ঢাকা, শনিবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

স্বাস্থ্য

রোগতত্ত্ব-জনস্বাস্থ্য বিষয়ক বাংলাদেশ কংগ্রেসের উদ্বোধন

ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৪৭ ঘণ্টা, মার্চ ৩১, ২০২১
রোগতত্ত্ব-জনস্বাস্থ্য বিষয়ক বাংলাদেশ কংগ্রেসের উদ্বোধন

ঢাকা: রোগতত্ত্ব ও জনস্বাস্থ্য বিষয়ক প্রথম বাংলাদেশ কংগ্রেসের উদ্বোধন হয়েছে। বুধবার (৩১ মার্চ) ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত আর্ল আর মিলার এ কংগ্রেসের উদ্বোধন করেন।

দুই দিনব্যাপী এই সম্মেলনে সশরীরে উপস্থিত হয়ে এবং অনলাইনের মাধ্যমে অংশগ্রহণকারীরা বিভিন্ন অধিবেশনে বাংলাদেশে কোভিড-১৯ সম্পর্কিত অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান বিনিময় করেন।

ঢাকাস্থ যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস জানায়, এই কংগ্রেসের মাধ্যমে কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জ্ঞান ভবিষ্যতের মহামারি ও প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় ব্যবহার এবং বাংলাদেশে এপিডিমিওলোজিস্ট ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের সংখ্যা বাড়ানোর লক্ষ্যে সহায়তা করতে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের একটি বৈশ্বিক নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠিত হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) কোভিড-১৯ মহামারি চলাকালে বাংলাদেশ ও বিশ্বের মানুষের জীবন বাঁচাতে ও তাদের সুস্থ রাখতে ‘ফিল্ড এপিডিমিওলোজি’ ও জনস্বাস্থ্য যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে তা তুলে ধরতে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) এবং বাংলাদেশ এপিডিমিওলোজি অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে যৌথভাবে প্রথমবারের মতো এই জাতীয় কংগ্রেস আয়োজন করছে।

সম্মেলনের উদ্বোধনী দিনে রাষ্ট্রদূত মিলার এবং আইইডিসিআরের পরিচালক ড. শিরিন সিডিসির অর্থায়নে পরিচালিত ‘ফিল্ড এপিডিমিওলোজি ট্রেনিং প্রোগ্রাম (এফইটিপি)’ সফলভাবে সমাপ্তকারী ১০ জন স্নাতককে সনদ দেন। ২০১৪ সাল থেকে বাংলাদেশে এফইটিপি কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর এ পর্যন্ত ৩৩ জন বাংলাদেশি এপিডিমিওলোজিস্ট দুই বছরের এই কঠোর প্রশিক্ষণ কর্মসূচি সফলভাবে সম্পন্ন করেছেন। এই কোর্সের প্রশিক্ষিত ফেলোরা গত এক বছরের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশে কোভিড-১৯ মোকাবিলায় সম্মুখসারিতে থেকে কাজ করছেন। তারা প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের গতিবিধি বোঝা ও নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে কী করণীয় খুঁজে পেতে সম্মুখসারিতে থেকে কোভিড-১৯ কেস তদন্ত, কন্ট্যাক্ট ট্রেসিংসহ প্রয়োজনীয় অন্যান্য কাজ করছেন।

দুই দিনব্যাপী সম্মেলনে বাংলাদেশ ও বিশ্বের রোগতত্ত্ববিদ, তরুণ গবেষক, জনস্বাস্থ্য পেশাজীবী, বাংলাদেশ ও অন্যান্য দেশের কমিউনিটি মেডিসিনের শিক্ষকবৃন্দ, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউট (আইইডিসিআর) ও অন্যান্য সরকারি দপ্তরের প্রতিনিধি, স্থানীয় মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন ও মেডিকেল শিক্ষা খাতের প্রতিনিধি, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)-সহ আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহ এবং দাতা সংস্থার প্রতিনিধিবৃন্দ কোভিড-১৯ ও অন্যান্য রোগ যেমন ডিপথেরিয়া, ডেঙ্গু, ইনফ্লুয়েঞ্জা, কলেরা, হেপাটাইটিস ইত্যাদি রোগের প্রাদুর্ভাব এবং পরিবেশগত স্বাস্থ্য, মানসিক স্বাস্থ্য, হৃদরোগ, টক্সিকোলজি বা বিষবিজ্ঞানসহ ক্রমবর্ধমান স্বাস্থ্য চ্যালেঞ্জগুলো সম্পর্কে বাংলাদেশের বৈজ্ঞানিক পাঠগুলোসহ জনস্বাস্থ্য বিষয়ে তাদের অভিজ্ঞতা বিনিময় করবেন। এপিডিমিওলোজি ও জনস্বাস্থ্য নিয়ে একই ধরনের বৈজ্ঞানিক সম্মেলন প্রতিবছর আটলান্টাতে সিডিসির সদর দপ্তরে এবং আরো অনেক দেশে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। বাংলাদেশে এবারই প্রথমবারের মতো এই বিষয়ের উপরে জাতীয় কংগ্রেস আয়োজন করা হলো, যা আগামীতে প্রতি দুই বছর অন্তর আয়োজন করার ইচ্ছা আয়োজকদের রয়েছে।

