ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

স্বাস্থ্য

ওজন কমাতে লেবু-মধু পানীয়

ডা. মালিহা শিফা | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২০৭ ঘণ্টা, মার্চ ২১, ২০১২
ওজন কমাতে লেবু-মধু পানীয়

ঢাকা : ওজন কমাতে আমরা যেন অনেকে একটু বেশিই সচেতন। তবে ওজন বাড়ানোর সময় এ বিষয়টি খুব কম লোকেরই খেয়াল থাকে।

তাই মনে রাখা ভালো ওজন কমানোর চেয়ে ওজন না বাড়ানোই ভালো।

ওজন কমাতে আমরা চা, ওজন কমানোর ওষুধ কিংবা ব্যায়ামও করে থাকি। তবে চা এবং ওজন কমানোর ওষুধে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকতে পারে।

তবে ওজন কমাতে প্রাকৃতিক উপাদান মধু ও লেবু কার্যকরী। তা পরীক্ষিত এবং সারা বিশ্বে সমাদৃত ও স্বীকৃত। ওজন কমাতে দু’টি প্রাকৃতিক উপাদান লেবু ও মধুর পানীয় সম্পর্কে অনেকেই জানেন। ওজন কমানো ছাড়াও লেবু ও মধুর অনেক গুণাগুণ আছে।

মধু কীভাবে ওজন কমায় :


মধুতে যদিও চিনি থাকে, কিন্তু এতে ভিটামিন ও মিনারেল থাকার কারণে এটি সাধারণ চিনির মতো ওজন না বাড়িয়ে বরং কমায়। কারণ সাধারণ চিনি হজম করতে আমাদের শরীর নিজের থেকে ভিটামিন ও মিনারেল খরচ করে, ফলে এসব পুষ্টি উপাদানের ঘাটতি হয়। এসব উপাদান ফ্যাট ও কোলেস্টেরল কমাতে বা ভাঙতে সাহায্য করে। ফলে যখন আমরা বেশি চিনি খাই, তখন অধিক ক্যালরি শরীরে জমা ছাড়াও এসব পুষ্টি উপাদানের চিনি হজম করতে অতিরিক্ত খরচ হওয়ায় পুষ্টি উপাদানের ঘাটতি হয়। তাই ওজন বাড়াতে পারে।

কিন্তু মধুতে এসব উপাদান থাকার ফলে এগুলো হজমে সহায়ক এবং ফ্যাট ও কোলেস্টেরল কমায়। তাই এই পানীয় ওজন কমায়।

তাছাড়া সকালে উঠেই শরীর যদি পানি জাতীয় কিছু পায়, তবে তা হজম শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। ফলে একই রকম শারীরিক পরিশ্রম করেও আপনার হজম শক্তি বৃদ্ধির কারণে ওজন কমতে পারে।

লেবু-মধু পানীয় বানানোর প্রণালি :
এক গ্লাস হালকা বা কুসুম গরম পানি, আধা চা চামচ লেবুর রস, এক চা চামচ মধু। গরম পানিতে লেবু ও মধু মিশিয়ে পান করুন লেবু-মধু পানীয়। আপনি চাইলে এর সঙ্গে সবুজ চা মেশাতে পারেন।

যা লক্ষ্য রাখবেন :
-আগে পানি হালকা গরম করে তারপর লেবু ও মধু মেশাবেন। মধু কখনও গরম করতে যাবেন না।

-যদি ঠাণ্ডা পানিতে এটি পান করেন, তবে বিপরীত ফল হবে। মানে আপনার ওজন বাড়বে।

লেবু-মধু পানীয়ের উপকারিতা :
-এই পানীয় শরীর থেকে টক্সিন বের করে দেয়। শরীরের ভেতরের নালিগুলোর সব ময়লা বের করে দেয়।

-মেটাবলিজম বা হজম শক্তি বাড়ায়, ফলে ওজন কমে।

-ঠাণ্ডা লাগলে এই পানীয় কফ বের করতে সাহায্য করে এবং ঠাণ্ডা লাগলে গলাব্যথা করলেও এটি উপকারী।

-এটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

-শরীরে শক্তি বাড়ায়, অলসতা কমায়।

-কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।

কখন খাবেন :
সাধারণত সকালে উঠেই প্রথম পানীয় হিসেবে খালি পেটে এটি খাওয়া হয়। এর কিছুক্ষণ পরে সকালের নাস্তায় খেতে পারেন।

