ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫

কৃষি

গাছে ধরেছে টকমিষ্টি স্বাদের ‘জাম্বুরা’

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৩৫ ঘণ্টা, আগস্ট ২১, ২০২০
গাছে ধরেছে টকমিষ্টি স্বাদের ‘জাম্বুরা’ মাঝারি আকারের গাছে জাম্বুরার বাহার। ছবি: বাংলানিউজ

মৌলভীবাজার: শখের বাগানে স্বাদের জাম্বুরা গাছের পাতার সামনে কিংবা আড়ালে দারুণ সৌন্দর্য ছড়িয়ে ঝুলে আছে। মাঝারি আকারের এ গাছগুলো ফলদ সাফল্যে মুখর।

তবে আধখাওয়া মাটিতে পড়ে থাকা জাম্বুরা বলে দেয়- এখানে দিবাচর কাঠবিড়ালি কিংবা নিশাচর বাদুড়ের বেশ আনাগোনা। এসব প্রাণীরা পুরোটা খেতে পারে না, ফল নষ্ট করে বেশি। এ ফলের বাগানেও তার নমুনা পাওয়া গেল।  

জাম্বুরা ঠাণ্ডাজনিত জ্বর-সর্দিসহ নানা রোগ প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা পালন করে। এর ইংরেজি নাম Pomelo এবং বৈজ্ঞানিক নাম Citrus maxima।

শ্রীমঙ্গলের ফলদ বৃক্ষের শৌখিন চাষি আব্দুল মুহিত মুরাদ বাংলানিউজকে বলেন, জাম্বুরা অত্যন্ত সুস্বাদু ফল। কিন্তু পাকতে হবে। পারিপক্ক হওয়ার আগে জাম্বুরা খেলে কিন্তু সেই স্বাদটা পাবেন না। তাই অপেক্ষা করতেই হবে – গাছে না পাকা পর্যন্ত।

তার ফল-বাগানে জাম্বুরার প্রজাতি সম্পর্কে তিনি বলেন, আমার এখানে মোট ৪ জাতের জাম্বুরা আছে। একটা প্রজাতি হলো বারি-২, এটি ২০০৮ সালে লাগানো হয়। বিটিআরআইয়ের দুটি প্রজাতি, এগুলো ২০১০ সালে লাগিয়েছিলাম এবং অপরটি আমার গ্রামের বাড়ির জাম্বুরা গাছ, যেটি ২০১৪ সালে লাগানো হয়েছে।

ফলন বেশি হয় বারি-২ জাতের গাছে। গাছ ভরে জাম্বুরা ধরে। বারি-২ হলো বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের গাছ। ১৫টি জাম্বুরা গাছের মধ্যে ১৩টি গাছে ফল ধরেছে। অবশিষ্ট দুটো গাছ চারার গাছ, নতুন লাগানো হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, তবে গাছে জাম্বুরা ধরলেও এখনো পাকেনি। চারার গাছ থেকে ফলন আসতে দুই থেকে তিন বছর সময় লেগে যায়। জাম্বুরা বছরে একবার ধরে। জাম্বুরা পাকে কার্তিক-অগ্রহায়ণ মাসে। মাল্টা ফলের সঙ্গে জাম্বুরা পাকে।

মুরাদ দুঃখ প্রকাশ করে জানান, কম করে হলেও চলতি মৌসুমে প্রায় একশত জাম্বুরা নষ্ট করে ফেলেছে কাঠবিড়ালি।

জাম্বুরার শোভা প্রত্যক্ষ করতে আসেন দর্শনাথীরাও।  ছবি: বাংলানিউজ

লোকাল প্রজাতির সম্পর্কে তিনি বলেন, আমার গ্রামের বাড়ি গোলাপগঞ্জে উৎপন্ন দেশি প্রজাতির যে জাম্বুরার বীজ থেকে সংগ্রহ করে এনে শ্রীমঙ্গলের ফলের বাগানে ৪/৫ বছর আগে লাগিয়েছিলাম, সে গাছগুলোর ফল খুবই সুস্বাদু। ভালোভাবে পাকলে কমলার থেকেও এটি উন্নত। এই জাম্বুরা সিলেটি লোকাল ফল। আমাদের এলাকার পাহাড়ি অঞ্চলে যে জাম্বুরাগুলো হয়– এগুলো কিন্তু খুবই টেস্টি হয়। মাটির একটা বিষয় আছে। সব রকম মাটিতে কিন্তু সব ফল ভালো হয় না। বাগানের মাল্টার সঙ্গে এরও বাণিজ্যিক চিন্তা রয়েছে আমার, বলেন শৌখিন ফলচাষি মুরাদ।

বাংলাদেশ ফলিত পুষ্টি গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট সিলেটের আঞ্চলিক প্রধান (ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা) ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক বাংলানিউজকে বলেন, ১০০ গ্রাম খাদ্যযোগ্য জাম্বুরাতে রয়েছে- খাদ্যশক্তি ৩৮ কিলোক্যালরি, প্রোটিন ০.৫ গ্রাম, স্নেহ ০.৩ গ্রাম এবং শর্করা ৮.৫ গ্রাম, খাদ্যআঁশ ১ গ্রাম, থায়ামিন ০.০৩৪ মিলিগ্রাম, খনিজলবণ ০.২০ গ্রাম, রিবোফ্লেভিন ০.০২৭ মিলিগ্রাম, নিয়াসিন ০.২২ মিলিগ্রাম।  এছাড়াও ভিটামিন বি-২ ০.০৪ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি-৬ ০.০৩৬ মিলিগ্রাম, ভিটামিন-সি ১০৫ মিলিগ্রাম, ক্যারোটিন ১২০ মাইক্রগ্রাম, আয়রন ০.২ মিলিগ্রাম, ক্যালসিয়াম ৩৭ মিলিগ্রাম, ম্যাগনেসিয়াম ৬ মিলিগ্রাম, ম্যাংগানিজ ০.০১৭ মিলিগ্রাম, ফসফরাস ১৭ মিলিগ্রাম, পাটাশিয়াম ২১৬ মিলিগ্রাম এবং সোডিয়াম ১ মিলিগ্রাম রয়েছে।  

জাম্বুর আমাদের সবার পরিচিত অত্যন্ত পুষ্টিসম্পন্ন মৌসুমি ফল। এটি উচ্চ পরিমাণে ভিটামিন-সি এবং ভিটামিন-বি উপাদানের পাশাপাশি বিটা ক্যারোটিন এবং ফলিত এসিডের উৎস। এ উপাদানগুলো গর্ভবতী মায়েদের জন্য উপকারি, বলেন ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক।

বাংলাদেশ সময়: ২১৩৫ ঘণ্টা,  আগস্ট ২১, ২০২০
বিবিবি/এইচএডি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।