ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ মে ২০২৪, ০৫ জিলকদ ১৪৪৫

কৃষি

সিলেটে আবাদেই লক্ষ্যমাত্রা ছাড়াচ্ছে বোরো

নাসির উদ্দিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৫০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩০, ২০১৯
সিলেটে আবাদেই লক্ষ্যমাত্রা ছাড়াচ্ছে বোরো বোরো রোপণ করছেন কৃষকরা, ছবি: বাংলানিউজ

সিলেট: ‘ইবার ঠিক সময়ে ধান লাগাইছি।‘মউলায় দিয়া গেলে ধান ফাইতাম।’ এমন মন্তব্য হাকালুকি হাওরের কৃষক পাপ্পু মিয়ার।

তার মতে, সময়মতো পানি কমে যাওয়াতে জমিতে সময়মতো চাষাবাদ করতে পেরেছেন। তবে আবহাওয়াজনিত দুযোর্গ না থাকলে ফলন ভাল পাওয়ার ক্ষেত্রে আশাবাদী তিনি।



একই হাওরের কৃষক রমজান আলী বলেন, ইবার শীত কম। এরলাগি সকালে জলদি (ভোরবেলা) খামো ‘কাজে’ আইতাম (আসতে) পারছি। ফজরের নামাজের পর পরই কামলা (কাজের লোকজন) লইয়া জমিতে খাম (কাজ) করতাম পারছি, বলেন তিনি।

শুধু হাকালুকি হাওর নয়, বৃহত্তর সিলেটের সব ক’টি হাওরে বোরো রোপণ প্রায় শেষের দিকে বলে জানা গেছে।

হাওরের পানি নেমে যাওয়াতে কৃষকরা দ্রুত জমি চাষাবাদের উপযোগী করে বোরো আবাদ করতে পেরেছেন বলে জানিয়েছেন। তাছাড়া শীতের প্রকোপ কম থাকায় সাত সকালে উঠেই ছুটেছেন বোরো চাষে। বোরো রোপণ করছেন কৃষকরা, ছবি: বাংলানিউজসরেজমিন দেখা গেছে, কৃষকরা দলবেঁধে জমিতে বোরো রোপণ করছেন। লক্ষ্য একটাই, যাতে জমি পড়ে না থাকে। এ জন্য রোজ কামলা (দিনমজুর) লাগিয়ে বোরো চাষাবাদ সেরে নিচ্ছেন।

কৃষকরা জানান, অধিক সংখ্যক জমি হওয়াতে চাষাবাদে ট্রাক্টর ব্যবহার করেছেন তারা। জমিতে মেশিন ও পানি সেচ দিয়ে চারা রোপণের উপযোগী করেছেন। অনেকের জমির পরিমাণ বেশি থাকায় বর্গা চাষিদের দিয়েছেন অর্ধেক ভাগাভাগিতে।

কৃষক শাহজাহান মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, গতবছর ৮ কেদার জমিতে ব্রি-২৮ রোপণ করলেও এবার ১৮ কেদার জমিতে বোরো চাষ করেছেন। আবহাওয়া ভাল থাকলে ফলনও ভাল হবে আশাবাদী তিনি।

কৃষকরা আরো জানান, প্রতিবারের মতো এবারও ধানের জাতের মধ্যে বেশি ব্রি-২৮, ২৯ ও ৪৫, হাইব্রিড এসএলএসএইচ, হীরা জাগরণ, পর্বত জিরা এবং স্থানীয় জাতের মধ্যে খৈয়া, টেপি, গোচি ইত্যাদি রোপণ করা হয়েছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সিলেটের অতিরিক্ত পরিচালক আলতাবুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, এবারও সিলেটে বোরো উৎপাদেনে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে। বোরো চাষে কৃষকরা সফল হলে চাল উৎপাদেনে লক্ষ্যমাত্রাও অর্জন সম্ভব হবে বলেও আশাবাদী তিনি।

কৃষি সম্প্রসারণ সূত্র জানায়, সিলেটের চার জেলায় এবার বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৬৮ হাজার ৫৫৭ হেক্টর। মঙ্গলবার (২৯ জানুয়ারি) পর্যন্ত ৪ লাখ ১৭ হাজার ৩৫৪ হেক্টরে বোরো আবাদ হয়েছে। এরমধ্যে  সিলেটে ৬৯ হাজার ৫৫০ হেক্টর, মৌলভীবাজার ৪০ হাজার ৮৮৫ হেক্টর, হবিগঞ্জে ১ লাখ ৪হাজার ২৮০ হেক্টর এবং সুনামগঞ্জে ২ লাখ ২ হাজার ৬৪৯ হেক্টরে বোরো আবাদ করা হয়েছে। মাঠজুড়ে বোরো ধানক্ষেত, ছবি: বাংলানিউজকৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সংশ্লিষ্টরা জানান, এবার চাল উৎপাদেনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৮ লাখ ৭৭ হাজার ১০৫ মেট্রিক টন। এরমধ্যে সিলেটে ৩ লাখ ১ হাজার ৮৮৯, মৌলভীবাজারে ২ লাখ ৯ হাজার ১৯৯, হবিগঞ্জে ৪ লাখ ৯৫ হাজার ৪৩৫ মেট্রিক টন এবং সুনামগঞ্জে ৮ লাখ ৭০ হাজার ৫৮২ মেট্রিক টন।

অধিদফতরের তথ্য মতে, গতবারে দেরিতে বোরো রোপণ করলেও লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি ফসল বেশি উৎপাদন হয়েছিল। গেলো বছর সিলেট বিভাগে ৪ লাখ ৬৭ হাজার ৫১৪ হেক্টর লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে বোরো আবাদ হয়েছিল ৪ লাখ ৮১ হাজার ৫২১ হেক্টরে।

বাংলাদেশ সময়: ১১৪৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩০, ২০১৯
এনইউ/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।