কংগ্রেসে দেওয়া বক্তব্যে রাষ্ট্রদূত মিলার বলেন, বিশ্বব্যাপী ও বাংলাদেশে এপিডিমিওলোজি ও জনস্বাস্থ্য বিষয়ে আরও বেশি মনোযোগ বাড়াতে অনেকের যে প্রচেষ্টা তার প্রতি সমর্থন জানিয়ে একাত্মতা প্রকাশ করতে আজ আমি এখানে এসেছি। মহামারি আমাদের অনেক কিছু শিখিয়েছে। তার মধ্যে একটি হলো নীতি ও কার্যক্রমের কার্যকারিতা এর ভিত্তি বিজ্ঞান ও ডেটার কার্যকারিতার সমতুল্য। আমরা মাস্ক পরা ও সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার কথা বলছি, যা আজ আমরা এখানেও পালন করছি, কারণ বিজ্ঞান ও ডেটা থেকে আমরা জানতে পেরেছি এগুলো কার্যকর। আমরা ভ্যাকসিনের প্রচার করছি কারণ ভ্যাকসিনের পরীক্ষা ও ভ্যাকসিন পরবর্তী সার্ভিল্যান্স ডেটা থেকে আমরা জেনেছি যে, ভ্যাকসিন নিরাপদ ও কার্যকর। এর কোনটাই সম্ভব ছিল না যদি এপিডিমিওলোজিস্ট ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা কাজ না করতেন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং সিডিসির সুপারিশ মতে প্রতি ২ লাখ জনসংখ্যার জন্য অন্ততপক্ষে একজন করে মেডিকেল এপিডিমিওলোজিস্ট (রোগতত্ত্ববিদ) থাকার হিসেব অনুযায়ী বাংলাদেশে কমপক্ষে ৮৫০ জন পূর্ণ-প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মেডিকেল এপিডিমিওলোজিস্ট নিয়োজিত থাকার কথা উল্লেখ করে সিডিসির বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ড. মাইকেল ফ্রিডম্যান বলেন, ২০১৪ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে সিডিসি-র অর্থায়নে পরিচালিত এফইটিপি-র অসাধারণ অর্জনে আমরা গর্বিত, তবে এখনো অনেক কিছু করার আছে। লক্ষ্যকৃত ৮৫০ জন পূর্ণ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ফিল্ড এপিডিওমোলজিস্ট তৈরি করা ও তাদেরকে নিয়োগ দিতে হলে বাংলাদেশ সরকার ও আন্তর্জাতিক সহযোগীদের দিক থেকে এফইটিপির মতো প্রশিক্ষণ কর্মসূচি বাড়ানোর পাশাপাশি বাংলাদেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে প্রতিটি জেলায় এপিডিমিওলোজিস্টের পদ সংযোজন করতে হবে। কোভিড-১৯ মহামারি বিশ্বকে শিখিয়েছে যে এপিডিওমোলজিস্ট বা রোগতত্ত্ববিদগণ অতীব গুরুত্বপূর্ণ এবং নিজের এলাকা, দেশ কিংবা বিশ্বে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে ইচ্ছুক তরুণ স্বাস্থ্য পেশাজীবীদের জন্য এটি একটি পছন্দনীয় সেরা পেশা বা কর্মজীবন হতে পারে।

বাংলাদেশ সময়: ২০৪৬ ঘণ্টা, মার্চ ৩১, ২০২১
টিআর/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।