ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

স্বাস্থ্য

সুরক্ষা-মজুরি ইস্যুতে ইমপাল্‌স কর্তৃপক্ষ-নার্সদের দ্বন্দ্ব

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৫৯ ঘণ্টা, মে ৭, ২০২০
সুরক্ষা-মজুরি ইস্যুতে ইমপাল্‌স কর্তৃপক্ষ-নার্সদের দ্বন্দ্ব ‘ইমপাল্‌স হাসপাতাল।

ঢাকা: সরকারি বিধি অনুসারে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতাল ‘ইমপাল্‌স’-এ যথাযথ সুরক্ষাসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার দাবি তুলেছেন দায়িত্বরত নার্সরা। তাদের দাবির মধ্যে আছে- সরকারঘোষিত স্বাস্থ্য বিমা, করোনায় মৃত্যু হলে এককালীন ক্ষতিপূরণ ও চিকিৎসায় অবদানের জন্য বিশেষ স্বীকৃতি। কিন্তু, মজুরি বৃদ্ধিসহ নার্সদের এসব দাবি মানছে না ইমপাল্‌স কর্তৃপক্ষ।

যারা এসব দাবি তুলছেন, তাদের বৃহস্পতিবার (৭ মে) বেলা ১১টার মধ্যে হাসপাতালের হোস্টেলে ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হোস্টেল ত্যাগ না করলে তাদের পুলিশ দিয়ে বের করার হুমকি জানানো হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।

 

বৃহস্পতিবার (৭ মে) ভোরে হাসপাতালের একাধিক নার্স বাংলানিউজের কাছে এসব অভিযোগের কথা জানান।  

জানা যায়, করোনা ইস্যুতে গত কয়েক সপ্তাহে এ হাসপাতালে ৩০ জন স্টাফ নার্সকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। বর্তমানে এখানে কাজ করছেন ৩৫ জনের মতন নার্স। কর্তৃপক্ষের প্রস্তাবে রাজি না হলে তাদেরও চাকরিচ্যুত করা হবে বলে জানানো হয়েছে। নার্সদের বিভিন্ন দাবিদাওয়ার মুখে বুধবার (৬ মে) রাত ১২টা পর্যন্ত দফায় দফায় নার্সদের সঙ্গে বৈঠক করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।  

এ ব্যাপারে হাসপাতালের চিফ অপারেটিং অফিসার ডা. খাদিজা আক্তার জুমা বাংলানিউজকে বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে আগামী শনিবার (৯ মে) থেকে এখানে করোনা আক্রান্ত পুলিশ সদস্যদের চিকিৎসা হবে। রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত পুলিশ সদস্যের সংখ্যা এরই মাঝে ১ হাজার ছাড়িয়েছে। তারা আর জায়গা দিতে পারছে না, তাই আমাদের হাসপাতাল প্রস্তুত করতে বলেছে। শনিবার থেকে এখানে ২শ’ থেকে আড়াইশ’ করোনা রোগীর চিকিৎসা চলবে। কিন্তু নার্সদের সঙ্গে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের মতের অমিলসহ আরও কিছু বিপত্তি আছে। আমরা এখনও সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে পারিনি।

নার্সদের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ করোনায় সংশ্লিষ্ট নার্সদের দৈনিক মজুরিভিত্তিক ১২ ঘণ্টা ডিউটি করলে ৩ হাজার টাকা, ২৪ ঘণ্টা ডিউটি করেল ৬ হাজার টাকার সঙ্গে খাবার দিতে রাজি হয়েছে। আরেক অফারে নার্সদের বর্তমান মাসিক বেতনের দ্বিগুণ ও ঝুঁকি ভাতা দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু নার্সরা এসব প্রস্তাবে সম্মত হচ্ছেন না। মাসিক ৬০ হাজার টাকা বেতন দাবি করছেন তারা। শুধু নার্স দিয়ে তো একটা হাসপাতাল চলে না। চিকিৎসক, অন্যান্য স্টাফসহ হাসপাতাল ব্যবস্থানার খরচ অনেক।  

নার্সদের হোস্টেল ছাড়ার নির্দেশ প্রসঙ্গে খাদিজা আক্তার বলেন, যারা কর্তৃপক্ষের প্রস্তাব অনুসারে কাজ করতে অসম্মত বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার মধ্যে আমরা তাদের বেতন দিয়ে দেবো। এরপর তাদের হাসপাতালের হোস্টেল ছাড়তে বলা হয়েছে। আমরা নতুন নার্স নিয়োগ দেবো, তারাই করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসা দেবেন। তারাই হাসপাতালের হোস্টেলে থাকবেন। সারবিক কারণেই যারা কাজে থাকবে না, তাদের হোস্টেল ছাড়তে বলছি। যারা এই পরিস্থিতিতে বাড়ি যেতে পারবেন না, তারা আপাতত হাসপাতালের পেছনে একটি ভবনে থাকবেন। তবে পুলিশ দিয়ে নার্সদের বের করে দেওয়া হবে, এমন কিছু বলা হয়নি। কিছু নার্স আন্দোলন করছেন, অন্যরা তাদের সঙ্গে। এদের মধ্যেও অনেকেই আমাদের সঙ্গে কাজ করতে চান।  

