ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

স্বাস্থ্য

অপুষ্টিতে শিশুরা, বাড়ছে খর্বকায় ও কৃশকায় শিশু

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১১৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৭, ২০২০
অপুষ্টিতে শিশুরা, বাড়ছে খর্বকায় ও কৃশকায় শিশু

ঢাকা: নিয়মিত খাদ্যগ্রহণ করলেও অপুষ্টিতে ভূগছে দেশের শিশুরা। এর মাঝে আবার বেড়েই চলেছে খর্বকায় (বয়সের তুলনায় কম উচ্চতা) ও কৃশকায় (উচ্চতার তুলনায় কম ওজন) শিশুর সংখ্যা। ফলে অনেক দেশই অপুষ্টি বিষয়ক টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) সমূহ অর্জন করতে সক্ষম হবে না বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।  

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বিশ্বব্যাপী ৫ বছরের কম বয়সী ৫ কোটি ২০ লাখ শিশু কৃশকায়, এক কোটি ৭০ লাখ শিশু মারাত্মক রকমের কৃশকায় এবং ১৫ কোটি ৭৫ লাখ শিশু খর্বকায় ভূগছে।  

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মূলত অপুষ্টির শিকার অনেক শিশুই পর্যাপ্ত খাদ্যগ্রহণ সত্ত্বেও সঠিকভাবে বেড়ে উঠতে পারে না।

ফলে তাদের মস্তিষ্কের সঠিক বিকাশ ঘটে না এবং পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাদের আন্ত্রিক জীবাণু বা গাট মাইক্রোব অপরিপক্ক থাকার ফলে এমনটা ঘটে।  

আন্তর্জাতিক উদারাময় গবেষণা প্রতিষ্ঠান, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর,বি) এবং ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা মনে করেন, এটিই শিশুদের অপর্যাপ্ত বিকাশের কারণ এবং সব ধরনের খাবার এই সমস্যা সমাধানে সমান কার্যকর নয়।  

আর এ কারণে আন্তর্জাতিক ‘সায়েন্স’ জার্নাল ২০১৯ সালের ১৯ নভেম্বর প্রকাশিত এক বিশেষ সংখ্যায় আইসিডিডিআর,বি এবং যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়কে অপুষ্টি মোকেবেলায় জীবাণুর (মাইক্রোব) ভূমিকা-সংক্রান্ত গবেষণাকে ওই বছরের বিশেষ ১০টি বৈজ্ঞানিক অগ্রগতির একটি হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।

সোমবার (০৬ জানুয়ারি) আইসিডিডিআরবি,র মিডিয়া ম্যানেজার এ কে এম তারিফুল ইসলাম খান বলেন, গবেষণায় শিশুদের সুস্থ অন্ত্রে থাকা প্রধান ব্যাকটেরিয়ার ওপর গবেষণা করেছেন গবেষকরা। এছাড়া তারা বিভিন্ন প্রাণীর ওপর পরীক্ষা করে দেখেছেন, কী ধরনের খাবার গুরুত্বপূর্ণ এবং উপকারী জীবাণুদের উজ্জীবিত করে তুলতে সক্ষম।  

‘পরবর্তীতে বাংলাদেশের ঢাকার মিরপুর এলাকার ১২-১৮ মাস বয়সী ৬৮টি শিশুকে নিয়ে পরিচালিত একটি গবেষণায় গবেষকেরা বিভিন্ন খাদ্য বিন্যাস পরীক্ষা করে দেখেন। তারা অন্ত্রের ওপর সেসব খাদ্যবিন্যাসের প্রভাব পর্যবেক্ষণ করেন এবং দেখেন কীভাবে উপকারী জীবাণু ইতিবাচকভাবে প্রভাবিত হয়। ’ 

গবেষণা ফলাফলের কথা উল্লেখ করে তারিকুল ইসলাম বলেন, গবেষণালব্ধ ফলাফলে দেখা যায়, কিছু সুনির্দিষ্ট পুষ্টিকর সম্পূরক খাদ্য বিশেষ করে কাঁচা কলা, ছোলা (চিকপি), সয়াবিন এবং চীনাবাদামের গুঁড়া (পিনাট ফ্লাওয়ার) দেওয়ার মাধ্যমে এসব শিশুর অন্ত্রের উপকারী জীবাণুদের পুনরুজ্জীবিত করা সম্ভব।  

এসব খাদ্য বিন্যাস ব্যবহার করে বড় মাপের ক্লিনিক্যাল গবেষণা বর্তমানে আইসিডিডিআর,বি-তে চলমান অবস্থায় রয়েছে বলে জানান তিনি।  

জানা যায়, আইসিডিডিআর,বি-এর নিউট্রিশন অ্যান্ড ক্লিনিক্যাল সার্ভিসেস ডিভিশনের সিনিয়র ডিরেক্টর ড. তাহমিদ আহমেদ এবং ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জেফরি গর্ডন ২০১৪ সাল থেকে এ গবেষণা পরিচালনা করে করছেন।

এ বিষয়ে অধ্যাপক গর্ডন বলেন, এই গবেষণার লক্ষ্য হলো জীবাণুদের সারিয়ে তোলা। জীবাণুসমূহ কলা বা চীনাবাদাম চিনে না। তারা কেবল পুষ্টির মিশ্রণকে চিনে, যা তারা নিজেদের প্রয়োজনে ব্যবহার ও ভাগাভাগি করতে পারে। এসব খাবার কেন ভালো কাজ করেছে তা ঠিক বোঝা যায়নি, এই প্রক্রিয়ায় শিশুদের ওজন ও উচ্চতা বৃদ্ধিতে এসব খাদ্যবিন্যাসের দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব দেখার জন্য একটি বড় গবেষণা চলমান রয়েছে।

ড. তাহমিদ আহমেদ বলেন, উন্নয়নশীল দেশসমূহে শিশুদের অপুষ্টি নিরাময়ে প্রচলিত কার্যক্রমে পুষ্টিকর খাবারকে কাঁচা কলা, ছোলা (চিকপি), সয়াবিন এবং চীনাবাদামের গুঁড়া (পিনাট ফ্লাওয়ার) সমৃদ্ধ খাদ্যবিন্যাসের সাহায্যে উজ্জীবিত করা হলে শিশুদের মধ্যে অপুষ্টি এবং অপুষ্টি সংক্রান্ত ভয়াবহ জটিলতা রোধ করা সম্ভব হবে।

তিনি বলেন, যদি চলমান বড় পরিসরের গবেষণা আমাদের গবেষণালব্ধ ফলাফলকে সমর্থন করে তবে এটি নিঃসন্দেহে একটি চমৎকার বৈজ্ঞানিক অগ্রগতি হবে। একই সঙ্গে উন্নয়নশীল দেশসমূহে শিশুদের অপুষ্টি লাঘবে ব্যাপকভাবে সহায়তা করবে।

‘সায়েন্স’ হচ্ছে আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য অ্যাডভান্সমেন্ট অব সায়েন্স-এর জার্নাল। ১৮৮০ থমাস এডিসনের আর্থিক সহায়তায় এটি প্রতিষ্ঠিত হয়, তখন থেকেই এটি বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের ক্ষেত্রে অসামান্য ভূমিকা পালন করে আসছে।    

বাংলাদেশ সময়: ০৬১৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৭, ২০২০
এমএএম/এমএ 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।