাপে নেউলে’ সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও বিভিন্ন ধর্মের সারবস্তুর মধ্যে অমিলের চাইতে মিলই বেশি। আরজ আলী প্রশ্ন করেন, ‘‘লক্ষাধিক পয়গম্বর প্রায় সবাই আরব দেশে জন্মিলেন কেন?’’ বাস্তবিকই আরব অঞ্চলের পর ভারত, চীন, জাপান প্রভৃতি অঞ্চলকেই ধর্ম প্রবর্তনের কেন্দ্র হিসেবে পাওয়া যায়। দখল-পূর্ব আমেরিকার ধর্মের খবর এখনও প্রকাশিত হচ্ছে। সেমিটিক ধর্মগুলো ধারাবাহিকতা রেখেছে প্রায় সকল ক্ষেত্রেই। হজরত ইব্রাহিম থেকে শুরু হয়ে ইসলাম ধর্ম পর্যন্ত। ভারত, চীন, জাপান ইত্যাদি অঞ্চলে ধর্মের ভিন্ন ভিন্ন ধারাবাহিকতা। এটা ঠিক এরকম নয় যে, একটি ধর্ম এসেছে এবং তার সূত্র ধরে সমাজ-অর্থনীতি এগিয়েছে। ঘটনাটা বরঞ্চ উল্টো। সমাজ অর্থনীতির ধরনের উপরই  ধর্মের রূপ দাঁড়িয়েছে। বহু ধর্ম মরে গেছে। আবার বহু ধর্ম মিশে গেছে অন্য কোনটির সঙ্গে আবার কোন কোনটি ব্যাপক প্রভাব নিয়ে দাঁড়িয়ে গেছে। হিন্দু ধর্ম, যাকে বৈদিক ধর্মও বলা হয়, অনুসন্ধান করলে পাওয়া যাবে বহু ক্ষুদ্র আঞ্চলিক ধর্ম, পাওয়া যাবে সেগুলোর দেবদেবী বিশ্বাস আচার।    

আরজ আলী ভারতে প্রবর্তিত এই বৈদিক ধর্মের বহু বিশ্বাস ও রীতিনীতির সাথে মিল দেখাচ্ছেন আরবে প্রবর্তিত সেমিটিক ধর্মগুলোর সঙ্গে। এক ধর্মে ‘পৌত্তলিকতা’ ও অন্য ধর্মে ‘পৌত্তলিকতা বিরোধিতা’র মতো মৌলিক তফাৎ থাকলেও এই সাদৃশ্য বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয়। তিনি অভিন্নতার একটি তালিকা তৈরি করেছেন নিম্নরূপে :  
 
১.    ঈশ্বর এক-- একমেবাদ্বিতীয়ম (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ)।
২.    বিশ্ব-জীবের আত্মাসমূহ এক সময়ের সৃষ্টি।
৩.    মরণান্তে পরকাল এবং ইহকালের কর্মফল পরকালে ভোগ।  
৪.    পরলোকের দুইটি বিভাগ-- স্বর্গ ও নরক (বেহেস্ত-দোজখ)।
৫.    স্বর্গ সাত ভাগে এবং নরক সাত ভাগে বিভক্ত
৬.    স্বর্গ বাগানময় এবং নরক অগ্নিময়।
৭.    স্বর্গ ঊর্ধ্বদিকে অবস্থিত।
৮.    পূণ্যবানদের স্বর্গপ্রাপ্তি এবং পাপীদের নরকবাস।
৯.    যমদূত (আজ্রাইল) কর্তৃক মানুষের জীবনহরণ।
১০.    ভগবানের স্থায়ী আবাস ‘সিংহাসন’।
১১.    স্তব-স্তুতিতে ভগবান সন্তুষ্ট।
১২.    মন্ত্র (কেরাত) দ্বারা উপাসনা করা।
১৩.    মানুষ জাতির আদিপিতা একজন মানুষ-- মনু (আদম)।
১৪.    নরবলি হইতে পশুবলির প্রথা প্রচলন।
১৫.    বলিদানে পূণ্যলাভ (কোরবানী)
১৬.    ঈশ্বরের নামে উপবাসে পূণ্যলাভ (রোজা)।
১৭.    তীর্থভ্রমণে পাপের ক্ষয়-- কাশীগয়া (মক্কা-মদিনা)।
১৮.    ঈশ্বরের দূত আছে ফেরেস্তা)।
১৯.    জানু পাতিয়া উপাসনায় বসা।
২০.    সাষ্টাঙ্গ প্রণিপাত (সেজদা)।
২১.    করজোড়ে প্রার্থনা (মোনাজাত)।
২২.    নিত্যউপাসনার নির্দিষ্ট স্থান-- মন্দির (মসজিদ)।
২৩.    মালা জপ (তসবিহ পাঠ)
২৪.    নির্দিষ্ট সময়ে উপাসনা করা-- ত্রিসন্ধ্যা।     
২৫.    ধর্মগ্রন্থপাঠে পূণ্যলাভ
২৬.    কার্যারম্ভে ঈশ্বরের নামোচ্চারণ
২৭.    গুরুর নিকট দীক্ষা
২৮.    স্বর্গে গণিকা আছে-- গন্ধর্ব, কিন্নরী, অপ্সরা (হুর-গেলমান)
২৯.    উপাসনার পূর্বে অঙ্গ ধৌত করা (অজু)
৩০.    দিকনির্ণয়পূর্বক উপাসনায় বসা বা দাঁড়ানো
৩১.    পাপ-পূণ্য পরিমাপে তৌলযন্ত্র ব্যবহার (মিজান)
৩২.    স্বর্গগামীদের নদী পার হওয়া-- বৈতরণী (পোলছিরাত)।
   
