ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

বাংলার প্রাণের কাছে

স্বর্গ আসিয়া দাঁড়ায় তখন আমাদেরই কুঁড়েঘরে

মাহবুব আলম, সিনিয়র নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৪৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২০, ২০১৬
স্বর্গ আসিয়া দাঁড়ায় তখন আমাদেরই কুঁড়েঘরে ছবি: নূর / বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

কাকিনা (লালমনিরহাট) ঘুরে: ‘কোথায় স্বর্গ কোথায় নরক/ কে বলে তা বহুদূর/ মানুষের মাঝে স্বর্গ-নরক/ মানুষেতে সুরাসুর... প্রীতি ও প্রেমের পূণ্য বাঁধনে যবে মিলি পরস্পরে/ স্বর্গ আসিয়া দাঁড়ায় তখন আমাদেরই কুঁড়েঘরে’ চরণগুলো পড়লেই মনে ভাসে শেখ ফজলল করিমের কথা।  

সমসাময়িক ঘটনা, চিন্তা-চেতনা, ধর্ম-দর্শন, সাম্প্রদায়িক বিরোধ, সমাজ-সংস্কার, নারী শিক্ষাসহ সমাজ পরিবর্তনের উপদেশমূলক লেখনি দিয়ে বাঙালির মনে চিরভাস্বর এ নীতিবাদী সাহিত্যিক।

তবে জন্মভূমিতে অযত্ন আর অবহেলায় ধ্বংস হতে চলেছে কবির স্মৃতিচিহ্ন। পারিবারিকভাবে নানা চেষ্টার কথা জান‍া গেলেও তার স্মৃতি সংরক্ষণে সরকারি কোনো ইচ্ছা বা উদ্যোগ নেই বলে জানালেন তার বংশধরেরা।

লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার কাকিনাতেই শেখ ফজলল করিমের গ্রাম, রয়েছে তার স্মৃতি বিজড়িত বাড়িটি। তবে কালের পরিক্রমায় তা কয়েকবার সংস্কার করা হয়েছে।

কবির নাতি ওয়াহিদুন্নবী বাংলানিউজকে জানান, কবির ব্যবহার্য বিভিন্ন তৈজসপত্র সংরক্ষণ করা আছে। ঘরটিও সাবেক কাঠামো ঠিক রেখে সংস্কার করা হয়েছে।

‘কিন্তু এক্ষেত্রে সরকারের কোনো ইচ্ছা বা আগ্রহ দেখা যায়নি। ’

লালমনিরহাট-বুড়িমারী সড়ক থেকে মিনিট পাঁচেক হাঁটা দূরত্বের পর বিশাল পুকুরের পাশেই কবি বাড়ি। কারুকার্যময় নকশায় তৈরি কবির ঘরের সামনেই তার কবর।

ঘরটি দেখিয়ে ওয়াহিদুন্নবী জানান, এই ঘরেই কেটেছে কবির জীবন। এখানে বসেই তিনি তার কাব্য সৃষ্টি করেছেন।

তবে ঘরটি সংস্কার করা হচ্ছে বলে কবির ব্যবহার্য জিনিসপত্র গুছিয়ে রাখা হয়েছে। তাই কিছ‍ুই দেখা যায়নি।

সংরক্ষণে রয়েছে, কবির ব্যবহৃত চেয়ার, খাট ও একটি গ্রামোফোন। রয়েছে একটি কাঁচের শোকেস। সেখানে কবির ব্যবহৃত টুপি, দোয়াত-কলম,  কোরআন শরীফ, ম্যাগনিফাইং গ্লাস ও কিছু বোতাম।

‘পারিবারিকভাবেই কবির স্মৃতি ধরে রাখতে চেষ্টা করছি। দেশি-বিদেশি অনেকেই আসে এখানে। সংস্কৃতি মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরও এসেছেন, তবে সরকারের পক্ষ থেকে কবির স্মৃতি রক্ষার্থে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি,’ বলেন ওয়াহিদুন্নবী।

বাংলাপিডিয়া বলছে, গৃহশিক্ষকের কাছে বাল্যশিক্ষা নেওয়ার পর রংপুরে উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হন শেখ ফজলল করিম। কিন্তু পাঠ চুকিয়ে ১৯০১ সালে স্থানীয় জুট ফার্মে চাকরি নেন।

কিন্তু পরবর্তীতে চাকরিতে ইস্তফা দিয়ে নিজ গ্রামে প্রতিষ্ঠা করেন ‘শাহাবিয়া প্রিন্টিং ওয়ার্কস’। গড়ে তুলেন করিমস আহামদিয়া লাইব্রেরি, যদিও এখন এর চিহ্ন পাওয়া যায়নি।


জীবদ্দশায় কবির  মোট ৫৫টি গ্রন্থের কথা জানা গেলেও সংরক্ষণের অভাবে এর অনেকগুলোরই এখন আর হদিস মেলেনি।

এদিকে ২০০৫ সালে কাকিনায় ‘ফজলল করিম স্মৃতি পাঠাগার’ প্রতিষ্ঠিত হলেও এখন এর কার্যক্রম নেই। পাঠাগারের প্রবেশ পথের সামনে ময়লা-আবর্জনার স্তুপও দেখা গেছে।

আরও পড়ুন: ‘আমার ভাইধন রে কইয়ো, নাইওর নিতো বইলা’

পাঠাগারের তত্ত্বাবধায়ক বাংলানিউজকে বলেন, এখানে প্রতিদিন তিন-চারটা পেপার থাকতো, স্থানীয় অনেক সুধীজন তা পড়তে আসতেন। অনেকে বই নিয়ে যেতেন, পড়া শেষ হলে ফেরত দিতেন। কিন্তু গত তিনমাস ধরে তা বন্ধ।

‘নিয়মিত কবির মৃত্যুবার্ষিকী ও জন্মদিন পালন করা হতো। কিন্তু কমিটির অনীহার কারণে কোনো কার্যক্রম নেই। আমিও কোনো বেতন ভাতা পাইনি। ’ 

শেখ ফজলল করিমের নামে লালমনিরহাট সদরে একটি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় রয়েছে। যেখানে তার জন্ম বা মৃত্যুবার্ষিকী পালিত হয় না। তাই ‘কোথায় স্বর্গ, কোথায় নরক’ আওড়ালেও এ প্রজন্মের অনেকেই চেনে না নীতিবাদী কবি শেখ ফজলল করিমকে।  

**সম্ভাবনার বাংলাবান্ধায় দুর্ভোগ

সাহিত্য ক্ষেত্রে অবদানের জন্য যাকে ১৯১৬ সালে সাহিত্যবিশারদ উপাধি দেয় নদীয়া সাহিত্য সভা। জীবদ্দশায় পেয়েছিলেন কাব্যরত্নাকর উপাধিও।

বাংলাদেশ সময়: ২১৪৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০১৬
এমএ/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

বাংলার প্রাণের কাছে এর সর্বশেষ