ঢাকা, রবিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫

কৃষি

প্রবাসে নয়, দেশেই কপাল খুলেছে মিলটন চাকমার

মঈন উদ্দীন বাপ্পী, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩১৪ ঘণ্টা, আগস্ট ২, ২০২৩
প্রবাসে নয়, দেশেই কপাল খুলেছে মিলটন চাকমার

রাঙামাটি: সংসারে সচ্ছলতা আনতে মানুষ যখন প্রবাস জীবন বেছে নেয়, সেখানে প্রবাস জীবনের ইতি টেনে দেশে ফিরেছেন রাঙামাটির মিলটন চাকমা।

দীর্ঘদিনের প্রবাস জীবনকে বিদায় জানিয়ে নিজ দেশেই সফলতার গল্প রচনা করেছেন তিনি।

রাঙামাটি সদরের সাফছড়ি ইউনিয়নের মধ্যপাড়া এলাকায় নিজের দুই একর জমিতে চার হাজার ড্রাগনের চারা রোপণ করেছেন তিনি।

মিলটন চাকমা জীবনের শুরুতে শ্রীলঙ্কায় এ লেভেল পর্যন্ত লেখাপড়ার পাঠ চুকিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ায় পাড়ি জমান। সেখানে দীর্ঘ আট বছরের পরবাসে তিনি জীবনের হিসেব মেলাতে পারছিলেন না। মনে তার বাসনা জাগে, উদ্যোক্তা হওয়ার এবং বেকারদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করার। সেই বাসনাকে বাস্তবে রূপ দিতে ফিরে আসেন দেশে। উদ্যোক্তা হতে বিভিন্ন সময় ইউটিউবে চোখ রাখেন এবং ড্রাগন চাষে মন স্থির করেন তিনি। আর তাতেই অবশেষে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য পান তিনি।  

তিনি নাটোর জেলায় দুবাই ফেরত বন্ধুর কাছ থেকে ড্রাগনের চারা সংগ্রহ করেন ও পরামর্শ নেন।  

ড্রাগনের পাশাপাশি তিনি আরও ৫০০টি পেয়ারা গাছ এবং ২৫০টি মাল্টা গাছের চারা লাগিয়েছে। এসব গাছের চারা স্থানীয় কৃষি বিভাগ থেকে সংগ্রহ করেছেন তিনি। এরপর তাকে আর পেছনে ফিরে থাকাতে হয়নি। এখন তার শুধুই সফলতার পাঠ রচিত হচ্ছে। তার বাগানে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হযেছে কয়েকজন বেকার যুবকের।

স্থানীয়রা বলছেন, মিলটন ড্রাগন চাষ করে শুধু নিজেই স্বাবলম্বী হননি, তাকে দেখে স্থানীয় অনেক বেকার যুবকও ড্রাগন চাষে উৎসাহী হচ্ছেন।

ড্রাগন বাগানের কর্মচারী কমল জ্যোতি চাকমা বাংলানিউজকে বলেন, মিলটন দাদার বাগান গড়ে তোলার শুরু থেকে আমি আছি। এখানে আমি দেড় বছর ধরে কাজ করছি। এ বাগানটিতে কাজ করতে অনেক ভালো লাগছে।

তিনি আরও বলেন, দেড় বছর ধরে বাগানটি টিকে আছে পরিশ্রমের কারণে। বাগানে কাজ করে নিজের সংসারও চালাচ্ছি।

সাফছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত নারী সদস্য (১, ২, ৩) সুমিত্রা চাকমা বাংলানিউজকে বলেন, মিলটন দাদার বাগানটি দেখে আমি অনেক কিছু শিখেছি। নিজের পরিত্যক্ত জায়গায় ৩০টি ড্রাগন গাছ লাগিয়েছি। ফলনও পাচ্ছি।

এ জনপ্রতিনিধি আরও বলেন, মিলটন দাদার বাগানে যেমন অনেক বেকার ব্যক্তির কর্মসংস্থান হয়েছে, তেমনি তাকে দেখে অনেক বেকার যুবক উদ্যোক্তা হয়েছেন।

পিচ মিশন এগ্রো ফার্মের স্বত্বাধিকারী  ড্রাগন চাষি মিলটন চাকমা বাংলানিউজকে বলেন, আমি ২০২২ সালের শুরুতে ড্রাগনের চাষ শুরু করি। বর্তমানে গড়ে তোলা বাগান থেকে নয় মাসে চারবার ফল বিক্রি করেছি। প্রতিবারে সাতশ থেকে আটশ কেজি ফল বিক্রি করি। প্রতিবার ফল বিক্রি থেকে আয় হয় দেড় থেকে দুই লাখ টাকা। পাশাপাশি অনলাইনে বাগানের উৎপাদিত ফল বিক্রি করা হয়। প্রথম বছরে ৬০-৬৫ ভাগ ফলন পাচ্ছি। পরের বছর থেকে আরও বেশি ফলন পাব বলে আশা করছি।

ড্রাগন বাগানের মালিক আরও বলেন, আমাদের দেশের মাটি সোনার মাটি। এখানে যা ফলানো হয়, তাই ফলে। তাই যারা প্রবাসী জীবন বেছে নিতে চান, তাদের বলব, প্রবাস জীবন অনেক কষ্টের, অনেক ঝুঁকির। বুদ্ধি খাটিয়ে নিজ দেশে অনেক কিছু করা যায়।

সাফছড়ি ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. মশিউর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, মিলটন চাকমা সফলতা দেখিয়েছেন। কৃষি বিভাগ তাকে গুরুত্ব দিয়ে সহযোগিতা করছে।

এ কৃষি কর্মকর্তা আরও বলেন, বর্তমান সরকার কৃষিকে গুরুত্ব দিয়েছে। সরকারের সেই লক্ষ্যকে বাস্তবায়নে আন্তরিকভাবে কাজ করছে কৃষি বিভাগ।

বাংলাদেশ সময়: ১২৩৯ ঘণ্টা, আগস্ট ২, ২০২৩
এসআই


 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।