আমরা ধর্ম প্রবর্তনের দুটো ধরন দেখি: প্রথমত, এক. নিজেদের জীবনযাপন, প্রকৃতির সঙ্গে সম্পর্ক ইত্যাদির স্বাভাবিক তাগিদ এবং জাগতিক নিয়ম সম্পর্কে ধারণার অভাব থেকে কিছু বিশ্বাস, চর্চা, নিয়মনীতির সংগঠন হিসেবে ধর্ম দাঁড়িয়েছে। এগুলোর মধ্যে পড়ে প্রাচীন আঞ্চলিক বা গোত্রীয় সকল ধর্মই। হিন্দু ধর্ম এরকম অনেক ধর্মেরই সম্মিলিত রূপ। সকল বড় ধর্মই প্রকৃতপক্ষে বিভিন্ন আঞ্চলিক বা গোত্রীয় ধর্মের ধারাবাহিকতার উপর সৃষ্টি। দ্বিতীয়ত, বিদ্যমান সমাজ অর্থনীতি শাসন নিপীড়নের বিরোধিতা করতে গিয়ে সংঘাত হয়েছে শাসকদের ধর্মের সঙ্গে এবং সেভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে নতুন ধর্ম। ইহুদী, বৌদ্ধ, খ্রীষ্টিয়ান, ইসলাম ধর্ম এই ধারার মধ্যে পড়ে।     

প্রচলিত অন্যায় নিপীড়ন বিরোধিতা করে যখন প্রধান ধর্মগুলোর আবির্ভাব ঘটে তখন নিপীড়িত মানুষের আশ্রয় ও বিশ্বাস হিসেবেই এগুলো গড়ে উঠে। কিন্তু ক্রমে এসব ধর্ম যখন নিজেই শাসনক্ষমতার বর্ম হিসেবে রূপান্তরিত হতে থাকে তখন নিম্নবর্গের মানুষের সঙ্গে এসব ধর্মশক্তির বিচ্ছিন্নতারও সৃষ্টি হতে থাকে। সমাজ মুক্তির একটি শক্তিশালী মতাদর্শ থেকে যখন ধর্মের দূরত্ব বাড়তে থাকে তখন ক্রমে ভয় এবং লোভই হয়ে দাঁড়ায় এসব ধর্মের মূল ভিত্তি। বস্তুত: প্রধান ধর্মগুলি দাঁড়িয়ে আছে মানুষের স্বর্গ বা বেহেশতের প্রতি লোভ এবং নরক বা দোজখের প্রতি ভয়ের উপর। এখানে নৈতিকতাও এই দুটো দ্বারাই নির্ধারিত। ভয় বা লোভের বাইরে মানবিক বোধ, সহমর্মিতা, দায়িত্ববোধ যে তৈরি সম্ভব তা ধর্মের প্রচলিত ডিসকোর্সে দেখা যায় না। এই ভয় বা লোভ দুটোই যেহেতু ‘মৃত্যু পরবর্তী জগতের’ আওতায় সেহেতু ধর্মের ব্যাখ্যানে জীবনের চাইতে মৃত্যু বরাবরই গুরুত্ব পায় অনেক বেশি। মৃত্যু অনিবার্য এবং তার সময় অনিশ্চিত। মৃত্যু পরবর্তী অবস্থা সম্পর্কে মানুষের অপার আগ্রহ কিন্তু ভয়। সেজন্য এটি ঘিরে জন্ম নিয়েছে অনেক ব্যাখ্যা; এ সম্পর্কে আগ্রহ ও ভয়-এর কারণে যার মধ্যে এক ধরনের সাযুজ্যও আছে। সাধারণভাবে ধর্মের ডিসকোর্স মানুষের এই অসহায়ত্ব, সীমাবদ্ধতা এবং ভয়কেই পুঁজি করে। জীবন এই ডিসকোর্সের তুলনায় গুরুত্বহীন।           