এদিকে কর্তৃপক্ষের বিভিন্ন প্রস্তাবের ব্যাপারে নার্সরা বলছেন, এটি সম্মানজনক পেশা। আমরাতো বেশি কিছু দাবি করিনি। আমরা কেন মজুরিভিত্তিতে কাজ করব। সাপ্তাহিক ছুটি ছাড়া প্রতিদিনই আমাদের ডিউিটি থাকে। ঘণ্টা হিসেবে কাজ করলে আমরা কতো টাকাইবা পাবো। আমাদের দাবি ছিল, আমরা টানা ১০ দিন ডিউটি করবো, পরে ১০ বা ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনে থাকবো। এভাবে চলবে। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে একটানা ডিউটি করেত।

তারা বলছে, আমাদের বয়স অল্প, ফলে কেউ আক্রান্ত হবো না। আক্রান্ত হলে চিকিৎসা দেওয়া হবে। এটা কী কোনো ধরনের মানবিকতার মধ্যে পড়ে? 

স্টাফ নার্স চায়না ইসলাম বলেন, এ হাসপাতলে অনেক নার্সই আছেন যাদের বেতন ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকার মধ্যে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, বেতন দ্বিগুণ করে দেবে, কিন্তু এই সময়ে ২৫ হাজার টাকা বেতনে কেউ জীবনের ঝুঁকি নিতে চায় না। কিন্তু কর্তৃপক্ষ বলছে, তাদের প্রস্তাবে কাজ করতে আগ্রহী না হলে সকাল ১১টার মধ্যে হাসপাতালের হোস্টেল ছাড়তে। আমার বাড়ি চৌদ্দগ্রাম। আমি মেয়ে মানুষ। চাইলেই তো এখন বাড়ি যেতে পারবো না।  

‘গত কয়েক সপ্তাহ থেকে পর্যায় ক্রমে অনেক নার্সকেই চাকরিচ্যুত করা হয়েছে, তাদের অনেকেই বাড়ি যেতে পারেনি। বেশ কয়েকজন বর্তমানে এখানে অবস্থান করলেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাদের জন্য কোনো খাবার ব্যবস্থা করেনি । নিজের খরচেই তারা ক্যান্টিন থেকে খাবার কিনে খাচ্ছে। তাদের মার্চ মাসের বেতন দেওয়া হয়েছে অর্ধেক। এপ্রিল মাসের বেতন এখনও পায়নি। ’ 

নার্সরা আরও জানান, মতের অমিল হওয়ায় বুধবার সন্ধ্যায় কাজ করবে বলে ঘোষণা দেয় তারা। তা শুনে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নার্সদের হোস্টেলে আটকে রেখে বৈদ্যুতিক লাইন ও পানির লাইন বন্ধ করে দেয়। খাবারের ক্যান্টিনও বন্ধ করে দেওয়া হয়। যদিও পরে আবার এসব চালু করে দেওয়া হয়।  

নার্সদের সংগঠন ‘সোসাইটি ফর নার্সেস সেফটি অ্যান্ড রাইটস’-এর মহাসচিব সাব্বির মাহমুদ তিহান বলেন, এই নার্সরা বেসরকারি হাসপাতালে চাকরি করেন বলেই প্রাপ্য সম্মানটুকু পাচ্ছেন না। সরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করলে তাদের সঙ্গে এমন আচরণ করতে পারতো না। দেশের ক্রান্তিলগ্নে মানবসেবায় নিয়োজিত এই নার্সরা তো বেশি কিছু দাবি করেননি। নিজেদের সুরক্ষা আর ন্যায্য প্রাপ্যের দাবি করাতেই তাদের চাকরিচ্যুত করা হচ্ছে। তাদের ব্যাপারটা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের মানবিক দৃষ্টিতে দেখা উচিত।

সোসাইটি ফর নার্সেস সেফটি অ্যান্ড রাইটস ছাড়াও নার্সদের অন্যান্য সংগঠনের নেতারা এর তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, দেশে কিছু বেসরকারি হাসপাতাল থেকে রেজিস্টার্ড নার্সদের ছাঁটাই করার পাঁয়তারা ন্যাক্কারজনক। এখন রমজান মাস চলছে, সামনে ঈদুল ফিতর। এ সময় অনেক রেজিস্টার্ড নার্সকে বেতন ভাতা ও বোনাস থেকে বঞ্চিত করার চেষ্টা হচ্ছে। এসবের সুরাহা হওয়া প্রয়োজন।  

বাংলাদেশ সময়: ১০৫৮ ঘণ্টা, মে ০৭, ২০২০
পিএস/এইচজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।