ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

স্বাস্থ্য

এক ভবন বিশিষ্ট হাসপাতালে করোনা চিকিৎসায় ঝুঁকি

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪১৩ ঘণ্টা, মে ২৯, ২০২০
এক ভবন বিশিষ্ট হাসপাতালে করোনা চিকিৎসায় ঝুঁকি

ঢাকা: দেশের সব সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অন্যান্য রোগীদের সঙ্গে করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসা প্রদানের নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ এবং স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রস্তাব মতো ৫০ শয্যা বা তার বেশি শয্যাবিশিষ্ট সব সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে কোভিড এবং নন-কোভিড রোগীদের চিকিৎসার জন্য পৃথক ব্যবস্থা চালুর কথা বলা হয়েছে নির্দেশে। তবে এক ভবন বিশিষ্ট হাসপাতালগুলোতে করোনা রোগীদের চিকিৎসায় ঝুঁকি রয়েছে বলে জানাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা।

ফলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে বিপাকে পড়েছে একটির বেশি শাখা নেই, এক ভবন বিশিষ্ট এ ধরনের বেসরকারি হাসপাতালগুলো।

ধানমণ্ডির গ্রিন রোডে বেসরকারি পর্যায়ে দেশের প্রথম অত্যাধুনিক হাসপাতাল হিসেবে ১৯৯৯ সালে যাত্রা শুরু করে সেন্ট্রাল হসপিটাল লিমিটেড।

 ৫০ শয্যা থাকলেও এ হাসপাতালটি এখন পর্যন্ত এক ভবন বিশিষ্ট এবং এর কোনো শাখা নেই। হাসপাতালে প্রসূতি ও ডেলিভারি রোগীর সংখ্যা বেশি। ফলে এ হাসপাতালে করোনা চিকিৎসা দেওয়া হলে আক্রান্ত হতে পারেন প্রসূতি মা ও শিশুরা।  এখানে করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসা দেওয়ার মতো পৃথক ব্যবস্থাও নেই। এক ভবনের নিচে সবাইকে একই ছাদ ও সিঁড়ি ব্যবহার করতে হয়।  

এ প্রসঙ্গে হাসপাতালের এক কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, আমরা সরকারের সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানাই। কিন্তু আমাদের একটাই ভবন, একই ভবনে কীভাবে অন্য রোগীদের সঙ্গে করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসা দেবো। আমাদের অন্য কোনো শাখাও নেই। একই ভবনে একই লিফট ব্যবহারে অন্যান্য রোগীরাও করোনায় আক্রান্ত হতে পারেন। করোনা সাসপেকটেড রোগীদের চিকিৎসা দেওয়ার মতো অবকাঠামোগত সুবিধা আমাদের নেই।  সুবিধা থাকলে কোনো সমস্যা হতো না।  

সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র জানায়, এক ভবনের হাসপাতালগুলোতে সবাই একই লিফট ব্যবহার করে। একই বিল্ডিংয়ে চলাফেরা করে সব রোগীর আত্মীয়-স্বজন। এতে সংক্রমণের ঝুঁকি তৈরি হবে।  

শুধু সেন্ট্রাল হাসপাতাল নয়, একই অবস্থা আশপাশের বিআরবি হাসপাতাল, শমরিতা হাসপাতাল, গ্রীন লাইফ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, কমফোর্ট হাসপাতাল লিমিটেড অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারেও।
 
সূত্র জানায়, এসব ছাড়াও করোনা ইউনিট খুললে প্রয়োজনীয় জনবল পাওয়া নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। কারণ বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক ও নার্সরা বিভিন্ন সময় প্রয়োজনে চাকরি ছেড়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে আসছেন, তবুও তারা করোনা ইউনিটে সেবা দিতে আগ্রহী হচ্ছেন না। এ ধরনের সমস্যা ও ঝুঁকি কাটাতে দফায় দফায় বৈঠক হচ্ছে।  

সার্বিক পরিস্থিতি প্রসঙ্গে কমফোর্ট হাসপাতালের জিএম সেলিম সরকার বাংলানিউজকে বলেন, এক বিল্ডিং বেইজড হাসপাতালে করোনা রোগীদের চিকিৎসা প্রদানে ঝুঁকি রয়েছে। কারণ একই ভবনে সব ধরনের রোগীর চিকিৎসা দেওয়া হয়। এরই মাঝে করোনা সাসপেকটেড রোগী এলেও আমরা ফেরাতে পারবো না। তাতে অন্যদের ঝুঁকি রয়েছে। আমাদের বিকল্প পথে যেতে হবে। আমরা মিটিং করেছি। ডাক্তার ও নার্সদের নিয়ে আরও মিটিং করবো।  

কিছু কিছু হাসপাতালে কয়েক দফা মিটিং করে একই ভবনে করোনা আক্রান্ত ও সাসপেকটদের চিকিৎসা দেওয়া প্রসঙ্গে বিভিন্ন ঝুঁকি চিহ্নিত করা হয়েছে। হাসপাতাল ভবনের কয়েকটি ফ্লোর পৃথক করে কীভাবে করোনা সন্দেহভাজন রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া যায় সেই বিষয়েও পরিকল্পনার চেষ্টা চলছে।  

এ লক্ষ্যে এরই মাঝে গ্রীন লাইফ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের দুটি ফ্লোর আলাদা করা হয়েছে। এখানে সেবা দেওয়া ডাক্তার ও নার্সদের অন্য ফ্লোরে যেতে দেওয়া হবে না।

এ ব্যাপারে গ্রীন লাইফ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মঈনুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, ওয়ান বিল্ডিং বেইজড হাসপাতালে করোনা রোগীর সেবা দেওয়ায় ঝুঁকি আছে, এটা আমাদের ফেইস করতে হবে। আমরা বিকল্প ব্যবস্থা করেছি। ১১ ও ১২ নম্বর ফ্লোরে করোনা রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হবে। এই ফ্লোরে সংশ্লিষ্ট সেবাদানকারীদের থাকার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। পৃথক সিঁড়ির ব্যবস্থা করা হচ্ছে।  

হাসপাতালগুলোতে করোনা রোগীদের চিকিৎসা শুরুর আগে ব্যবস্থাপনা তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি কমিটির সদস্য এবং স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) সভাপতি অধ্যাপক ডা. এম ইকবাল আর্সলান।  

এ ব্যাপারে বাংলানিউজকে তিনি বলেন, এক ছাদের নিচের হাসপাতালগুলোতে আলাদা ব্যবস্থাপনা সৃষ্টি না করে করোনার চিকিৎসা দেওয়া মানে অন্যান্য সাধারণ রোগীদের জন্য ঝুঁকি তৈরি হওয়া।  অনেক হাসপাতালে করোনা রোগীদের ফিরিয়ে দেওয়া হয়, এটা অন্যায় । অবশ্যই করোনা রোগীর চিকিৎসা দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাপনা তৈরি করতে হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৩০৯ ঘণ্টা, মে ২৯, ২০২০ 
এমআইএস/এইচজে   
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।