বৌদ্ধধর্ম ভিন্ন সকল প্রধান ধর্মগ্রন্থেই ইশ্বরের খুশি ও বেজার হবার বিষয়টিকে তাই সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া হয়। কারণ এর উপরই নির্ভর করে মৃত্যুপরবর্তী জীবনে কার অবস্থান অসীম সুখে ভাসবে এবং কার জীবন অসীম দুঃখ ও কষ্টে পতিত হবে সেটি। আরজ আলী প্রশ্ন করেন-- ‘‘খোদার কি মানুষের মতই মন আছে? আর খোদার মনোবৃত্তিগুলি কি মানুষেরই অনুরূপ? ইহারও উত্তর আসে যে, উহা বুঝিবার ক্ষমতা মানুষের নাই। ...খোদাতালার জগৎ-শাসন প্রণালী বহুলাংশে একজন সম্রাটের মত কেন এবং তাঁহার এত আমলা-কর্মচারীর বাহুল্য কেন?’’  
তিনি আরও বলেন-- “বেহেস্তের সুখের বর্ণনায় শোনা যায় যে, পূণ্যবানগণ নানারকম সুমিষ্ট সুস্বাদু ফল আহার করিবেন, নেশাহীন মদিরা পান করিবেন, হুরীদের সহবাস লাভ করিবেন-- এক কথায়, প্রত্যেক পূণ্যবান ব্যক্তি মধ্যযুগের এক একজন সম্রাটের ন্যায় জীবনযাপন করিবেন। ”    

মৃত্যুর মধ্যে দিয়ে মানুষের দেহ রূপান্তরিত হয়। সুতরাং মৃত্যু পরবর্তী জীবনের প্রসঙ্গে মানুষের সেই দেহ পুনরুদ্ধারের প্রশ্ন আসে। আরজ আলীর সহজ প্রশ্ন, দেহ পুনরুদ্ধার কি সম্ভব? প্রকৃতিতে একটি দেহ আরও অনেক কিছুর সঙ্গে সম্পর্কিত। একটি প্রাণীর মৃত্যুর পর তার দেহ থেকে বহু জীবের দেহে-প্রাণ গঠিত হয়।
“জীবের মৃত্যুর পর তাহার দেহটি রূপান্তরিত হইয়া পৃথিবীর কঠিন, তরল ও বায়বীয় পদার্থে পরিণত হয়। আবার ঐ সকল পদার্থের অণুপরমাণুগুলি নানা উপায়ে গ্রহণ করিয়াই হয় নতুন জীবের দেহগঠন। জীবদেহের ত্যাজ্য মসলা। আবার মৃত্যুর পর আমার এই দেহের উপাদানে হইবে লক্ষ লক্ষ জীবের দেহগঠন। ...ইহাতে দেখা যাইতেছে যে, প্রাণীবিশেষের দেহ অন্যান্য বহু প্রাণীর দেহ হইতে আহৃত পদার্থসমূহের সমষ্টির ফল। অর্থাৎ যে কোন একটি জীবের দেহ অন্যান্য বহু জীবের দেহ হইতে উদ্ভুত হইতেছে। ”    
সমস্যাটা দাঁড়াচ্ছে, “এমতাবস্থায় পরকালে একই সময় যাবতীয় জীবের দেহ বর্তমান থাকা কি সম্ভব? যদি হয়, তবে প্রত্যেক দেহে তাহাদের পার্থিব দেহের সম্পূর্ণ পদার্থ বিদ্যমান থাকিবে কিরূপে? যদি না থাকে, তবে স্বর্গ-নরকের সুখ-দুঃখ কি আধ্যাত্মিক?” তাহলে কষ্ট ও সুখের যে পার্থিব বর্ণনা পাওয়া যায় তা কি রূপক? তাহলে পুরো ধর্মের ব্যাখ্যানই কি রূপক বিশ্বাস নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে? তাহলে বেহেশত-দোজখ, স্বর্গ-নরক সবই কি রূপক বিষয়? আসলে তার অস্তিত্ব নাই? ধর্মপ্রচারক বা ধর্মীয় নেতারা এই কথাটা জনগণকে খোলাসা করে বলতে গেলে আরজ আলীর সকল প্রশ্নের সুরাহাই করতে হবে।


