ঢাকা, শুক্রবার, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

কৃষি

খুলনায় উচ্চ ফলনশীল ব্রি-সরু বালামের বাম্পার ফলন

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫১৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ২, ২০১৬
খুলনায় উচ্চ ফলনশীল ব্রি-সরু বালামের বাম্পার ফলন ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

খুলনা: খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলায় চলতি বোরো মৌসুমে মাঠ পর্যায়ে ব্রিধান-৬৩ বা সরু বালাম ও ব্রি ধান-৫৮ নামে নতুন উচ্চ ফলনশীল দু’টি আধুনিক জাতের ধান চাষ করা হয়েছে।

এই মধ্যে পাক ধরেছে সোনালী ধানে।

আগামী সপ্তাহেই মাঠের পাকা ধান  কাটা সম্ভব হবে বলে আশা করছেন কৃষকরা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর বীজ প্রত্যায়ন এজেন্সি ধানের  নতুন জাত দু’টি মাঠপর্যায়ে চাষের অনুমোদন দিয়েছে। উপজেলার মেছাঘোনা গ্রামের পাশে কার্তিকডাঙ্গা বিলে এ  দুই জাতের ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। এখন ভালোয় ভালোয় ঘরে তুলতে পারলেই হয়।

ব্রি ধান-৬৩ এর বিশেষ বৈশিষ্ট্য প্রসঙ্গে কর্মকর্তারা জানান, এ জাতের ধান থেকে বোরো মৌসুমে প্রিমিয়াম কোয়ালিটির (উচ্চমানের) চাল পাওয়া যাবে, যা বিদেশে রফতানি করা সম্ভব হবে। এ জাতটির চাল সরু ও গুণাগুন বালাম চালের মতো বলে জাতটি সরু বালাম নামে পরিচিত।

জাতটি উচ্চ ফলনশীল, চালের আকার আকৃতি পাকিস্তানি বাসমতির মতো লম্বা ও চিকন। চালে অ্যামাইলোজের পরিমাণ ২৫.০%, প্রোটিনের পরিমাণ ৮.২%, ১০০০টি পুষ্ট ধানের ওজন প্রায় ২২.১ গ্রাম।

এছাড়া ব্রিধান-৫৮ উচ্চ ফলনশীল, চাল মাঝারি লম্বা, ভাত ঝরঝরে। এ জাত দু’টির হেক্টরপ্রতি ফলন ৭ টন থেকে সাড়ে ৭টন।

বাংলাদেশ  ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকতা ও উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের প্রধান তমাল লতা আদিত্য বলেন, বোরো মৌসুমে চাষাবাদের জন্য দুই জাতই উত্তম। এর মধ্যে ব্রি-ধান-৬৩ বা সরু বালাম  বিদেশে রফতানিযোগ্য।

‘এ ধানের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো শীর্ষ থেকে ধান ঝরে পড়ে না। চালের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো রান্নার পর ভাত লম্বায় বাড়ে। এ ধানটি ব্রিধান-২৮ এর মতো একই পরিচর্যায় করা যাবে। ’

তিনি জানান, এ ধান চাষ করে কৃষক অধিক লাভবান হবেন। এ জাতের ধানের গড় জীবনকাল ১৪৮ থেকে ১৫০ দিন ও উপযুক্ত পরিচর্যায় হেক্টরে ৬.৫-৭.০ টন ফলন দিতে সক্ষম।

এছাড়াও ব্রি ধান-৬৩ তে রোগবালাই ও পোকামাকড়ের আক্রমণ প্রচলিত জাতের চেয়ে অনেক কম বলেও জানান এই কর্মকর্তা।

ডুমুরিয়া উপজেলার মেছাঘোনা গ্রামের পাশে কার্তিকডাঙ্গা বিলে ২০১০ সালে যে জমিতে প্রথম ব্রি ধান-৫০ (বাংলামতি) লাগিয়ে দেশব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি হয়। সে ক্ষেতেই লাগানো হয়েছে এই নতুন জাত দু’টি। এ নতুন ধানের জাতের চাষেরও উদ্যোক্তা খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক এস এম আতিয়ার রহমান।

তিনি ব্রি থেকে নতুন ধানের এ জাতগুলোর প্রত্যেকটির পাঁচ কেজি করে বীজ সংগ্রহ করে নিজেদের ৬০শতাংশ জমিতে লাগান।

বাংলানিউজকে আতিয়ার রহমান বলেন, ব্রিধান-৬৩ সরু বালাম ব্যাপক জনপ্রিয়তা পাবে। আগামী ৫-৬ বছরের মধ্যে মিনিকেট এবং ব্রি-ধান ২৮জাতের চালের বাজার দখল করবে এই জাতটি।

‘আর ব্রিধান-৫৮ মাঝারি চিকন এবং এর ফলন ভালো। ভাত ঝরঝরে হওয়ায় তা বিশেষ করে মধ্যবিত্ত ও নিম্ন-মধ্যবিত্তের মধ্যে জনপ্রিয়তা পাবে। ’

স্থানীয় টিপনা গ্রামের কৃষক আকতার হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, নতুন জাতের এ ধান দু’টোর ভালো ফলন দেখে আশ-পাশের গ্রাম থেকে প্রতিদিনই লোক আসছে দেখতে। যে জমিতে এ ধান চাষ করা হয়েছে ২০১০সালে এখানে বাংলামতি ধানের চাষ হয়েছিলো। এরপর আর কোনো ধানে এতো ফলন হয়নি।

‘যখন চারা বীজতলায় ছিলো তখনই বুঝতে পারি এই ধান ভালো হবে,’ যোগ করেন তিনি।

তার ভাষায়, ‘জমিতে রোপনের পর যখন ধানের থোড় আসে তখন গাছ বেশ মোটা হয় এবং কলার মোচার মতো সরু বালামের ধানের শীষ তেমনিভাবে বের হয়ে আসতে দেখে অবাক হই। পাতা উপরে, ধান নিচে এবং ধানের শীষে বেশ লম্বা লম্বা ধান। দূর থেকে বোঝাই যায় না এ ক্ষেতে ধান আছে।

‘আর ব্রিধান-৫৮ এর তো সোনার মতো রঙ। ধানের শীষ সোজা উপরের দিক বের হলো আর ক্ষেত সোনার মতো রঙ হলো। অনেকই এখন এ ধানের ব্যাপারে আগ্রহী, অনেকে দেখতে আসছে ও তারা বীজ নিতে চাচ্ছে। আমরাও ঠিক করেছি বীজ করে এই নতুন ধানের আবাদ ছড়িয়ে দেবো যাতে দ্রুত চাষ বাড়ে। ’ বলেন ক‍ৃষক আকতার হোসেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৫০৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ০২, ২০১৬
এমআরএম/এএটি/এমএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।