ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

স্বাস্থ্য

সচেতনতাই পারে ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৪৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৬, ২০১৯
সচেতনতাই পারে ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে

ঢাকা: দেশে ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে। পুরুষদের মুখগহ্বর, ফুসফুসের ক্যান্সার এবং নারীদের স্তন ক্যান্সার, জরায়ু মুখের ক্যান্সার তুলনামূলক ভাবে বেশি হচ্ছে। এসব ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে জনসচেতনতা বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বানর বিশেষজ্ঞদের।

রোববার (১৫ ডিসেম্বর) ইস্ট-ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপ লিমিটেড (ইডাব্লিউএমজিএল) মিলনায়তনে ‘ক্যান্সার পরিস্থিতি: সচেতনতা ও চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তাদের বক্তব্যে এ পরামর্শ উঠে আসে।

কালের কণ্ঠ ও ওরিয়ন গ্রুপ আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে সঞ্চালনা করেন ইডাব্লিউএমজিএলের পরিচালক ও কালের কণ্ঠের সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন।

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট হাসপাতালের পরিচালক ও রেডিওথেরাপি বিভাগের অধ্যাপক ডা. মোয়াররফ হোসেন।

বক্তরা বলেন, দেশে বর্তমানে ক্যান্সার রোগীর সংখ্যা প্রায় ১৫ লাখ। প্রতিবছর নতুন করে ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছেন ১ লাখ ৫০ হাজার ৭৮১ জন। আর মারা যাচ্ছেন প্রায় ১ লাখ ৮ হাজার ১৩৭ জন। বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া প্রতি ৬ জন রোগীর মধ্যে ১ জন ক্যান্সারে আক্রান্ত।  

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব(স্বাস্থ্য সেবা) মো. আসাদুল ইসলাম বলেন,  সংক্রামকব্যাধীর মধ্যে ম্যালেরিয়া, ডায়রিয়া, কলেরাসহ সব রোগ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এখন জটিল  আকার ধারণ করেছে ক্যান্সার। এজন্য সবার আগে আমাদের প্রয়োজন সচেতনতা। তারপর ব্যবস্থাপনা, দক্ষ জনবল, আর্থিক বিষয়, টেকনোলজি, গবেষণার বিষয়গুলো দেখতে হবে।

তিনি বলেন,  আমাদের মাথাপিঁছু স্বাস্থ্যসেবার জন্য বরাদ্দ ৪০ ডলার। এর মধ্যে ওষুধ,
বিভিন্ন ধরনের টেস্টসহ চিকিৎসা ব্যয় সমাধান করতে হবে। সেটা মাথায় নিয়ে কাজ করতে হবে।

সচিব বলেন, জরায়ু ক্যান্সার প্রতিরোধ করার জন্য ভ্যাকসিনের ব্যবস্থা রয়েছে। এটার জন্য ব্যয় হয় ১০০ ডলার। ১০ থেকে ১৪ বছরের মেয়ে রয়েছে প্রায় তিন কোটি। এত বিশাল সংখ্যকে মানুষকে বিনামূল্যে ভ্যাকসিন দিতে গেলে অনেক টাকার প্রয়োজন। এর জন্য আমরা চিন্তা করছি কোনো বিদেশি স্থাংস্থার সঙ্গে যৌথভাবে এ কাজটা করা যায় কিনা।

বঙ্গবন্ধু শেখ মজিব মেডিক্যাল বিশ্বকিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া বলেন, প্রাথমিক অবস্থায় যদি এ রোগ ধরা পড়ে তাহলে ক্যান্সার প্রতিরোধ করা যায়। তাই  সকলের উচিত সচেতন হওয়া। সচেতন হলেই এ রোগ মোকাবিলা করা যাবে। তিনি বলেন, আমাদের এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎকের ঘাটতি রয়েছে। আমরা দক্ষ জনবল তৈরি জন্য চেষ্টা করছি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহা পরিচালক ও এনসিডিসি মাল্টিসেক্টরাল কমিটির যুগ্ম সচিব অধ্যাপক ডা. এ এইচ এম এনায়েত হোসেন বলেন, ক্যান্সার প্রতিরোধে জন সচেতনতা বাড়াতে হবে। পাশাপাশি সামাকিজ ভাবে সবাইকে ক্যান্সার রোগীর চিকিৎসায় এগিয়ে আসতে হবে।

বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটি হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. গোলাম মহিউদ্দীন ফারুক বলেন, দেশে ক্যান্সার রোগীর সঠিক কোনো পরিসংখ্যান নেই। তাই সকরারের কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রক্যেকটি গ্রামে কত জন ক্যান্সার রোগী রয়েছে, আর কতজন মারা গেছে একটা জরিপ করতে পারলে প্রকৃত রোগীর সংখ্যা পাওয়া যেত। সরকার চাইলে এটা পারবে।

জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট হাসপাতালের পরিচালক ও রেডিওথেরাপি বিভাগের অধ্যাপক ডা. মো. মোয়াররফ হোসেন বলেল, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানদণ্ড অনুযায়ী প্রতি ১০ লাখ মানুষের জন্য একটি ক্যান্সার সেন্টার প্রয়োজন। সেই হিসাবে দেশে ১৬০টি ক্যান্সার সেন্টার দরকার। কিন্তু সরকারি পর্যায়ে আছে মাত্র ৯টি এবং বেসরকারি কয়েকটি হাসপাতালের ওপর নির্ভরশীল দেশের ক্যান্সার আক্রান্তদের চিকিৎসাসেবা। সারা দেশে ক্যান্সার চিকিৎসার জন্য পর্যপ্ত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, দক্ষ অনকোলজিস্ট ও নার্স নেই।

তিনি বলেন, সরকার ২০ বছর মেয়াদী তিনটি স্তরে দীর্ঘ পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। এর মধ্যে  প্রথম স্তরে আটটি বিভাগীয় শহরে ৮টি ক্যান্সার সেন্টার স্থাপন। দ্বিতীয় স্তরে প্রত্যেকটি মেডিক্যাল কলেজে এবং তৃতীয় স্তনে প্রত্যেকটি জেলা শহর মেডিক্যাল সেন্টার স্থাপন করা হবে। আগামী ৫ বছরের মধ্যে ৮টি বিভাগে ক্যান্সার চিকিৎসার দ্বার উন্মোচিত হলে হাসপাতাল গুলোতে রোগীর চাপ কমবে এবং সবাই চিকিৎসা নিতে পারবে।  

বক্তারা আরও বলেন, ২০০৯ সালের আগে ক্যান্সারের ওষুধের অনেক দাম ছিল। পরবর্তীতে দেশে ক্যান্সারে ওষুধ তৈরি হওয়ায় দাম কমতে থাকে। বর্তমানে দেশের চাহিদা মিটিয়ে পাকিস্তানসহ ১২৪টি দেশে ওষুধ রপ্তানি করা হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞ বক্তারা আরও বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুসারে যদি ক্যান্সার রোগীদের কিছু কিছু ওষুধ সরকারি উদ্যোগে বিনামূল্যে সরবরাহ করা হয়, তাহলে এ রোগের চিকিৎসা ব্যয় আরও কমে আসবে।
  
এ সময় আরো বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোল্লাহ ওবায়েদুল্লাহ বাকী, বিএসএমএমউ এর প্যালিয়েটিভ কেয়ার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা.  মো. নিজামুদ্দিন আহমেদ, ডেল্টা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অনকোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. কাজী মনজুর কাদের,  আনোয়ারা মেডিক্যাল সেন্টারের হিস্টোপ্যাথলজি ও বায়োপসি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা, জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট হাসপাতালের অধ্যাপক ডা. মো. মফিজুর রহমান, জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট হাসপাতালের মেডিক্যাল অনকোলজি বিভাগেরর প্রধান অধ্যাপক ডা. ডা. নাজরীনা খাতুন, অ্যাপোলো হসপিটালের মেডিক্যাল অনকোলজি বিভাগের কনসালটেন্ট ডা. অধ্যাপক ফেরদৌস শাহরিয়ার সাঈদ,  স্কয়ার হাসাপাতালের অনকোলজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. মো.  সৈয়দ মো. আকরাম হোসেন, কমফোর্ট মেডিক্যাল সেন্টারের গাইনো অনকোলজি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. খুরশিদ জাহান মওলা,  বিএসএমএমউ এর অনকোলজি বিভাগের চেয়াম্যান অধ্যাপক ডা. সারওয়ার আলম, সাবেক সংসদ সদস্য ও ক্যান্সার সারভাইর্ভাস কবি কাজী রোজী, বাংলাদেশ মেডিক্যাল ফিজিক্স সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও গণ বিশ্ববিত্যালয়ের মেডিক্যাল ফিজিক্স অ্যান্ড বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. হাসিন অনুপমা আজহারী, বিকন ফার্মার এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট মনজুরুল আলম, ইউনাইটেড হসপিটাল লিমিটেডের ক্লিনিক্যাল অ্যান্ড রেডিয়েশন অনকোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. অসীম কুমার সেনগুপ্ত প্রমুখ।

বাংলাদেশ সময়: ০৩৪০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৬, ২০১৯
পিএস/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।