আরজ আলী প্রশ্ন করেন যে, ঈশ্বরকে যে একইসঙ্গে ন্যায়বান ও দয়ালু বলা হয় তা কি একই সময়ে হওয়া সম্ভব?  কেননা যিনি দয়ালু তিনি ক্ষমাশীল কিন্তু ন্যায়বান যিনি তিনি ক্ষমাশীল হতে পারেন না। তাঁকে ন্যায়বিচার করতে গেলে নৈর্ব্যক্তিক হতে হয়। অপরাধীর প্রতি ক্ষমাশীল হলে যারা ক্ষতিগ্রস্ত তাঁদের প্রতি অবিচার হয়। যাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত তাঁদের প্রতি ন্যায়বিচার করতে গেলে অপরাধীদের প্রতি নির্মম হতে হয়। যেমন উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, বাংলাদেশের সবচাইতে বড়, সংগঠিত অপরাধ হয়েছিল ১৯৭১ সালে গণহত্যা ও ধর্ষণের মধ্যে দিয়ে। এটি করেছিল পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী এবং তাদের সঙ্গে ছিল ইসলামের নাম নিয়ে এই অঞ্চলের ধর্মীয় নেতাদের উল্লেখযোগ্য অংশ। এই অপরাধীদের প্রতি যে ক্ষমা ঘোষণা করা হয় তাকে মহানুভবতা হিসেবে দেখানো হয়, এদের বিচার ৪০ বছরেও সম্পন্ন হয়নি। এরকম কথাই বিশেষভাবে শোনা গেছে যে, এসব বিচারের কথা তোলা মানে জাতিকে বিভক্ত করা। কিংবা আমাদের ক্ষমাশীল হওয়া দরকার। তাহলে খুনী ও দুর্বৃত্তদের অপরাধের বিচার করলে কি তা জাতিকে বিভক্ত করে? তাহলে তো কোন বিচারের ব্যবস্থাই থাকা ঠিক নয়। আর দুর্বৃত্তদের প্রতি ক্ষমাশীল হলে তাদের অপরাধের শিকার মানুষের প্রতি তবে কী ন্যায়বিচার হলো?

ধর্মে ক্ষমা পাবার নানা ব্যাখ্যা আছে। পাপ পূণ্যের নানা মাপ আছে। তাতে বিপুল পূণ্য অর্জনের জন্য এমন বহু রাস্তা আছে যেগুলো টাকা থাকলে সহজেই ক্রয় করা যায়। এবং এগুলো অপরাধীদের জন্য স্বস্তিদায়ক। এসব ব্যাখ্যার অনেকগুলোতে, বলাই বাহুল্য, বিভিন্ন কালে বিভিন্ন স্থানের ক্ষমতাবানদের স্পর্শ আছে। আবার এরকম কিছু ব্যাখ্যাও পাওয়া যাবে যেখানে উচ্চকিত ক্ষমতাবানদের বিপরীতে জনগণের কণ্ঠস্বর। এই দুক্ষেত্রে এক ধর্ম পরিষ্কার দুটো বিপরীত অবস্থান গ্রহণ করে।          

জগৎ ও মানুষ

http://www.banglanews24.com/images/PhotoGallery/2012April/Sotter Sondhane20120402165851.jpgআমরা যে পৃথিবীতে বসবাস করি সেই পৃথিবীর বয়স কত? কীভাবে এর উৎপত্তি? দিনরাত কীভাবে হয়? কীভাবে মৌসুমের পরিবর্তন ঘটে? কীভাবে প্রাণের উদ্ভব হয়? কোন প্রাণ দিয়ে প্রাণীজগতের শুরু? এই পৃথিবীর সঙ্গে বাকি জগতের কি সম্পর্ক? এই জগতের শেষ কোথায়? আরজ আলী মাতুব্বর এসব প্রশ্নের উত্তর অনুসন্ধানের জন্য যতধরনের ধর্মগ্রন্থ আশেপাশে পাওয়া যায় দেখেছেন, প্রচলিত ভাষ্য নোট করেছেন আর পাশাপাশি বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায়, পদার্থবিদ্যা, জীববিদ্যা, প্রতœবিদ্যা ইত্যাদি ক্ষেত্রে আবিষ্কার,  তত্ত্বের খোঁজ করেছেন, সংগ্রহ করেছেন, অধ্যয়ন করেছেন। বিজ্ঞানের প্রতি তাঁর আগ্রহ ধর্মসহ অন্য সবকিছুর মতো প্রবল ছিল একই কারণে: প্রশ্নের উত্তর সন্ধান। বলাই বাহুল্য বিজ্ঞান তাঁকে এসব প্রশ্নের উত্তরে যুক্তিসঙ্গত একটি কাঠামো দান করেছিল।

