ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫

স্বাস্থ্য

পিরিয়ড নিয়ে ‘ট্যাবু’ ভাঙতে সেনোরার উদ্যোগ

শাওন সোলায়মান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮০০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৪, ২০২১
পিরিয়ড নিয়ে ‘ট্যাবু’ ভাঙতে সেনোরার উদ্যোগ পিরিয়ড নিয়ে ‘ট্যাবু’ ভাঙতে সেনোরার উদ্যোগ

ঢাকা: ঋতুচক্র বা পিরিয়ড নারীদের জন্য একটি স্বাভাবিক ঘটনা। কিন্তু সামাজিক সচেতনতার অভাবে সেই স্বাভাবিক ঘটনাটিকেই দেখা হয় বেশ অস্বাভাবিক চোখে।

তবে আশার কথা, অনেকটা ‘ট্যাবু’ বা নিষিদ্ধ বিবেচনা করা এ বিষয়টি সম্পর্কে জনসাধারণের মধ্যে গড়ে উঠছে সামাজিক সচেতনতা। বিষয়টি অনলাইন প্ল্যাটফর্মে তুলে ধরে সামাজিক সচেতনতা বাড়াতে ভূমিকা রাখছে সেনোরা।

এক জরিপের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে নারীরা যেসব কারণে মৃত্যুবরণ করেন, তার মধ্যে পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে পিরিয়ডের সময় স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার না করা। প্রতিবেশী দেশ ভারতে প্রতি বছর ২ কোটি ৩০ লাখ মেয়ে শিক্ষার্থী বয়ঃসন্ধিকালে উপনীত হলে তাদের আর স্কুলে যেতে দেন না অভিভাবকরা।

অন্যদিকে, বাংলাদেশে মাত্র ২০ শতাংশ নারী স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার করেন। ২০১৪ সালে এ হার ছিল মাত্র ১৪ শতাংশ।

বিভিন্ন অনুসন্ধানে দেখা যায়, এর পেছনের অন্যতম কারণ পিরিয়ড নিয়ে সাধারণ মানুষের অজ্ঞতা, ভয়, সামাজিক দ্বিধা ও সংকোচ। অথচ একজন সাধারণ মানুষের মতোই নারীদের জন্য এটি একটি স্বাভাবিক বিষয়।

দেশের যে ২০ শতাংশ নারী স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার করেন, তাদের অনেককেই আবার বেশ অস্বস্তিকর পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে ন্যাপকিন সংগ্রহ করতে হয়। ন্যাপকিন কিনতে গেলে সাধারণত ফার্মেসিতে একজন পুরুষ বিক্রেতা থাকেন, বা বাড়ির কোনো পুরুষ সদস্যকে দিয়েই আনাতে হয় ন্যাপকিন।

এসব বিষয়ের সমাধান নারীদের নিজেদের হাতে দিতেই স্কয়ার টয়লেট্রিজ তাদের স্যানিটারি ন্যাপকিন ‘সেনোরা’ নিয়ে এসেছে ই-কমার্স ও অনলাইন প্ল্যাটফর্মে। ই-কমার্সের পাশাপাশি সেনোরার টোল ফ্রি কেয়ারলাইন ০৮০০০৮৮৮০০০ নম্বরে ফোন করে যে কেউ তার নিজের জন্য স্যানিটার ন্যাপকিন অর্ডার করে ডেলিভারি পেতে পারেন।

২০২০ সালের মাঝামাঝি বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি ওভিসি (অনলাইন ভিডিও কমিউনিকেশন) প্রকাশ করে সেনোরা। প্রকাশের পর থেকে নেটিজেনদের কাছ থেকে উচ্ছ্বসিত সাড়া পায় প্রতিষ্ঠানটি। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রতিষ্ঠিত মানুষের পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ পরিচিত এমন ব্যক্তিরাও সেনোরার এই ওভিসির প্রশংসা করে পোস্ট ও মন্তব্য করেন। ব্লগ লেখেন প্রতিষ্ঠিত ব্লগাররাও।

সেনোরার ইতিহাসে ফেসবুকে সর্বাধিক রিচ হয় এই ওভিসি। প্রায় এক কোটি ২৪ লাখের বেশি মানুষের নিউজফিডে পৌঁছায় ভিডিওটি। ভিডিওর পোস্টের সঙ্গে সম্পৃক্ত হন অর্থ্যাৎ পোস্টটিতে এনগেজমেন্ট আসে প্রায় আড়াই লাখ মানুষের কাছ থেকে। ভিডিওটি তিন হাজার সাতশ’ বারের বেশি শেয়ার করা হয়। সব মিলিয়ে ভিডিওটির মাধ্যমে প্রায় তিন কোটি মানুষের কাছে পৌঁছাতে সক্ষম হয় সেনোরা।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের এমন সাড়া প্রতিফলন পাওয়া যায় প্রতিষ্ঠানটির সেলস শিটেও। গেলো  মার্চের তুলনায় এপ্রিল ও মে মাসে অনলাইনে ৭০ শতাংশ বেশি বিক্রি হয় সেনোরা ন্যাপকিন। এ অনলাইন ক্যাম্পেইন চলাকালে সেনোরার ফেসবুক পেইজে ১৬ লাখের বেশি মানুষ সম্পৃক্ত হন। প্রায় পৌঁনে তিন কোটি সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারী সেনোরার কোনো না কোনো কনটেন্ট দেখেছেন।

অনলাইনের পাশাপাশি অফলাইনেও পিরিয়ড নিয়ে নারী ও পুরুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে কাজ করছে সেনোরা। বিগত ১০ বছরে স্কুল পর্যায়ের প্রায় ৫০ লাখ শিক্ষার্থী নিয়ে কর্মশালা পরিচালনার মাধ্যমে স্যানিটারি ন্যাপকিন সম্পর্কিত ধারণা দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

সেনোরা মনে করে, পিরিয়ড প্রকৃতির পক্ষ থেকে নারীদের জন্য একটি উপহার। এ উপহার নিয়ে নারীদের বিনা সংকোচে কথা বলার অধিকার রয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮০০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৪, ২০২১
এসএইচএস/এফএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।