ঢাকা, শনিবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

স্বাস্থ্য

বান্দরবানে বাড়ছে করোনারোগী, হাসপাতালে নেই পর্যাপ্ত শয্যা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৪২ ঘণ্টা, জুন ২৪, ২০২০
বান্দরবানে বাড়ছে করোনারোগী, হাসপাতালে নেই পর্যাপ্ত শয্যা

বান্দরবান: বান্দরবানে দিন দিন করোনারোগীর সংখ্যা বাড়ায় শয্যা সঙ্কটে পড়েছে জেলার স্বাস্থ্য বিভাগ। গত মার্চ মাসে দেশে করোনা সংক্রমণ দেখা দিলে করোনারোগীদের চিকিৎসায় বান্দরবান জেলার সাত উপজেলায় ১৩০ শয্যার আইসোলেশন ওয়ার্ড প্রস্তুত করে বান্দরবান জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। কিন্তু ইতোমধ্যে বান্দরবান জেলায় করোনা আক্রান্ত হয়েছে ২০১ জন, যা ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি।

আক্রান্তের হার যদি বাড়তে থাকে তাহলে করোনারোগীদের আইসোলেশন ওয়ার্ডে চিকিৎসা দেওয়ার জন্য শয্যার সংকুলান হবে না বলে মনে করছেন বান্দরবানের স্বাস্থ্য বিভাগ। তাই আগের প্রস্তুতি হিসেবে জেলায় ফিল্ড হাসপাতাল প্রস্তুত করা প্রয়োজন অনুভূত হয়েছে।

বান্দরবান জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বান্দরবান জেলায় করোনারোগীর চিকিৎসায় সাত উপজেলায় ১৩০ শয্যার করোনা আইসোলেশন ওয়ার্ড প্রস্তুত করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ, এরমধ্যে বান্দরবান জেলা সদর হাসপাতালে ১শ শয্যার এবং বাকি ছয় উপজেলায় পাঁচটি করে করোনা আইসোলেশন শয্যা রয়েছে।  

এদিকে বান্দরবানে প্রথম করোনারোগী শনাক্ত হয় ১৬ এপিল নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নে, এরপর এই সংখ্যা বেড়ে এখন ২০১ জনে রয়েছে। লামা উপজেলায় আক্রান্তের সংখ্যা একদিনেই ছয়জন আর আইসোলেশন শয্যা পাঁচটি। এদের মধ্যে অনেকের উপসর্গ না থাকায় কেউ কেউ বাসায় থেকে এবং কেউ কেউ হাসপাতালের আইসোলেশনে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

গত কয়েকদিনে যে হারে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে সেটা যদি অব্যাহত থাকে সেক্ষেত্রে হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে শয্যা সঙ্কটের কারণে করোনারোগীর চিকিৎসা দেওয়া কষ্টসাধ্য হবে বলে বাংলানিউজকে জানান বান্দরবান করোনা ইউনিটের প্রধান ডা. প্রত্যুষ পল ত্রিপুরা।  

ডা. প্রত্যুষ পল ত্রিপুরা বলেন, আমরা সদর হাসপাতালের নার্সিং কলেজে ১শ শয্যার আইসোলেশন ওয়ার্ড প্রস্তুত করেছি। আমাদের এখানে পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা নেই, নিবিড় পযবেক্ষণ কেন্দ্র (আইসিইউ) নেই, পর্যাপ্ত অক্সিজেন সিলিন্ডারও নেই, তারপরও আমরা সর্বোচ্চ ১শ জন রোগীকে রাখার ব্যবস্থা করতে পারবো।  

তিনি বলেন, দিন দিন বান্দরবানে যে হারে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে এভাবে যদি বাড়তে থাকে তাহলে আমরা বাড়তি রোগীকে অন্যান্য সুযোগ সুবিধাতো দিতে পারবোই না, শয্যাও দিতে পারবো না। আমাদের এখানে শুধু করোনারোগী নয় সাসপেক্টেড কোভিড-১৯ অনেক রোগীও রয়েছেন। তবে রোগী যদি বেড়ে যায় তখন আমরা তাদের ভর্তি করতে হিমশিম খাবো।  

কারণ একজন রোগী কমপক্ষে ১৪ দিন আইসোলেশনে থাকেন। সে হিসেবে একটা সিট খালি হতে ১৪ দিন লাগে, তাই পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে বান্দরবানে দুইটি প্রাইভেট ক্লিনিক রয়েছে, সেগুলোকে করোনা আইসোলেশন ওয়ার্ড হিসেবে প্রস্তুত করা যেতে পারে, এক্ষেত্রে সবার সমন্বয় প্রয়োজন, কারণ স্বাস্থ্য বিভাগের একার পক্ষে করোনা ভাইরাস মোকাবিলা করা সম্ভব নয়।

বান্দরবান জেলার সিভিল সার্জন ডা. অং সুই প্রু মারমা বাংলানিউজকে বলেন, যে হারে বান্দরবানে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে, এটা যদি চলমান থাকলে রোগীকে শয্যা দিতে কষ্ট হয়ে যাবে। তাই বান্দরবানে একটি ফিল্ড হাসপাতাল প্রস্তুত করা প্রয়োজন।

এক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। সরকারি স্কুল, টাউন হল, আবাসিক হোটেল যেকোনো একটাকে করোনা চিকিৎসার জন্য হাসপাতাল হিসেবে প্রস্তুত করা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় লজিস্টিক সাপোর্ট রোগী আনার জন্য পরিবহন এবং জনবলও দিতে হবে। অন্য উপজেলার রোগীকে সদরে আনা যাবে না তাদেরকে স্ব-স্ব উপজেলায় স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় সরকারি বিদ্যালয় বা টাউন হলগুলোতে আইসোলেশন ওয়ার্ড তৈরি ও সবাইকে মিলে একসঙ্গে করোনার মোকাবিলায় কাজ করতে হবে।  

ইতোমধ্যে বান্দরবানে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দাউদুল ইসলাম, পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য লক্ষীপদ দাশ, ডা. আলমগীর, স্বাস্থ্যকর্মী শহীদুল ইসলাম টিপুসহ ২০১ জন। আর এর মধ্যে করোনা আক্রান্ত হয়ে জেলায় মারা গেছে একজন।  

এদিকে করোনা আক্রান্ত হয়ে শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়ায় বান্দরবানে আইসিইউ না থাকায় পার্বত্যমন্ত্রীকে ঢাকার সামরিক হাসপাতালে, পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য লক্ষীপদ দাশকে চট্টগ্রামে উন্নত চিকিৎসা করার জন্য পাঠিয়ে দিয়েছেন বান্দরবানের স্বাস্থ্য বিভাগ।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৪০ ঘণ্টা, জুন ২৪, ২০২০
এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।