‘সত্যের সন্ধান’ গ্রন্থটি প্রচলিত বিশ্বাস নিয়ে বহু প্রশ্ন ও প্রশ্নের ব্যাখ্যার সংকলন। ‘সৃষ্টি রহস্য’ গ্রন্থটি মূলত: সৃষ্টি বিষয়ক বিভিন্ন ধর্ম ও বিশ্বাসের ধারণা এবং বিজ্ঞানের তৎকালীন সময় পর্যন্ত প্রাপ্ত জ্ঞান থেকে লেখা। ‘সত্যের সন্ধান’ গ্রন্থের ষষ্ঠ প্রস্তাবে আদিমানব নিয়ে বিশেষভাবে আলোচনা করেছেন। বিভিন্ন ধর্মেই আদিমানব বিষয়ে ধারণা বা বিশ্বাস পাওয়া যায়। সেমিটিক সব ধর্মে আদম-হাওয়া বিষয়টি একই। হিন্দু ধর্মে ব্রহ্মার মানসপুত্র মনুই আদি মানব। আরজ আলী এই বিশ্বাস এবং তার সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন কাহিনী যতেœর সঙ্গে অধ্যয়ন করেছেন ও ব্যাখ্যা করেছেন।    

আগুন, অস্ত্র, বাহন, তাঁত, চাকা, নৌকা ও পাল, কাগজ, ধর্ম, বাষ্পীয় শক্তি, বৈদ্যুতিক শক্তি, পারমাণবিক শক্তির আবিষ্কার ও ব্যবহারের বিবর্তনের ইতিহাস পর্যালোচনা করেছেন। কৃষি ও পশুপালন সম্পর্কে ইতিহাস পর্যালোচনা করে তিনি লিখেছেন, “সেমিটিক জাতির মতে, কৃষি ও পশুপালন শুরু করিয়াছিলেন বাবা আদম বেহেশত হইতে পৃথিবীতে আসিয়াই। হালের বলদ, লাঙ্গল-জোয়াল ও ফসলের বীজ বেহেশত হইতে আমদানি হইয়াছিল কি না তাহা জানি না, তবে তিনি নাকি চাষাবাদ করিয়াই জীবন যাপন করিতেন। ...বাবা আদমের লাঙ্গলের আকৃতি কিরূপ ছিল, জোয়াল কিভাবে জুড়িতেন এবং রশারশি কোথায় পাইয়াছিলেন সেই বিষয়ে কোনো বিবরণ পাওয়া যায় না। ”    

আদমের সময়কাল এবং স্থান নিয়ে হিসাবনিকাশ করে তিনি দেখাচ্ছেন খৃঃ পূঃ ৪০০৪ সালে হযরত আদমের সৃষ্টি (জন্ম)। কিন্তু পাশাপাশি এটাও দেখাচ্ছেন যে, সেই সময়ের আগেই মিশরে পঞ্জিকা আবিষ্কার হয়েছে, সেইসময়ে মিশরে চাষাবাদ, লোকবসতি। তারও ৪ হাজার বছর আগে লোকবসতির প্রমাণ পাওয়া যায় সিরিয়ায়। তিনি এটাও মনে করিয়ে দেন যে, “জীববিজ্ঞানীদের মতে পৃথিবীতে মানুষের আবির্ভাব হইয়াছিল লক্ষ লক্ষ বৎসর পূর্বে। তবে আধুনিক চেহারার মানুষের আবির্ভাব ঘটিয়াছে মাত্র প্রায় ৩০ হাজার বৎসর পূর্বে। ”  

