ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

কৃষি

মধ্যপ্রাচ্যের ত্বিনসহ ৩০ প্রজাতির ফল চাষে সফল সিদ্দিক

শরিফুল ইসলাম, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৩২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৮, ২০২৩
মধ্যপ্রাচ্যের ত্বিনসহ ৩০ প্রজাতির ফল চাষে সফল সিদ্দিক আবু বকর সিদ্দিক ও তার বাগানে হওয়া ত্বিন ফল

ঠাকুরগাঁও: গাছ আর বাগান ছিল সবসময়ের বন্ধু। পড়াশোনার পাশাপাশি অবশিষ্ট সময়ে বিভিন্ন ধরনের গাছ আর বাগানে সময় পার করতেন আবু বক্কর সিদ্দিক।

নিজের একটি ফলের বাগান ছিল সিদ্দিকের স্বপ্ন।

আর পড়াশোনা শেষ করে বাড়িতে ফিরেই সেই স্বপ্ন পূরণ করলেন তিনি। সফলও হয়েছেন। এখন তার নিজ হাতে গড়া বাগানে শোভা পাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের ফল ত্বিন ও দার্জিলিঙের কমলাসহ ৩০ প্রজাতির ফল। নিজেই সফল নন; পাশাপাশি কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করেছে অনেক বেকার যুবকের।  

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের লধাবাড়ি গ্রামের আমিনুর রহমানের ছেলে আবু বক্কর সিদ্দিক। তার এমন এমন উদ্যোগে সফল হওয়ায় সাড়া ফেলেছে জেলাজুড়ে।

দূর-দূরান্ত থেকে সিদ্দিকের বাগান দেখতে আসছেন অনেকে। চারাও কিনে নিয়ে যান কেউ কেউ।

এমন একজন সুবল রায়। তিনি সিদ্দিকের বন্ধুও।  

সুবল বলেন, পড়াশোনার সুবাদে আমি ঢাকায় থাকছি। আজকে তার বাগানে আমার প্রথম আসা হল। বাগানটি দেখার পর আমি অভিভূত হয়েছি।  লেবু, বরই, ত্বীন, আপেল, দার্জিলিং কমলাসহ নানা ধরনের গাছ নিয়ে তার বাগান। সবচেয়ে বড় বিষয় হল প্রায় সবগুলোতে ভালো ফলন এসেছে। এটি আসলে আমাদের বন্ধুমহলের গর্বের বিষয়। তার জন্য সবসময় শুভ কামনা থাকবে।

চারা কিনতে আসা হাফিজুর রহমান বলেন, এর আগেও কয়েকবার আমি এ বাগানে এসেছি। দেখে আমার খুব ভালো লেগেছে। তার এমন সফলতায় আমিও অনুপ্রাণিত হয়ে বাগান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সেজন্য বাগানে ভালো জাতের চারার জন্য এসেছি। আমি ভাইয়ের কাছে কমলা, লেবু ও বরই এর চারা নিতে এসেছি।  

স্থানীয় স্কুল শিক্ষক আসাদুজ্জামান বলেন, সিদ্দিকের এমন উদ্যোগ আসলে প্রশংসনীয়। বিশেষ করে আমি বলব এটি এলাকায় সে একটি চমক সৃষ্টি  করেছে। পড়াশোনার পাশাপাশি মিশ্র ফল বাগান থেকে সে ভালো আয় করছে। সেই সঙ্গে স্থানীয় অনেক বেকার যুবকদের সে কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিয়েছে।

ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. আব্দুল আজিজ বলেন, অধিকাংশ শিক্ষার্থীরা চাকরি নিয়েই ব্যস্ত সময় পার করেন। তার মধ্যে একজন শিক্ষার্থীর এমন উদ্যোগ প্রশংসার দাবি রাখে। আমাদের পক্ষ থেকে তাকে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করা হবে এবং তার সফলতা কামনা করি।

নিজের এই বাগানকে আরও বড় পরিসরে নিয়ে যাওয়ার প্রত্যাশা সিদ্দিকের।  

এ বিষয়ে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, শখ ছিল একটা বড় বাগান করব। গ্রাম থেকে শহরে গিয়ে দেখি মানুষ ছাঁদেও বাগান করছে। এতে করে আমার আগ্রহ আরো বেড়ে যায়। আমি পড়াশোনার পাশাপাশি অবসর সময়কে কাজে লাগিয়ে বাগানের কাজ শুরু করি। আট মাস হতে না হতেই আমি লক্ষাধিক টাকা আয় করেছি। আগামী রমজান মাসে চার লাখ পিস লেবু বিক্রি করব বলে আশা করছি। আলাদা ফল ও বিক্রি করেছি কয়েকবার। পাশাপাশি আমার বাগানে ত্বীনফল, কমলা, বরই, ড্রাগন, সজনা, আপেল, লেবুসহ ৩০ প্রজাতির ফলের গাছ রয়েছে। যেগুলোর মধ্যে কিছুর গাছের ফল আমি ইতিমধ্যে বিক্রি শুরু করেছি।  

তিনি আরও বলেন, আমরা সবাই চাকরি নিয়ে পরে থাকলে সফল হতে পারব না। পড়াশোনার পাশাপাশি কিছু উদ্যোগ নিয়ে শুরু করলেই সফল হওয়া যায় বলে আমি বিশ্বাস করি। এ ছাড়াও আমি দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে চারা নিয়ে এসে এ বাগানটি করেছি। কেউ যদি বাগান করতে আগ্রহী হয়ে থাকে অবশ্যই তাকে আমি সহযোগিতা করব। আমি আরও জায়গা প্রস্তুত করছি আমার বাগানের পরিধি বাড়ানোর জন্য। এতে করে আমি আরো আয় বাড়ানোর পাশাপাশি অধিক মানুষের কর্মসংস্থান ঘটবে।

বাড়ির পাশে ভাউলারহাট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি শেষ করে রংপুর কারমাইকেল কলেজ থেকে এইচএসসি ও ম্যানেজম্যান্ট বিভাগে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করেছেন সিদ্দিক। বাগান করার পাশাপাশি বর্তমানে বিসিএসের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন।  

বাংলাদেশ সময়: ১৭২০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৮, ২০২৩
এসএএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।