ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

স্বাস্থ্য

করোনা রোগীদের সেবায় নিবেদিতপ্রাণ রামেক হাসপাতাল পরিচালক

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯০৪ ঘণ্টা, জুলাই ২৯, ২০২১
করোনা রোগীদের সেবায় নিবেদিতপ্রাণ রামেক হাসপাতাল পরিচালক

রাজশাহী: মহামারি করোনা ভাইরাসে এখন বিপর্যস্ত গোটা বিশ্ব। দেশে প্রায় প্রতিদিনই করোনায় কেড়ে নিচ্ছে দুই শতাধিক মানুষের প্রাণ।

করোনা রোগীদের চিকিৎসাসেবা নিয়ে নানা ধরনের অভিযোগ থাকলেও এরইমধ্যে আক্রান্তদের সুস্থ করতে গিয়ে না ফেরার দেশে চলে গেছেন অনেক চিকিৎসক। স্বাস্থ্যসেবার নানা অপ্রতুলতার মধ্যেও দিন-রাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন তারা।

প্রাণঘাতী করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। তাদের পেছন থেকে শক্তি ও সাহস যোগাচ্ছেন কেউ কেউ। এমনই একজন করোনাযোদ্ধা রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম ইয়াজদানী। যোগদানের পর থেকে করোনা রোগীদের চিকিৎসাসেবা নিরবচ্ছিন্ন রাখতে অবিরাম চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এরইমধ্যে সেবা ব্যবস্থাপনায় স্থাপন করেছেন অনন্য দৃষ্টান্ত। রোগীদের জন্য হয়ে উঠেছেন নিবোদিতপ্রাণ।

রামেক হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বর্তমানে এ হাসপাতালে মোট রোগীর প্রায় ৪০ শতাংশের ওপরে করোনা রোগী। গড়ে প্রতিদিন ১০০ জন করে করোনা রোগী আসছেন চিকিৎসা নিতে।

তবে শারীরিক পরিস্থিতি বিবেচনায় গড়ে ৪০ থেকে ৫০ জন করে ভর্তি করা হচ্ছে। উপসর্গ না থাকলে বাকিদের চিকিৎসাপত্র দিয়ে পাঠানো হচ্ছে বাড়িতে। করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসা নিশ্চিতে দীর্ঘ সময় ধরে নিরলসভাবে কাজ করছেন হাসপাতালের ৬৯৬ জনের করোনা প্রতিরোধ টিম।

করোনা আক্রান্ত বিপুলসংখ্যক রোগীকে সামলাচ্ছেন হাসপাতালের কর্মকর্তা, চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী, নার্স, আয়া, সাধারণ ও সহায়ক কর্মচারীরা। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরুর পর একদিকে বেড়েছে কাজের চাপ, অন্যদিকে বেড়েছে আতঙ্ক। এমন পরিস্থিতিতে হাসপাতালের করোনা ইউনিটে দায়িত্ব পালন করতে অনেকেই অনাগ্রহ প্রকাশ করছেন। যারা করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন তারাও এ ইউনিট থেকে দূরে থাকতে চান। তাই হরহামেশাই দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগও উঠছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক রোগী ও তাদের স্বজনরা জানান, হাসপাতালের আইসিইউ ছাড়া করোনা ওয়ার্ডে ডাক্তারের দেখা খুবই কম পাওয়া যায়। দু’বারের বেশি ডাক্তারের দেখা পাওয়া যায় না বললেই চলে। ওয়ার্ডে ডাক্তার ও নার্সদের জন্য আলাদা রুম আছে। প্রয়োজন ছাড়া তারা বাইরে আসেন না।

করোনা ইউনিটে দায়িত্ব না দিতে নানা অজুহাতে রামেক হাসপাতাল পরিচালকের কাছেও একাধিক আবেদনও পড়ছে। একদিকে জনবল সঙ্কট, অন্যদিকে চিকিৎসক-নার্সসহ কর্মচারীদের কাজ করতে অনাগ্রহ-এমন অবস্থায় কর্মীদের মধ্যে আস্থা ও সাহস ফিরিয়ে আনতে শুরু থেকেই সক্রিয় ভূমিকা পালন করছেন হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী।

পরিচালক নিজে প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যা হাসপাতালের পুরো ওয়ার্ড ঘুরে রোগীদের সঙ্গে কথা বলছেন। রোগীদের সমস্যার কথা শুনে তা সামধানের জন্য তাৎক্ষণিকভাবে নির্দেশ দিচ্ছেন। ডাক্তার-নার্সসহ চিকিৎসা সংশ্লিষ্টদের বিভিন্নভাবে পুরস্কৃতের মাধ্যমে অনুপ্রাণিত করছেন। তিনি দক্ষতা, মানবিকতা ও আন্তরিকতার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করে রাজশাহী অঞ্চলের মানুষের বিপুল প্রশংসা পাচ্ছেন।

হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত বাবাকে নিয়ে এসেছিলেন গোদাগাড়ীর আজমল হোসেন। হাসপাতালের পরিচালক প্রতিদিন ওই ওয়ার্ডে গিয়ে তার বাবা ও রোগীদের খোঁজ-খবর নেন। এজন্য তিনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, করোনার এ উচ্চ ঝুঁকির মধ্যেও পরিচালক দু’বেলা নিয়মিত সব করোনা ওয়ার্ড পরিদর্শন করেন। নিজেই রোগী ও স্বজনদের সঙ্গে কথা বলেন। রোগীর চিকিৎসা ফাইল খুঁটিয়ে দেখেন। রোগীদের সমস্যা থাকলে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন। এজন্য আমরা তার কাছে কৃতজ্ঞ।  

জানতে চাইলে করোনাযোদ্ধা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী বলেন, দায়িত্ব পালন মানে শুধু অফিসের চেয়ারে বসে থাকা নয়, অদৃশ্য শক্রর বিরুদ্ধে একটা বিরাট যুদ্ধ চলছে। বিরতিহীন এ যুদ্ধ। এক মিনিটের জন্য অক্সিজেন সরবরাহে বিঘ্ন ঘটলে প্রাণহানি হতে পারে। এ কারণে দায়িত্ব পালনে রাত-দিন বলে আমাদের কিছু নেই। আমাদের টিম প্রতিনিয়ত করোনার বিরুদ্ধে লড়ে যাচ্ছে। আমরা সবার দোয়া ও সহযোগিতা চাই। একদিন এ যুদ্ধে আমরা জিতবই ইনশাল্লাহ।

তিনি আরও বলেন, হাসপাতালের অনেকেই বিভিন্ন অজুহাতে কিছুদিন পরপর ছুটি দাবি করেন। এমন ছোটখাট অজুহাতে তো তাদের ছুটি দেওয়া যায় না। তবে এমন পরিস্থিতিতে অনেকেই আতঙ্কিত। সুনির্দিষ্ট গুরুতর কোনো কারণ থাকলে তাকে ছুটি দিতে হচ্ছে। তবে যারা আতঙ্কিত তাদের বিভিন্নভাবে অনুপ্রাণিত করা হচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন হাসপাতাল পরিচালক।

বাংলাদেশ সময়: ১৯০২ ঘণ্টা, জুলাই ২৯, ২০২১
এসএস/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।