মানুষের জ্ঞান বিজ্ঞানের সর্বশেষ প্রাপ্ত যাবতীয় তথ্য বিশ্লেষণ করে আরজ আলী মাতুব্বর বলছেন, “পূর্বোক্ত বিষয়গুলি পর্যালোচনা করিলে মনে আসিতে পারে যে, আদম হয়ত এশিয়া মাইনর বা আর্মেনিয়া দেশের কোন ক্লানের বিতাড়িত ব্যক্তি এবং আরব দেশে আগন্তুক প্রথম মানুষ, সমস্ত পৃথিবীর মধ্যে আদিম মানুষ নয়। ”  মানুষের সঙ্গে অন্যান্য জীবের শরীরতত্ত্বীয় মিল নিয়ে আরজ আলী বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। এটা গুরুত্বপূর্ণ এই কারণে মানুষ সম্পূর্ণ বিশিষ্ট এই ধারণার উপর অনেক বিশ্বাস প্রতিষ্ঠিত। তিনি বলছেন, “চা, কফি ও মাদক জাতীয় দ্রব্যাদি গ্রহণে ও কতক বিষাক্ত দ্রব্য প্রয়োগে মানুষ ও পশুর একই লক্ষণ প্রকাশ পায়, ইহাতে উহাদের টিস্যু ও রক্তের সাদৃশ্য প্রমাণিত হয়। গো-মহিষাদি পশুরা লোমশ প্রাণী, মানুষও তাহাই এবং পশুদের দেহে যেরূপ পরজীবী বাস করে, মানুষের শরীরেও তদ্রুপ উকুনাদি বাস করে। প্রজননকার্যে মানুষ ও অন্যান্য স্তন্যপায়ী জীবদের বিশেষ কোনো পার্থক্য নাই। পূর্বরাগ, যৌনমিলন, ভ্রুণোৎপাদন, সন্তান প্রসব ও প্রতিপালন সকলই প্রায় একরূপ। ”  নারীর রজঃশীলা ও সন্তান ধারণ বিষয়ে এরকম সাদৃশ্য দেখেছেন। সৃষ্টি রহস্য-তে এটি নিয়েও আলোচনা করেছেন। সত্যের সন্ধান গ্রন্থে তাঁর প্রশ্ন ছিল, “বিশেষত আদি নারী বিবি হাওয়া নাকি রজঃশীলা হইয়াছিলেন গন্ধম ছেঁড়ার ফলে, কিন্তু অন্যান্য স্তন্যপায়ী প্রাণীকূল রজঃশীলা হয় কেন?”  

তাহলে অন্যান্য প্রাণীর সঙ্গে কি মানুষের কোন পার্থক্য নেই? তিনি বলেন, “মানুষের সহিত অন্যান্য জীবদের তথা পশুদের শত শত রকম সামঞ্জস্য বিদ্যমান। কাজেই যাবতীয় জীব বিশেষত পশুরা মানুষের আত্মীয়, এ কথাটি অস্বীকার করিবার উপায় নাই। তথাপি মানুষ মানুষই, পশু নহে। এখন দেখা যাক যে, অন্যান্য প্রাণীর সঙ্গে মানুষের তফাৎ কি? জীবজগতে মানুষের প্রধান বৈশিষ্ট্য তিনটি— হাত, মগজ, ভাষা। ”  এরপর এই বৈশিষ্ট্যগুলো ব্যাখ্যা করে শেষে এসে যা বলছেন তা উল্লেখ না করে পারা যায় না। বলছেন, “...ভাষাভাষী হিসাবে মানুষ একান্তই সামাজিক জীব। উন্নত মস্তিষ্ক, কর্মক্ষম হাত এবং সুসমঞ্জস ভাষা সহায়ক হইল এক রকম জীবের— তাহারই নাম মানুষ। কিন্তু হাত, মগজ ও ভাষা জীবজগতের সর্বত্র দুর্লভ নহে। অনুন্নত জীবজগতের সর্বত্র-দুর্লভ— মানুষের হাসি। ”

[আগামী পর্বে সমাপ্ত]

বি.দ্র :  আসন্ন পহেলা বৈশাখে  প্রকাশিতব্য রুদ্র সাইফুল সম্পাদিত ‘আরজ আলী মাতুব্বর : পাঠ ও মূল্যায়ন’-এর সৌজন্যে লেখাটি প্রকাশিত।

http://www.banglanews24.com/images/PhotoGallery/2012April/anu muhammad20120402164615.jpg

আনু মুহাম্মদ

 

 

 

 

 

 

বাংলাদেশ সময় : ১৪২৬, এপ্রিল ০২, ২০১২
সম্পাদনা : ফেরদৌস মাহমুদ, শিল্প-সাহিত্য সম্পাদক  

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।