মধুর উপকারিতা :
•    মধুতে গ্লুকোজ ও ফ্রুকটোজ আলাদাভাবে থাকে, কিন্তু চিনিতে তা একসঙ্গে থাকে। ফ্রুকটোজ তাড়াতাড়ি গ্লুকোজের মতো শরীরে ক্যালরি হিসেবে জমা হয় না। তাই চিনির মতো মধু সহজে ক্যালরি জমা করে না। ফলে অল্প মধু খেলেও ওজন বাড়ার সম্ভাবনা কম।
-মধু শরীরকে রিলাক্স করে, মনকে প্রফুল্ল রাখতে সাহায্য করে এবং সহজে ঘুমিয়ে পড়া যায়।
•    মধু প্রাকৃতিক এন্টিবায়োটিক হিসেবে পরিচিত। যা শরীরের সব ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়াকে মেরে ফেলে ইনফেকশন দূর করে। ফলে শরীরের কাজ করার প্রণালিগুলো উন্নত হয় এবং মানুষ সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হয়।
•    মধু হজমে সহায়ক। তাই বেশি খাবার খাওয়ার পরে অল্প মধু খেতে পারেন।
•    মধু ফ্যাট কমায়, ফলে ওজন কমে।
•    মধু প্রাকৃতিকভাবেই মিষ্টি। তাই মধু সহজে হজম হয়।
•    চোখের জন্য ভালো।
•    গলার স্বর সুন্দর করে।
•    শরীরের ক্ষত দ্রুত সারায়।
•    আলসার সারাতে সাহায্য করে।
•    নালীগুলো পরিষ্কার করে।
•    ঠাণ্ডা লাগলে জ্বর, গলাব্যথায় ভালো ওষুধ হিসেবে কাজ করে।
•    মধু এন্টি অক্সিডেন্ট, যা ত্বকের রং ও ত্বক সুন্দর করে। ত্বকের ভাঁজ পড়া ও বুড়িয়ে যাওয়া রোধ করে।
•    বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশ ঘটাতে সাহায্য করে।
•    শরীরের সামগ্রিক শক্তি বাড়ায় ও তারুণ্য বাড়ায়।

লেবুর উপকারিতা :
•    লেবুতে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, যা এন্টিসেপটিক ও ঠাণ্ডা লাগা প্রতিরোধ করে।
•    লেবুর এই উপাদানগুলো টনসিল প্রতিরোধ করে।
•    এছাড়া লেবুর ভিটামিন সি ক্যান্সারের সেল গঠন প্রতিরোধ করে।
•    লেবু বুক জ্বালা প্রতিরোধ করতে ও আলসার সারাতে সাহায্য করে।
•    লেবু আর্থাইটিস রোগীদের জন্য ভালো।
•    লেবু শরীরের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়াগুলোকে ধ্বংস করে।
•    লেবু এন্টিঅক্সিডেন্ট। তাই ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধির পাশাপাশি ত্বক পরিষ্কার রাখে। ত্বকের বুড়িয়ে যাওয়া রোধ করে।
•    কালোদাগ ও ত্বকের ভাঁজ পড়া কমায়।
•    লেবু ওজন কমাতে সাহায্য করে।
•    লেবু হজমে সহায়ক ও হজমের সমস্যা দূর করে।
•    কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
•    শরীরের ভেতরের টক্সিন দূর করে, অন্ত্রনালী, লিভার ও পুরো শরীরকে পরিষ্কার রাখে।
•    পেট ফোলাজনিত সমস্যা কমায়।
•    রক্ত পরিশোধন করে।
•    ঠাণ্ডা লাগলে জ্বর, গলাব্যথায় ভালো ওষুধ হিসেবে কাজ করে।
•    শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি হলে ভালো কাজ করে।
•    শ্বাসনালীর ও গলার ইনফেকশন সারাতে সাহায্য করে।



সাবধানতা :
যাদের গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা আছে তারা অবশ্যই এটি খালি পেটে খাবেন না। কারণ লেবু এসিটিক। তাই ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করে এটি খাবেন।

তাছাড়া লেবুর এসিড দাঁতের এনামেলের জন্য ক্ষতিকর, তাই এই পানীয় খাবার সঙ্গে সঙ্গে কুলি করবেন অথবা পানি খাবেন।

একটা কথা মনে রাখবেন, ওজন কমানোর জন্য এই পানীয় শুধুই সহায়কমাত্র। সম্পূর্ণ ওজন কমানোর প্রক্রিয়াতে অবশ্যই থাকতে হবে স্বাস্থ্যকর খাবার, নিয়মিত শরীর চর্চা এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা।

লেখক : ডা. মালিহা শিফা, কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স কর্মকর্তা, মেরি স্টোপস

বাংলাদেশ সময় : ১২০২ ঘণ্টা, মার্চ ২১, ২০১২

সম্পদনা: তানিয়া আফরিন, হেলথ এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।