ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

স্বাস্থ্য

মশক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকার দাবি দুই সিটির

শাওন সোলায়মান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৫৩ ঘণ্টা, জুলাই ৬, ২০১৯
মশক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকার দাবি দুই সিটির মশা

ঢাকা: রাজধানীর মশক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে বলে দাবি ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি ও  ডিএসসিসি)। ডেঙ্গু-চিকুনগুনিয়া অথবা মশাবাহিত অন্যান্য রোগ নিয়ে এখনও আতঙ্কিত হওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি বলেও দাবি করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের। পরিস্থিতি যেন খারাপের দিকে না যায় সেজন্য পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বলেও দাবি তাদের।

তবে দাবি যাই হোক, ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা নিয়েই দুই রকম তথ্য দিয়েছে দুই সিটি করপোরেশন। চলতি বছরে এখন পর্যন্ত দুই হাজার ১৪৫ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী সনাক্ত হয়েছে বলে জানায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)।

আর মৃত্যু হয়েছে দুইজন রোগীর। অন্যদিকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) বলছে, আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা এক হাজার ৫৯৫ জন এবং মৃতের সংখ্যা তিনজন।

তবে মশক পরিস্থিতি নিয়ে চলতি বছরের শুরু থেকেই কাজ করা হচ্ছে জানিয়েছে দুই করপোরেশন। গত জানুয়ারিতেই ডিএসসিসি মেয়র সাঈদ খোকন মশা নিয়ন্ত্রণে ‘অ্যাকশন প্ল্যান’র অনুমতি দেন বলে জানান ডিএসসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মো. শরীফ আহমেদ। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে মার্চ থেকেই জনসচেতনতামূলক কাজ শুরু করা হয়। অন্যদিকে মৌসুমের আগেই বর্ষা শুরু হয়ে যাওয়ায় অর্থ্যাৎ জুনের আগে মার্চ মাসেই বৃষ্টিপাত শুরু হয়ে যাওয়ায় মশাবাহিত রোগ আগেই মানুষকে আক্রান্ত করছে বলে দাবি করেছেন ডিএনসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মোমিনুর রহমান মামুন।

মোমিনুর রহমান মামুন বলেন, এবার মৌসুমের আগেই বৃষ্টিপাত শুরু হয়। আর থেমে থেমে বৃষ্টি হয়। ফলে দেখা যায়, মশার উপদ্রব আগে থেকেই বেড়ে যায় এবং বিভিন্ন স্থানে পানি জমতে থাকে। পানি পরিষ্কার করা হলেও বা ফেলে দিলেও পরের বৃষ্টিতে আবার পানি জমে যায়। তবে আমরা মার্চ থেকেই কাজ শুরু করি। ২৪ মার্চ থেকে ১ এপ্রিল পর্যন্ত ক্রাশ প্রোগ্রাম করি। জনগণকে সচেতন করতে এপ্রিলে অবহিতকরণ কার্যক্রমও পরিচালনা করা হয়। আর ৬ জুলাই (শনিবার) থেকে শুরু হবে দুই সপ্তাহের ক্রাশ প্রোগ্রাম।

অন্যদিকে নিজেদের বিভিন্ন কার্যক্রম তুলে ধরে ডিএসসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মো. শরীফ আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের আওতাধীন অংশে এখন ক্রাশ প্রোগ্রাম চলছে। এর আওতায় প্রতিটি জোনে আমরা আমাদের সব লজিস্টিক নিয়োজিত রেখেছি। অর্থ্যাৎ একটি নির্দিষ্ট জোনে একদিন আমাদের সব কর্মী মশার ওষুধ এবং মেশিন নিয়ে কাজ করছেন। পুরো প্রক্রিয়াটি দুইবার পরিচালিত হবে ক্রাশ প্রোগ্রামজুড়ে।

মশা নিয়ন্ত্রণে পর্যাপ্ত পরিমাণ ওষুধ দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন দুই সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা। তবে সেই ওষুধের কার্যকারিতা নিয়েও সংশয় আছে নগরবাসীর। ওষুধ শুধু ভিআইপিদের বাসার আশেপাশে দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ পাওয়া যায়। তবে এমন অভিযোগ নাকচ করেন সিটি করপোরেশনের এই দুই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।

ডিএসসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মো. শরীফ আহমেদ বলেন, ওষুধ দেওয়ার সময় মশক কর্মীদের ঝুঁকিপূর্ণ জায়গাগুলোতেই ওষুধ দেওয়ার জন্য নির্দেশনা দেওয়া থাকে। ওষুধ বিতরণের কাজ পুরোটাই ওয়ার্ড পর্যায় থেকে হয়। তাই শুধু ভিআইপিদের বাড়ির আশেপাশে দেওয়া হয় এমন অভিযোগ সত্য নয়। আর ডিএনসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মোমিনুর রহমান মামুন বলেন, বিভিন্নভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরেই মশার ওষুধ ব্যবহারের ‘অ্যাপ্রুভাল’ দেই আমরা। এরপরেও মাঠপর্যায় থেকেও ওষুধের নমুনা নিয়ে আমরা পরীক্ষা করি। কোথাও ওষুধের মান কম মনে হলে আমরা সেগুলো ব্যবহার করি না।

মশক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে দুই সিটি করপোরেশন সর্বোচ্চ সতর্কতামূলক প্রস্তুতি রেখেছে উল্লেখ করে জনগণের সচেতনতা বৃদ্ধির প্রতি জোর দেন এই দুই কর্মকর্তা। মোমিনুর রহমান বলেন, নগরবাসীকে আরও সচেতন করতে প্রতিটি ওয়ার্ডে এবং কেন্দ্রীয়ভাবে র‌্যালির আয়োজন করা হচ্ছে। আমাদের আশেপাশের ভবনগুলোতে যেন মশার বংশবিস্তার হতে না পারে সে বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে রিহ্যাবের সঙ্গেও সভা করবো আমরা। এটি একটি বৈশ্বিক সমস্যা। তবে আমাদের দেশে এর প্রভাব এখনও আতঙ্কিত হওয়ার মতো নয়। জনগণের পক্ষ থেকে আরও সচেতনতা এবং সাড়া আশা করি আমরা।

বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা বা সংস্থা নিজেদের উদ্যোগেও মশক কর্মী নিয়োগ এবং ওষুধ বিতরণ মেশিন কিনতে পারে বলে মত ডিএসসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তার। তিনি বলেন, সবসময় আমাদের ওপর নির্ভর করে না থেকে বিভিন্ন বড় বড় সংস্থা ও স্থাপনা নিজেদের উদ্যোগেও ‘মসকিউটো ফাইটিং’ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারে। যেমন- আমাদের এলাকায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ এবং বুয়েটের মতো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে। তারা নিজেরা চাইলেও মশককর্মী নিয়োগ দিতে পারে, মেশিন কিনতে পারে। প্রয়োজনে আমরা তাদের প্রশিক্ষণ দেবো, উন্নতমানের ওষুধের যোগান দেবো।

বাংলাদেশ সময়: ১০৫২ ঘণ্টা, জুলাই ০৬, ২০১৯
এসএইচএস/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।