ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

স্বাস্থ্য

ঘরে ঘরে করোনা উপসর্গ, নমুনা পরীক্ষায় অনীহা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৪৮ ঘণ্টা, জুন ২৫, ২০২১
ঘরে ঘরে করোনা উপসর্গ, নমুনা পরীক্ষায় অনীহা

রাজশাহী: রাজশাহীতে প্রতিনিয়ত বাড়ছে করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার। রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত ও উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া রোগীদের অধিকাংশই রাজশাহীর।

প্রতিদিন ভর্তি ও মৃত্যুর তালিকাতেও রাজশাহীর রোগীই বেশি।  

রামেক হাসপাতালের করোনা ইউনিটে গেল ২৪ ঘণ্টায় আরও ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। মৃত ১৪ জনের মধ্যে পাঁচজন করোনা পজিটিভ ছিলেন। আর নয়জনই ভর্তি ছিলেন করোনার উপসর্গ নিয়ে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাদের মৃত্যু হয়েছে। আর মৃতদের মধ্যে ছয়জনই রাজশাহী জেলার অধিবাসী। বর্তমানে জেলায় শনাক্তের হার ৩০ এর ঘরে ওঠানামা করছে। গত বৃহস্পতিবার (২৫ জুন) রাজশাহীর দু’টি পিসিআর ল্যাবে জেলার ৪০০টি নমুনা পরীক্ষায় ১১৯ জনের করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়। রাজশাহীতে শনাক্তের হার ২৯ দশমিক ৭৫ শতাংশ। নওগাঁর ১৬০ নমুনা পরীক্ষায় ৬১ জনের পজিটিভ আসে। শনাক্ত হার ৩৮ দশমিক ১৩ শতাংশ।

উদ্ভূত পরিস্থিতে রাজশাহী সিটি করপোরেশনসহ আশপাশের উপজেলা ও গ্রামাঞ্চলে এখন ঘরে ঘরে দেখা দিচ্ছে জ্বর, সর্দি-কাশি, গলা ব্যথার মতো উপসর্গ। ফলে কোনটি করোনা আর কোনটি সাধারণ বর্ষার সাধারণ মৌসুমি উপসর্গ তা এখন ঠিক করে বুঝে উঠতে পারছেন না অনেকেই। পরিস্থিতি যখন জটিল হচ্ছে তখন রোগী নিয়ে দৌড়াচ্ছেন হাসপাতালে। সেখানে উপসর্গ নিয়ে ঝরছে প্রাণ।

রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী বলেন, করোনা আক্রান্ত রোগীরা অনেক দেরিতে হাসপাতালে আসছেন। আক্রান্ত হওয়ার এক পর্যায়ে যখন দেখতে পাচ্ছেন আর নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না তখন হাসপাতালে আসছেন। রোগীরা দেরি করে ফেলায় মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ছে। রোজার ঈদের পর থেকে করোনা রোগীর সংখ্যা যেভাবে বাড়ছে তাতে চিকিৎসা দিতে বেগ পেতে হচ্ছে। এভাবে বাড়তে থাকলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে উঠবে। তখন সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে পড়বে।

তিনি আরও বলেন, মূলত যাদের অক্সিজেন স্যাচুরেশন কমে যাচ্ছে তারাই হাসপাতালে ভর্তি হতে আসছেন। ফলে শতভাগ রোগীকেই অক্সিজেন দিতে হচ্ছে। সেন্ট্রাল লাইনে অক্সিজেন সরবরাহ দেওয়া হচ্ছে। এখনও পর্যাপ্ত সিলিন্ডার মজুদ রাখা হয়েছে। আরও একটি ওয়ার্ডে সেন্ট্রাল অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা চালুর কাজ শেষ করে চালু করা হয়েছে। অক্সিজেনের জন্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠান লিন্ডে বাংলাদেশের অক্সিজেন ভর্তি রিজার্ভ রাখা হয়েছে। তবে রোগী বাড়তে থাকলে অক্সিজেন নিয়েও সংকটে পড়তে হতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন রামেক হাসপাতাল পরিচালক।

এরইমধ্যে হাসপাতালে রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকরা। অতিরিক্ত হারে আক্রান্ত ও উপসর্গ নিয়ে রোগী ভর্তি হাওয়ায় হাসপাতালে শয্যা সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে রোগীদের গাদাগাদি করে হাসপাতালের মেঝেতে থাকতে হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালের করোনা ইউনিটে নতুন রোগী ভর্তি হয়েছেন ৬৫ জন। এরমধ্যে শুধু রাজশাহীরই ৪৪ জন ভর্তি হয়েছেন। শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত মোট ভর্তি রোগী আছেন ৪২৩ জন। এরমধ্যে রাজশাহীর ২৮৩ জন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের ৬৪ জন, নাটোরের ৩১ জন, নওগাঁর ২৯ জন, পাবনার ৮ জন, কুষ্টিয়ার ৩ জন ও চুয়াডাঙ্গার ২ জন রয়েছেন। অথচ রামেক হাসপাতালে করোনা ডেডিকেটেড শয্যার সংখ্যা ৩৫৭টি। অর্থাৎ ধারণ ক্ষমতার বেশি রোগী বর্তমানে ভর্তি রয়েছেন। ৩৫৭ শয্যার বিপরীতে চিকিৎসাধীন বাড়তি রোগীদের মেঝে ও বারান্দায় অতিরিক্ত শয্যা তৈরি করে রাখা হয়েছে।

এদিকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে স্থানীয় জনগণকে বেশি বেশি নমুনা পরীক্ষার পরামর্শ দেওয়া হলেও অনেক এলাকায়ই মানুষ পরীক্ষায় আগ্রহী হচ্ছেন না। তবে যারা পরীক্ষা করাচ্ছেন তাদের মধ্যে উচ্চহারে শনাক্ত হচ্ছে করোনা। রাজশাহীতে শনাক্তের হার ৩০ এর ঘরে ওঠানামা করছে।  

সে হিসেবে বাকি প্রায় ৭০ শতাংশের পরীক্ষার রিপোর্ট নেগেটিভ আসছে, যাদের বেশির ভাগের কোনো না কোনো উপসর্গ রয়েছে। প্রায় তিন সপ্তাহ ধরে শনাক্তের হার ৩০ থেকে ৫০ এর ঘরে ছিল। যা বেড়ে সর্বোচ্চ ৬১ শতাংশের ওপরে উঠে। ফলে যাদের রেজাল্ট নেগেটিভ হয়েছে তাদের উপসর্গ কেন হলো, সেই প্রশ্নও উঠছে। এরইমধ্যে চিহ্নিত করার প্রয়াস চলছে করোনা রোগীর সঙ্গে থাকা স্বজনদের।

এমন পরিস্থিতির দিকে নজর রেখে জ্বর বা অন্যান্য উপসর্গ দেখা গেলেই হেলাফেলা না করে দ্রুত পরীক্ষা করানোর পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজশাহীতে এখনও করোনা পরীক্ষা করতে অনাগ্রহ আছে মানুষের মধ্যে। সঠিক সময়ে করোনা পরীক্ষা করানো গেলে আক্রান্তের হার আরও বাড়বে। কিন্তু প্রতিদিন যে হারে জ্বর-সর্দি আক্রান্ত রোগী আসছে তাতে অধিকাংশই করোনা আক্রান্ত রোগী বলেও ধারণা করছেন চিকিৎসকরা। এখন মৌসুমি জ্বরসহ আরও কিছু রোগের প্রকোপ থাকলেও যেহেতু করোনা ভাইরাসের মহামারি চলছে তাই উপসর্গ থাকলেই প্রথমত করোনাকে গুরুত্ব দিতে হবে। এক্ষেত্রে জরুরিভাবেই পরীক্ষা করাতে হবে এবং কমপক্ষে ১৪ দিন করে আইসোলেশনে থাকতে হবে। রেজাল্ট নেগেটিভ না হওয়া পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বাড়িতেই থাকবেন।

রামেক হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক জাহিরুল ইসলাম বলেন, মৌসুম পরিবর্তন হচ্ছে। অনেকেই নানান কারণে বর্ষার বৃষ্টিতে ভিজছেন। এতে অনেকেই মৌসুমি সর্দি-কাশি, জ্বর ও গল্যা ব্যথার মতো সিজোনাল ফ্লু-তে আক্রান্ত হচ্ছেন। আবার অনেকের মধ্যে করোনা উপসর্গ থাকছে। সাধারণ মানুষ এর তফাত বুঝতে পারছেন না। আমরা এখন জ্বর-সর্দিজনিত যে হারে রোগী পাচ্ছি তাদের অধিকাংশই করোনা আক্রান্ত। এরমধ্যে গ্রামের রোগীই বেশি।

তিনি আরও বলেন, মানুষের মধ্যে এখনও করোনা পরীক্ষায় আগ্রহ কম। ফলে প্রথম দিকে পরীক্ষা না করিয়ে একেবারে শেষের দিকে এসে আক্রান্ত রোগীদের অনেকেই পরীক্ষা করাচ্ছেন। এ কারণে আক্রান্তের হার কম মনে হচ্ছে। কিন্তু এটি আরও বাড়বে যদি জ্বর-সর্দিতে আক্রান্ত হওয়ার পরপরই রোগীরা করোনা পরীক্ষা করে। আবার পরীক্ষাতেও যেসব রোগীকে শনাক্ত করা যাচ্ছে তা নয়।  

কারণ মেশিনের সীমাবদ্ধতা বা এন্টিজেনের সীমাবদ্ধতার কারণেও হয়তো সর্বোচ্চ ৭০ শতাংশ আক্রান্ত রোগীকে শনাক্ত করা যাচ্ছে। বাকি ৩০ শতাংশ আক্রান্ত হয়েও নেগেটিভ থেকে যাচ্ছেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৪৬ ঘণ্টা, জুন ২৫, ২০২১
এসএস/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।