ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

বাংলার প্রাণের কাছে

‘নিজ সংস্কৃতি নিয়ে হীনমণ্যতা বিলুপ্তির কারণ’

মাহবুব আলম, সিনিয়র নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪০৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৪, ২০১৬
‘নিজ সংস্কৃতি নিয়ে হীনমণ্যতা বিলুপ্তির কারণ’ ছবি: নূর-বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

কুড়িগ্রাম ঘুরে: অনেকে নিজেদের সংস্কৃতিকে নিয়ে হীনমণ্যতায় ভুগে এটা মুর্খ মানুষের গান বলে। ভদ্র সমাজে এটাই গাইলে প্রেস্টিজ থাকবে না! অথচ এটাই যে শেখড়ের গান সেটাই বোঝে না।

আবহমান গ্রাম বাঙলার লোকজ সংস্কৃতির বিলুপ্তি নিয়ে এভাবেই বলছিলেন কুড়িগ্রামের উলিপুরের বাংলাদেশ ভাওয়াইয়া একাডেমি পরিচালক ভূপতি ভূষণ বর্মা।

যিনি নিজেও একজন বাংলাদেশের নাম করা ভাওয়াইয়া শিল্পী। ভাওয়াইয়া গান নিয়ে তার বেশ কয়েকটি অ্যালবামও বের হয়েছে।

ভাওয়াইয়াসহ লোকজ সংস্কৃতি সংরক্ষণে নিত্যপ্রাণ মানুষটি ১৯৯৩ সালে গড়ে তুলেন ভাওয়াইয়া একাডেমি। নতুন প্রজন্মকে আকৃষ্ট করতে এখানে শিখিয়ে যাচ্ছেন ভাওয়াইয়াসহ ঢোল,দোতরা,বাঁশিসহ বিভিন্ন দেশীয় বাদ্যের ব্যবহার।

বললেন, কুড়িগ্রামসহ উত্তরাঞ্চলের মানুষ নিজেদের সংস্কৃতি প্রসারে আগ্রহ দেখায় না। সরকারেরও পৃষ্টপোষকতার অভাব রয়েছে। এছাড়া সাংগঠনিক তৎপরতা ও অদক্ষতার অভাবে হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী লোকজ-সংস্কৃতি।

‘ভাওয়াইয়ার মূল বাদ্য দোতরা, তখন এতো বাদ্যের সমাহার ছিলো না। কিন্তু এখন সংগীতের ক্ষেত্রে অনেক অ্যাডভান্স হয়েচে। পরিবেশনের সংখ্যা ও মান বেড়েছে। বেড়েছে শ্রোতার সংখ্যা। ’
 
কিন্তু আকাশ সংস্কৃতির কারণে দেশীয় গানের প্রতি ভালোবাসা ও মর্মবোধ কমে গেছে। এসবে যদিও প্রাণ নেই। এরজন্যে অবশ্য আমরাও দায়ী,’ বলেন বাংলাদেশ টেলিবিশন ও বেতারের এই শিল্পী।

লোকজ সংস্কৃতির প্রচারের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, শিশুদের আগ্রহী করে তুলতে প্রতিষ্ঠার পর থেকে একাডিমে বাচ্চাদের গান-বাদ্য বাজানো মেখানো হচ্ছে।

নতুন প্রজন্মকে সংস্কৃতি চচায় আগ্রহী করে তুলতে বিভিন্ন কর্মশালা প্রয়োজন। যা ভারতের বিভিন্ন এলাকায় হয়। সেখানে প্রতিবছরই বিচারক হিসেবে ডাক পড়ে বলে জানালেন এই ভাওয়াইয়া গবেষক।
 
নিজেদের সংস্কৃতি ধরে রাখতে সরকারের পৃষ্টপোষকতার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, একাডেমি থেকে কোথাও গেলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি কোনো সম্মানী নেওয়া হবে না। সরকারেরও উচিৎ উৎসব অনুষ্ঠান আয়োজনে পৃষ্টপোষকতা দেওয়া।

বর্তমানে অভিভাবক ও ছেলে-মেয়েদের নিজ সংস্কৃতির প্রতি তেমন আগ্রহ নেই উল্লেখ করে স্থানীয় স্কুলের এ সহকারী প্রধান শিক্ষক বলেন, নতুন প্রজন্ম সাহিত্য-সংস্কৃতির প্রতি মূল্যবোধ হারাচ্ছে। সবচেয়ে বড় কথা হলো অভিভাবকরা সংস্কৃতি বিমূখ, শুধু ভালো ফল ফল।

‘পাশাপাশি সংস্কৃতি কিংবা খেলাধুলারও যে ডিমান্ড আছে তা তা বোঝার চেষ্টা করেন না। এজন্য আমরা শিক্ষকিরাও দায়ী। সবাই ডাক্তার হবে না, কেউ ম্যারা ডোনা হবে, আব্বাস উদ্দিনও হতে পারে কেউ। ’

কৃষিভিত্তিক উত্তরাঞ্চলের মানুষ গুনগুনিয়ে ভাওয়াইয়াই গায়। আগে সন্ধ্যায় কোনো খোলা জায়গায় বা ঘরে ভাওয়াইয়া গানের আডডা বসতো। কিন্তু মোবাইল-টেলিবিশনে বসে বিনোদন উপভোগ করছেন তারা।

তাই ‘জৌলুসহীন’ দেশীয় সংস্কৃতির প্রতি উদাসীন শ্রোতা। তবে নিয়মিত অনুষ্ঠান হলে দর্শকের কমতি হতো না।

ভূপতি ভূষণ বলেন, গুরুমুখী বিদ্যায় ২০-৩০ গান শেখে। তবে কেউ পয়সা খরচ করে কোনো শিল্পীর ক্যাসেট করার সামর্থ্য নেই।

‘এছাড়া তাদের ধারণা থাকে-আঞ্চলিক গান কেউ শোনবে। তাই রেডিও-টেলিভিশনে গেয়ে আসা। ’

ভাওয়াইয়া এখন ভালোভাবে শেখেও না অনেকে। আঞ্চলিক গানগুলোর কোনো ক্যাসেট বা সিডিও সংরক্ষিত নেই কোথাও।

বাদ্যযন্ত্র বিষয়ে তিনি বলেন, বর্তমান প্রজন্ম দোতরা শেখে না, এটা তাদের কাছে ফকিরি বা না খাওয়া মানুষের যন্ত্র। অথচ পশ্চিম বঙ্গে এ যন্ত্রটা অনেক আদরের,এজন্য সরকারসহ সংশ্লিষ্ট সবার পৃষ্পপোষকতা দরকার।

‘এক্ষেত্রে বিখ্যাত ব্যক্তিদের জন্ম মৃত্যু পালন করা দরকার। প্রয়োজন বিভিন্ন উৎসব আয়োজনের। কেননা চাঁদা ব্যক্তি উদ্যোগে করলেও একটা সময় আগ্রহ থাকে না। ’

নতুন ভাওয়াইগা গগান রেখা প্রসেোগ ভুপতি ভূষণ বলেন, মূল ভাওয়াইয়ার সুর আব্বাস উদ্দিনের ৪০-৫০ টা গান। এগুলোই আমাদের অবলম্বন। এখান থেকেই ভেঙে ভেঙে নতুন সুর ও গান লেখা হচ্ছে।

ভাওয়াইয়ার সম্রাট আব্বাস উদ্দিনের গান ছাড়াও উত্তরাঞ্চলে কছিম উদ্দিন, রবীন্দ্রনাথ মিশ্রসহ আরও অনেকে অসংখ্য গান রয়েছে উত্তর জনপদের সংস্কৃতির ভাণ্ডারে।

বাংলাদেশ সময়: ০৪০০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৪, ২০১৬
এমএ/

** দাড়িয়াবান্ধা নেই, বিলুপ্ত বৌচি
** লোকজ সংস্কৃতিতে চলে পানের আপ্যায়ন
** বাদল দিনে নেই বৃষ্টির খনা
** বাহে শোন মোর ভাওয়াইয়া গান
** ‘আয়সাই আব্বাস গাইলেন হাঁকাও গাড়ি চিলমারী’
** আহা! সেকি সুর শিরিষের সারিন্দায়! (ভিডিও)
** হাঁকাও গাড়ি তুই চিলমারীর বন্দর এ রে...
** বাংলার প্রাণের কাছে বাংলানিউজ, সঙ্গী হোন আপনিও
** শেকড়ের সন্ধানে উত্তর জনপদে বাংলানিউজের মাহবুব ও নূর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

বাংলার প্রাণের কাছে এর সর্বশেষ

welcome-ad